কীসের মোড়কে মুসলমান তুষ্টীকরণের স্লোগান খুঁজছে তৃণমূল?
‘খেল খতম’
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
২০২১-এ তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে তৃণমূল দলেই বিস্তর জল ঘোলা শুরু হয়েছে। তাদের উপদেষ্টার দাবি, চটুল স্লোগানে রাজ্যের মানুষকে আর ভোলানো যাবে না। সাংগঠনিক স্তরের ভোলের খাঁচা পালটে দেওয়ার পাশাপাশি সেকুলারিজমের মোড়কে মুসলমান তৃষ্টীকরণের স্লোগান প্রয়োজন। তাতে সাপ মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না। ইসামি জঙ্গি দমনে ভারতীয় সৈন্যদের স্যালুট জানাতে পথে নেমেছে তৃণমূল। সর্বসম্মত প্রস্তাবও আসছে। অথচ ২০১৯-এ পুলওয়ামায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের হামলার পর বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতকে এখনও বানানো গল্প বলেই মনে করে তৃণমূল। পহেলগাঁওয়ে হিন্দু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতের পর সারা দেশ ও বিশ্ব যেভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনোভাবে তার বিরোধিতা করতে পারত না। বিদেশি বামপন্থীদের আম ও ছালা কোনোটাই নেই। তারা এতটাই অপাঙ্ক্তেয় যে তাদের বিরোধিতা বা সমর্থনে দেশের মানুষের কিছু যায় আসে না। স্ববিরোধিতাই তাদের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ফাঁকা বুলির তর্জন-গর্জন তাদের অভ্যাস। বলা চলে শতবর্ষে তাদের রাজনৈতিক ‘খেল খতম’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রাজনৈতিক স্বার্থে ২০২৬ পর্যন্ত বামপন্থীদের জিইয়ে রাখতে চান বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। যাতে তারা হিন্দুত্বের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে ‘দাঙ্গা’র আজগুবি তত্ত্ব বোঝাতে পারে। হিন্দুবিরোধী, ভ্রান্ত, সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যায় সিপিএমের কিছু মুসলমান নেতা এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বক্তব্য প্রায় এক। তৃণমূলের কিছু নেতাও ওই ধরনের কথাই বলেন। উভয়ের সুরে কেবল উদ্দেশ্যের তফাত। দুটি ক্ষেত্রের ভাবনা কিন্তু সমান ধরনের। মুনিরের মতো নিকৃষ্টরা হিন্দু বিরোধিতা করে ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের উসকে ভারত জুড়ে অশান্তি ছড়াতে চায়। আর সিপিএম ও তৃণমূলের নেতারা মুসলমান তুষ্টীকরণ করে মুসলমান ভোট বাগিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
স্বাধীনতার পর ৫৩ বছর ধরে কংগ্রেস
দেশ শাসন করেছে। তাই জাতীয় দল হিসেবে তারা যে বিদেশি বাম ও তৃণমূলের মতো কিছু উপদলের কায়দায় দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে না সেটা হয়তো স্বাভাবিক। তাদের সমস্যা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের রাজনীতিক সমীকরণ এবং দেশকে এক করে দেখা। তৃণমূল রাজনৈতিক উপদল বা ভঙ্গুর দল। অনেকটা পাকিস্তান আর বাংলাদেশ যেমন ভঙ্গুর দেশ। ওই দুই দেশ যেমন বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল, তৃণমূলও ঠিক একইরকমভাবে সিপিএম চালিত পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ভেঙে একটি বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থার ভিতর দিয়ে তৈরি হওয়া দল। বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো কোনো পূর্ণ রাজনৈতিক দল নয় তৃণমূল। বিদেশি বামেদেরও সেই ব্র্যাকেটেই ফেলা যায়।
গত বছর আগস্ট মাসে অভয়াকাণ্ডের পর থেকেই তৃণমূল যে অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছে, তা তাদের সমর্থকরা মেনে না নিলেও হাবভাবে তা প্রকাশ পাচ্ছে। ১৯৯৮-এর জানুয়ারিতে যারা তৃণমূল তৈরি করেছিল, তাদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে অনেকেই এখন আর নেই। সামনের সারিতে পড়ে রয়েছে সুব্রত বক্সি, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আর বিনোদনের জন্য মদন মিত্র। সেই সময় মমতার বিরুদ্ধে সব ধরনের পারিবারিক বিষোদ্গার করেছিলেন কংগ্রেসের এক অধ্যাপক নেতা। পরে মমতার কাছে ক্ষমা চেয়ে তৃণমূলে তার ঠাঁই হয়। মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ওই অধ্যাপক এখন তাঁর লেক গার্ডেন্সের বাসভবনের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি ডেরা ফারাক করতে পারেন না। এসএসসি এবং ডিএ কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তৃণমূল দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই তাদের ভাঁওতাবাজি ধরা পড়ে গিয়েছে। ন্যায্য পাওনা এবং চাকরি চুরির এই দুই মামলায় ফেঁসে গিয়েছে তৃণমূল।
পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতা সারা দেশের হিন্দু ঐক্যকে যেরকম ছুঁয়েছে, তেমনই স্পর্শ করেছে এখানকার মুসলমান সম্প্রদায়কে। ফলে এখানকার মুসলমানদের ভুল বুঝিয়ে ‘হিন্দু’ বা ‘বিজেপি’ জুজু দেখানোর খেলা বোধহয় শেষ হতে চলেছে।
এছাড়াও তারা ফেঁসেছে মুর্শিদাবাদে স্থানীয় মুসলমান দুষ্কৃতীদের তোষণ করে। পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতা সারা দেশের হিন্দু ঐক্যকে যেরকম ছুঁয়েছে, তেমনই স্পর্শ করেছে এখানকার মুসলমান সম্প্রদায়কে। ফলে এখানকার মুসলমানদের ভুল বুঝিয়ে ‘হিন্দু’ বা ‘বিজেপি’ জুজু দেখানোর খেলা বোধহয় শেষ হতে চলেছে। মুসলমান ভোট যদি মমতার থেকে সরে যায় যেমন ঘটেছিল বিদেশি সিপিএমের ক্ষেত্রে, তাহলে বলতেই হবে মমতার ‘খেল খতম’।