দিদির প্রেমের মাশুল গুনছে মুসলমানরা
মুসলমানপ্রেমীযু দিদি,
আপনি দুর্নীতি করে প্রেম দেখাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টার মাশুল গুনতে হচ্ছে মুসলমান পড়ুয়াদের। আপনি নিশ্চয়ই জানেন। তবু আপনাকে সবটা জানানো আমার কর্তব্য।
দিদি, এমনিতেই নিয়োগের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার জরাজীর্ণ দশা। এর উপরে নানা মামলা-মোকদ্দমার ফলে স্কুলে স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের বালাই নেই। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েও ধাক্কা খেয়েছে। কারণ, আপনার মুসলমান প্রেম দেখতে গিয়ে দুর্নীতি করা।
শিক্ষাদপ্তর থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১০ মে অবধি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদনপত্র দেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীরা তা পূরণ করে জমা দেবে। এর পরে মেধা তালিকা প্রকাশ এবং সেই অনুযায়ী ভর্তি। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু তেমনটি করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি শিক্ষা দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন থাকার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনো মেধা তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। সুতরাং রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত। একই রকম অনিশ্চিত উচ্চশিক্ষায় ভর্তিও। গত বছর রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ এবং রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বেশ কয়েকটিতে অভিন্ন কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে স্নাতক স্তরে ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এই বছর সেই পোর্টাল চালু করা সম্ভব হয়নি। কারণ, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতা। এক্ষেত্রে কী করণীয়, জানতে
রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ এবং
উচ্চশিক্ষা দপ্তরে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজ্যের প্রথম সারির দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু উত্তর মেলেনি দিদি। আদালতের বিচারাধীন বিষয়ের জটিলতা কাটিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াটি মসৃণ করতে আপনার সরকারও কি যথেষ্ট উদ্যোগী দিদি?
গত বছর কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া যাবতীয় ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে। এগুলি মূলত সংখ্যালঘু মানে মুসলমানদের জন্য। যা নিয়ম না মেনে করা হয়। ১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিল করে আলাদত। এর পরে
রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে যায় রাজ্য। তবে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত।
চলতি বছরের মার্চে নতুন করে ওবিসি সমীক্ষার কাজ শুরু করার কথা সুপ্রিমকোর্টে জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে রাজ্য সরকার আবেদন করেছে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই মামলার শুনানি যেন স্থগিত রাখা হয়। তখন একবারও ভাবা হয়নি এর ফলে একাদশ ও স্নাতক স্তরে ভর্তির কী হবে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে এখন নতুন সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। একে দিশাহীন ছুটির ধাক্কায় স্কুলের পঠনপাঠন অনিয়তি। তার উপরে দেরিতে ক্লাস শুরু হলে সেই ফাঁক পূরণ করার মতো যথেষ্ট শিক্ষকও নেই। অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা যেখানে পরবর্তী পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, সেখানে এতগুলি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী নিয়মের ফাঁসে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে না, পিছিয়ে পড়বে কিংবা অন্য স্কুলে যেতে বাধ্য হবে। বেসরকারি স্কুলেই বেশি যাবে।
এতটাই কি এ রাজ্যের দুর্ভাগ্য? আপনি নিজের মর্জিমাফিক চলতে গিয়ে সরকারি স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই তার গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা নেই বললেই চলে। এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেই তার যথেষ্ট প্রমাণ।
উল্লেখ্য, গত বছর ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে যায় রাজ্য। তবে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত।