ভবানীপুরে ভয় দিদির
ভয়েভয়েষু দিদি,
গত বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছিলেন। মেজো বোন নন্দীগ্রামে লজ্জার হারের পরে বড়ো বোন ভবানীপুরে উপনির্বাচনে জয়। কিন্তু এবারে ভবানীপুরে হারের জুজু দেখতে পাচ্ছেন কেন আপনি! জানি নন্দীগ্রামে হারের লজ্জা সারা জীবন তাড়া করবে আপনাকে। ১৯৮৯ সালে মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে হারের চেয়েও এটা লজ্জার। এবার ভবানীপুর নিয়েও আপনি নিশ্চিন্ত নন।
নন্দীগ্রামে ১,৯৫৬ ভোটে জিতেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরে উপনির্বাচনে আপনি জিতেছেন ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে। তবু
ভয় পাচ্ছেন। আসল অঙ্কটা দিদি লুকিয়ে কলকাতার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে। খিদিরপুর লাগোয়া এই ওয়ার্ডে এখন মুসলমান ভোটার বেশি। আর আপনাকে জেতায় তো এই ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে আমি জানি।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে প্রথম ধাক্কা খায় তৃণমূল। সেই নির্বাচনে ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভালো ব্যবধান পেয়ে ভবানীপুর বিধানসভা থেকে ১৭৬ ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী তথাগত রায়। তৃণমূলকে বাঁচিয়ে দেয় ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড।
২০১৫ সালের পুরসভা ভোটে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী অসীম বসু। কিন্তু মাত্র কয়েক মাস পরেই তাঁকে কিনে নেয় তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র কুমার বসু তৃতীয় হলেও, ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৮০০ ভোটে এগিয়েছিলেন। সে বার আপনি ২৫ হাজার ভোটে জিতলেও শুধু ৭৭ থেকে ১০ হাজার লিড।
আবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ভবানীপুর বিধানসভায় ৭৭ ও ৮২ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে সবকটি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। এমনকী আপনার নিজের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল ৪৯৬ ভোটে। আবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ছ’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে ২০৯২ ও ৫৩৭ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
আসলে কলকাতার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড হচ্ছে আপনার দুধেল গাই অধ্যুষিত। সঙ্গে রয়েছে ববি হাকিমের ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদলই জেতে। তাও আবার মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা! ২০২১ সালের অক্টোবরে হওয়া উপনির্বাচনে একা ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড অপনাকে এগিয়ে দেয় প্রায় ২২ হাজার ভোটে। আর ৮২ লিড দেয় ১৬ হাজারের। এখানেই ৩৮ হাজার। বাকি ছটি ওয়ার্ড মিলিয়ে লিড হয় ২০ হাজারের মতো।
গত ১৪ বছরে ৭৭-এর জনবিন্যাস বদলে গিয়েছে। কাউন্সিলার শামিমা রেহান খান। ফব থেকে এসে তৃণমূলে। এখানে বেশিটাই উর্দুভাষী মুসলমান। ফলে
এসআইআর হলে চাপ আছে। ভবানীপুর আসনের বিজয়া সম্মিলনীতে আপনি বলেছেন, ‘ভবানীপুরটা পুরো আউটসাইডারদের দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরো একটা প্ল্যানিং করে। যাঁরা হঠাৎ করে বাইরে থেকে এসে টাকা খরচ করে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে, কাউকে লোকালি কিছু টাকা দিয়ে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে।’ আমি না কিছু বুঝিনি। কাদের টাকা দেয়! গোটা এলাকাটা তো তৃণমূলের। ফিরহাদ হাকিম তো ছিলেন মঞ্চে। তিনি তো মেয়র। তবে কাকে টাকা দিয়ে বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে! যদি সময় করে মুখ্যমন্ত্রী দিদি একটু জবাব দেন খুব ভালো হয়। ওটুকুই নয়। আপনি এটাও বলেছেন যে, ‘সামনে লক্ষ্য রাখবেন যদি নতুন করে ভোটার লিস্ট হয়, তাহলে কিন্তু প্রত্যেককে আবার নতুন করে সবকিছু করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিএলএ-দের দায়িত্ব খুবই বেশি।’
বুঝেছি দিদি, আপনি আসলে অবাংলাভাষী ভোটারদের ভয় পাচ্ছেন। হুমকিটা তাদেরই। কারণ, কলকাতার এই বিধানসভা এলাকা আসলে মিনি ভারতবর্ষ।
সব প্রদেশের লোকেরা থাকেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গুজরাতি, রাজস্থানি, বিহারি, উত্তরপ্রদেশের লোকজন ছাড়াও শিখরাও থাকেন। তাঁদেরই আপনি এবার বহিরাগত বলে দিলেন। বাঃ। দিদি বাঃ।

















