অকৃত্রিম ভালোবাসা
পূর্ব সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, দেশভক্তিতে জারিত স্বয়ংসেবকগণ দেশকে পরম বৈভবশালী করিবার লক্ষ্যে সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করিয়াছেন। রাষ্ট্রভক্তিতে ভরপুর স্বয়ংসেবকগণ সেই সেই সংগঠনের দ্বারা সমাজজীবনকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করিতে শুধু সক্ষমই হন নাই, সম্পূভাবে সফলও হইয়াছেন। এই সফলতার চাবিকাঠি হইল সমাজের প্রতি তাঁহাদিগের অকৃত্রিম ভালোবাসা। রাষ্ট্রদেবতাকেই তাঁহারা আরাধ্য মনে করিয়াছেন, অন্য কিছুকে নয়। ছাত্র সমাজের অবক্ষয় দেখিয়া হৃদয় ভারাক্রান্ত হইয়াছিল স্বয়ংসেবক বলরাজ মধোক ও যশোবন্তরাও কেলকরের। জ্ঞান-চরিত্র-একতার মন্ত্রে ছাত্র সমাজেকে উদ্বুদ্ধ করিবার নিমিত্ত তাঁহারা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ স্থাপনা করিয়াছেন। আজ তাহা দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠনের রূপ ধারণ করিয়া ছাত্রশক্তি রাষ্ট্রশক্তিতে রূপান্তরিত হইয়াছে। জনজাতি সমাজের দুঃখ, দারিদ্র্য, বঞ্চনা এবং তাহাদিগকে খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা ধর্মান্তরিত হইতে দেখিয়া তাহার প্রতিকারকল্পে কার্যকর্তা উমাকান্ত কেশব দেশপাণ্ডে বনবাসী কল্যাণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। সেবা, সংস্কার, স্বাবলম্বন ও স্বাভিমানকে মন্ত্র করিয়া তিনি জনজাতি সমাজের হৃদয় জয় করিয়া তাহাদের উত্থান ঘটাইতে সক্ষম হইয়াছেন। হিন্দু সমাজের অভ্যন্তরে ভেদভাব নির্মূল করিবার লক্ষ্যে সাধুসন্তদের সঙ্গে লইয়া দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক শ্রীগুরুজী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ স্থাপনা করিয়া সঙ্ঘ কার্যকর্তা দাদাসাহেব আপটেকে দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন। প্রখর সংগঠন কুশলতার কারণে তিনি এই সংগঠনের বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটাইয়াছেন। শ্রমিক সমাজকে রাষ্ট্রভক্তিতে উদ্বুদ্ধ করিবার লক্ষ্যে শ্রমিকদের জন্য ও শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন সঙ্ঘের প্রখর চিন্তাবিদ দত্তোপন্ত ঠেংড়ী। এই সংগঠনও আজ দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন হিসাবে পরিগণিত। দেশের কৃষকদের সম্পূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে অখিল ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘও প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন দত্তোপন্ত ঠেংড়ী। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে আত্মনির্ভর করিবার লক্ষ্যে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চও স্থাপনা করিয়াছেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মকে ভারতীয় সংস্কৃতিভিত্তিক শিক্ষাদান ও সংস্কার প্রদানের লক্ষ্যে কয়েকজন কার্যকর্তা বিদ্যা ভারতী প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। আজ এই সংগঠন দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি শিক্ষা সংস্থা রূপে পরিগণিত। সমবায় ক্ষেত্রকে জনকল্যাণকারী স্বরূপ প্রদানের লক্ষ্যে এবং আর্থিক সেবা দ্বারা সমাজের উত্থানের জন্য অভিজ্ঞ কার্যকর্তা লক্ষ্ম ণরাও ইনামদার সহকার ভারতী প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। এমনইভাবে এক-একজন কুশল কার্যকর্তা সমাজের উত্থানের নিমিত্ত এক-একটি ক্ষেত্রে কার্য শুরু করিয়াছেন। দীর্ঘ পরাধীনতার কারণে সমাজজীবনকে যে গ্লানি গ্রাস করিয়াছিল, তাহা বিদূরিত করিয়া রাষ্ট্রজীবনকে উন্নততর করিবার লক্ষ্যেই স্বয়ংসেবক ও কার্যকর্তাদের এই নিরলস প্রয়াস।
ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য যে রাষ্ট্রজীবনের পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োজিত এই সংগঠনগুলি বহুবার বিজাতীয় মানসিকতার রোষের শিকার হইয়াছে। পদে পদে তাহাদের প্রশাসনিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিবার চেষ্টা হইয়াছে। ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে মানুষের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হইয়াছে। তাহা সত্ত্বেও দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতায় সমস্ত বাধা অতিক্রম করিয়া রাষ্ট্রসেবায় নিরত রহিয়াছে। শতবর্ষব্যাপী সাধনায় সমগ্র সমাজ স্বয়ংসেবকদের পার্শ্বে রহিয়াছে। উল্লেখ করিবার বিষয় হইল, দেশের সেবার লক্ষ্যেই যে রাজনীতি তাহার রূপায়ণেও স্বয়ংসেবকগণ সফল হইয়াছেন। স্বয়ংসেবকদের দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি আজ দেশে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল শুধু নহে, দেশের সেবা করিবার দায়িত্বও তাহারা গ্রহণ করিয়াছেন। স্বয়ংসেবকদের দ্বারা পরিচালিত ভারতের অগ্রগতি বিশ্ববাসীর আজ বিস্ময়ের বিষয়। আজ দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অধিকাংশ রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীগণ স্বয়ংসেবক অথবা স্বয়ংসেবক পরিবার হইতে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। এতসত্ত্বেও দেশের ভিতরে-বাহিরে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলি সক্রিয়। তাই সঙ্ঘের শতবর্ষে রাষ্ট্রকে পরম বৈভবের পথে লইয়া যাইতে স্বয়ংসেবকগণ অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করিবার সংকল্প গ্রহণ করিয়াছেন। ২০২৫ বিজয়াদশমী হইতে ২০২৬ বিজয়াদশমী পর্যন্ত স্বয়ংসেবকগণ সঙ্ঘের কার্যবিস্তার, কার্যকর্তার গুণবর্ধন, পঞ্চ পরিবর্তন, বিমর্শ নির্মাণ এবং সজ্জনশক্তির জাগরণে ব্যাপৃত থাকিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছেন।

















