দিদির ওয়াকফ ইতিহাস জানলে চোখে জল এসে যাবে
ডিগবাজিপটীয়সীযু দিদি,
আপনি কিন্তু ওয়াকফ নিয়ে ডিগবাজি খেয়েছেন। আগের মমতা আর আজকের মমতা কিন্তু এক নয় দিদি।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ আইন সংশোধনী নিয়ে খুব রাগ দেখাচ্ছেন। কারণ, সেটা বিজেপি সরকার তথা নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে হয়েছে। রাগ দেখানোই উচিত। তবে দিদি আপনি বারবার বদলে যান। এক সময়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হয়েছেন। এখন শব্দটা শুনলেই রেগে যান। আবার এক সময় আপনি সচিত্র পরিচয়পত্র, ইভিএম-এ ভোট- এ সব চেয়েছেন। এখন আপনি ব্যালটপন্থী।
তেমনই দিদি ক্ষমতায় আসার পরে ওয়াকফ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন তো। সিআইডি তদন্তও হয়েছিল। এখন আপনি উলটো গাইছেন। দিদি, মনে পড়ছে, ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই চেয়েছিলেন বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করুক সিবিআই। সেই আর্জি জানিয়ে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে টানা তিন বছরে দফায় দফায় নথিপত্র পাঠায় নবান্ন। কিন্তু রাজ্যের পাঠানো সমস্ত নথি পরীক্ষা করে সিবিআই সাড়া দেয়নি। মনে রাখতে হবে সেই সময়ে কেন্দ্রে আপনার বন্ধু সরকার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তার পরে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে সিবিআই জানিয়ে দেয়, তারা এই তদন্ত-ভার নিতে পারছে না।
তারও আগে ১৯৯৬ সালের কথা বলি। দিদি আপনি তখন দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস সাংসদ। সেই সময়ে আপনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তি নয়ছয়ের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তৎকালীন বাজারদর
অনুযায়ী এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১৬০টি ওয়াকফ সম্পত্তি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর অনিয়ম হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ ছিল। আপনার চিঠির জন্যই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন হয়। বিচারপতি ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে আপনার অভিযোগেই সিলমোহর দিয়েছিল।
পরে সিআইডি দিয়ে তদন্ত শুরু হয়। সেই সময়ে রাজ্য সরকার মূলত বলতে চেয়েছিল উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন সাংসদ, সিপিএমের নেতা হান্নান মোল্লা ওয়াকফ সম্পত্তি ভোগ করছেন। অভিযোগ ছিল বিধানসভার তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধেও। কিন্তু পরে আপনি জানতে পারেন তৃণমূলের অনেক নেতাই ওয়াকফ সম্পত্তির দখলদার। লাটে ওঠে রাজ্য সরকারের তদন্ত।
সদ্য প্রয়াত নাসিরুদ্দিন আহমেদ নদীয়ার
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে। জোহুরা বিবি ওয়াকফ এস্টেটের ৩৫ বিঘা জমির মধ্যে ফিরহাদ হাকিম ৫ বিঘার বেশি জমি জবরদখল করে মার্বেল পাথরের শোরুম চালাচ্ছেন।
কালীগঞ্জের এই বিধায়ক ওয়াকফ বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। কৃষ্ণনগরে ‘সাহিবুল্লা ওয়াকফ এস্টেটে’ ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট তিনি ‘জবরদখল’ করেছিলেন। ওয়াকফ বোর্ডের অপর সদস্য এখন আপনার দলের রাজ্যসভা সাংসদ নাদিমুল হক। ওয়াকফের ২২ কাঠা জমি তিনিও ‘কবজা’ করেছেন।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে। জোহুরা বিবি ওয়াকফ এস্টেটের ৩৫ বিঘা জমির মধ্যে ফিরহাদ হাকিম ৫ বিঘার বেশি জমি জবরদখল করে মার্বেল পাথরের শোরুম চালাচ্ছেন। আবার কলকাতা পুরসভার ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শাম্মি জাহান বেগম টিপু সুলতান গোরস্থানে জমি ‘জবরদখল’ করে রেখেছেন।
মেটিয়াবুরুজে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের দান করা ওয়াকফ সম্পত্তিও ‘জবরদখল’ হয়েছে। ২০২০ সালে হুমায়ুন আলি মির্জা নামে ট্রাস্টের এক সদস্য অন্য সদস্যদের মতামত না নিয়েই নতুন ‘ট্রাস্ট ডিড’ (দলিল) তৈরি করে ওই জমি একটি নবগঠিত হাসপাতাল ট্রাস্টকে ‘সাব-লিজ’ দিয়ে দেয়। সেই হাসপাতাল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। আফাকুজ্জামান নামে ওয়াকফ বোর্ডের আর এক সদস্য হলেন ফিরহাদের ঘনিষ্ঠ। আফাকুজ্জামান ‘অবৈধ’ ভাবে ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হয়েছেন।
আরও একটা কথা দিদি। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ওয়াকফ আইনে ওয়াকফ বোর্ডে কয়েকজন অমুসলমান সদস্যের অন্তর্ভুক্তির সংস্থান রেখেছে। কিন্তু দিদি, পশ্চিমবঙ্গেই জলপাইগুড়ি জেলার সরবত আলি মুহাম্মদ ওয়াকফ এস্টেটের মুতাওয়াল্লি কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল জনৈক সুধীররঞ্জন ধারাকে এবং কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছিল জনৈক শঙ্করপ্রসাদ সেনকে।
আপনার বিরোধিতাকে আমি সমর্থন করছি। সেটা অনুগত ভাই হিসেবে। কিন্তু এসব জানার পরে না আমার কেমন যেন আপনার ডিগবাজি ভূমিকা নিয়ে হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে