মুসলমানদের মসিহা মমতা ব্যানার্জি’ প্রবল হিন্দুবিদ্বেষী
মাপার মতো নেইতো ফিতে
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ‘হিন্দুবিরোধী’ না ‘হিন্দুবিদ্বেষী’? আপাত দৃষ্টিতে দেখলে এক মনে হতে পারে। একজন নামজাদা ঐতিহাসিক তাঁর একটি গ্রন্থে বিভিন্ন উপাসনা পদ্ধতির সংঘাত আর সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মধ্যে সূক্ষ্ম বিচার টেনে দেখিয়েছেন কীভাবে তা খানিকটা আলাদা। এপার ও ওপার বঙ্গে হিন্দুদের উপর মুসলমানদের আক্রমণের অসংখ্য উদাহরণ টেনে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে উপাসনা পদ্ধতিগত সংঘাত হয়। সেই উপাসনা পদ্ধতির অনুগামীদের বিশ্বাস ও উন্মাদনাকে ঘিরে আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। প্রথমটি উত্তর আধুনিক যুগের ব্যাখ্যা এবং পরেরটি আরও পরের আধুনিকতার উদাহরণ।
ভোট পাবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমান তোষণ করেন। এটা সকলের জানা। অন্যরা প্রকাশ্যে না মানলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই মানেন। মুসলমানদের তিনি ‘দুধেল গাই’ হিসেবে সম্বোধনও করেছেন। দুর্নীতির পাহাড়ে ডুবে থাকা তৃণমূলের বাইরে অনেকেই তাঁকে ‘ঘোটালা দিদি’ বলে ডাকেন। দেশের রাজ্যে রাজ্যে তাঁর বিস্তর বদনাম। দুর্নীতির পাহাড় আর নির্লজ্জ মুসলমান তোষণ ঘিরে সমালোচনা অগ্রাহ্য করে কানে তুলো আর পিঠে কুলো বেঁধে রাজ্য চালান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনো বিরোধিতাকেই গুরুত্ব দেন না তিনি। করেন না কোনো বিরোধী স্বরে কর্ণপাত। ২০১১-র পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে সাফল্য পেয়ে তিনি ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মতো ‘আমিই স্টেট’ হয়ে গিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে তিনি যেন প্রমাণ করেন যে, এই রাজ্যের ক্ষেত্রে তিনিই হলেন শেষ কথা। স্বাধীনতার ৭৮ বছরের মধ্যে ৫৩ বছর দেশ চালিয়েছে কংগ্রেস। ফলে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব চলে আসে। নিদারুণ অধঃপতনের দরুন বিগত ৩৬ বছরে কংগ্রেস এককভাবে কোনো জাতীয় নির্বাচন জিতে কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারেনি। এখন তারা মাত্র তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।
৩৪ বছরের উন্নাসিক সিপিএমকেও রাজ্যের সরকার কৃষকদের হাতে সরাসরি অর্থ পৌঁছে মানুষ উৎখাত করেছে।
দেওয়ায় বিদেশি মাওবাদ আর নকশালি খোকামি ধ্বংস হয়ে যায়। বাম মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী শ্রমিক আন্দোলনও শেষ হয়ে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ঘোটালা হলো ওবিসি তালিকায় মুসলমানদের মাত্রাহীন সংরক্ষণ। তাতে আদালতে তিনি বারবার ভর্ৎসৃত হন। ঝাড়ে-বংশে বিতাড়িত বিদেশি সিপিএমও তাই করেছিল। প্রবলভাবে মুসলমান তোষণের পরেও তাদের লজ্জাজনক বিদায় হয়। এর পরবর্তী পর্যায়ে কানে তুলো গুঁজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই থাকেন। যদিও তার কোনো প্রয়োজন নেই। এ রাজ্যের হিন্দুরা মুসলমানদের আক্রমণ করেছে এরকম কোনো নজির নেই। বরং সরকারি মদতে এর উল্টোটাই রাজ্যজুড়ে অহরহ ঘটে চলেছে।
১৯৪৭-এ সৃষ্টি হয় পশ্চিমবঙ্গের। তার ৭৮ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে ধুলাগড়, মোথাবাড়ি, মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটছে। শেখ শাজাহানরা আজ তৃণমূলের সম্পদ। তাদের মতো জেহাদি, দুষ্কৃতীদের হাতে হিন্দু নারীদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। ঠিক সেই কারণেই এ রাজ্যের মুসলমানরা মূল স্রোতে যুক্ত হয়নি। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঠিকই বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘রাষ্ট্রবাদী মুসলমান’ হয় না। সেকুলার শাসক তার নিজের সুবিধায় মুসলমান সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে সামাজিক, গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করে। হিন্দু ও মুসলমান বিভাজনের যে বাস্তবকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ রেখে গিয়েছিল, কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিদেশি বাম আর পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দল তৃণমূলও তাতে আক্রান্ত হয়েছে। তাতে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে একজন হিন্দু যেমন ভারতের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তেমনই একজন মুসলমানও রাষ্ট্রচেতনার বিরোধী হয়ে উঠেছে। ভারতীয় সভ্যতা- সংস্কৃতির সঙ্গে তারা একাত্ম হতে পারেনি যা কিনা কাম্য ছিল। এই সেকুলার শাসক দলগুলি মুসলমানদের ভারতীয়করণে বাধা সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের হাতে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়ায় বিদেশি মাওবাদ আর নকশালি খোকামী ধ্বংস হয়ে যায়। বাম মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী শ্রমিক আন্দোলন ও শেষ হয়ে যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন মুসলমানদের জন্য এই বাড়তি সংরক্ষণের নাটক করছেন? তিনি জানেন যে, এই রাজ্যের মুসলমানদের উপর বড়ো কোনো আক্রমণ বা ধাক্কা গত সাত দশকে আসেনি। তবু কেন ‘মুসলমানদের মসিহা’ সাজছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সরাসরি হিন্দু বিরোধিতার একাধিক নজির রেখে মুসলমান মৌলবি আর ইমামদের তিনি বোঝাতে চান যে, মুসলমান স্বার্থরক্ষাই তাঁর প্রধান কাজ। ইমাম- মোয়াজ্জেম ভাতা ঘোষণা, মহরমের কারণে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি, গরিব ও অনগ্রসর শ্রেণীর হিন্দুদের বঞ্চিত করে মুসলমানদের বেশি মাত্রায় ওবিসি সংরক্ষণ প্রদান, প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে ‘গন্দা ধর্ম’ শব্দোচ্চারণের মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত তার মরিয়া প্রয়াস জারি রাখেন।
রাজ্য সরকারের তোষণ নীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গ হলো জেহাদিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এই কারণে হিন্দুদের পুরো ভোট বিজেপি পায় না। পেলে রাজনৈতিক চিত্র রাতারাতি পাল্টে যেত। যদিও এখনও এই রাজ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। রাজ্যের ৭৪টি আসনে আনুমানিক এক কোটির ওপর মুসলমান ভোট করায়ত্ত করে আর তার সঙ্গে হিন্দু ভোটের একাংশ যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনায়াসে ভোেট জেতেন। দু’কান কাটা বধিরতা তাঁর সহজাত। তাই মাত্রাহীন দুর্নীতি বা নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক তোষণের কোনোরকম বিরোধিতায় ভোলার পাত্রী নন তিনি। বাম-কংগ্রেসের ফেলে যাওয়া সাম্প্রদায়িক উচ্ছিষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে গ্রহণ করেছেন তাতে তার পাপের মাত্রা মাপার ফিতে নেই। তবে রাজ্যের মানুষ সে ফিতে তৈরি করছেন কিনা ২০২৬-এর নির্বাচন তার দিকনির্দেশ করবে বলে মনে হয়।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)