নূতন ভারত
দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বহু বৎসর অবধি ভারতবাসী উন্নয়নের কোনো স্বাদ পরখ করিতে পারে নাই। কেননা দীর্ঘদিন দেশের শাসন
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকিয়াও কংগ্রেস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার নীতিপঙ্গুত্বে ভুগিয়াছে। তাহার উপরে স্বজনপোষণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারি
কংগ্রেসের সহিত সমার্থক হইয়া পড়িয়াছিল। স্বাধীন ভারতে প্রথম দুর্নীতি জিপ কেলেঙ্কারি হইতে শুরু করিয়া প্রায় প্রতিটি দশকে এইরূপ
কেলেঙ্কারি ঘটিয়াছে। ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটির শাসনকালে গত সত্তর বৎসরে দেশের এক বিশাল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি
হইয়াছে। দলটির আশীর্ষ নেতা-নেত্রী এমনভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছিল যে বিগত শতাব্দীর আশির দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব
গান্ধীকে সখেদে বলিতে হইয়াছিল, জনসাধারণের কল্যাণ ও দারিদ্র্যমোচনের নিমিত্ত এক টাকা কেন্দ্র হইতে পাঠাইলে মানুষের নিকট পৌঁছয় পনেরো পয়সারও কম। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে কংগ্রেস শাসনে দীর্ঘদিন মানুষ উন্নয়নের কোনোপ্রকার স্বাদ আস্বাদন করিতে পারে নাই।
কংগ্রেস শাসনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একথা সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার নজর দেওয়া হয় নাই। তাহার ফলে বৈদেশিক শত্রু
দেশের ভূমি জবরদখল করিয়া সর্বদা ভারতের প্রতি রক্তচক্ষু প্রদর্শন করিয়াছে। স্বাধীনতার সত্তর বৎসরেও তাহারা বলিষ্ঠ জাতীয় শিক্ষানীতি
প্রণয়ন করিবার প্রয়োজন মনে করে নাই। তাহার ফলে দেশাত্মবোধে ভরপুর স্বাভিমানী প্রজন্ম তৈরি হয় নাই। এককথায় বলিতে গেলে কংগ্রেস
এমন একটি সরকার পরিচালনা করিয়াছিল যেখানে মিথ্যা, প্রতারণা, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ সবকিছুই উর্বর ভূমি পাইয়াছিল। কংগ্রেস শাসনের মূল
নীতিই ছিল ‘পরিবার প্রথম’। ভারতবাসীর সৌভাগ্য যে, বিগত এক দশকের অধিক সময় যাবৎ দেশের শাসনভার পরিচালনার দায়িত্ব পালন
করিতেছে নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁহার সরকারের মূল নীতি হইল, ‘নেশন ফার্স্ট’। ২০১৪ সালের পর হইতে দেশ এক নূতন
নীতি দেখিতে শুরু করিয়াছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে দেশবাসী উন্নয়নের স্বাদ পাইয়াছে। দেশকে সক্ষম ও স্বাবলম্বী করিবার সর্বপ্রকার পরিকল্পনা
গৃহীত হইয়াছে এবং তাহা বহুলাংশে রূপায়িতও হইয়াছে। কোটি কোটি দেশবাসীর নিকট ব্যাংকের পাশবহির ব্যবস্থার দরুন সরকার প্রেরিত
প্রতিটি পয়সাই তাহাদের হাতে আসিয়া পৌঁছাইতেছে। নিঃসন্দেহ একথা বলা যাইতে পারে, বর্তমান ভারত নূতন ভারত। এই নূতন ভারতকে
সমগ্র বিশ্ব সম্মানের সহিত স্বীকার করিয়াছে।
বর্তমান ভারত সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হইল দেশকে উন্নতির চরমশিখরে লইয়া যাওয়া। ভারত আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে
পরিণত হইয়াছে। অর্থনৈতিক উত্থানের পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও একগুচ্ছ কর্মসূচি সমান গুরুত্ব পাইয়াছে। বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের বিশ্বাস
যে, ২০২৯ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হইবে। দুঃখের বিষয় হইল, দেশকে অধিকতর উন্নত, অধিকতর
শক্তিশালী, দেশের গণতন্ত্রকে অধিকতর মজবুত করিবার লক্ষ্যে যখন ভারত সরকার ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন, জিএসটি
নীতিতে আরও সংস্কার, সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনী বিল পেশ-সহ নানা উন্নয়নমুখী সংস্কার ও পরিকল্পনা গ্রহণ করিতেছে, তখন দেশের
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি তাহার অপপ্রচার করিয়া বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে। দেশকে অগ্রগতির পথে লইয়া যাইবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার
অদ্যাবধি যাহা যাহা কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছে, তাহারই তাহারা বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছে। আরও দুঃখের বিষয় হইল, তাহাদের বিরোধিতার প্রকার
শত্রুদেশের ভারত-বিরোধিতার অনুরূপ। যেন মনে হইতেছে, দেশের এইপ্রকার উন্নতিতে তাহারা খুশি নহে। দেশবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তিগুলিও
ভারতের উন্নতিতে খুশি নহে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে অশান্তি সৃষ্টি করিয়া প্রকারান্তরে তাহারা ভারতের বিরুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়া
দিতেছে। তাহা সত্ত্বেও এইকথা জোরের সহিত বলা যাইতে পারে, বর্তমান ভারত সর্বপ্রকার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করিতে সক্ষম। ভারতের
অধিকাংশ রাজ্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার-প্রদর্শিত পথের শরিক হইয়া রাজ্যবাসীকে সুশাসন প্রদান করিতেছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটিতে
শাসকদলের মদতেই সমস্ত প্রকার অরাষ্ট্রীয় গতিবিধি সক্রিয় হইয়া রাজ্যটিকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছাইয়া দিয়াছে। এক্ষণে পশ্চিমবঙ্গবাসীর আশু কর্তব্য হইল, এই নৈরাজ্যের অবসান ঘটাইয়া এই রাজ্যের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করা।