ফাঁদ পাতছে কেন্দ্র
ফেজ টুপিপ্রেমীযু দিদি,
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের কেমন সম্পর্ক থাকবে এসব নিয়ে চিন্তা তো প্রধানমন্ত্রীর রয়েছেই। সেইসব নিয়েই থাকতে পারেন। কিন্তু না। তিনি এখন এই রাজ্যের জনবিন্যাস নিয়ে চিন্তিত। এবার তিনি জনবিন্যাস মিশনের ঘোষণা করেও দিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায় আমি যা বুঝলাম, তাতে বাকি পররাষ্ট্র বিষয়ক সমস্যার সমাধান ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু বাংলাদেশ যে ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে ভারতে করে চলেছে তার জন্য এই রাজ্যটা একদিন হয়তো আজকের মতোও আর থাকবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কেন্দ্রের। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলোর জনবিন্যাস দ্রুত বদলে যাওয়া, একের পর জেলা মুসলমান প্রধান হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দিদি, দুধেল গাইদের প্রশ্রয় দিয়ে এরাজ্যের
বড়ো ক্ষতি হতে পারে কিন্তু ভোটবাক্স তো ভরাতে হবে! সেটাই এখন চিন্তার।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কী করতে চাইছেন সে কথা বলে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো একই সমস্যায় ভোগা অসমে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন সে কথা।
সেখানেই তো তিনি বলেছেন নতুন মিশনের কথা।
অসমে এই বক্তব্যের পরেই কলকাতায় ‘যৌথ সেনাপতি সম্মেলন’। উদ্বোধনে হাজির রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতি দু’বছরে একবার ভারতের সশস্ত্র
বাহিনীর তিন প্রধান-সহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্তারা এই সম্মেলনে বাহিনীর লক্ষ্য ও কর্মপন্থা নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৈঠক করেন। সেটা এবার কলকাতায় ভারতীয়
সেনার পূর্ব কম্যান্ডের স দপ্তর বিজয়দুর্গ বা ফোর্ট উইলিয়ামে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সেখানে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
এই বৈঠকের সঙ্গে ২০২৬ সালের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না দিদি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন-মানচিত্র বদলে যাওয়া নিয়ে দেশের
সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই বৈঠক কি গুরুত্বপূর্ণ নয় দিদি!
তবে দিদি, প্রধানমন্ত্রী যে ডেমোগ্রাফি মিশনের কথা বলেছেন সেটা কিন্তু আচমকা নয়। পূজার পরেই দেশজুড়ে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর। এই প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত হয়ে যাবে কত বিদেশি ভুয়ো পরিচয়ে এই রাজ্যে রয়েছেন। এর পরেই ২০২১ সালে করোনার জন্য না-হওয়া জনগণনার পরিকল্পনা রয়েছে। তার সঙ্গেই মনে হয় প্রধানমন্ত্রী যুক্ত করতে চাইছেন ডেমোগ্রাফি নির্ণয়। এই বদল যে একটা ষড়যন্ত্র তা গত ১৫ আগস্ট লালকেল্লার বক্তৃতাতেই স্পষ্ট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই যে জনসংখ্যার বদল এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের বাড়বাড়ন্ত কেমন ক্ষতি করছে সেটাও বলেছিলেন তিনি। আর তখনই লালাকেল্লা থেকে মিশনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।
এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই দিদি আপনার পাশে দাঁড়াতে সেকু, মাকু ও পাকুরা নিন্দা করতে শুরু করেছেন। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে বিশ্বের সব উন্নত দেশই এখন এ বিষয়ে মন দিয়েছে। দেশের মাটি থেকে বিদেশি হঠাও অভিযান বরং ভারত অনেক দেরিতে শুরু করেছে। কংগ্রেস জমানায় যা নিয়ে টু শব্দটি করা হয়নি। জনবিন্যাস মিশন যে হতে চলেছে তার ইঙ্গিত ছিল ২০২৪ সালের নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত ভারত সরকারের অন্তবর্তী বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সেখানে জানিয়েছিলেন, বিকশিত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবিন্যাসগত পরিবর্তন। এরফলে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেগুলি বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। উদ্ভূত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার
জন্য কী পন্থা নেওয়া হবে, ওই কমিটি তা সুপারিশ করবে বলেও বলা ছিল বাজেটে। এবার সেটাই করতে চাইছে কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী এরবার যখন বলেছেন, তখন ভয় পাওয়া কিন্তু শুরু হয়ে গেল দিদি। আমি ভাবছি এটা নিয়েও তো আপনাকে বিরোধিতা করতে হবে। কিন্তু কী বলবেন সেই বিরোধিতার সময়ে! আমার বিশ্বাস যে, আপনি ঠিক একটা লাইন বেছে নেবেন। হিন্দুদের ভয় দেখাতে হবে তো! ‘বাংলা খতরে মে’ বলার নতুন স্লোগান চাই দিদি। জম্পেশ স্লোগান চাই। সময় থাকতেই তৈরি করে রাখুন।