• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home প্রচ্ছদ নিবন্ধ

2nd June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
2nd June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

Issue 77-39-02-06-2025

প্লাস্টিক- পরিবেশ রক্ষার ভয়ংকর বিপদ
অনিকেত বৈশ্য
বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়-প্যাকেজিং, বাসনপত্র, ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা, কৃষি ইত্যাদি। কিন্তু এই বহুল ব্যবহৃত বস্তুটি আজ বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণের পরিসংখ্যান:
জাতিসঙ্ঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য (single-use plastic)। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হয়, ১২ শতাংশ দাহ্যকরণ করা হয় এবং বাকি ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক আবর্জনার ভাগাড়ে জমা থাকে বা সরাসরি প্রকৃতিতে মিশে যায় (UNEP, 2023)। ভারতে প্রতি বছর গড়ে ৩.৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয় (CPCB, 2022)
পরিবেশের উপর প্রভাব:
প্লাস্টিক প্রকৃতিতে সহজে পচে না। এক একটি প্লাস্টিক ব্যাগ বা বোতল পচতে ৪০০-১০০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এই দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে প্লাস্টিক ভূমি, নদী, হ্রদ ও মহাসাগরে জমে থেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সামুদ্রিক পরিবেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবেশ করে, যার ফলে সামুদ্রিক প্রাণী, পাখি ও মাছের মৃত্যু ঘটে বা তাদের খাদ্য শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটে (Jambeck et al., 2015)।
মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা এখন বাতাস, জল ও খাবারের মধ্যেও প্রবেশ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করছে, যা একটি ক্রেডিট কার্ডের ওজনের সমান (WWF, 2019)। এটি মানবদেহে ক্যানসার, হরমোনজনিত সমস্যা, প্রজননের সমস্যা ইত্যাদির কারণ হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা:
প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রক্রিয়া মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর, যার ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। অনুমান করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক শিল্প এককভাবে গ্লোবাল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের প্রায় ১৩ শতাংশ ভূমিকা রাখবে যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে (Center for International Environmental Law, 2019)।
সমাধান এবং ভবিষ্যৎ উদ্যোগ:
প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও নীতিগত স্তরে একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে:
Reduce (হ্রাস): প্লাস্টিক ব্যবহারে সংযম।
Reuse (পুনর্ব্যবহার): একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার।
Recycle (পুনঃচক্রায়ন): প্লাস্টিক সংগ্রহ করে নতুন পণ্যে রূপান্তর।
বিকল্প উপাদান:
জুট, কাগজ, গাছ-ভিত্তিক বায়োপ্লাস্টিক ব্যবহার। ভারত সরকার ২০২২ সালে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে বাস্তবায়নে কঠোরতা ও সচেতনতা বাড়ানো দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার:
প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের উপযোগিতা বাড়ালেও, এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে হলে এখনই প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
তথ্যসূত্র:
UNEP (2023). Turning Off the Tap: How the World Can End Plastic Pollution CPCB (2022). Annual Report on Plastic World Can End Plastic Pollution Jambeck, Let al. (2015). Plastic waste inputs from land into the ocean, Sci-ence WWF (2019). No Plastic in Nature: Assessing Plas-tic Ingestion from Nature to People. CIEL (2019). Plastic & Climate: The Hidden Costs of a Plstic Planet.


প্রকৃতি রক্ষতি রক্ষিতঃ
সোমকান্তি দাস
গাছকে সন্তানস্নেহে বড়ো করে চলেছেন, তাদের ছায়ায় বসে তাদের সঙ্গেই গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন লক্ষাধিক সন্তানের মা কর্ণাটকের তুলসী গৌড়া। আবার রাজস্থানে কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় তৈরি হয়েছে ১০০টি গাছ লাগানোর অভিনব পরম্পরা। বিষ্ণোই সমাজের অমৃতাদেবীর নেতৃত্বে অরণ্যরক্ষায় ৩৬৩ জন আত্মবলিদান দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশে চিপকো আন্দোলন গড়ে ওঠেছে অরণ্য রক্ষার্থে। সারা দেশে এমন উদাহরণ আছে যেখানে সাধারণ মানুষ বা গোষ্ঠী নিজেদের সময় ও অর্থ ব্যয় করে চলেছে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য। পরিবর্তে জুটেছে গাছপাগল, গাছবুড়ো প্রভৃতি উপনাম। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি নিজ কর্তব্যে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি।
যখন বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে সারা বিশ্ব চিন্তাগ্রস্ত, তখন সমস্যার সমাধানে উঠে এসেছে ভারতের নাম। প্রাচীন পরম্পরাকে টিকিয়ে রেখে প্রকৃতির সংরক্ষণের যে প্রক্রিয়া প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে তা বিশ্ব আজ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের নিরক্ষর মানুষটিও জানেন সেই পরম সত্যকে। প্রকৃতিকে শোষণ নয়, দোহন করে যতটা প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করা ভারতীয় সংস্কৃতির অভিন্ন অঙ্গ। আয়ুর্বেদিক বৈদ্যরা চিকিৎসার জন্য পাতা, বাকল বা মূল সংগ্রহের সময় সেই গাছের অনুমতি চেয়ে নেন এবং একটি গাছে হাত দেওয়ার আগেই কয়েকটি চারা রোপণ করেন। এখনো প্রতিটি হিন্দুবাড়িতে অন্তত একটি তুলসীগাছে নিত্য জল দেওয়ার পরম্পরা রয়েছে। কোথাও তার সঙ্গে ফনীমনসা বা বট-অশ্বত্থ পূজারও প্রচলন রয়েছে। একেক পূজায় একেক রকমের ফুল-ফল-পাতার প্রয়োজন হয়। আজও দুর্গাপূজা নবপত্রিকা পূজা ছাড়া অসম্পূর্ণ। তেমনই অপরাজিতা পূজা। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে রক্ষা করতে অরণ্যই একমাত্র রক্ষাকর্তা। তাইতো জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল ষষ্ঠীতে অরণ্যষষ্ঠী পালনের মাধ্যমে গাছেরই পূজা করা হয়।
আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীর ধারণে সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর আমরা নির্ভরশীল। অসুস্থ শরীরের জন্য হাসপাতালে গিয়ে প্রাণবায়ুকেও কিনে নিতে হয়। বহু শহরে খোলা বাতাসে শ্বাস নিতেও লোকে ভয় পাচ্ছে। হিন্দু সংস্কৃতিতে জলদান মহাপুণ্যের কাজ। কিন্তু জলসংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পৃথিবীর তিনভাগ জল থাকা সত্ত্বেও পানীয় জল কিনে নিতে হয়। কিন্তু আর কতদিন? যে গতিতে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে, তাতে শুধুমাত্র পানীয়জলের জন্যই যুদ্ধ শুরু হবে একদিন। ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে চরম জলসংকট দেখা দিয়েছে।
প্রকৃতির সঙ্গে এই যে একাত্মভাব তা কোনো পুঁথিগত বিদ্যায় আসতে পারে না। আজ যারা নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করছেন, তাঁরাই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। নিজেদের স্বার্থে জঙ্গল কেটে বিলাসবহুল রিসর্ট, হোটেল, পার্ক তৈরি চলছে। সম্প্রতি তেলেঙ্গানাতে অরণ্য ধ্বংস করার ঘটনা সকলের নজরে এসেছে। রাতের অন্ধকারে ময়ূরের চিৎকার করে কান্না, হরিণের এদিক ওদিক ছুটে চলা, নিজের বনভূমি রক্ষায় এক হাতিকে জেসিবিতে ধাক্কা মেরে চরমভাবে ক্ষতবিক্ষত হওয়া- সংবাদ শিরোনামে স্থান পেয়েছে। বহু রাজ্যে, বহু দেশে এমন অজস্র ঘটনা ঘটে চলেছে।
কুড়ি-পঁচিশ বছর আগেও রাস্তার দুধারে পুরনো শিমূল, বট, অশ্বথ, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি গাছ চোখে পড়ত। আজ সেই দৃশ্য পুরনো ছবির অ্যালবামে খুঁজে দেখতে হবে, বাস্তবে তা হারিয়ে গেছে। কিছু গাছপাগল মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেই রূপকে ফিরিয়ে আনতে। নিজেদের কাজের ফাঁকে বা কাজের সঙ্গেই সাইকেলে বা বাইকে, পায়ে হেঁটে, কখনো দল বেঁধে বা কখনো একাই রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাছ লাগিয়ে চলেছেন। নিয়মিত সেইসব গাছের পরিচর্যা করছেন। কেউ নিজের বাড়িতেই সাজিয়ে তুলছেন ছোট্ট বাগান। বাড়ির ছাদে গড়ে তুলছেন ছাদবাগান। কোথাও ছোট্ট একটা ঔষধি বাগান।
এই সব মানুষ শুধুমাত্র ফল বা ফুলের জন্য এসব করেন না। এসব করেন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধ থেকে। যখন গাছে নতুন ফুল-ফল আসে তখন প্রজাপতি, মৌমাছি, কত পাখি এসে জোটে। এই দৃশ্য যে অভাবনীয় আনন্দ দেয়, তা বর্ণনাতীত। প্রকৃতি সমস্ত প্রাণীকে সন্তানস্নেহে লালনপালন করে চলেছে, তাই তাকে রক্ষা করাটা যে সকলের কর্তব্য। প্রকৃতিকে রক্ষা করলে প্রকৃতিও সকলকে রক্ষা করবে।


জীবজগৎ রক্ষায় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ হলো একমাত্র বিকল্প
অংশুমান গঙ্গোপাধ্যায়
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরন্তর এগিয়ে চলেছে মানব সভ্যতা। এককালে অরণ্যানীর অভ্যন্তরে বিকশিত হয়েছিল প্রাচীন সভ্যতা। পরবর্তী পর্যায়ে জীবন-জীবিকার সুবিধার্থে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠে সভ্যতা। সেই সভ্যতার রূপটি ছিল আরণ্যক। পরবর্তীকালে সভ্যতার ক্রমোন্নতির ধারা বেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠতে থাকা শহর, জনপদ ও জনবসতিগুলির চরিত্র পরিবর্তিত হতে থাকে। তৈরি হতে থাকে মহানগর, শিল্পাঞ্চল। নানাভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন এবং তার ব্যবহার হয়ে ওঠে মানব সভ্যতার উন্নতির সোপান। বিগত কয়েকশো বছরে তা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস এবং তার বিনিময়ে এক-একটি দেশের জিডিপি বৃদ্ধিই যেন হয়ে উঠেছে বিশ্ব অর্থনীতির জিয়নকাঠি- মরণকাঠি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ শেষ হয়ে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের সূত্রপাত ঘটে। অর্থনীতি পরিচালনা, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলি গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দিতে থাকে নানা চুক্তি ও শর্ত। কিন্তু গরিব দেশগুলি ছিল নানা প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। সেই দেশগুলিতে বশংবদ সরকার ও প্রশাসক বসিয়ে দেশগুলির সম্পদ লুঠ করতে থাকে উন্নত দেশগুলি। প্রতিটি দেশের বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, জলসম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি হতে থাকে। এর সঙ্গে নানা শিল্পবিকাশের দরুন পরিবেশ দূষণ মাত্রাছাড়া আকার ধারণ করে। কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবহণ ক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি ব্যবহৃত না হওয়া, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার, প্রতিটি শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মিত না হওয়া, শিল্পাঞ্চলগুলি থেকে প্রতিনিয়ত নানা ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ, বিশ্বজুড়ে পরিবেশবিধি কঠোরভাবে বলবৎ না হওয়া, ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের জন্য টাওয়ার স্থাপন, তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ এবং ব্যাপক হারে অরণ্য ধ্বংস জল-মাটি-বায়ুকে করে তুলেছে বিষাক্ত। ফলে হয়ে চলেছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ধীরে ধীরে যেন হয়ে উঠছে মানুষের বসবাসের অযোগ্য। ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণের কারণে ওজোনস্তরের ফাটল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়ে চলেছে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা। মেরুপ্রদেশের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অরণ্য ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রাণী ও উদ্ভিদ। বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র। আবহাওয়া হয়ে উঠছে খামখেয়ালি। কোথাও অনাবৃষ্টি, কোথাও সাইক্লোন, কোথাও বন্যা, তো কোথাও ভূমিকম্প। পরিণামস্বরূপ মানব সম্পদ হানি, ফসল হানি ইত্যাদি। ভূগর্ভস্থ জলসম্পদের মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে। সম্প্রতি সংঘটিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, ১৯৯৩ থেকে ২০১০-এর মধ্যে পৃথিবী পূর্বদিকে প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার (৩১.৫ ইঞ্চি) হেলে পড়েছে।
এহেন সংকটজনক পরিস্থিতিতে বিশ্ব জুড়ে প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা দুটি প্রক্রিয়া অবলম্বনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে চলেছেন। ২০২১ সালের ৫ জুন (বিশ্ব পরিবেশ দিবসে), ২০২১ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত চলমান দশকটিকে ‘ইউএন ডিকেড অন ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন’ বা ‘বাস্তুতন্ত্র রক্ষার দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এই ঘোষণাপত্রে ‘ইকোরেস্টোরেশন’ (বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয় ও বিকৃতি রোধ) ও ‘বায়োরেমেডিয়েশন’ (জৈবিক প্রতিকার)-এর প্রক্রিয়ার বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধের ক্ষেত্রে এই কালখণ্ডটিই মানবজাতির কাছে শেষ সুযোগ বলে ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক স্তরের বিজ্ঞানীরা।
ইউনাইটেড নেশনস্ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন কর্তৃক প্রকাশিত নির্দেশাবলীতে অরণ্যভূমি, তৃণভূমি, কৃষিজমি, নদী, জলাভূমি, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র (প্রবাল-প্রাচীর), সমুদ্র উপকূল (ম্যানগ্রোভ অরণ্য) প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রকে সংরক্ষণের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের একাদশতম শ্লোকে শ্রীভগবান বলেছেন, ‘দেবান্ ভাবয়তানেন তে দেবা ভাবয়স্ক বঃ। পরস্পরং ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমবান্স্যথ।।’ এটিই হলো প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সনাতনী ধারা। আত্মোন্নতির স্বার্থে প্রতিযোগিতা ও প্রকৃতি ধ্বংসযজ্ঞের পরিবর্তে বিশ্বে বিরাজমান সব জীবের মধ্যে সুসংহত সম্পর্ক এবং পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার বাণী উচ্চারণ করেছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। নদী, জল, মাটি, বন্যপ্রাণ, পর্বত, অরণ্য, বৃক্ষরাজিকে পবিত্র জ্ঞান করে আবহমানকাল ধরে পূজা করে চলেছে ভারতবাসী। এরই মাধ্যমে হয়ে চলেছে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার সাধনা। প্রকৃতিকে শোষণের পরিবর্তে ‘দোহন’-এর মাধ্যমে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষের সন্ধান ও প্রাপ্তিই হলো ভারতীয় গ্রোথ মডেল। প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের দ্বারা জিডিপি-কেন্দ্রিক, পাশ্চাত্যধর্মী আর্থিক উন্নয়নের পরিবর্তে ভারতীয় পদ্ধতি ও চিন্তাধারা অনুসরণে অর্থনীতি পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ব-পরিবেশ রক্ষাই হোক আগামীদিনে বিশ্ববাসীর সংকল্প


ভারতবোধ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এক সূত্রে আবদ্ধ
বৈদিক ঋষিদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘ও মধুবাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।। মধু নক্তমুতোষসি মধুমৎ পার্থিবং রজঃ। মধু দৌৗরস্তু নঃ পিতা।।’ মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমানস্তু সূর্যঃ। মাধ্বীদর্গাবো ভবস্তু নঃ।। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬।৩।৬)
অর্থাৎ বায়ু নদী মধুময় হোক। মধুময় হোক ওষধিসকল, দিন রাত্রি মধুময় হোক। মধুময় হোক ভূলোক এবং পিতৃস্থানীয় দ্যুলোক। (বেদ, মধুমতীসূক্তম)। এ হলো প্রকৃতিপ্রেম এবং পরিবেশ ভাবনার নিবিড় ভাব। একুশ শতকের পৃথিবী- কত উত্তেজনা, প্রশ্ন উত্তর, সমস্যা সমাধান। বিষয় একটাই, পরিবেশ চেতনা। প্যারিস কনভেনশন থেকে জি-২০ সামিট- সর্বত্র পরিবেশ চর্চা। সময়ের গ্রাসে মানুষের বিপুল লোভে এই পৃথিবী দূষিত। নৈতিকতার ঘরে বিপুল অনাচার, তাই পরিবেশ দূষণের মাত্রাটাও তার সাহস বাড়িয়েই চলেছে। যেমন বড়ো বড়ো চর্চা, গবেষণা বিশ্বব্যাপী চলছে, তা অতি অবশ্যই চলুক। যে যত বড়ো বিজ্ঞান প্রযুক্তিই জানুক না কেন, তাকে মাথা নত করতেই হবে ফলিত বিজ্ঞানের কাছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও ফলিত বিজ্ঞানের গুরুত্ব, তাৎপর্য, প্রয়োগ, বল, শক্তি বিন্দুমাত্র কমেনি। ঠিক তেমনই পরিবেশ সংরক্ষণের ঘরেও ইনডিজেনাস নলেজ অর্থাৎ দেশীয় ও আঞ্চলিক, নিজস্ব পরিবেশ রক্ষার সংরক্ষণের যে সব আয়োজন, রকমফের আবহমানকাল ধরে চলছে, তা প্রয়োগের ঘরে আরও বেশি সংরক্ষণ দাবি করে।
এইসব ইনডিজেনাস নলেজ অর্থাৎ আঞ্চলিক দেশীয় পদ্ধতির উদ্ভাবকরা এমন নয় যে তারা তপস্বী। তারা দরিদ্র তো কোনো ভাবেই নয়। তাদের নিজস্বতায় ভরপুর এবং অঞ্চল বিশেষে সেই সব দেশীয় পদ্ধতিতে ভর করেই তার আধুনিক রূপসজ্জা কখনো তৈরি হচ্ছে। ভারতের আরও এক মজার ব্যাপার হলো, প্রত্যেক প্রদেশে পরিবেশ রক্ষার যত বিশেষ আয়োজন, পদ্ধতি দেখা যায় তার অধিকাংশই রক্ষা করছে আমাদের জনজাতির মানুষজন। নগরের দূষণ যখন মানবিক সকল সত্তাকে গ্রাস করে তার বিষদাঁত দেখাচ্ছে, তখন গ্রামাঞ্চলের, পাহাড়ের, মরু অঞ্চলের স্থানীয় উপজাতি জনজাতির মানুষরা পরিবেশে ভাবনায় ফলিত বিজ্ঞান প্রদর্শন করছে। মৃত্তিকা সংরক্ষণের অসম্ভব তাগিদ স্বাভাবিকভাবেই সেইসব অঞ্চলে পাওয়া যায়, যেখানে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাকৃতিক ধর্ম। তাই স্বাভাবিকভাবেই মৃত্তিকা সংরক্ষণের অভূতপূর্ব সব পদ্ধতি পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতে দেখা মেলে। মৃত্তিকা ও জল সংরক্ষণ অনেক সময়ই যৌথ সংরক্ষণের আওতায় আসে। পৃথক পৃথকভাবে সব প্রদেশের সব দেশীয় সংরক্ষণ রীতি আলোচনার বিস্তর অবকাশ এখানে নেই।
কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া উল্লেখ না করলেই নয়। এই ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে, কারণ ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের রূপকার এই মডেল। যেখানে জল মাটি সংরক্ষণ, মাটি ক্ষয় রোধ, মাছ সংরক্ষণ ইত্যাদি সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের এক নজির তৈরি করেছে। পাহাড়ের নদীগুলিকে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি টার্শিয়ারি চ্যানেলে বিভক্ত করে তাতে কখনো বাঁধ দেওয়া, কোথাও নির্দিষ্ট আনুপাতিক হিসেবে কৃষিজমিতে সেই জল চ্যানেল পাঠানো, সেই জমিতে বাঁশের বেড়া গঠনের দ্বারা ভূমিক্ষয়রোধ, অতিরিক্ত ভূমিজল ড্রেনের মাধ্যমে নিষ্কাষণ করা, মাঠের মাঝে উলম্ব খাত গঠন এবং সঞ্চিত জলে মাছ চাষ, মাঠে ঋতু বিশেষে চাষ, ফলন, উৎপাদন- এই সামগ্রিক ইন্টিগ্রেটেড কনজারভেশনটিই আপাতনি ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসিত। অরুণাচলের মেঠো পাহাড়ি মানুষগুলো লিখিত টেকনিক্যাল বিদ্যা ছাড়াই আবিষ্কারক বুদ্ধিতে কী চমৎকার এক সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ করে চলেছে।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে মেঘালয়ের বাঁশের তৈরি ড্রিপ জল সংরক্ষণ পদ্ধতি। বাঁশের চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে পাহাড়ের জল তারা সংরক্ষণ করছে এবং তাতে অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ও রোধ হচ্ছে। মিজোরামের পাহাড়ের খেলা বড়ো অদ্ভুত! পাহাড়ের ঢাল এমনই যে পাহাড়ের মাঝে মস্ত সব খাত। জল ধরার বড্ড সমস্যা। গ্রীষ্মে জলকষ্ট পরিচিত। রুফটপ ওয়াটার হারভেসটিং কোমর বেঁধে ওখানেই শুরু হয়। তারপর তো তা অন্যান্য প্রদেশে জনপ্রিয়তা পেল। এখন তো প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার সাজানো-গোছানো বাড়িতে জল ধরার ব্যবস্থা রাখছেন। জল সংরক্ষণের নানান মডেলের সন্ধান আমাদের প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেই পাওয়া গেছে। আজ যখন নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় ধোলাবীরা, লোথার্লের জল সংরক্ষণের ছবি দেখছে সারা বিশ্ব, তখনই প্রমাণ পাচ্ছে নগর গঠন ও পরিবেশ চেতনা- যাকে আধুনিক ভাষায় সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট বলে তা সেই প্রাগৈতিহাসিক ভারতে পূর্ণমাত্রায় ছিল।
আধুনিককালে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে মহারাষ্ট্রে বান্দারা, মধ্যপ্রদেশে তাল, উত্তরপ্রদেশে বুন্দি, বিহারে আহার ও পাইন, হিমাচলপ্রদেশের কুল, জম্বুর, কান্দি অঞ্চলের পাহাড়ি পুকুর, রাজস্থানে খাদিন, তামিলনাড়ুর এরিস, কর্ণটিকের কাট্টা, কেরালার সুরঙ্গম- নিজ নিজ স্টাইলে স্বতন্ত্র জল সংরক্ষণের বাহবা আদায় করেই ছাড়বে। ১০০ হেক্টরের বেশি আধা শুদ্ধ জমি যা আজ কচ্ছের রানে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার ধোলাবীরা। যে কথা আগেই বলছিলাম। সারা বিশ্ব চমকে গেছে এমন মরু অঞ্চলে এতো অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে হাজার হাজার বছর আগের সভ্যতা কেমন করে জল সংরক্ষণে চেক ড্যাম, চ্যানেল নেটওয়ার্ক, ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ, ১৬টি জলাধার তৈরির মাধ্যমে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ-এতো কিছু। এই ধোলাবীরাই যেন হেঁকে বলছে আজকের সব উন্নত জল সংরক্ষণ প্রণালী প্রকল্পকে, যা আমাদের ভারত সংরক্ষণ বিজ্ঞানে বিশ্বকে দর্শন রূপ দিতে পারে।
নাগাল্যান্ডে ঢালু পাহাড়ে এক মৌলিক পদ্ধতিতে মাটি সংরক্ষণ করা হয়, যার পরিচিত পোশাকি নাম Agriculture with Alnus nepalensis (Alder) tree; এই গাছগুলিকে পাহাড়ের ঢালে লাগানো করা হয়। ৫-৬ বছরের মধ্যে বেশ ভালো বৃদ্ধি পেতেই ডাল-পাতা ছেঁটে তা পুড়িয়ে মাটিতে মিশ্রিত করে সেই মাটিতে চাষ করে। ওই গাছটি মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে, আবার ভূমিক্ষয়ও রোধ করে। এছাড়াও জ্যাবো পদ্ধতিতে জল-ভূমি-অরণ্য সংরক্ষণ এক বিশেষ আঞ্চলিক নাগাল্যান্ডীয় বৈশিষ্ট্য বহন করছে। প্রত্যেক কৃষক, পশুপালক ভূমি সংরক্ষকের গ্রামভিত্তিক নিজস্ব দায়িত্ব পালন করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই জ্যাবো পদ্ধতি দেখে জেনে আপ্লুত। ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রতীক হতে পারে এই জ্যাবো। এতে সয়েল-ওয়াটার কনজারভেশন অর্থাৎ মাটি-জল সংরক্ষণে কনটিউর পদ্ধতি, পারকোলিয়ান ট্যাঙ্ক গঠন, মাটির আর্দ্রতা রক্ষার্থে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি বণ্টনে কস্ট এফেকটিভ পথে সংরক্ষণ ও উৎপাদন দুই-ই সম্ভব।
আজকে পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর, রোপার, গুরদাসপুরে উত্তর-পূর্ব ভারতের ইনডিজেনাস নলেজকেই একটু অদলবদল করে প্রয়োগ করা হচ্ছে। হিমাচলপ্রদেশের কাঙ্গড়া, উনা, বিলাসপুর, হামিরপুর, চম্বা, সোলান জেলাতে ভূমিক্ষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি। আইআইটি কানপুর ভারতের পাহাড়ি মানুষের ওই সহজ সরল ও সুন্দর সংরক্ষণ পদ্ধতিগুলিকেই প্রশিক্ষিত প্রয়োগ রূপে এনেছে এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক উপায় কৃষক মহলে বিস্তার লাভ করছে। ফিল্টার স্ট্রিপ অথবা আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় সয়েল মালচিং বা আরথিং আপ, সয়েল কমপ্যাকটিং ইত্যাদি গবেষণাভিত্তিকভাবে আইআইটি কানপুর নিঃসন্দেহে নজির সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ওসব তো ফলিত বিজ্ঞান! প্রথম নলেজ কিন্তু সেই নাগাল্যান্ড, মেঘালয় বা এমন কোনো এক মেঠো পাহাড়ি বিদ্যার থেকে আয়ত্ত করে পরবর্তীতে আইআইটি তাকে গবেষণাকক্ষে নবনির্মিত থিয়োরিতে পরিণত করেছে। পাহাড়ের মানুষগুলো সংরক্ষণ বিদ্যার চাবি দিয়েছে, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বিশ্বের দরবারে পেশ করেছে আইআইটি কানপুর। সংরক্ষণের প্রসঙ্গে ভারতের পূর্বতম প্রান্ত মেঘালয়; পশ্চিমতম প্রান্তের রাজস্থানের বিষ্ণোই জনগোষ্ঠী যেন নিজেই এক মস্ত ইনটিগেশন। বিষ্ণোই হিন্দু জনগোষ্ঠীর পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশ প্রেম এবং পরিবেশ সচেতনতা এক বিস্ময়ের অধ্যায়।
সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট পরিবেশ চর্চার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাঁতভাঙা জার্নাল পড়ার আগে যেতেই হবে বিষ্ণোইদের গ্রামে। ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা লালনপালন করছে প্রকৃতিকে। বন্যপ্রাণ আবার পৃথক কী? বিষ্ণোই মায়েরাই পৃথিবীকে চেনাল, দেখাল; হরিণ শাবক বিষ্ণোই মায়ের স্তন্যপান করছে। পুঁচকে হরিণ শাবক আপন সন্তানের মতো বড়ো হয় বিষ্ণোই পরিবারে। এইভাবেই প্রতিটি পাখি, পশু, গাছ ও মানুষ সহাবস্থান করছে। ইকোসিস্টেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ বিশ্বের বুকে এই বিষ্ণোই জনগোষ্ঠী। প্রকৃতি সংরক্ষণে লড়াই আন্দোলনটাও পৃথিবী শিখল বিষ্ণোইদের থেকেই। আজ থেকে ৩০০ বছর আগে রাজস্থানের মাড়ওয়ার অঞ্চলের এক নারী অমৃতাদেবী বিষ্ণোই-সহ সারা গ্রামের মহিলারা রাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। গাছ কাটতে দেবে না। গাছ ও প্রাণী থাকবে অক্ষত। বিশ্বের যে কয়টি প্রথম শ্রেণীর সংগঠিত সংরক্ষণ আন্দোলন তার পাকা ইতিহাস গড়েছে তার মধ্যে অমৃতাদেবীর লড়াই ভিন্নতার দাবিদার।
সেদিন অরণ্য সংরক্ষণের দাবিতে ৩৬৩ জন গ্রামবাসী নিহত হন। ইকো ফ্রেন্ডলি রিলিজিয়নের শিরোপা পেয়েছে বিষ্ণোই। ভারতের সংস্কৃতি সব কিছুই সংরক্ষণ করতে শেখায়। ইতিহাস হোক, ধর্ম হোক কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ। সংরক্ষণের ধারক-বাহক বলেই ভারতীয় সংস্কৃতি বিশ্বের চমৎকার বিস্ময়ের বিষয়। বেটার ইন্ডিয়া যখন সর্বত্র নারীশক্তির বন্দনা করছে তখন ফিরে তাকাতেই হয় আমাদের সংরক্ষিত ইতিহাস পাঠাগারে যেখানে লেখা আছে পরিবেশ আন্দোলন হয়েছিল ভারতের মেয়েদের হাত ধরেই। সেদিন সংরক্ষণের জন্য রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল, আর আজকে রাজশক্তি কর্মসূচি করছে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণের। পরিবেশ সমস্যা এক জ্বলন্ত সমস্যা, সংকটও। মানবজাতির জন্য কখনো কখনো লাল সংকেতও। ভারতের মাথাব্যথা যথেষ্ট। বহু সময়েই মানুষের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। এমনকী প্রশাসনিক গাফিলতিও অসংখ্য। ভারতের মাটিতে কান পাতলেই শোনা যায় সংস্কৃতির শিক্ষা, ইতিহাস শিক্ষা। যা নিখিল মানবকে পরিবেশ সংরক্ষণের বোধে, জ্ঞানে ঋদ্ধ করতে পারে।
সম্রাট অশোকের দ্বিতীয় শিলালিপিতে এখনো অটুট রয়েছে ভারতাত্মার সচেতনতা ‘হরাপিতানি চ রোপাপিতানি চ’- অর্থাৎ সবুজায়ন করতে হবে। বৃক্ষরোপণ করতে হবে। লুম্বিনী স্তম্ভলিপি পাঠোদ্ধার যেদিন হলো সেদিন সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করল সম্রাট অশোককে। প্রাচীন ভারত কেবল ধর্ম, যুদ্ধ, হাতি ঘোড়া রথ, রাজশক্তি রাজধর্মে ভরপুর ছিল না, ছিল পরিবেশ রক্ষার বিশ্বস্ত অভ্যাস। ভারতবোধের সঙ্গে প্রকৃতি সংরক্ষণ এক অদ্ভুত শক্তিতে আবদ্ধ |


জলসংকট বিশ্ববাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনো বাধে, তা জমি বা দেশ দখল নিয়ে নয়, জলসম্পদের অধিকার নিয়ে বাধবে। তাই, কোমর বেঁধে জল অপচয় রোধ করতে নেমে পড়া ছাড়া দ্বিতীয় উপায় নেই।
হীরক কর
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা অনেকদিন ধরে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য বলছে, ১৯৪৭ সাল থেকে মাথাপিছু একজন মানুষের যত পরিমাণ জল লাগে, তার পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে মানুষের ব্যবহার্য জলের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। অনেকেই জানেন এই পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ শতাংশ লবণাক্ত এবং পানের অযোগ্য। আর ২ শতাংশ তুষার হয়ে জমাট বাঁধা অবস্থায় রয়েছে। মাত্র ১ শতাংশ জল সারা পৃথিবীর মানুষ নানাভাবে ব্যবহার করে। তাই এক ভয়াবহ দিন আসছে সামনে। সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড-এর রিপোর্ট বলছে, ১৯৮৬ সালে কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত এলাকায় গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল ২৩২টি এবং হাতপাম্প-যুক্ত অগভীর নলকূপ ছিল ৫ হাজার। গভীর আর পাম্প-যুক্ত অগভীর নলকূপ- দু’ধরনের নলকূপের মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে তোলা জলের পরিমাণ তখন ছিল দৈনিক ১২১.৫ মিলিয়ন লিটার। ২০০৬ সালে সেই সংখ্যা কমলেও শহর থেকে এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি নলকূপ।
২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামের সমস্ত বাড়ি বাড়ি নলবাহিত বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘জল জীবন মিশন প্রকল্প’-এর সূচনা করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জল জীবন মিশন প্রকল্প’-সব থেকে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের এক রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গকে চাহিদা মতোই অর্থ জোগানো হচ্ছে। কিন্তু কাজের গতির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, আগামী বছর মার্চের মধ্যেই রাজ্যের গ্রামের প্রতিটি বাড়ি পৌঁছে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, ‘হর ঘর জল’। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের হাত ধরে সমগ্র দেশের ১২ কোটি ৯২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে এই নলবাহিত বিশুদ্ধ পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছিয়ে গেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান বেশ খারাপ। পশ্চিমবঙ্গের ১ কোটি ৭৩ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে মাত্র ৬৪ লক্ষ ৮৪ হাজার পরিবার এই পরিষেবা পেয়েছে। এই রাজ্যের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী পুলক রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর কাজ চলছে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে বলেই সময় একটু বেশি লাগছে’।
এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে রাজ্যের গাফিলতিকে দায়ী করছে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেক বাড়িতে এখনো পৌঁছায়নি নলবাহিত পানীয় জল। এখানেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, কবে পশ্চিমবঙ্গবাসী এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হিসেবে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ পাবে? জল জীবন মিশন ড্যাশবোর্ডে এক নজরে দেখা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গ এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পের রাজ্যের মাত্র ৫৪ শতাংশ কভার করেছে। আর বাস্তবে যেখানে পাইপ লাইন বসানো হয়েছে, সেখানেও জল পর্যন্ত পড়ছে না। কোথাও আবার সেই পাইপ লাইন পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। যেমন, হুগলির বেরাবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গোরডিহি গ্রামের বাসিন্দা বেদানা ধাড়া। তাঁর বয়স ৬৪ বছর। তাঁর বাড়ির কাছে একটি আবর্জনার স্তূপ থেকে একটি জং ধরা পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন বছর আগে জাতীয় ‘জল জীবন মিশন’-এর অধীনে ভারতজুড়ে পরিবারগুলোতে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য এই পাইপ বসানো হয়েছিল।
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর তরফে প্রকাশিত ‘স্টেট অব ইন্ডিয়াজ এনভায়রনমেন্ট ২০১৯’ রিপোর্টে জলের অভাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। ওই রিপোর্টে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’-এর (ডব্লুডব্লুএফ) একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে যা বলা হয়েছে, তা রীতিমতো আশঙ্কার। ভারতের যে ক’টি শহরে পানীয় জল নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কলকাতা।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখনই যদি জলের অপচয় বন্ধ না করা হয়, তাহলে আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। জলের অপচয় রোধ করার জন্য প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব জল দিবস পালিত হয়। জলের অপচয় রোধ এবং মানুষকে এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এই দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু শুধু উৎসব অনুষ্ঠান করলেই হবে না, সচেতনতা খুব প্রয়োজন।
২০১৯ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তারপর থেকে দেশে এই ব্যাপারে অগ্রগতির হার যথেষ্ট। ভারতের ১৯ কোটি ৪০ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ১১৪ মিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ পরিবারে ইতিমধ্যেই নলবাহিত জলের কল স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। তবে একটি বড়ো প্রশ্ন থেকেই যায়, সব বাড়িতে যতটা পরিমাণ জলের প্রয়োজন, সেই জল আদৌ পৌঁছচ্ছে কি? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে ভারতে পানীয় জলের ভয়াবহ অভাব লক্ষ্য করা যাবে।
ভারতে নদী ও জলাশয়গুলোর অবস্থা খুব শোচনীয়। ভারতে ভূগর্ভস্থ জলের মোট পরিমাণের ৮৭ শতাংশ সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। আর এত বেশি পরমাণে জলের উত্তোলনই ভূগর্ভস্থ জল হ্রাসের অন্যতম কারণ। প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার ফলে সঞ্চিত জলের পরিমাণ যে হারে কমছে, তা সম-পরিমাণে পূরণ হচ্ছে না। কারণ মাটির উপরের জল নানাভাবে অপচয় হচ্ছে। যেসব জলাশয়, হ্রদ বা প্রস্রবণ থেকে ভূগর্ভে জল যায়, সেগুলোও ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। ভারতে সেচের কাজ ৬২ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরশীল। আর তার পরিবর্তে ৮৭ শতাংশ উত্তোলন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর জল অপচয় হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় ৮৫ শতাংশ জল সরবরাহ করা হয়। শহর এলাকায় সরবরাহ করা হয় ৫০ শতাংশ জল। আর ভুগর্ভস্থ জল ভাবনাচিন্তা না করেই খরচ করা হচ্ছে। আর এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। এবং সেই দিন আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। কৃষিকাজে যেখানে জলের অত্যধিক প্রয়োজন পড়ে না, যেমন আখ চাষ কিংবা কলা চাষ, সেই সব স্থানে জল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির ধরন বদলানোর ফলে এমনিতেই ভূগর্ভস্থ জলে টান পড়ছে। সেই অবস্থায় জলের এই ধরনের অপচয় ভবিষ্যতে জলসংকট ডেকে আনতে পারে। যার মাশুল গুনতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। এমনকী যেখানে গোটা দেশের মানুষ ভুগর্ভস্থ জলের উপরই নির্ভরশীল, সেখানে এই জলকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা উচিত।
‘জল জীবন মিশন-এর অধীনে যদি ভারতের সব বাড়িতে নলবাহিত জলের কল স্থাপন করা যায়, তবেই একমাত্র ভূগর্ভস্থ জলের দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে ২০১৯ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়। এ রাজ্যে তা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি। ২০২১ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ গতি পায় রাজ্যে। নিয়ম অনুযায়ী, জল জীবন মিশন প্রকল্পে মোট খরচের ৬০ ভাগ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের এবং বাকি ৪০ ভাগ অর্থ রাজ্যের দায়িত্বে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের হাতে থাকা এই প্রকল্পে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় শেয়ারের বাজেটে ধরা ৫,০৪৯.৯৮ কোটি টাকার মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২,৫২৪.৯৯ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার তার শেয়ারের বাজেট হিসেবে ধরেছিল ৪,৯৯০.৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ করেছে ৩,৭৫৭.৪৫ কোটি টাকা। অনেক রাজ্য কেন্দ্রীয় অর্থ না মেলার জেরে প্রকল্পের কাজ বাধা পাচ্ছে। দপ্তর সূত্রে খবর, এমন অবস্থায় রাজ্য কেন্দ্রীয় শেয়ারের বাইরে অতিরিক্ত ১,২৯১.৩৮ কোটি টাকা এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ করেছে।
দেশের রাজধানী দিল্লিতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জলসঙ্কটের সমস্যাও। বিশেষত গ্রীষ্মকালে এই সঙ্কট আরও বেড়ে যায়। দিল্লি যমুনা নদীর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু নদীটি খুবই খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। দিল্লি ওয়াটার বোর্ডের মতে, দেশের রাজধানী মোট জলের চাহিদার ৯০ শতাংশেরও বেশি জলের জন্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলির ওপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভস্থ জল ছাড়াও গঙ্গা, যমুনা ও সিন্ধু অববাহিকা থেকে জল পাওয়া যায়। বর্তমানে রাজধানীর ৯৩ শতাংশ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যান্য শহরের মানুষ দিল্লিতে আসায় এখানে দ্রুত জলের চাহিদা বাড়ছে। আগামীদিনে দিল্লিবাসী ব্যাপক জলসঙ্কটের সম্মুখীন হবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে পৃথিবীর ৯.৩৩ কোটি মানুষ জলসংকটের সম্মুখীন হয়েছে। এরপর অনেক দেশেই এই জলসংকট দ্রুত বেড়ে যায়। এশিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ জলসংকটের সম্মুখীন। এই সমস্যা উত্তর-পূর্ব চীন, ভারত ও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি। এসব দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের জন্য পানযোগ্য বিশুদ্ধ জলটুকুও নেই। শুধু যে এসব দেশ তাই হয়, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই পানীয় জলের সমস্যা ভয়াবহ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। তবু জলের অপচয় কমছে না বিন্দুমাত্রও। উলটে প্রতি বছর জলের ব্যবহার বাড়ছে ১ শতাংশ। এই রিপোর্ট বলছে, ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে বিশ্বজুড়ে বন্যার হার বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। সেই সঙ্গে একইভাবে বেড়েছে খরাও। যার বেশিরভাগটাই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটছে।
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভা এলাকায় দৈনিক ৪৪৬ মিলিয়ন গ্যালন অর্থাৎ ২০২ কোটি লিটার পরিশ্রুত পানীয় জল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত জলের পরিমাণ ধরলে প্রত্যেক বাসিন্দার ৪৫০ লিটার জল পাওয়ার কথা। অথচ অপচয়ের জেরে কলকাতা পুর এলাকায় ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভমিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার জল নষ্ট হয়। শতাংশের হিসেবে যা দৈনিক উৎপাদিত জলের ২৮-৩০ ভাগ। এক হাজার লিটার পরিশ্রুত পানীয় জল উৎপাদন করতে চার টাকা খরচ হলে অপচয় হওয়া ৫০ কোটি লিটার জল তৈরি করতে ২০১৯ সালে খরচ হতো প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার জল নষ্ট হয়েছে এ শহরে।
পশ্চিমবঙ্গের সুজলা সুফলা অংশটুকুর বাইরে বেরিয়ে কেউ কিছু দেখতে চায় না, ভাবতে চায় না। যেন পুরো রাজ্যের ছবিটাই এক রকম। এই ভাবের রাজ্যে ডুবে থাকা বাঙ্গালির মজ্জাগত। শুধু প্রবাসীরা নন, তাঁদের ব্যাপারটা তো তবু খানিকটা বোধগম্য- পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে বসবাসকারীরাও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের বাইরে বাকি রাজ্যের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে নারাজ। তাঁদের দৈনন্দিন জল-বাস্তবটুকু অতি সীমিত, কল খুললে জল, রাস্তায় পা ফেলতেই কাদা বাঁচিয়ে হাঁটা, পচা জলের বদগন্ধের সঙ্গে মানিয়ে চলা, এটা তাঁরা জীবনের অঙ্গ মাত্র মনে করেন। গ্রীষ্মকালে নাগরিকদের জন্য জলের বেশির ভাগটাই বাইরে থেকে তুলে এনে বসতির ভেতর জমা করা জল। কিছু ক্ষেত্রে উপচে পড়া জলের নিকাশি পথটিও নেই। অন্তত যতটা ও যেমনটি থাকার কথা, তেমনটি তো নেইই। অথচ সকলেই এসব নিয়ে বেশ উদাসীন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো এলাকাগুলোতে ইতিমধ্যেই জল না পাওয়ার হাহাকার শুরু হয়েছে। জল জীবন মিশন’-এর অগ্রগতিতে ভাঁটা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি গ্রামীণ বাড়িতে নিরাপদ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু অনেক জায়গায় প্রকল্প পৌঁছলেও জল পৌঁছায়নি বলেই অভিযোগ।
ভারতের জলসঙ্কট একটি জটিল সমস্যা যা একাধিক কারণে উদ্ভূত। দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অস্থিতিশীল কৃষি পদ্ধতি জলের চাহিদা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে, যার ফলে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ধরন তৈরি হয় এবং জলের উৎসগুলো প্রভাবিত হয়। অদক্ষ জল ব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং দূষণও একটি ভূমিকা পালন করে, যা জলের ঘাটতিকে একটি উদ্বেগজনক বিষয় করে তোলে
ভারতে জল সংকটের মূলে রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহার, অপর্যাপ্ত বৃষ্টির জল সংগ্রহ এবং জল সম্পদের অব্যবস্থাপনা। জলাশয়ের দুষণ এবং অদক্ষ কৃষি সেচ পদ্ধতি এই সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে জলের প্রাপ্যতা ও গুণমান হ্রাস পায়।
জলসংকট মানুষের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। পরিষ্কার জলের অভাব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা জলবাহিত রোগের কারণ হয়। মহিলাদের প্রায়শই দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে জল আনার বোঝা বহন করতে হয়, যা শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সুযোগগুলোকে সীমিত করে তোলে। ভারতে জল সমস্যা সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করে।
দেশের সরকারি-বেসরকারি জলাশয়ের নিরিখে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। গণনায় প্রকাশ যে শহরাঞ্চল, গ্রামাঞ্চল, ব্যক্তিগত অধিকারে থাকা জলাশয় ও মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে প্রথম সারির পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথম। সেচের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান চতুর্থ। অন্য চারটি রাজ্য হলো ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও গুজরাট। গণনায় আরও প্রকাশ, শহরাঞ্চলের জলাশয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা পঞ্চম স্থান অধিকার করে রয়েছে। দেশে সর্বমোট ২৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯৭.১ শতাংশ অর্থাৎ, দেশে সর্বমোট ২৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯৭.১ শতাংশ অর্থাৎ, ২৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫টি জলাশয় রয়েছে গ্রামীণ এলাকায় এবং কেবলমাত্র ২.৯ শতাংশ অর্থাৎ ৬৯ হাজার ৪৮৫টি জলাশয় রয়েছে শহরাঞ্চলে। জলাশয়ের নিরিখে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও অসম। জলাশয়গুলোর মধ্যে ৫৯.৫ শতাংশ পুকুর, ১৫.৭ শতাংশ ডোবা, ১২.১ শতাংশ জলাধার, জল সংরক্ষণ প্রকল্প ও বাঁধ রয়েছে ৯.৩ শতাংশ, সরোবর ০.৯ শতাংশ এবং বাকি ২.৫ শতাংশ অন্য ধরনের জলাশয় রয়েছে। দেশের সামগ্রিক জলাশয়ের ৬৩ শতাংশই রয়েছে এই রাজ্যগুলোতে।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রক দেশজুড়ে জলাশয়গুলোর এই গণনা করল। প্রাকৃতিক জলাশয়-সহ মানবসৃষ্ট জলাশয় যেমন পুকুর, দীঘি, সরোবর প্রভৃতি-সহ দেশের জলসম্পদের এক সর্বাত্মক চিত্র এই গণনায় ধরা পড়েছে। এর পাশাপাশি, জলাশয় অধিগ্রহণের সমষ্টিগত পরিসংখ্যানও এতে পাওয়া যায়। এই গণনা শহর এবং গ্রামাঞ্চলের বৈষম্যকে একদিকে যেমন তুলে ধরেছে, অন্যদিকে তেমনই জলাশয় অধিগ্রহণের বিভিন্ন প্রকার চিত্রও এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। যাতে করে দেশের জলসম্পদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশিত হয়েছে।
ষষ্ঠ ক্ষুদ্র সেচ গণনার সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কেন্দ্র-পোষিত ‘সেচ গণনা’ চালু করা হয় যাতে করে দেশের সমস্ত জলাশয়ের জাতীয় সর্বাত্মক তথ্যভাণ্ডার পাওয়া যায়। জলাশয়গুলোর অবস্থা, কী জাতীয় অধিগ্রহণ হয়েছে, তার ব্যবহার, কতটা জল সঞ্চয় করছে, জল সঞ্চয় ক্ষমতাই-বা কী- এই যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তথ্যের মধ্যে ধরা পড়েছে। গ্রামাঞ্চল ও শহরের সমস্ত এলাকার ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত যাবতীয় জলাশয়কে এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। জলাশয়গুলোর ব্যবহারগত প্রকৃতি কী, যেমন- সেচ, শিল্প, মৎস্যচাষ, গৃহস্থালি অথবা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত, আনন্দ-বিনোদনের স্বার্থে, ধর্মীয় কাজে, ভূগর্ভস্থ জল কতখানি পূর্ণ করা যাচ্ছে- এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সামগ্রিক দিক এই গণনায় তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য। সাফল্যের সঙ্গে এই গণনা সম্পন্ন হয়েছে এবং সর্বভারতীয় ও রাজ্যভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ভারত দেশটি বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ জলাশয় সমৃদ্ধ। যে কোনোরকম সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্যই জল হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। জীবনের এটি একটি মৌলিক ও অপরিহার্য দিক। জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদ। কিন্তু চাহিদা ও ব্যবহারের মধ্যে ফারাক বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রাপ্যতা সীমিত। ফলে, জল সংরক্ষণ এবং জলাধারগুলোতে জল ধরে রাখতে সমন্বিত প্রয়াসের প্রয়োজন। জলশক্তি মন্ত্রক এক্ষেত্রে নীতি-নির্দেশিকা তৈরি এবং কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব বণ্টন করে যাতে করে দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে জলসম্পদের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও পরিচালনগত দিক নির্দিষ্ট করা হয়।
ভারতে মোট ৬ লক্ষ ৪৬ হাজার গ্রাম রয়েছে। সেখানে ১৯ কোটি ১৯ লক্ষ পরিবার বসবাস করে। জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটির বেশি। গত বছর জুন মাসে নীতি আয়োগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬০ কোটি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের কোনো বন্দোবস্ত নেই। দেশে মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে পানীয় জলের পরিষেবা পাচ্ছেন। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরালা ও গুজরাট-সহ বিভিন্ন রাজ্যে পানীয় জলের গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জল তুলে চাষাবাদ-সহ অন্যান্য কাজে লাগানোর জলস্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিদিন আরও সমস্যা বাড়ছে। কোথাও কোথাও ট্রেনে চেপে ১৪-১৫ কিলোমিটার দূরে পানীয় জল কিনতে যেতে হয় মানুষকে। এখন বৃষ্টির জল ধরে রেখে পানীয় জল জোগানোর ব্যবস্থা না করা হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
গ্রীষ্মকাল এলেই জলসংকট যেন চেনা রূপ ধারণ করে পশ্চিমাঞ্চলের নানা প্রান্তে। এবারে তো বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার নানা প্রান্তে নিদারুণ জলসংকটের ছবি উঠে আসে খবরের শিরোনামে। কল আছে কিন্তু জল নেই- অন্যান্য একাধিক জেলার পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলা থেকে লাগাতার এসেছে এই অভিযোগ।
পশ্চিমবঙ্গে ২০১১-১২ সালে ‘জল ধরো-জল ভরো’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল বৃষ্টির জলের বৃহৎ পরিমাণে সংগ্রহের মাধ্যমে মূল্যবান জলসম্পদ সংরক্ষণ করা এবং ক্ষুদ্র সেচ কাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যবান জলসম্পদ উন্নত করা এবং ভূপৃষ্ঠের জলের প্রবাহ রোধ করা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলসম্পদ তদন্ত ও উন্নয়ন বিভাগ এই কর্মসুচির আওতায় সকল ধরনের জলাশয় যেমন ট্যাঙ্ক, পুকুর, জলাধার, খাল পুনর্খনন করার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে বর্তমানে জল ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের P&RD বিভাগ এবং অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে একত্রে এবং ছাদে বৃষ্টির জল সংগ্রহের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ কৃত্রিমভাবে পুনর্নবীকরণের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। চেক ড্যাম, জল সংগ্রহ ট্যাঙ্ক এবং ভূপৃষ্ঠের প্রবাহ ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পগুলি ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহ রোধে সহায়তা করবে এবং একই সঙ্গে রাজ্যের সেচ সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে। জলাশয়ের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি শুষ্ক মরসুমে প্রতিরক্ষামূলক সেচকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। কৃষিকাজের পাশাপাশি, এই জলাশয়ে মৎস্যচাষের পরিসর গড়ে উঠবে যা দরিদ্র কৃষকদের জন্য আয়ের আরও একটি পথ খুলে দেবে। সারা বছর ধরে জলের সহজলভ্যতা স্থানীয় গ্রামবাসীদের তাদের গৃহস্থালি ও পশুপালনেও সহায়তা করবে। ‘জল ধরো-জল ভরো’ কর্মসূচির লক্ষ্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও সেচের ক্ষেত্রে দক্ষ জল ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আর অবহেলা নয়। সহজ কথায়, আগামীদিনে জলসংকটের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার জন্য সঙ্ঘবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। জল সংরক্ষণই যে প্রধান কাজ সেটা সবাইকে বুঝতে হবে, আর সেটা বুঝতে পারলে তবেই এই সমস্যাকে রোধ করা হবে। জল থাকতেও জলের মর্ম মানুষ বুঝতে পারছে না। জীবনের সংকট মেটায় যে জল, সে জলই এখন সঙ্কটাপন্ন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনো বাধে, তা জমি বা দেশ দখল নিয়ে নয়, জলসম্পদের অধিকার নিয়ে বাধবে। তাই, কোমর বেঁধে জল অপচয় রোধ করতে নেমে পড়া ছাড়া দ্বিতীয় উপায় নেই। জল থাকলেই জীবন বাঁচবে।

READ ALSO

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

04th August অতিথি কলম

04th August অতিথি কলম

August 7, 2025
Bharat

Bharat

September 9, 2023
23rd June বিশেষ নিবন্ধ

23rd June বিশেষ নিবন্ধ

June 24, 2025
04th August উত্তর সম্পাদকীয়

04th August উত্তর সম্পাদকীয়

August 8, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?