সঙ্ঘ শাখা মানে সত্যের সাধনা
যে স্থানে শাখা লাগানো হয় সেই স্থানকে আমরা সঙ্ঘস্থান বলি, খেলার মাঠ নয়। সঙ্ঘস্থান তৈরি করে নিতে হয়। সঙ্ঘ শাখা মানেই ভারতমাতার আরাধনা। সেই স্থান, যেখানে ভারতমাতার প্রার্থনা হয় এবং অজ্ঞানের অন্ধকার মোচনকারী ভগবা ধ্বজকে স্থাপন করা হয়। সেই স্থান হওয়া উচিত মন্দিরের মতো স্বচ্ছ, জল দিয়ে ধোওয়া-মোছা, রেখাঙ্কন করে সাজানো-বা গোছানো।
মন্দিরে যেখানে দেববিগ্রহ থাকে, তাকে গর্ভগৃহ বলা হয়। মন্দির যতই বড়ো হোক না কেন গর্ভগৃহ ছোটোই হয়। গর্ভগৃহে কেবলমাত্র পূজারিই যেতে পারেন। অন্য সকলের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে দর্শনের ব্যবস্থা থাকে।
সঙ্ঘস্থানকে আমরা ভারতমাতার মন্দির মনে করি। সেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে, ধ্বজমণ্ডল (গর্ভগৃহ), সম্পত রেখা (স্বয়ংসেবকদের দাঁড়ানোর জন্য সীমা রেখা), মুখ্যশিক্ষক ও কার্যবাহ দাঁড়ানোর স্থান, জুতা ও বাহন রাখার স্থান প্রভৃতি নির্দিষ্ট করতে হয়। এই ব্যবস্থা দেখে নতুন ব্যক্তির মনে সেই নিয়ম পালনের ইচ্ছা তৈরি হয়। দেবতার পূজার জন্য যেমন পূজার সামগ্রী তৈরি করতে হয়, তেমনি সিটি, রিং, দণ্ড, বল, বসার আসন প্রভৃতি ব্যবস্থা করতে হয়। কবাডি বা খো-খো খেলার রেখাঙ্কন তো উৎসাহবর্ধক পূজার উপকরণ ছাড়া আর অন্য কিছু নয়।
শাখা শুরুর সময় হলেই মুখ্যশিক্ষক দু’বার একটি লম্বা, একটি ছোটো সিটি বাজায়। সিটি বাজানোর মধ্যে মুখ্যশিক্ষকের দক্ষতা প্রকাশ পায়। সিটির বাজলেই সকলে শান্ত হয়ে যায়, নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। সমস্ত রকম নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। সমস্ত স্বয়ংসেবক সচেতন হয়ে দাঁড়িয়ে পরবর্তী আজ্ঞার অপেক্ষায় থাকে। অগ্রেসরদের সঞ্চলন করে গিয়ে সম্পত রেখায় দাঁড়িয়ে পড়া এবং মুখ্যশিক্ষক তাদের নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড় করানো, এইসব বিষয় নতুনদের মনে যথেষ্ট প্রভাব সৃষ্টি করে। তারা বুঝতে পারে যে এক বিশেষ স্থানে তারা এসেছে, যা শুধুমাত্র খেলার মাঠ নয়।
শুরুতেই ধ্বজমণ্ডলে ভগবাধ্বজ লাগানো হয়। ধ্বজবাহক ধ্বজমণ্ডলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। সমস্ত স্বয়ংসেবক ধ্বজ প্রণাম করে। সঙ্ঘ ভগবা ধ্বজকে গুরু হিসেবে স্বীকার করেছে। শ্রীগুরু অর্থাৎ যিনি অন্ধকার দূর করে সত্যের সঙ্গে পরিচয় করান। শ্রীগুরুর মহিমা বর্ণনকারী বহু শ্লোক বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। একটি শ্লোকের শুরুতে রয়েছে ‘জ্ঞান মূলং গুরু মূর্তি’। শ্রীগুরুর কেবলমাত্র দর্শনেই সত্যের বোধ জাগ্রত হয়। অসত্যের তথ্যভাণ্ডারকে কেউ জ্ঞান বলেন না।
ভগবাধ্বজ যতখানি প্রাচীন, আমাদের ভারত তার থেকেও প্রাচীন। ভারতীয় জনমানসে ভগবা গৈরিক রঙের প্রতি বরাবরই একটা আকর্ষণ রয়েছে। ভগবা রং সূর্যের আগমণের বার্তা নিয়ে আসে। ভারত চিরকালই জ্ঞান অর্থাৎ সত্যের উপাসক। স্বাভাবিক কারণেই স্বাধীন ভারতের সরকারি মুদ্রায় “সত্যমেব জয়তে’ ধ্যেয়বাক্যটি গ্রহণ করা হয়েছে। ভারত হিন্দুভূমি, সেই কারণে হিন্দু স্বভাব অনুসারে ‘সত্যমেব জয়তে’ ত্রিকালবাধিত সত্য এবং সে কারণেই স্বাধীন ভারতের ধ্যেয়বাক্য। কিন্তু ‘ভারত হিন্দুভূমি’ বললে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যান। যদি এটি হিন্দুভূমি হয়, তবে কি তা মুসলমান বা খ্রিস্টানদের ভূমি নয়, এ ধরনের প্রশ্ন উঠে আসে। ‘সত্যমেব জয়তে’-র মতো সনাতন সত্যের উপর যাদের বিশ্বাস রয়েছে, এই দেশ তাদের সকলের। সত্যের নিরন্তর অনুসন্ধান হিন্দুভূমির বৈশিষ্ট্য। এখানকার ঋষি পরম্পরা, মহাত্মা গৌতমবুদ্ধ, মহাবীর, গুরু নানকদেব, মহাত্মা বসবেশ্বর, নয়নার ও আলবর প্রমুখ তাঁদের শিষ্যদের সত্যের জ্ঞান দেন। সত্যকে অনুসন্ধানের পথ প্রদর্শন করান। নিরন্তর তপস্যা ও সাধনার দ্বারা সত্যকে সাক্ষাৎকার করার কথা বলেন। মহাত্মা বুদ্ধের বিখ্যাত বাণী হলো, অল্প দীপো ভব। এখানে আমরা হিন্দু জ্ঞান প্রতিভার দুটিই উদাহরণ গ্রহণ করি। বিশ্বে আর কোনো সূত্র নেই, যার সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে। সূত্রগুলি হলো- (১) একম্ সদ্ বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি। (২) ওঁ দৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষং শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ শান্তিঃ। বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বেদেবাঃ শান্তিব্রহ্মং শান্তিঃ সর্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধি।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডের অনুসন্ধানকারী জ্ঞান পরম্পরার নাম হলো হিন্দু, হিন্দুত্ব । বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, ত্রিপিটক, জৈনাগম, তিরুক্কুরল ইত্যাদি গ্রন্থে এই জ্ঞান পরম্পরারই মহিমাকীর্তন করা হয়েছে। সাধুসন্ত, প্রবচনকার, কীর্তনকার এই জ্ঞানকেই লোকভাষার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে পৌঁছানোর কাজ করে থাকেন।
হিন্দুভূমির সাধারণ মানুষের ভাবজগৎ এখানকার জ্ঞান পরম্পরার সঙ্গে জুড়ে আছে। তাকে আমরা আধ্যাত্মিক জ্ঞান পরম্পরা বলতে পারি। তার হিন্দু বা হিন্দুত্ব শব্দের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। সমাজ থেকে নিজেদের পৃথক মনে করা ‘অতি বুদ্ধিমান’ লোকেদের হিন্দু, হিন্দুত্ব, হিন্দুভূমি,
হিন্দুরাষ্ট্রের মতো শব্দগুলি গলা দিয়ে নামে না। তাদের হিন্দু শব্দটাতেই অরুচি। সঙ্ঘ সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। রেখাঙ্কন করে ‘ভারত’-কে মানচিত্রে দেখানো যেতে পারে, কিন্তু হিন্দুরাষ্ট্র একটি গুণবাচক শব্দ। তাকে কাগজে ছবি এঁকে দেখানো সম্ভব নয়। ভারতের মানচিত্রে ‘ভারত হিন্দুরাষ্ট্র’ কথাটা লেখা যেতে পারে। ভারত হিন্দুরাষ্ট্র বলেই তা পুণ্যভূমি। সারা বিশ্বে পুণ্যভূমি বলার যোগ্য ভূমি তো একটিই রয়েছে, আর তা হলো ভারত। স্বামী বিবেকানন্দ দৃঢ়তার সঙ্গে একথা বলেছেন। তাঁর দৃঢ় মত ছিল, ভারতমাতাই হোক একমাত্র আরাধ্য দেবতা, কেননা জ্ঞানের সর্বপ্রথম উদয় এই ভারতভূমিতেই
হয়েছিল।
ধ্বজ প্রণামের পর শাখায় শারীরিক ও বৌদ্ধিক কার্যক্রম হয়। সকলের মধ্যে স্বয়ংসেবকত্ব বিকশিত হোক তার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। সত্যনিষ্ঠা ও রাষ্ট্রনিষ্ঠা এই দুটি স্বয়ংসেবকের মধ্যে স্ফুরণ হওয়াই বাঞ্ছনীয় (সত্যনিষ্ঠা মানে সত্য কী, তা জানার ইচ্ছা)। স্বয়ংসেবকদের মধ্যে সমাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার কৌশল থাকা চাই। সবার সঙ্গে মিলেমিশে, সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার দক্ষতা ও আগ্রহ থাকা চাই। ভারতমাতার প্রতি অসন্দিগ্ধ নিষ্ঠা থাকা চাই। পরম পূজনীয় শ্রীগুরুজী বলতেন- ‘কোনো সন্দেহ নয়, কোনো চাহিদা নয়, ইদং রাষ্ট্রায়, ইদং ন মম। ভারতমাতা সকলের কুলদেবী। ব্যক্তিত্ব, মান-সম্মান, শ্রদ্ধা, পুরস্কার – সব কিছু ভারতমায়ের চরণে অর্পণ করতে হবে।’ স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, ‘ভুলিও না, তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত।’
সঙ্ঘের ভিত্তি স্বয়ংসেবক
স্বয়ংসেবক হলো সঙ্ঘের ভিত্তি। সঙ্ঘের শাখা চালানোর উদ্দেশ্যই হলো স্বয়ংসেবকের সংখ্যা নিরন্তর বৃদ্ধি করা। বর্তমানে দেশে ৮০ হাজার শাখা চলছে। তাদের সকলের চেষ্টাই হলো নতুন স্বয়ংসেবক নির্মাণ। শরীরে রক্তকোষের যে ভূমিকা রয়েছে, ঠিক সেই ভূমিকা রয়েছে রাষ্ট্ররূপী শরীরে মধ্যে স্বয়ংসেবকদের। নির্দিষ্ট পরিমাণে শরীরে রক্ত থাকা জরুরি, তাতে শরীর সুস্থ, সুদৃঢ় ও কর্মক্ষম থাকে। রাষ্ট্র শরীরে স্বয়ংসেবক যদি নিশ্চিত পরিমাণে থাকে তবে রাষ্ট্র শরীর (আরোগ্যসম্পন্ন) সুস্থ, সুদৃঢ় ও কর্মক্ষম থাকবে। সমৃদ্ধি ও সুখ (পরম বৈভব) প্রাপ্ত হবে। স্বয়ংসেবকদের নিশ্চিত পরিমাণে প্রয়োজনীয় সংখ্যাকে সঙ্ঘ প্রার্থনাতে ‘বিজেত্রী চ নঃ সংহতা কার্যশক্তিঃ’ বলা হয়েছে। স্বয়ংসেবকদের সংগঠিত, বিজয়শালিনী কার্যশক্তি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নিরন্তর সচল রয়েছে। শাখা বিস্তার, স্বয়ংসেবক বৃদ্ধি, এই কাজই সঙ্ঘ করে চলেছে।
রাষ্ট্রীয়তা মানে কী?
সঙ্ঘশাখা মানে ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মের ত্রিবেণীধারা, তার উদ্গমস্থল। প্রতিদিন একবার সেই ত্রিবেণীসঙ্গমে গিয়ে অবগাহন করা উচিত। ভারতমাতার প্রতি অনন্য ভক্তি, ভারত হিন্দুরাষ্ট্র, এসবের জ্ঞান এবং ‘বিজেত্রী চ নঃ সংহতা কার্যশক্তিঃ’ দাঁড় করানোই কাজ।
স্বাধীনতার জন্য সমস্ত রকম আন্দোলনে ডাক্তারজীর মুখ্যরূপে অংশগ্রহণ দেখা যেত। বেঙ্কটেশ থিয়েটারে তাঁর সম্মানে আয়োজিত সভা একবার খুব প্রসিদ্ধি লাভ করে। সেখানে পণ্ডিত মোতিলাল নেহরু, বিঠল ভাই প্যটেল, হাকিম আজমল খান, ডাঃ আনসারি, রাজাগোপালাচারী প্রমুখ বড়ো বড়ো ব্যক্তি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া উচিত, এই বিষয়টি সার্বজনিক রূপ নেয়, কিন্তু স্বাধীনতা মানে কী? রাষ্ট্রীয়তা মানে কী? এই বিষয়ে আলোচনার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। স্বাধীনতার আন্দোলন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয়ত্বের স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত, এমনটা তাঁর মতে হয়। এই জন্যই ডাক্তারজী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নামে এক নতুন কাজের শুভারম্ভ করেন।
সঙ্ঘে যোগদানকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ভূমিকা স্পষ্ট হোক, তারজন্য ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে স্বয়ংসেবকদের একটি প্রতিজ্ঞা নিতে হতো- ‘সর্বশক্তিমান শ্রী পরমেশ্বর এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে আমাদের পবিত্র হিন্দু ধর্ম, হিন্দু সংস্কৃতি এবং হিন্দু সমাজের সংরক্ষণ করে হিন্দুরাষ্ট্রকে স্বাধীন করার জন্য আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একজন ঘটক হয়েছি।’ এর মধ্যে তিনি বিন্দুমাত্র অস্পষ্টতার জায়গা রাখেননি। হিন্দুরাষ্ট্র শব্দের প্রয়োগ কোনো প্রতিক্রিয়া রূপে ব্যবহার করা হয়নি। হিন্দু সংস্কৃতি এই রাষ্ট্রের প্রাণ। ‘ভারত হিন্দুরাষ্ট্র’, এমন বলার সময় ভারতের তুলনা ইসলাম, খ্রিস্টান বা ইহুদি দেশের সঙ্গে করা হয় না।
বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, জৈনাগম, ত্রিপিটক, গুরু গ্রন্থসাহেব – জ্ঞানের এই ভাণ্ডারকে নিজের বলা একজনও হিন্দু যদি বেঁচে থাকে, তখনও পর্যন্ত এদেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বলা হবে। কারও মুসলমান হওয়া
বা না হওয়ার সঙ্গে হিন্দুরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দু ভারতের সনাতন
জ্ঞান পরম্পরার নাম, যা সকলের মঙ্গল কামনা করে।
ডাক্তারজী ‘হিন্দু’ শব্দের ব্যাপারে কোথাও কোনো বাদ-বিবাদ করেননি। তিনি তাঁর শুদ্ধ, নির্মল অন্তঃকরণ ও প্রেমের সঙ্গে সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তিনি বহু বিখ্যাত মানুষেরও মন জয় করেন। ১৯৪০ সালেই রাষ্ট্রীয়
স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অখিল ভারতীয় স্বরূপ প্রাপ্ত হয়। আর তা এই কারণেই সম্ভব হয়, কেননা ডাক্তারজী ছিলেন সন্ততুল্য মহাপুরুষ। সকলের হিতচিন্তক এমন ব্যক্তিই পারে যুগপ্রবর্তকের কাজকে বাস্তব রূপ প্রদান করতে। তিনি হিন্দুরাষ্ট্রের উপর কোনো পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুস্তক রচনা করেননি। ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মের নিরন্তর সাধনার জন্য সঙ্ঘ শাখার সৃষ্টি করেন। সত্যের বোধ সকলের হোক, এই ঈশ্বরীয় কাজই আমরা করছি।
অপরের জন্য চিন্তা
অধ্যাত্ম মানে কী? এই প্রশ্নের উত্তর স্বামী বিবেকানন্দ সহজ সরল ভাষায়
দিয়েছেন, ‘অপরের মঙ্গল চিন্তা করাই হলো অধ্যাত্ম।’ সঙ্ঘের শাখায় অপরের মঙ্গল চিন্তা করারই সংস্কার পাওয়া যায়। গটনায়ক, গণশিক্ষক, মুখ্যশিক্ষক, কার্যবাহ প্রভৃতি দায়িত্বে থেকে কাজ করতে গিয়ে স্বয়ংসেবকদের সংখ্যা যেমন যেমন বৃদ্ধি হয়, তেমন তেমন তাদের অপরের প্রতি মঙ্গল চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি পায়। শিশু, বালক, তরুণ, প্রৌঢ় এই রকম প্রত্যেক স্বয়ংসেবকের চিন্তা করার স্বভাব সঙ্ঘ শাখায় তৈরি হয়। ‘আমার শাখায় যাওয়ার ফলে রাষ্ট্র শক্তিশালী হবে’, এই ধারণা নিয়ে স্বয়ংসেবকরা শাখায় আসে। কোনো রকম স্বার্থের ভাবনা তাদের মনকে স্পর্শ করতে পারে না। সঙ্ঘ শাখা অধ্যাত্ম সাধনার সহজ পথ। এই বিষয়ে সন্ত তুকারামের বাণীর উল্লেখ করাটা প্রাসঙ্গিক হবে- ‘সন্তগণ বিশ্ব কল্যাণর জন্য বহু কষ্ট করে থাকেন। প্রাণীমাত্রের উপর দয়াই সন্তজনের পুঁজি, তাই তাঁরা নিজের শরীরেরও চিন্তা করেন না।’