• About
  • Contact Us
Saturday, December 20, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home উত্তর সম্পাদকীয়

30th June উত্তর সম্পাদকীয়

in উত্তর সম্পাদকীয়
30th June উত্তর সম্পাদকীয়

Issue 77-43-30-06-2025

ভারতের আকাশে আপন আলোয় উদ্ভাসিত এক মহা জ্যোতিষ্ক ড. শ্যামাপ্রসাদ
শিবেন্দ্র ত্রিপাঠী
কথায় আছে যার জীবনের ছায়া যত দীর্ঘ তিনি তত বড়ো মহাপুরুষ। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এমন এক মহাজীবন যাঁর সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ডের ছায়া ভারতীয় জীবনে সুদূরপ্রসারী। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে প্রায় ৬০-৬৫ বছর ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং তার দোসর বামপন্থী দলগুলি মধ্য গগণে বিরাজিত ছিল। তারা শ্যামাপ্রসাদের মতো এক সূর্যসম উজ্জ্বল জোতিষ্ককে যেভাবে গ্রাস করে রেখেছিল তাতে মনে হচ্ছিল তা থেকে তাঁর মুক্তি অসম্ভব। তিনি বুঝি কালের গহ্বরে তলিয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর রুদ্র তেজের ছটায় এদেশে ধীরে ধীরে কংগ্রেস ও বামপন্থী ভাবধারার অবলুপ্তির ফলে তাঁর মতাদর্শের উপর জমে থাকা আঁধার ঘুচে তাঁর মহিমান্বিত রূপ প্রকটিত হয়েছে। শ্যামাপ্রসাদের পাণ্ডিত্য, তাঁর কর্মজীবন, তাঁর মানব প্রীতি, হিন্দুজাতির প্রতি অপার শ্রদ্ধা, সর্বোপরি তাঁর স্বদেশপ্রেম, দেশের অখণ্ডতার প্রতি আপোশহীন সংগ্রাম এবং শেষপর্যন্ত তাঁর জন্য তাঁর আত্মত্যাগ আজ তাঁকে শুধু বাঙ্গালি ভারতবাসীর কাছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
ইতিহাস শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে বড়ো অন্যায় করেছে। এক প্রখর দেশভক্ত, যথার্থ শিক্ষাবিদ, সিদ্ধান্তের প্রতি যার অবিচলনিষ্ঠা, সত্য ও ন্যায়ের জন্য যিনি মুহূর্তে মন্ত্রিত্বের মোহ হেলায় ত্যাগ করতে পারেন, এমনকী প্রয়োজনে দেশের জন্য, দেশের অখণ্ডতার জন্য প্রাণ বলিদানও দিতে সদ্য প্রস্তুত, এমন রাজনেতা দেশভক্ত শ্যামাপ্রসাদকে ইতিহাস কি সত্যি মনে রেখেছে? কোনো ব্যক্তি যখন কাজ করেন তখন তিনি একেবারের জন্যও ভাবেন না যে ভবিষ্যতে ইতিহাস তার কী মূল্যায়ন করবে। যিনি প্রসিদ্ধির জন্য নয়, ন্যায়ের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করেন তিনি মোটেই ভাবেন না যে ভবিষ্যতে ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে কিনা? পরীক্ষা তো ইতিহাসের, ইতিহাসবিদদের, তাঁরা এমন মহান ব্যক্তিত্বকে মূল্যায়ন করতে পেরেছেন কিনা? সেই মহাপুরুষকে মনে রাখতে পেরেছেন কিনা? আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের ইতিহাসবিদরা শ্যামাপ্রসাদকে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেননি। আমাদের আরও দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী যুগে ইংরেজরা এদেশের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে প্রচার করেছে, আর স্বাধীনতার পরে এদেশের বাম-কংগ্রেস ইতিহাসকাররা এদেশের প্রকৃত মহাপুরুষদের দেশবাসীর থেকে লুকিয়ে রেখেছেন অথবা ভুলভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। এখন ভারতবাসীর সে ভ্রম সংশোধনের পালা।
তিনটি কারণে শ্যামাপ্রসাদ ভারতবাসীর মনে সতত ভাস্বর হয়ে থাকবেন। এক, দেশ বিভজনের কালে তার অবিস্মরণীয় অবদান। দুই, ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা। তিন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ও ভারতভুক্তিতে তার বলিদান। তাঁর জীবনের এই তিনটি কর্মকাণ্ড প্রত্যেক বাঙ্গালির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুধাবন করা উচিত। ১৯০৫ সালে বড়লাট কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে বড়ো আন্দোলনও সংগঠিত হয়েছিল, যার পুরো ভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের অধিকাংশই জানে না যে ১৯৪৭ সালে আর একবার এই বঙ্গকে ভাগ করতে এক বড়ো আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। সেদিন সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কথাটি কেমন দেশ বিরোধী লাগছে না? কিন্তু সেদিন যদি ওই আন্দোলন সংঘটিত না হতো তবে আজ এই কলকাতা-সহ পুরো পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য না হয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত।
১৯৪৬ সাল। ইংল্যান্ডে লেবার পার্টির সরকার। এটলি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হলেন ঠিক হলো ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ উভয়েই দেশভাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। সেদিন কংগ্রেস যদি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো না করত তবে হয়তো কোনোদিনই ভারত ভাগের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু জওহরলাল আর জিন্নার ক্ষমতা দখলের মোহ ভারত ভাগ নিশ্চিত করে ফেলেছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, জওহরলাল সেদিন জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাজনে সায় দিয়ে দিলেন। সেসময় বঙ্গ ও পঞ্জাব এমন দুটি প্রদেশ ছিল যেখানে মুসলমানরা বেশি সংখ্যায় ছিল। সেই সময় এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে মনে হচ্ছিল সম্পূর্ণ বঙ্গ ও পঞ্জাব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
এমন সময় শ্যামাপ্রসাদ বাঙ্গালি হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের তিনদিনের সম্মেলনে ডেকেছিলেন। প্রস্তাব রেখেছিলেন যদি শেষপর্যন্ত ভারত ভাগ হয় তবে বঙ্গ ও পঞ্জাবও বিভাজিত হোক। নাহলে বাঙ্গালি হিন্দুর কী হবে? বঙ্গ ভাগ হোক পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের ভিত্তিতে। পুরো বঙ্গ কখনোই পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। সে দাবি আদায়ে তিনি বড়ো আন্দোলন শুরু করলেন। অমৃতবাজার পত্রিকা সে সময় এক সমীক্ষা করেছিল। ৯৮.৯ শতাংশ হিন্দু বঙ্গ বিভাজনের পক্ষে রায় দিয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ মাউন্টব্যাটেন, গান্ধীজী ও কংগ্রেসের তৎকালীন বড়ো বড়ো নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বাঙ্গালি হিন্দুর পক্ষ নিয়ে বঙ্গ ভাগের দাবি জানিয়েছিলেন। তারই পরিণাম স্বরূপ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কালে বঙ্গ ভাগ স্বীকার করে হিন্দু বাঙ্গালির হোমল্যান্ড হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ আত্মপ্রকাশ করেছিল। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ বাঙ্গালি হিন্দুরা নিজেদের পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি বলে পরিচয় না দিয়ে ভারতীয় বলে গর্ব করতে পারি। এর সম্পূর্ণ শ্রেয় যদি কোনো একক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় তার নাম ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শ্যামাপ্রসাদের দ্বিতীয় কীর্তি, তিনি তখন হিন্দু মহাসভার সভাপতি। স্বাধীনতার পরে গান্ধীজীর ইচ্ছায় দেশে সর্বদলীয় সরকার গঠিত হলো। শ্যামাপ্রসাদ হলেন শিল্পমন্ত্রী। সবে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে নতুন নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশ কোন পথে চলবে, শিক্ষানীতি কী হবে, কৃষিনীতি কী হবে, অর্থনীতি কী হবে, শিল্পনীতি কী হবে, বিদেশ নীতি কী হবে তার নীতি-নির্ধারণ। জওহরলালস নেহরু মন্ত্রীসভার কাজ শুরু করেছিলেন। শ্যামাপ্রসাদ কংগ্রেসের এই প্ল্যানিং দেখে মোটেই খুশি ছিলেন না। তাঁর মনে হয়েছিল আমরা ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা তো পেয়েছি, কিন্তু দেশ আগামীদিনে কোন নীতির উপর ভর করে এগিয়ে চলবে? পাশ্চাত্য চিন্তাধারার উপর নাকি দেশীয় ভাবধারার উপর নির্ভর করে? শ্যামাপ্রসাদ বুঝেছিলেন ভারত যদি ব্রিটিশ মডেলের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তবে বিরাট ভুল হবে। দেশ অদূর ভবিষ্যতে প্রথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। তিনি মনে করতেন এই দেশের নীতি এই দেশের মাটি থেকে উত্থিত হওয়া উচিত। এই দেশের অর্থনীতি এদেশের হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এক প্রবহমান ধারা, এই দেশের কৃষি নীতি পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন কৃষি ব্যবস্থার অঙ্গ, এই দেশের বিদেশনীতি ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর দর্শন- যা এদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়। দেশের নীতি দেশের মাটির সোঁদা গন্ধ থেকে উঠে আসা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রাচীন ভারতের সব কিছুর মধ্যে পশ্চাৎপদতা দেখতেন। তিনি স্বাধীনতার পরে দেশের প্রাচীন মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে এদেশের রীতিনীতি ইংল্যান্ড থেকে ইমপোর্ট করা জ্ঞানের ভিত্তিতে করতে চাইলেন।
শ্যামাপ্রসাদ তখন নেহরু মন্ত্রীসভায় শিল্পমন্ত্রী। দেশভাগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল পূর্ববঙ্গে থেকে উদ্বাস্তু হওয়া হিন্দুদের ওপর। কিন্তু পূর্ববঙ্গে থেকে যাওয়া হিন্দুদের চরম দুর্দশা দেখা দিল। বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছিল, হিন্দু ঘরের মা-বোনেদের ধর্ষণ করা হচ্ছিল, মঠ মন্দির ভেঙে মসজিদ করা হচ্ছিল, হিন্দুর মান-ধন-প্রাণ সব জেহাদি মুসলমানদের করুণার উপর নির্ভরশীল ছিল। লক্ষ লক্ষ হিন্দু শরণার্থী হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরায় চলে আসতে বাধ্য হচ্ছিল। এমন সংকটজনক সময়ে ‘নেহরু-লিয়াকত’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঠিক হলো ভারত পাকিস্তান নিজের নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবে, কোনো দেশ অন্যের বিষয়ে নাক গলাতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে ভারত তো এদেশের মুসলানদের পুরো মাত্রায় সুরক্ষা দিচ্ছিল কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুরা ধনে-প্রাণে মারা পড়তে লাগল। আর অদ্ভুতভাবে নেহরু তাদের সুরক্ষার ব্যাপারে কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলেন না। শ্যামাপ্রসাদের ইচ্ছা ছিল নেহরু এই বিষয় ভারত বিশ্বমঞ্চে তুলুক এবং এর সমাধান করুন। কিন্তু নেহরু একে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে বলে এড়িয়ে গেলেন। এর প্রতিবাদে শ্যামাপ্রসাদ ১৯৫০-এ নেহরু মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করলেন। হিন্দু বাঙ্গালির স্বার্থ রক্ষায় এত বড়ো আত্মত্যাগ কেউ কোনোদিন করেছে বলে জানা নেই। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি করে হিন্দু বাঙ্গালির হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ তৈরি তারপরে বাঙ্গালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের উপর চরম অত্যাচারের বিরুদ্ধে নেহরু মন্ত্রীসভা ত্যাগ- হিন্দু বাঙ্গালিপ্রেমী বঙ্গের ইতিহাসে বিরল।
সাংবাদিকরা শ্যামাপ্রসাদকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার ও নেহরুর চিন্তাধারার মধ্যে পার্থক্য কী? ছোট্ট উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘নেহরু এদেশ নবনির্মাণ করতে চান, আমি এদেশের পুনর্নির্মাণ করতে চাই’। কংগ্রেস চেয়েছিল দেশকে নতুন করে তৈরি করতে, তাদের মতে এ দেশের সভ্যতা সংস্কৃতি সবকিছু পুরানো হয়ে গেছে। এ কোনো কাজে লাগবে না। তাকে বাতিল করে নতুন ভাবে দেশ গড়া উচিত। সেজন্যে তারা গান্ধীকে জাতির জনক বা রাষ্ট্রপিতা বলে সম্বোধন করেছিল। তাদের স্লোগান ছিল ‘নেশন ইন মেকিং’। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মনে করতেন ভারতের জন্ম আজ হয়নি। হাজার হাজার বছরের প্রাচীন দেশ এই ভারতের যা কিছু পুরনো, শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞান- সভ্যতা-সংস্কৃতি-ধর্ম-ঐতিহ্য সব ভারতকে এক সময় বিশ্বশ্রেষ্ঠ বানিয়েছিল। হাজার পরাধীনতায় তার ওপর ধূলি জমেছে, গরিমা নষ্ট হয়েছে মাত্র। তার মানে এই নয় সেগুলি বাতিল হয়ে গেছে। সেই ঐতিহ্যগুলির পুনর্জাগরণের দ্বারাই আবার দেশ বিশ্বশ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে। দেশ কখনো তার মূল দর্শনকে বাদ দিয়ে এগোতে পারে না।
ভারত কখনো কলোনিয়াল কান্ট্রির আদর্শ নিয়ে চলতে পারে না। যে দেশের কোনো প্রাচীন ইতিহাস বেঁচে নেই, যাদের ভাষা বেঁচে নেই, যাদের সংস্কৃতি অবশিষ্ট নেই, ভারতবাসী সেই আফ্রিকা, আমরিকা, মিশর, আরবের মতো পারে মতবাদ নিয়ে বাঁচতে পারে না। আমাদের ভাষা সংস্কৃতি সংগীত ইতিহাস প্রাচীন। হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস যদি না করি, তবে বিশ্ব আমাদের কখনো সম্মান দেবে না। মন্ত্রীসভা ছাড়ার পরে তিনি বহু পণ্ডিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করলেন, অবশেষে ১৯৫১ সালে দিল্লির রাঘোমল আর্য কন্যা বিদ্যালয়ে ‘ভারতীয় জনসঙ্ঘ’ নামে এক নতুন ভাবধারার রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করলেন। এ ছিল তার জীবনের সর্ববৃহৎ মহান কর্ম। সে সময়ে কোনো মূর্খও বিশ্বাস করত না যে এই জনসঙ্ঘ একদিন ভারতবর্ষের কোণায় কোণায় পৌঁছে যাবে, তারা ভারতবর্ষের বেশিরভাগ রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে, এই জনসঙ্ঘ একদিন দেশ পরিচালনার দয়িত্ব গ্রহণ করবে।
কারণ সেদিন তাঁর সঙ্গে না ছিল কোনো বড়ো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, না ছিল কোনো বিচক্ষণ সহযোগী। সঙ্গে ছিল মাত্র আট-দশ জন রাজনীতি অনভিজ্ঞ যুবক। দীনদয়াল উপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী, এল কে আদবাণী, কুশভাও ঠাকরে, জগদীশপ্রসাদ মাথুর – এইরকম কয়েকটি সদ্য তরুণ। এদের দিয়েই শুরু হয় জনসঙ্ঘের যাত্রা। কংগ্রেস তথা নেহরু-সূর্য তখন মধ্য গগনে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা ও কিছু করা অপরাধ বলে বিবেচিত হতো। সেই সময় কে ভাবতে পারে যে জনসঙ্ঘ আগামী দিনে ক্ষমতায় আসতে পারে? আসলে তিনি ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, দেশের সামনে এক নতুন রাজনৈতিক দিশা ও বিচারধারা- এক বিকল্প নীতি রাখতে চেয়েছিলেন। হতে পারে ৫-১০-১৫-২৫-৫০ বছর পরে এ নীতি মানুষ গ্রহণ করবে, মানুষ বিচার করবে দেশের জন্য কোনটা সঠিক পথ। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের উপর ন্যস্ত হলো জনসঙ্ঘের মূলনীতি নির্ধারণের ভার। তৈরি হলো একাত্ম মানবদর্শন। শ্যামাপ্রসাদ না থাকলে জনসঙ্ঘের জন্ম হতো না, জনসঙ্ঘ না সৃষ্টি হলে একাত্ম মানবদর্শনের সন্ধানও এদেশের রাজনীতি পেত না। সে শুধু সাম্যবাদ, সমাজবাদ, পুঁজিবাদ, গান্ধীবাদ আর মার্কসবাদের অন্ধ গলির মধ্যে মাথা খুঁড়ে মরতো। দেশ কখনো তার মূল আদর্শের পথে ফিরতে পারত না। জনসঙ্ঘের স্থাপনা করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশের সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটি করে গেছেন। সেদিনের ১০ সদস্যের ছোট্ট জনসঙ্ঘ আজ ১১ কোটি সদস্যের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তার একমাত্র কারণ শ্যামাপ্রসাদের মহান তপস্যা।
তাঁর তৃত্বীয় কীর্তি হলো জম্মু-কাশ্মীরের সম্পূর্ণ ভারত ভুক্তি। স্বাধীনতার পরে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন- তারা পাকিস্তানে যাবেন, স্বাধীন থাকবেন, নাকি ভারতে মিশে যাবেন, এরকম সময়ে পাকিস্তান কাশ্মীরে সেনা অভিযান করে দিল। বিপদে পড়ে হরি সিংহ ভারতে বিলয় হতে চুক্তিবদ্ধ হলেন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলো। পাকিস্তান সেনা যখন পিছু হঠছে, ভারত বিজয়ের দোরগোড়ায়, তখন হঠাৎ অকারণে জওহরলাল যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে দিলেন। এমন অদূরদর্শী ঐতিহাসিক ভুল পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে জানা নেই। জওহরলাল যদি সেই সময় যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা না করতেন তবে আজ জম্মু-কাশ্মীরের কোনো সমস্যাই থাকতো না। কিন্তু ব্যক্তিগত ও ক্ষমতা প্রদর্শন করতে এবং নিজেকে আন্তর্জাতিক নেতা বলে জাহির করতে যুদ্ধ স্থগিত করা হলো। সেই সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরে জন্য সংবিধান ৩৭০ ধারা চালু-সহ অনেক অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ঠিক হলো কাশ্মীরে যেতে হলে ভারত সরকারের ‘ইনার-পারমিট’ নিতে হবে।
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলে ডাকা শুরু হলো। কাশ্মীরের রাজ্যপালকে সদর-এ-রিয়াসাত বা রাষ্ট্রপতি বলে সম্বোধন করা শুরু হলো। আর কাশ্মীরের জন্য আলাদা একটি পতাকার স্বীকৃতিও দিল কংগ্রেস সরকার। এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। সারাদেশে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। ‘এক দেশে দুই নিশান, দুই বিধান, দুই প্রধান চলবে না’। এই স্লোগান তুলে কাশ্মীর অভিযানের করার মনস্থ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ (ওমর আব্দুল্লাহ্‌র পিতা) ও জওহরলাল বেগতিক দেখলেন। তাঁরা এই আন্দোলন কেবল স্তব্ধ করে দিতেই চাইলেন না, বরং শ্যামাপ্রসাদকে তাদের পথ থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে পর্দার আড়ালে অন্য এক চক্রান্ত রচনা করলেন। বলা হলো কাশ্মীর যাওয়ার জন্য তাঁর কোনো পারমিট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি নির্ভাবনায় কাশ্মীরে যেতে পারেন। কিন্তু কাশ্মীরে প্রবেশ মাত্রই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁকে ভারত সরকারের পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হলো। তারপর সেফ হাউসের নামে কাশ্মীরের সেই প্রবল ঠাণ্ডায় এক জানালা-দরজাবিহীন অস্বাস্থ্যকর এক ঘরে তাঁকে রেখে দেওয়া হলো। যখন তার শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করল সাধারণ জিপে চড়িয়ে এক হাসপাতলে গাইনোলজি ওয়ার্ডে তাকে রাখা হলো। ১৯৫২ সালের ২৩ জুন এখানেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হলো তাঁর।
এ বলিদান দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বলিদান। তাঁর এই বলিদান কাশ্মীরের অনেকগুলি সমস্যার সমাধান করে দিয়ে গেল। শ্যামাপ্রসাদের এই মৃত্যু এমন পরিবেশ সৃষ্টি করলো যে, নেহরু বাধ্য হয়ে কাশ্মীরের ইনার পারমিট ও পতাকা বাতিল করতে বাধ্য হলেন। সেদিন থেকে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলে ডাকাও চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। আজ যদি কাশ্মীর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ হিসেবে জগতের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে তবে তা একমাত্র শ্যামাপ্রসাদের কারণেই।
শ্যামাপ্রসাদ যেদিন হিন্দু মহাসভার সভাপতি হয়েছিলেন সেদিন মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘মদনমোহন মালব্যের পরে দেশের হিন্দুদের শ্রদ্ধা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ছাড়া আর কেউই অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে না। শ্যামাপ্রসাদ ছাড়া আর কারোর মধ্যে হিন্দুদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’ দেশের সমস্যার বিরুদ্ধে ‘জটায়ু’র মতো লড়াই করার মানসিকতা শ্যামাপ্রসাদকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। রামায়ণের জটায়ু যেমন জানতেন মহাবলশালী বারণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্তিম পরিণতি কী। কিন্তু তা বলে কর্তব্য থেকে পিছিয়ে গেলে তো সীতা উদ্ধার হবে না। সেই রকম শ্যামাপ্রসাদও জানতেন ১৯৫২ সালে জনসঙ্ঘের যা ক্ষমতা তাতে তাঁর আন্দোলন কাশ্মীরকে হয়তো মুক্ত করতে পারবে না, কিন্তু তবু নিজের শক্তি সামর্থ্য মতো এর প্রতিবাদ করা দরকার। তাঁর অদম্য সাহসেই শেষপর্যন্ত নেহরু- আবদুল্লা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। শ্যামাপ্রসাদ সেদিন দেশভক্তির যে বীজ পুঁতেছিলেন তা আজ বটবৃক্ষ হয়ে সারা দেশে জাতীয়তাবোধের স্নিগ্ধ ছায়া প্রদান করছে। আজ স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরে দেখা যাচ্ছে জাতীয় আন্দোলনের অন্য সব ধারাকে ছাপিয়ে শ্যামাপ্রসাদের আদর্শ ও সাধনা জয়যুক্ত হয়েছে। নেহরু-গান্ধী ঐতিহ্যের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে শ্যামাপ্রসাদের মতাদর্শ।

READ ALSO

24th November উত্তর সম্পাদকীয়

24th November উত্তর সম্পাদকীয়

November 25, 2025
10th November উত্তর সম্পাদকীয়

10th November উত্তর সম্পাদকীয়

November 12, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

24th November উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

24th November উত্তর সম্পাদকীয়

November 25, 2025
10th November উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

10th November উত্তর সম্পাদকীয়

November 12, 2025
03rd November উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

03rd November উত্তর সম্পাদকীয়

November 4, 2025
27th October উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

27th October উত্তর সম্পাদকীয়

October 28, 2025
20th October উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

20th October উত্তর সম্পাদকীয়

October 24, 2025
29th September উত্তর সম্পাদকীয়
উত্তর সম্পাদকীয়

29th September উত্তর সম্পাদকীয়

October 7, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023

EDITOR'S PICK

12th May বিশেষ নিবন্ধ

12th May বিশেষ নিবন্ধ

May 13, 2025
26th May রাজ্যপাট

26th May রাজ্যপাট

May 28, 2025
08th September পরম্পরা

08th September পরম্পরা

September 13, 2025
18th August সুন্দর মৌলিকের চিঠি

18th August সুন্দর মৌলিকের চিঠি

August 19, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 24th November বিশেষ নিবন্ধ
  • 24th Novemberপরম্পরা
  • 24th Novemberপরম্পরা
  • 24th November প্রচ্ছদ নিবন্ধ

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?