২০১৪ পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব রক্ষায় শ্যামাপ্রসাদ-স্মরণই এখন শ্রেষ্ঠ পথ
মোহিত রায়
২৩ জুন থেকে ৬ জুলাই- শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মৃত্যুদিন থেকে জন্মদিন- আমাদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। শ্যামাপ্রসাদের বিভিন্ন কীর্তির কথা মাথায় রেখেও বলা যায় এই সময়ে শ্যামাপ্রসাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে সময়োপযোগী কাজ হবে তাঁর সৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব বিপর্যয়ের বিষয়টি প্রচার করে জনমানসকে সচেতন করা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার প্রস্তুতি নেওয়া। শ্যামাপ্রসাদের মতন একজন কৃতী শিক্ষাবিদ ভোলেনি। মাঝে ২০০ বছর অনেকটা শান্তির পর ১৯৪৬-এর ১৬ আগস্ট শুরু হওয়া কলকাতার বীভৎস হিন্দুহত্যা, তার পর নোয়াখালিতে হিন্দু গণহত্যার পর কেউ মুসলমান শাসিত বঙ্গে থাকার কথা ভাবতেই পারেননি। ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় রাজনীতিতে এসেছিলেন বঙ্গের মানুষকে ইসলামি অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। তিনি কোনো ধর্মীয় নেতা ছিলেন না। তিনি হিন্দু মহাসভায় যোগ দিয়ে চেয়েছিলেন বঙ্গের ইসলামীকরণ বন্ধ করতে। এমনকী ১৯৪৬-এর শেষ পর্যন্ত তিনি ভারত ভাগ ও বঙ্গ ভাগের বিপক্ষেই ছিলেন। কিন্তু যখন কলকাতার হিন্দুদের নরসংহার, নোয়াখালি হিন্দুহত্যা হলো তিনি বুঝলেন যে ইসলামি অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে গেলে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমি চাই। তাই তিনি বলেছিলেন যদি ভারত ভাগ নাও হয়, তবু হিন্দুর অস্তিত্বের স্বার্থে বঙ্গকে ভাগ করতে হবে।
বাঙ্গালির অস্তিত্ব মানে বঙ্গে পাঁচ হাজার বছরের ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে যুক্ত একটি জাতির ধর্মীয় ও সংস্কৃতি চর্চার অধিকার। পশ্চিমবঙ্গ শুধু বঙ্গের পশ্চিম অংশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ একটি ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি অমুসলমান বাঙ্গালিদের নিরাপদ অস্তিত্বের জন্য। অস্তিত্ব মানে হিন্দু বাঙ্গালিদের নির্ভয়
জীবনযাপন, নারীদের নিরাপত্তা, বহুমাত্রিক সংস্কৃতিক চর্চা, – এই সবকিছুই আজ বিপন্ন। পশ্চিমবঙ্গের আবির্ভাবের কারণ ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গের ভাগ। বঙ্গের এই বিভাজন হিন্দু বাঙ্গালিই চেয়েছিল, মুসলমানরা চায়নি। কারণ অবিভক্ত বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা পুরো বঙ্গকেই পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। বঙ্গে ৬০০ বছরের ইসলামি শাসনের ইতিহাস বাঙ্গালিআইনসভা ভেঙে তৈরি হলো পূর্ববঙ্গ আইনসভা ও পশ্চিমবঙ্গ আইনসভা। দুই আইনসভাতেই অমুসলিম সদস্যরা বঙ্গভাগের পক্ষে ও পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে ভোট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠন সুনিশ্চিত করেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০ জুনই পশ্চিমবঙ্গ গঠিত হয়ে গেল। হিন্দু বাঙ্গালি তাঁর নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ স্থাপন করেছে। পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের দুটি প্রধান শর্ত- (১) যথেষ্ট বেশি অমুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও (২) একটি সুরক্ষিত বহুত্ববাদী সমাজ। (১) যথেষ্ট বেশি অমুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা : ১৯৫১ সালের ১৯ শতাংশ মুসলমান এখন ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম শর্তকে ইতিমধ্যেই লঙ্ঘন করেছে। বি আর আম্বেদকর দেশভাগের অনেক আগে ১৯৪০ সালেই সুনির্দিষ্ট ভাবে বলেছিলেন যে, “সংখ্যালঘু বিনিময়ই নিঃসন্দেহে সাম্প্রদায়িক সমস্যার স্থায়ী সমাধান।’ দেশভাগের সময় পঞ্জাবের মতো বঙ্গে লোক বিনিময় হলো না। ফলে ভারতীয় পঞ্জাবে মুসলমান জনসংখ্যা কমে হলো ২ শতাংশ। তা আর খুব একটা বাড়েনি। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির ফলে (যে চুক্তির বিরোধিতায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেহরুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে ১৯৫০ সালেই পদত্যাগ করেন) পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়া মুসলমানদের বেশিরভাগ পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এলেন। ১৯৭৮ থেকে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশি মুসলমানদের অনুপ্রবেশ। ব্যাপক বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশ ও উচ্চ জন্মহারে আর দশক দুয়েকের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের আর কোনো অর্থই থাকবে না।
জনসংখ্যার এই সমস্যার সমাধানের উপর নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ। অথচ এই বিষয়টি এখনো পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির আলোচনায় মুখ্য বিষয় হয়ে উঠলো না। রাজ্য নির্বাচনে জনসংখ্যার বিষয়টি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের ইস্তাহারে আলোচনা করে না। অনুপ্রবেশ নিয়ে একটিমাত্র দল আলোচনা করেছে কিন্তু জনসংখ্যায় এর প্রভাব এবং পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের সঙ্কট আগে সেভাবে কখনো আলোচনায় আসেনি। সুখের বিষয়,
বর্তমানে এখন এটি প্রধান বিষয় রূপে উঠে এসেছে।
(২) একটি সুরক্ষিত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদী সমাজ : পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের দ্বিতীয় আবশ্যিক শর্ত বাঙ্গালির বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক সমাজ। ১৯৭৭-এ ক্ষমতায় এসে ৩৪ বছর ধরে ইসলামি মোল্লাবাদকে তোষণ করলেন সিপিআইএমের নেতৃত্বে সব ধরনের বামপন্থীরা। বামপন্থী সরকার সারা রাজ্যে প্রথম মাদ্রাসা মন্ত্রীর পদ তৈরি করে একে ঢালাও মদত দিল। এইসময় থেকেই শুরু হলো ব্যাপক বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশ। দিনে দিনে বাড়ল অসহিষ্ণুতা। সংস্কৃতির রাজধানী বলে দাবি করা কলকাতার অমেরুদণ্ডী ‘সেকুলার’ বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চিন্তে মেনে নিলেন ইসলামি মোল্লাবাদীদের দাবি- ২০০৭-এ তসলিমা নাসরিন বিতাড়িত হলেন বামপন্থী পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কলকাতার কাছেই দেগঙ্গায় বামপন্থী শাসনে তিন দিন (৭-৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০) ধরে চলল হিন্দুদের বাড়ি-মন্দির-দোকানের উপর আক্রমণ। মিলিটারি নামাতে হলো সরকারকে।
এরপর ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতা পাবার লক্ষ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে থেকেই শুরু করেছিলেন সাম্প্রদায়িক তোষণনীতি। ক্ষমতা পাবার পর মুসলমান তোষণ শুরু হলো পূর্ণ শক্তি দিয়ে। শুরু হলো মাদ্রাসা শিক্ষার জোয়ার, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা। কামদুনি- কাটোয়ার মতো একের পর এক হিন্দু সমাজের মেয়েদের ধর্ষণে লিপ্ত হচ্ছে মুসলমান পুরুষেরা, বেআইনি মদ খেয়ে মৃতদের মুসলমান বলেই দেওয়া হচ্ছে সরকারি অনুদান।
বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দুদের উপর আক্রমণ চলছে শাসকের মদতে। রাজনৈতিক মঞ্চে অধিষ্ঠান করছেন পীর-ইমামরা। বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। দুর্গাপূজার দিনক্ষণ ঠিক হচ্ছে ইসলামি পরবের কথা মাথায় রেখে, কোথাও কোথাও দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা বন্ধ করা হচ্ছে। হিন্দু সমাজ আজ পশ্চিমবঙ্গে নির্ভয়ে বাঁচতে
পারছে না।
সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের বিষয়টি আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক আলোচনায় না এলে শ্যামাপ্রসাদের পশ্চিমবঙ্গ আর থাকবে না। আগামী কয়েক দশকে তা হয়ে যাবে ইসলামি জেহাদিদের পদানত একটি রাজ্য- যে অবস্থা মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কিছু অংশে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান। রাজধানী কলকাতাতে শুরু হয়েছে তার মহড়া।
পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যআমাদের নতুন ভাবে ভাবতে হবে। আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গ ধর্মীয় কারণে বিভক্ত একটি বিশেষ রাজ্য। সেই জন্য সংবিধানের ৩৭১ ধারা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী। অসমের মতো সন্দেহভাজন ভোটারকে প্রকৃত অনুসন্ধান করে ডি-ভোটার করা প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করে বিতাড়নের কাজটি শুরু করতে হবে।
১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে ধর্মীয় কারণে ভারতে চলে আসা হিন্দুদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মুসলমান সম্প্রদায়কে ‘সংখ্যালঘু’ বলে গণ্য করা যাবে না। ধর্মীয় কারণে বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গকে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করতে হবে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামকে জনসাধারণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এটি একটি রাজনৈতিক কাজ। রাজনৈতিক দলকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।