• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home প্রচ্ছদ নিবন্ধ

30th June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
30th June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

Issue 77-43-30-06-2025

নজরুল-দরদি শ্যামাপ্রসাদ
অভিজিৎ দাশগুপ্ত
কাজী নজরুল ইসলাম যতদিন স্বমহিমায় সৃষ্টিশীল ছিলেন, ততদিন তাঁর বন্ধুবান্ধব অনুরাগীর কোনো অভাব ঘটেনি। অসামান্য দীপ্ত চেহারা, টানা টানা চোখ আর দরাজ গলায় তাঁর উপস্থিতির মধ্যেই এমন জাদু ছিল যে, ভক্ত-অনুরাগীর দল প্রায় যেন আচ্ছন্ন হয়ে যেতেন। কবিতা পাঠের আসরে একের পর এক কবিতা পড়ছেন, ঘরোয়া সঙ্গীতের আসরে হারমোনিয়াম টেনে পরপর গেয়ে চলেছেন নিজের লেখা আর সুর করা গান, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া এমন সম্মোহনী শক্তি সে যুগে অন্য কারও ছিল কিনা বলা শক্ত। কিন্তু এমন প্রাণমাতানো সৃষ্টিশীল মানুষকে এত মর্মান্তিক কিছু আঘাত পেতে হলো, যা হয়তো শেষ পর্যন্ত তাঁর জীবনটাকেই নষ্ট করে দেয়।
নজরুলের বিরাট বন্ধুমহলের একাংশের অভিযোগ ছিল, তিনি একসময়ে হাজার হাজার টাকা রোজগার করেছেন। কিন্তু পরিবার আর ভবিষ্যতের কথা না ভেবে সে টাকা কেবল ফুঁকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই অভিযোগ কতদূর সত্যি, তা আর জানার উপায় নেই। কিন্তু ১৯৪২ সালে কবি যখন অজানা রোগে আক্রান্ত হলেন, বাস্তব আর অলীক জগতের মাঝে পেন্ডুলামের মতো দুলতে শুরু করল তাঁর চেতনা, তখন অভিযোগটা আরও ফুলে ফেঁপে উঠল। কেউ কেউ তো প্রকাশ্যেই বলতে লাগল তাঁর আজকের দারিদ্র্যের জন্য নজরুলই দায়ী। কী করে এঁরা বুঝবেন, বড়ো ছেলে বুলবুল যখন গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনে চলে গেল, তখন রোগ নিরাময়ের জন্য আপ্রাণ খরচ করে গিয়েছিলেন বাবা নজরুল। কিন্তু কিছুতেই কিছু করা যায়নি। চোখের মধ্যেও বসন্তের গুটি বার হয়েছিল বুলবুলের, বাবাকে কাছছাড়া করতে চাইত না এক মুহূর্ত। বয়স তখন তার মাত্র চার। এই অবস্থাতেই ১৯৩০ সালের মে মাসে মারা যায় বুলবুল। নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কমরেড মুজফফর আহমেদ লিখেছেন: ‘উস্তাদ জমীরুদ্দিন খানের সঙ্গে নজরুলের যখন সঙ্গীত চর্চা চলত, তখন শুনে শুনেই সব শিখে ফেলত ছোট্ট বুলবুল। এমন দুরন্ত ছিল তার স্মৃতিশক্তি। আহা, অন্ধ হয়েও বুলবুল যদি বেঁচে থাকত! তাহলে একজন বড়ো গায়ক ও সঙ্গীতজ্ঞ তো সে হতে পারত।’
দ্বিতীয় আঘাত স্ত্রী প্রমীলার নিরাময়ের অতীত অসুখ। যার জেরে বাকি জীবনটা তাঁকে শয্যাশায়ী হয়েই কাটাতে হয়েছে। চিকিৎসায় কোনো কার্পণ্য করেননি নজরুল। খরচ করেছেন হাজার হাজার টাকা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন দাঁড়াল যে মাত্র চার হাজার টাকায় অসীমকৃষ্ণ দত্তর কাছে যথাসর্বস্ব বাঁধা দিতে হয়েছিল নজরুলকে। অবশেষে এল তৃতীয় ধাক্কা। বিচিত্র অসুখে আক্রান্ত হলেন কবি নিজেই। ১৯৪২ সাল। জুলাই মাস। হঠাৎ একদিন তিনি অনুভব করলেন জিব আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ডান হাতটা কাঁপছে। শরীর নির্জীব, নিস্তেজ। নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে যাওয়া স্ত্রীর শয্যাপাশে তিনি পড়ে রইলেন সারাদিন, যেন ওঠার শক্তিও নেই। নজরুলের অনুজপ্রতিম সুহৃদ জুলফিকার হায়দার প্রায়ই বাড়ি আসতেন। তিনি এসে অনেকক্ষণ লক্ষ্য করে শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। রোগ দেখে তো মনে হচ্ছে প্যারালিসিস। তাহলে এখন উপায়?
আরও কয়েকদিন গেল। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছিলেন প্রতিবেশী এক ডাক্তার। কিন্তু উন্নতির কোনও লক্ষণ নেই। প্রমীলাদেবীর মা গিরিবালা দেবীর সঙ্গে আলোচনা করে হায়দার সাহেব কবির অসুখের খবরটি সংবাদপত্রে পাঠিয়ে দিলেন। ইংরেজি, বাংলা প্রায় প্রত্যেকটি দৈনিকেই খবরটি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হলো। তাঁরা ভেবেছিলেন, অসুখের খবর পেয়ে কাজী নজরুলের বন্ধু-অনুরাগী মহলে নিশ্চয়ই একটা সাড়া পড়ে যাবে, সবাই দেখতে আসবে। পাঁচজনে মিলে তখন ঠিক করা যাবে কোনপথে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা যায়। কিন্তু অপেক্ষাই সার। দিনের পর দিন কেটে গেল, কবির বন্ধুবান্ধবদের কাউকেই তাঁর বাড়ির ধারে-কাছে দেখা গেল না।’
জুলফিকার সাহেব লিখছেন: ‘আমি যখন কাজীদার বাসায় গিয়ে পৌঁছই, তখন সকাল এগারোটা বেজে গেছে। ভাবী বললেন, জিবের আড়ষ্টতা আরও বেড়ে চলেছে। কী জানি কেন সকাল থেকেই তিনি খুব উত্তেজিত, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ক্রোধের সঙ্গে কী যেন বলছেন। হায়দার সাহেবকে দেখে নজরুল জড়িয়ে জড়িয়ে বললেন, ‘তুমি এখনই ফজলুল হকের ভাগ্নে ইউসুফের ওখানে চলে যাও। তাকে তো তুমি চেনোই, ইউসুফকে নিয়ে তুমি হক সাহেবের কাছে যাও। গিয়ে বলো, ‘নবযুগ’ কাগজের খাটুনিতেই (নবযুগ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন কাজী নজরুল) আজ আমি এই অসুখে পড়েছি। তিনি আমার সঙ্গে মোটেই ভালো ব্যবহার করেননি। যেমনটি আশা করেছিলাম সেরকম কিছুই পাইনি।’
বলতে বলতে আরও উত্তেজিত হয়ে উঠলেন নজরুল। সামনে খাবার দেওয়া হয়েছিল, টান মেরে ফেলে দিলেন। ঘরের সকলে চুপচাপ। যে যার জায়গায় বসে আছেন। এই অবস্থায় হায়দার উঠে এসে কবিকে বললেন, ‘হক সাহেবের কাছে আমি যাচ্ছি। কিন্তু আপনি দুটো খেয়ে নিন, নইলে যাব না।’ মিনিট দশেক চিৎকার-চেঁচামেচি করে অবশেষে একটু যেন শান্ত মনে হলো কবিকে। ভাতের থালা আনা হলো। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও কেমন একটা অস্বাভাবিকতা। ঠিক উন্মাদের মতোই তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছেন। কখনও আবার বাঁ হাতে গ্রাস তুলে মুখে পুরছেন। মাসিমা গিরিবালা দেবী কাঁটা বেছে না দিলে মাছের কাঁটা বেছে খাওয়ার ক্ষমতাও তাঁর লোপ পেয়ে গিয়েছিল।
অবশেষে সেদিন বিকেলেই জনাব ইউসুফ আলির বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন হায়দার সাহেব। সৌজন্য বিনিময়ের পর বললেন, ‘ইউসুফ সাহেব, বন্ধু হিসাবে আপনার এবং আপনার স্ত্রী কবি মোতাহেরা বানুর কাছে কাজীদার দাবি, আপনি স্বয়ং ফজলুল হকের কাছে গিয়ে কবির আর্থিক দুরবস্থার কথা তাঁকে জানান, যাতে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন।’
কবির অসুখের কথা শুনেও খানিকটা নির্বিকার ইউসুফ আলি। বললেন, হক সাহেব তো খুব ব্যস্ত থাকেন। গেলেই তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাবে- এমনটা হওয়া কঠিন। ছাড়লেন না হায়দার। বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, ‘আমি কাল সকাল আটটার সময় হক সাহেবের কাছে যাচ্ছি এবং আপনাকেও সঙ্গে চাই।’ অগত্যা রাজি হলেন ইউসুফ আলি।
৮৮/২, ঝাউতলা রোড। এই বাড়িতেই থাকতেন জনাব ফজলুল হক। ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বঙ্গের ‘চিফ মিনিস্টার’। এত সকালেও তাঁর বাসভবনের বৈঠকখানায় এমপি, এমএলএদের ঠাসাঠাসি ভিড়। হক সাহেব তখনও দরবারে বসেননি। যাঁরা এসেছেন তাদের মধ্যে গল্পগুজব চলছে। ইউসুফ সাহেবের সঙ্গে সোজাসুজি প্রাইভেট চেম্বারে ঢুকে গেলেন হায়দার। ফজলুল সাহেবকে পাওয়াও গেল। ইউসুফ আলি সংক্ষেপে কবির অসুস্থতার কথা তাঁকে জানিয়ে বললেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা এখনও কিছুই হয়নি। একটা কিছু ব্যবস্থা তো করতে হয়।
হক সাহেব হায়দারের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কাল সকাল আটটার সময় আবার এসে আমাকে মনে করিয়ে দেবে। এখন আমি কিছুই বলতে পারছি না।
পরের দিন ১৯ জুলাই ১৯৪২। হক সাহেব যেমন বলেছিলেন সেই মতো নির্দিষ্ট সময়ে হাজির জুলফিকার হায়দার। কিন্তু গিয়েই তো চক্ষুস্থির। অন্তত পঞ্চাশ-ষাটজন এমএলএ চিফ মিনিস্টারকে ঘিরে বসে আছেন। জমে উঠেছে খাস দরবার। হক সাহেব অবশ্য একাই বক্তা। বাকিরা সবাই শ্রোতা। হায়দারকে দেখে ইশারায় বসতে বললেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সময় আর হয় না। অতি কষ্টে যখন চিফ মিনিস্টারের নাগাল পাওয়া গেল তখন ঘণ্টাখানেক কেটে গেছে। নিজের চেম্বারে ঢুকেই নুরুল হুদাকে নির্দেশ দিলেন, ‘শিগগির শ্যামাপ্রসাদকে ফোনে কন্ট্রাক্ট করো।’
ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তখন অবিভক্ত বঙ্গের অর্থমন্ত্রী। —হ্যালো শ্যামাপ্রসাদ শোনো। কবি নজরুল ইসলাম অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যতটুকু শুনলাম, মনে হচ্ছে প্যারালিসিস। ডাঃ বিধান রায়কে দেখাবার জন্য আমাকে এসে ধরেছে। তুমি একটু বিধান রায়কে দেখাবার ব্যবস্থা করে দাও।
মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে শ্যামাপ্রসাদ বিধান রায়ের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিতেই পারতেন। কিন্তু স্যার আশুতোষের এই মেজো ছেলেটি যে ধাতুতে গড়া, তাতে এক বিপন্ন কবিকে সামান্য উপকার করে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার মানুষ তিনি ছিলেন না। ফজলুল হক হায়দার সাহেবকে বলেছিলেন পরদিন লালদিঘির সেক্রেটারিয়েটে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। হায়দার যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে শুনলেন, হক সাহেব জরুরি কাজে কোথায় যেন বেরিয়ে গেছেন। বিমূঢ় হায়দার শেষমেশ নজরুল ইসলামের কথা উল্লেখ করে একটা স্লিপ লিখলেন। কাগজটা আর্দালির হাতে দিয়ে বললেন, ‘দেখো তো, ডক্টর মুখার্জি যদি থাকেন, তবে ওটা তাঁর হাতে গিয়ে দাও।’ আর্দালি স্লিপ নিয়ে ডক্টর মুখার্জির ঘরে ঢুকল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসে বলল, ‘চলুন, সাহেব ডাকছেন।’ নিজের ডেপুটি সেক্রেটারি মিস্টার ওয়াকারের সঙ্গে কথা বলছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। হায়দার ঢুকতেই তাঁকে বললেন, ‘আধ ঘণ্টা পর ফের চলে আসুন।’
টেবিলে আর একজন বসেছিলেন। চট্টগ্রামের এমএলএ ড. সানাউল্লা। শ্যামাপ্রসাদ তাকেও সবিনয়ে বিদায় করলেন। তারপর টেবিলে কনুই দিয়ে সামনে ঝুঁকে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বললেন, ‘হ্যাঁ এবার বলুন আপনি, কবির অবস্থা কি খুব খারাপ? কবে থেকে অসুখ? কী অসুখ?’ হায়দারের কাছে কবির অসুস্থতার বিবরণ শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন শ্যামাপ্রসাদ। বললেন, ‘আজ আশুতোষ কলেজে একটা ফাংশানে আমার উপস্থিত থাকার কথা। যাই হোক নজরুল সাহেব থাকেন কোথায়? আপনি কি তাঁর বাড়ি চেনেন?’
-‘হ্যাঁ চিনি।’
-‘তাহলে আমাকে নিয়ে চলুন। আমি তাঁকে দেখব।’ তারপর আর্দালিকে বললেন, ‘আমি আজ আর অফিসে ফিরব না। তুমি ওয়াকার সাহেবকে একথা বলে দিও।’ এরপর নিজের গাড়িতে হায়দারকে নিয়ে উঠে পড়লেন শ্যামাপ্রসাদ। গাড়ি ছুটল গ্রে স্ট্রিটের দিকে। সেখান থেকে শ্যামবাজার।
-‘আচ্ছা, কবির চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? ওঁর আর্থিক অবস্থা এখন কেমন?’
—’কী আর বলব। অবস্থা শোচনীয়। দেনায় একেবারে ডুবে রয়েছেন কাজী নজরুল।’ ‘ওঁদের তাহলে চলছে কী করে?’
শ্যামবাজারে পৌঁছে আর এক বিপত্তি। সংকীর্ণ সেকেলে বাড়ি, ততোধিক সংকীর্ণ সিঁড়ি। শ্যামাপ্রসাদ ওই খাড়াই সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন কী করে? গড়পড়তা বাঙালিদের তুলনায় তাঁর চেহারাটি যে কিঞ্চিৎ বড়োসড়ো! হায়দারের অস্বস্তি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। নিজে থেকেই বললেন, ‘কী আর করা যাবে। দেখাই যাক না। আস্তে আস্তে উঠব’খন।’ দোতলায় উঠে রীতিমতো হাঁফাতে লাগলেন খানিকক্ষণ। তারপর ঢুকলেন নজরুলের ঘরে। শ্যামাপ্রসাদকে দেখে হাত তুলে নমস্কার করলেন নজরুল। বলতে লাগলেন নিজের কথা, অসুখের কথা, এখন কী করতে চান সেই কথা। জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসছে, কথা ভালো বোঝা যায় না, তবু চেতনার জগৎ থেকে তখনও তিনি পুরোপুরি প্রস্থান করেননি। কাজী বলে যাচ্ছেন। সব কথা বুঝতে পারছেন না শ্যামাপ্রসাদ। তবু চেষ্টা করছেন প্রাণপণ— সে এক স্মরণীয় আলাপচারিতা।
নজরুল বোধহয় অনুভব করছিলেন তাঁর কথা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদের। জড়ানো গলায় কাগজ-কলম চাইলেন। ছেলে সানি- কাজী সব্যসাচী – ছুটে গিয়ে পাশের ঘর থেকে কাগজ-কলম এনে দিল। কাঁপা হাতে লিখে চললেন কবি, তিনি মনে করছেন কমপ্লিট রেস্ট পেলে একেবারে সেরে উঠবেন। কলকাতায় সেই বিশ্রাম হবে না। অনবরত লোকজনের যাতায়াতে মাথা যাবে আরও গরম হয়ে। তিনি মধুপুরে যেতে চান প্রতিবেশী এক ডাক্তারের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন ডাঃ সরকার। নজরুলের সেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। শ্যামাপ্রসাদ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন চিকিৎসার গতিপ্রকৃতি। নজরুল কাগজে লিখেছেন, মুখেও বললেন, মাস দুয়েকের জন্য মধুপুর যেতে চান। স্ত্রীর নিম্নাঙ্গ পক্ষাঘাতে অসাড়। ট্রেনভাড়া, বাড়িভাড়া, খাইখরচ আর দেখাশোনার জন্য তাই আরও দুজন লোককে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য চাই কম করে এক হাজার টাকা।
সেই ১৯৪২ সালে এক হাজার টাকার অনেক দাম। পরাধীন ভারতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা তখনও এমন উন্নত হয়নি যে যখন তখন ব্যাংকে গেলেই টাকা তোলা যাবে। শ্যামাপ্রসাদ অবস্থাপন্ন মানুষ। ব্যাংকের সুবিধা তিনি পেতেই পারেন। কিন্তু নজরুলের বাড়িতে কথায় কথায় তখন পাঁচটা বেজে গেছে। ছুটি হয়ে গেছে ব্যাংক। এদিকে নজরুলের চিকিৎসার জন্য ডাঃ সরকারকে পরদিনই মধুপুর যেতে হবে। তাঁর সঙ্গে কবিকে সপরিবার পাঠিয়ে দেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। চিন্তিত শ্যামাপ্রসাদ খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে হায়দারকে বললেন, চলুন তো একবার ভবানীপুর। ওখানে আমার পরিচিত কয়েকটা জুয়েলারির দোকান আছে- চলুন তাদের কাছে যাই। মনে হয় খোলা পাব। একবার শ’ পাঁচেক হাতে পেলে কাল টাকা শোধ করতে অসুবিধা হবে না।
শ্যামাপ্রসাদের গাড়ি ছুটল ভবানীপুরের পথে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে কলকাতার রাজপথে জ্বলে উঠছে সারি সারি গ্যাসবাতি। আঁধার ঘনাচ্ছে দিগন্তে। ভিতরে নিশ্চুপ চিন্তামগ্ন শ্যামাপ্রসাদ আর হায়দার।
টাকা জোগাড় শেষপর্যন্ত হলো। মধুপুরে রওনা হলেন সপরিবার নজরুল। সারাদিন নজরুলের জন্য কেটে যাওয়ায় সেদিন আশুতোষ কলেজে আর যেতে পারেননি শ্যামাপ্রসাদ। ফাংশানটি ছিল বাবা, স্যার আশুতোষের স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠান। সারা দিনের ছুটোছুটির মধ্যে সে অনুষ্ঠানের কথা একবারও উচ্চারণ করেননি শ্যামাপ্রসাদ। বাবার স্মরণ অনুষ্ঠানে যেতেও পারেননি। বঙ্গের প্রিয় কবি সঙ্কটে পড়েছেন, সমস্ত জাতির হয়ে তার সুরাহা করতে তিনি ছুটে এলেন। কবির প্রিয়জনেরা বলছেন, নজরুলের সুসময়ে যারা বাড়ি এসে ভিড় জমাত, কাপের পর কাপ চা আর জলখাবারের সদ্গতি করত, তাদের কারোর খোঁজ নেই। এই অবস্থায় অভয়হস্ত প্রসারিত করে এগিয়ে এলেন এমন একজন মানুষ যাঁর সঙ্গে নজরুলের সেভাবে কোনও পরিচয়ই ছিল না।
১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে জুলফিকার হায়দারকে লেখা শ্যামাপ্রসাদের একটা চিঠি পাচ্ছি, তিনি লিখছেন : ‘আপনি আমাকে যেদিন কবির বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেদিন কবির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা নিয়ে এসেছি। আপনার সঙ্গে আলোচনা করে উপায় উদ্ভাবনের জন্য উদ্‌গ্রীব রয়েছি। আপনি একদিন আমার এখানে এলে খুশি হব।’
আসলে এককালীন কিছু টাকা দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাননি শ্যামাপ্রসাদ। সেটা খুব চেনা রাস্তা- সুনামও হয়, চাপও পড়ে না। তিনি চাইছিলেন একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করতে। কিন্তু একাজ একা একা করা যায় না। চাই লোকবল। চাই সমাজের প্রভাবশালী কিছু মানুষের সমর্থন। হায়দারকে যখন চিঠি লিখছেন শ্যামাপ্রসাদ, এই স্থায়ী ব্যবস্থার কথা তখনই তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছিল।
উত্তর কলকাতায় শ্যামবাজারের কাছে মোহনবাগান রো-তে তখন ছিল শনিবারের চিঠির অফিস। নজরুলের কথা ভাবতে ভাবতে একদিন হায়দার হাজির হলেন পত্রিকা সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের ঘরে।
—কী ব্যাপার হায়দার? বহুদিন পর। সবকিছু কুশল তো? -না দাদা, ভালো আর কোথায়? কবি নজরুল ইসলাম জটিল অসুখে পড়েছেন। তাঁর বাড়ির লোক অর্থাভাবে বিপর্যস্ত। নড়েচড়ে বসলেন সজনীকান্ত। -তুমি আমাকে সব খুলে বলো হায়দার।
কে দেখছেন? কী চিকিৎসা হচ্ছে? নজরুলের এখন কী রকম অবস্থা? হায়দার সাহেব যতটা জানেন সবকিছু সবিস্তারে বলে চললেন। সজনীকান্তের ঘরে তখন উপস্থিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। খানিক বাদে হাজির হলেন অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষ। সকলে মন দিয়ে শুনলেন। ঠিক হলো পরদিন নজরুলের বাড়িতে সজনীকান্ত আর তারাশঙ্কর যাবেন। তারাশঙ্কর অবশ্য যেতে পারেননি সেদিন। তবে সজনীকান্তের সঙ্গে গিয়েছিলেন সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় নজরুল কাউকেই চিনতে পারলেন বলে মনে হলো না। একবার তাকিয়েই মুখ সরিয়ে নিলেন। নির্বাক, নিশ্চুপ। অন্য কোনও জগতের বাসিন্দা যেন। বেদনাহত অতিথিরা।
কিছু একটা করার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছিলেন সজনীকান্ত। পরের রবিবার শ্যামাপ্রসাদের বাড়িতে মিটিং। হায়দারের সঙ্গে সেখানে হাজির হলেন তিনি। ভাইস চ্যান্সেলর শ্যামাপ্রসাদের বৈঠকখানায় তখন বসে আছেন অধ্যাপক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ বদরুদ্দোজা এবং আরও জনাকয়েক বিশিষ্ট মানুষ। শ্যামাপ্রসাদ বললেন, কবিকে রোগমুক্ত আর উদ্বেগমুক্ত করতে কিছু জিনিস আমি ভেবেছি। পরদিন আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
পরদিন বেলা ন’টা নাগাদ শ্যামাপ্রসাদের বাড়িতে আবার গেলেন দু’জনে। শ্যামাপ্রসাদ মনে মনে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘আমি ভেবে দেখলাম, প্রতি মাসে অন্তত শ’ দুই টাকা কবিকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার নিজের পক্ষে একা এই দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। তাই ভেবেছি এ মাসে পাইকপাড়ার মহারাজ বিমলাপ্রসাদ সিংহের কাছে কবি নজরুলের জন্য দুশো টাকা চাইব। পরের মাসে মেদিনীপুরের রাজা মল্লদেবের কাছে চেয়ে পাঠাব। এভাবে যে ক’দিন জোগাড় করতে পারি দিতে থাকি। পরে গভর্নমেন্টের থেকে একটা সাহিত্যিক ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে। শ্যামাপ্রসাদ এইসঙ্গে একথাও স্পষ্ট করে দিলেন- এ বিষয়ে একটা কমিটি দরকার, যেখানে থাকবেন সমাজের বিশিষ্টরা।
সজনীকান্ত আর হায়দার মিলে তখনই একটা প্রাথমিক তালিকা তৈরি করলেন যাতে ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, চপলাকান্ত ভট্টাচার্য, তুষারকান্তি ঘোষ, গোপাল হালদার, কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থ। বিমলানন্দ তর্কতীর্থ খোদ রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসক ছিলেন ধন্বন্তরী আয়ুর্বেদাচার্য। কয়েকদিন আগেই তিনি বলেছিলেন, এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে কবি নজরুল মুক্তি পান, সেটাই তিনি একান্তভাবে চাইছেন।
দিন দুয়েক পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা বিল্ডিঙে উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মিটিং। যথাসময়ে হাজির তারাশঙ্কর, সত্যেন মজুমদার, চপলাকান্ত, তুষারকান্তি, সজনীকান্ত, সকলে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সবার দিকে তাকিয়ে আবহাওয়াটা বোধহয় বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। তারপর বললেন, ‘আমাদের একটা ত্রুটি হচ্ছে। কবি নজরুলের জন্য আমরা আজ যারা এখানে উপস্থিত হয়েছি তাদের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবাই হিন্দু। আমার মনে হচ্ছে নজরুল সাহায্য কমিটিতে কয়েকজন সম্ভ্রান্ত মুসলমানের নাম থাকা অবশ্য প্রয়োজন, নয়তো কেউ না কেউ এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ খুঁজে পাবেন। খানিকটা বিতর্কের পর শ্যামাপ্রসাদের যুক্তি সকলে মেনে নিলেন। শ্যামাপ্রসাদ এরপর মিটিঙের মধ্যেই কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলমানকে টেলিফোন করে তাঁদের সম্মতি আদায় করলেন। শেষ পর্যন্ত যে কমিটি চূড়ান্ত হলো, তার সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ১৩।
১। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ। ২। সজনীকান্ত দাস, যুগ্ম সম্পাদক। ৩। জুলফিকার হায়দার, যুগ্ম সম্পাদক। ৪। সৈয়দ বদরুদ্দোজা, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ৫। স্যার এ এফ রহমান, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ৬। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য, কার্যকারী কমিটি। ৭। হুমায়ুন কবির, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ৮। বিমলানন্দ তর্কতীর্থ, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ৯। তুষারকান্তি ঘোষ, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ১০। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ১১। চপলাকান্ত ভট্টাচার্য, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ১২। গোপাল হালদার, সদস্য, কার্যকরী কমিটি। ১৩। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, সদস্য কার্যকরী কমিটি।
কমিটি অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করল সাধারণ মানুষের কাছে। তাদের জোগাড় করা মাসিক দুশো টাকায় এরপর কিছুদিন শান্তিতে ছিলেন নজরুল। মুদির দোকান, ঘরভাড়া সবটা মিটত না। কিন্তু দুবেলা ভাতের ব্যবস্থা তো হচ্ছিল। এইভাবে চলল মাস পাঁচেক। তারপর ঘটল অভাবনীয় এক বিপর্যয়।
ষষ্ঠ মাসের টাকা আসতে দেরি হচ্ছে কেন তার খোঁজ নিতে সজনীকান্তের কাছে গিয়েছিলেন হায়দার। প্রশ্ন শুনেই সজনীকান্ত অগ্নিশর্মা।
—’কী বলছ তুমি হায়দার? টাকা! কীসের টাকা? যে ক’মাস দেওয়া হয়েছে সেটাই দেওয়া উচিত হয়নি। ড. মুখার্জিকে বলে দিয়েছি তিনি যেন নজরুলের জন্য আর কারও কাছে হাত না পাতেন।’
-‘কেন সজনীদা? কাজীদার কী অপরাধ?’ —‘এই তো তোমাদেরই ধর্মের এক নামকরা কবি এসে বলে গেল, নজরুলের বাড়িতে এখনও আগের মতোই মণ্ডা-মিঠাই চলছে। আশ্রিতরা জাঁকিয়ে বসে রাজসিক খানাপিনা চালাচ্ছে। কারোর নড়বার নামটি নেই। এদিকে আমরা লোকের কাছে ভিক্ষে করে বেড়াচ্ছি!’
সজনীকান্তের রাগ যেন কিছুতেই যাচ্ছে না। বললেন, ‘নজরুলকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমার আর কিছুমাত্র আগ্রহ নেই। তুমি যদি মনে করো ড. মুখার্জিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারো।’
কিন্তু কে সেই কবি? চেতনাহীন নজরুলের এতবড়ো সর্বনাশ যিনি করে এলেন! নাছোড়বান্দা জুলফিকার পীড়াপীড়ি করে শেষ পর্যন্ত সজনীকান্তের মুখ থেকে নামটা সেদিন জেনে নেন। রাগে ঘেন্নায় সর্বাঙ্গ রি-রি করে ওঠে তাঁর। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুজফ্ফর আহমেদ- ওই কবির চেয়ে নজরুল আর তাঁর পরিবারকে অনেক ভালো চিনতেন সজনীকান্ত। তাহলে তিনি তখন কাজীর বাড়িতে গেলেন না কেন? কেন পরের মুখের ঝাল খেয়ে ‘বুঝে’ গেলেন, নজরুলের বাড়িতে মোচ্ছব চলছে। এমনকী শ্যামাপ্রসাদকেও প্রভাবিত করলেন।
আগের মতো সাদর সম্ভাষণ জুটল না। শ্যামাপ্রসাদের সেক্রেটারির কাছেও। অর্থাৎ রটনাটা তাঁর কানেও গেছে। হায়দারকে দেখে বসতেও বললেন না সেক্রেটারি চিত্তবাবু। পরে খানিকটা নরম হয়ে উগরে দিলেন সেই একই মুসলমান কবির নাম। যিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দায়িত্ব নিয়ে এই ‘উপকার’ করে এসেছেন। কোনওমতে রাগ চেপে এরপর হায়দার ঢুকলেন শ্যামাপ্রসাদের ঘরে। ড. মুখার্জির মুখেও আগের সেই উষ্ণতা নেই। সৌজন্য বিনিময়ের পর নজরুলের মাসোহারার কথাটা পাড়তেই শ্যামাপ্রসাদ রাখঢাক না করে হায়দারকে বলে দিলেন, ‘মাফ করবেন, আর টাকা দেওয়া যাবে না। ওই বাড়িতে যা চলছে, আগে জানতে পারলে এটুকুও আমি করতাম না।’
লজ্জায় দুঃখে শ্যামাপ্রসাদের বাড়ি থেকে সেদিন বেরিয়ে এসেছিলেন হায়দার সাহেব। চলে আসার আগে শুধু বলে আসেন, ‘কারও মুখের কথা একতরফাভাবে বিশ্বাস করে নেওয়া বোধহয় ঠিক হলো না ড. মুখার্জি।’
শ্যামাপ্রসাদের চিন্তা সেদিন কিন্তু ওখানেই থেমে যায়নি। গোটা বিষয়টা অন্যভাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন তিনি। তবে কি কোথাও ভুল হলো? নজরুলের বাড়িতে মোচ্ছব চলছে বলে যে কথা রটিয়ে গেলেন তাঁরই স্বজাতীয় কবি- সেটা কি ঠিক? নাকি গাত্রজ্বালা! রটনা করে অন্যের সর্বনাশের চেষ্টা? সাহায্য কমিটির তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন না। কিছুদিন পর বেঙ্গল গভর্নমেন্ট অসুস্থ, দুঃস্থ বিদ্রোহী কবির জন্য স্থায়ী সাহিত্যিক ভাতার ব্যবস্থা করে। এর পিছনে ছিল অর্থমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদেরই প্রশাসনিক তৎপরতা। ফজলুল হকের সঙ্গে আলোচনা করে মাসে দুশো টাকা করে সরকারি সাহায্য পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন শ্যামাপ্রসাদ রোগে, শোকে, দারিদ্র্যে বিপর্যস্ত কবি পরিবারের একটু সাশ্রয়ের জন্য। এরপর ভারত যখন স্বাধীন হলো নির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে করে দেয় তিনশো টাকা প্রতি মাসে।
যে মানুষটির সঙ্গে আগে কখনও পরিচয় হয়নি শ্যামাপ্রসাদের, যাঁর অসমান্য কাব্যপ্রতিভার তিনি স্বাদ পেয়েছিলেন দূর থেকে, বিপর্যয়ের সময়ে সেই নজরুলের পাশেই যেন জন্মজন্মান্তরের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। যেন প্রমাণ করে গেলেন মুখে-মুখে ফেরা নজরুলের সেই কবিতাটি- ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান।’

READ ALSO

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

14th July প্রচ্ছদ নিবন্ধ

14th July প্রচ্ছদ নিবন্ধ

July 18, 2025
19th May রাজ্যপাট

19th May রাজ্যপাট

May 22, 2025
7th April সম্পাদকীয়

7th April সম্পাদকীয়

April 29, 2025
2nd October 2023 Oththi Kalam

2nd October 2023 Oththi Kalam

October 1, 2023

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?