সঙ্ঘ শাখা এক প্রসারিত পরিবার
সম্পূর্ণ মানবতার কল্যাণের জন্য প্রার্থনায় বলা হয়-‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়া। সর্বে ভদ্রাণি পশন্তু মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ।।’
মধুভাই কুলকর্ণী
ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের জীবনীমূলক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। অনেকগুলি প্রাদেশিক ভাষায় তার অনুবাদও হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত ক্ষেত্রে ডাক্তারজীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। যে কোনো বিষয়ের ওপর গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা তাঁর স্বভাব ছিল। স্বাধীনতা অর্জন করা চাই-ই, এরজন্য প্রয়োজন হলে আত্মবলিদানের মানসিকতাও থাকা চাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা পরাধীন কেন হলাম? কারা আমাদের স্বাধীনতা হরণ করলো? যে রকম ইংরেজ আমাদের আপন ছিল না, সেরকমই মুঘল, তুর্কি, গ্রিকও আমাদের আপন ছিল না। এই বহিরাগত আক্রমণকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষকারী সমাজ কারা ছিল? এই দেশকে নিজের মনে করা, নিজ মাতৃভূমি মনে করা সমাজ কোন সমাজ ছিল?
এইসব বিষয়ের ওপর গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে ডাক্তারজী সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, এই দেশকে নিজের দেশ মনে করা সমাজ হলো হিন্দু সমাজ। হিন্দু সমাজের আত্মবিস্মৃতির কারণে রাষ্ট্রভক্তির ভাবনা ক্ষীণ হয়েছে। এই কারণে সমাজজীবনে বিকৃতি উৎপন্ন হয়েছে। তার ফলস্বরূপ স্বার্থবুদ্ধির মতো সংকুচিত মানসিকতাই আমাদের পরাধীনতার মূল কারণ। তাঁর মনে ভাবনার উদয় হয়, এই রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য হিন্দু সমাজকে আত্মবিস্মৃতি, বিকৃত মানসিকতা এবং স্বার্থপরতা- এই ত্রিদোষ থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। আসেতুহিমাচল বিস্তৃত হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার ভাবনা থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের স্থাপনা করেন।
‘হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে হবে’, একথা বলা খুব সহজ। সম্পূর্ণ হিন্দু সমাজের সংগঠনের সংকল্প মন আকর্ষণকারী বা বৈপ্লবিক ভাবনা। কিন্তু ব্যবহারিক ভাবে এর জন্য কী করা প্রয়োজন? সদস্য কারা হবেন? সংগঠনের স্বরূপ কেমন হবে? এই বিষয়ে ডাঃ হেডগেওয়ার
সম্পূর্ণ মানবতার কল্যাণের জন্য প্রার্থনায় বলা হয়-‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়া। সর্বে ভদ্রাণি পশন্তু মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ।।’
কোনোরূপ লিখিত নিয়মাবলী তৈরি করেননি। কার্যপদ্ধতি রূপে তিনি প্রতিদিন শাখার কথা বলেছেন। ত্রিদোষ দূর করার মতো কার্যক্রমের কথা বলেছেন। গৈরিকধ্বজ সামনে থাকার কারণে আত্মবিস্মৃতি দূর হয় এবং ‘আমরা সবাই হিন্দু’ এই অনুভূতি উৎপন্ন হয়।
সামূহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিকৃত ও ধ্বংসাত্মক স্বভাবে পরিবর্তন আসে। প্রার্থনার কারণে রাষ্ট্রভক্তির ভাব দৃঢ় হয়। সংকুচিত ভাবনার স্থানে সামাজিক কর্তব্যের ভাবনা নির্মাণ হয়।
ডাক্তারজী সঙ্ঘপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, এই কারণে তাঁর ওঠা-বসা, কথাবার্তা, পত্র লেখা, দেখা-সাক্ষাৎ করা- সবকিছু সঙ্ঘের জন্য হতো। তাঁর আচরণ থেকে সঙ্ঘের রীতিনীতি নির্মাণ হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- (১) কুমার মাধব একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়ে নাগপুর থেকে কোঙ্কণ যাবেন। দুপুরে ট্রেন ছাড়বে। ডাক্তারজী বৃষ্টির মধ্যেও হেঁটে তাকে ছাড়ার জন্য স্টেশনে আসেন। চিঠি লিখে পৌঁছানোর খবর দেওয়ার কথা বলেন। তাঁর এই ব্যবহারের কারণে সেই যুবক সারা জীবনের মতো সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রচারক রূপে পঞ্জাবে সঙ্ঘের কাজ করেন। তাঁর নাম মাধবরাও মূলে। (২) যবতমলের নবমশ্রেণীর ছাত্র স্কুল ছুটি থাকায় নাগপুরে তার মাসির বাড়ি এসেছিল। তার মাসির বাড়ির পাশেই একটি সায়ম্ শাখা ছিল। খেলাধূলার আকর্ষণে সেই বালক শাখায় আসতে শুরু করল। ডাক্তারজী যখন ওই শাখায় এলেন, সেই বালকের সঙ্গে পরিচয় হলো। শাখার পরে ডাক্তারজী তার সঙ্গে তার মাসির বাড়ি গেলেন। ডাক্তারজী নাগপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন, এক
ছোটো বাচ্চার কারণে এত বড়ো একজন লোক তাদের বাড়িতে এসেছেন, তা দেখে বাড়ির লোকেরা খুব প্রসন্ন হলেন। এই বালকের কারণেই যবতমলে একটি নতুন শাখা শুরু হয়। (৩) নানাজী দেশমুখ (চিত্রকূট গ্রাম বিকাশ প্রকল্পের পুরোধাপুরুষ) তাঁর স্কুল জীবনের কথা লিখে রেখেছেন। তিনি যখন ষষ্ঠশ্রেণীতে পড়তেন, তখনকার কথা। শ্রীগন্ধে উকিলের বাড়ি তাদের বাড়ির পাশেই ছিল। একদিন তাঁর বাড়িতে অনেক লোকের যাতায়াত দেখা গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তাঁর বাড়িতে ডাঃ হেডগেওয়ার এসেছেন। নানাজী ডাক্তারজীকে কখনো দেখেনি কিন্তু দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তিনি লিখেছেন-‘আমাদের পরীক্ষা ছিল। আমরা চার বন্ধু পরীক্ষা দিতে যাবার পথে গন্ধে উকিলের বাড়ি গেলাম। ডাক্তারজী আমাদের চার বন্ধুকে ডাকলেন এবং অত্যন্ত স্নেহভরে এক-একজনকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আমাদের ভয় ভেঙে গেল। আমরা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি জানতে পেরে ডাক্তারজী গন্ধে উকিলকে দই-চিনি আনতে বললেন। ডাক্তার স্বয়ং আমাদের চারজনের হাতে দই-চিনি দিয়ে বললেন, যাও, তোমাদের পরীক্ষা ভালো হবে।’ (৪) বিশিষ্ট সাহিত্যিক আচার্য অত্রে এক স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ডাক্তারজী আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব অতি সুন্দর, গম্ভীর ও শান্ত। তিনি আমাদের বাড়িতে আসায় আমার মনে হয়েছে আমাদের বাড়ির কোনো লোকই বুঝি অন্য গ্রাম থেকে এসেছেন। তিনি অত্যন্ত সহজভাবে কথাবার্তা বলছিলেন। আনুষ্ঠানিকতার পরিবেশ দূর হয়ে এক আনন্দের অনুভব হতে শুরু করল।’ (৫) বিদর্ভ প্রান্তের সমরসতা শিবির
চলছিল। ত্রিশ হাজারেরও বেশি সংখ্যা ছিল।
পরমপূজনীয় ডাক্তারজীর সময় স্বয়ংসেবক হয়েছেন এমন ১০০-১২৫ জন প্রৌঢ় স্বয়ংসেবককে শিবির দেখার জন্য ডাকা হয়েছিল। তৎকালীন পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক শ্রীরাজেন্দ্র সিংহ এবং মাননীয় সরকার্যবাহ শেষাদ্রিজীর সঙ্গে পরিচয়াত্মক বৈঠক চলছিল। মাননীয় শেষাদ্রিজী বললেন, আমি ও মাননীয় রজ্জভাইয়া পূজনীয় ডাক্তারজীকে দেখিনি। আপনারা দেখেছেন, তাঁর কথা শুনেছেন। আপনারা কিছু বলুন।’ চার-পাঁচজন প্রবীণ স্বয়ংসেবক স্মৃতিকথা শুনিয়েছিলেন। বলতে শুরু করতেই তাঁদের চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করে দিয়েছিল। ‘ডাক্তারজী মানেই শুধু প্রেম, প্রেম আর প্রেম’, এইটুকু বলেই তাঁরা বসে পড়ছিলেন।
সঙ্ঘকাজ সবসময়ই প্রেম ও আত্মীয়তায় পরিপূর্ণ। ‘শুদ্ধ সাত্ত্বিক প্রেম আমাদের কাজের ভিত্তি’, এরকম একটি গান শাখায় শাখায় গাওয়া হয়। পরিবারের মতোই ভ্রাতৃভাবের অনুভব শাখায় হয়ে থাকে। পরিবারে যেমন ছোটো বড়ো সকলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তেমনই শাখায় শিশু, বালক, তরুণ, প্রৌঢ় প্রতিটি বয়সের স্বয়ংসেবককে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে পরিবারের সকলের চিন্তা হয়। সেরকমই শাখার কোনো স্বয়ংসেবক অসুস্থ হলে সমস্ত স্বয়ংসেবক ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবারে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ এলে পরিবারের সবাই কাজে লেগে পড়েন। শাখার কোনো স্বয়ংসেবকের বাড়িতে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠান হলে শাখার সব স্বয়ংসেবক তার বাড়ি গিয়ে কাজে হাত লাগান। সবার বিশ্বাসযোগ্যতাই পরিবারের উন্নতির মূলকথা। সঙ্ঘ শাখার ভিত্তি হলো স্বয়ংসেবকদের সততা এবং পরস্পর বিশ্বাস। সঙ্ঘ শাখা মানেই এক প্রসারিত পরিবার। সঙ্ঘ বাড়ছে, তার কারণ হলো শাখায় সহজ সরল আত্মীয়তাপূর্ণ ব্যবহার।
ডাক্তারজীর জীবদ্দশায় অর্থাৎ ১৯৪০ সালের মধ্যেই সঙ্ঘ অখিল ভারতীয় রূপ লাভকরে। ডাক্তারজীর আত্মীয়তার অনুভব করা যাচ্ছিল সর্বত্র। আমরা সঙ্ঘের অর্থাৎ অন্য কারও কাজ করছি-এরকম ভাবনা কারও মনেও আসে না। আমরা আমাদের পরিবারেরই কাজ করছি, এই ভাবনা ডাক্তারজী স্বয়ংসেবকদের মনে নির্মাণ করেছেন।
১৯৪০ সালে নাগপুরে তৃতীয় বর্ষ সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গে দীক্ষান্ত সমারোহে ডাক্তারজীর ভাষণ হিন্দু সমাজ সংগঠনের স্বরূপকেই পরিষ্কারভাবে
প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, আমার এবং আপনাদের মধ্যে যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও এমন কোন কথা যে যার কারণে আমার এবং আপনাদের অন্তঃকরণ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছে? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তত্ত্বজ্ঞান এতই প্রভাবী যে পরস্পরের মধ্যে পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও দেখামাত্রই ভালোবাসা নির্মাণ হয়ে যায়। ভাষা ও আচার-বিচারের ভিন্নতা সত্ত্বেও পঞ্জাব, বঙ্গ, মাদ্রাজ, মুম্বই, সিন্ধ প্রভৃতি প্রান্তের স্বয়ংসেবকদের মধ্যে এত ভালোবাসা কেন? এজন্য যে তারা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এক-একজন ঘটক। সঙ্ঘের প্রত্যেক স্বয়ংসেবক পরস্পরকে সহোদর ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।
সেই প্রশিক্ষণ বর্গে এক থেকে দেড়হাজার স্বয়ংসেবক উপস্থিত ছিলেন। ডাক্তারজী বলেন, এরা সবাই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ‘ঘটক’। তিনি বলেলনি এরা ‘সদস্য’। ‘আমি সঙ্ঘের সদস্য’ এরকম বলার অর্থ হলো ‘আমি আর সঙ্ঘ আলাদা’ এরকমই আভাস দেয়। ‘যতক্ষণ আমার ইচ্ছা থাকবে, ততক্ষণ আমি সঙ্ঘের সদস্য থাকবো’ এরকম ভাব উৎপন্ন হয়। ‘আমি ঘটক এরকম বলার অর্থ ‘আমিই সঙ্ঘ’। সদ্যোজাত শিশুও সেই পরিবারের ঘটক হয়ে যায়। আমার হিন্দু সমাজে জন্ম হয়েছে, তাই আমি হিন্দু সমাজের ঘটক হয়ে গিয়েছি, একথা বলার পর হিন্দু সমাজের আনন্দ আর আমার আনন্দ আলাদা হতে পারে না। ঘটক হওয়ার এই ভাবনা প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে নির্মাণ করাই হিন্দু সমাজ সংগঠন করা।
‘এক বড়ো পবিরার আমাদের, পূর্বপুরুষ আমাদের হিন্দু’, এরকম পারিবারিক ভাবনা সমগ্র দেশে উৎপন্ন হোক, এই কাজ সঙ্ঘকে করতে হবে। ১৯৪০ সালের সেই বর্গের দীক্ষান্ত ভাষণে অতি আগ্রহভরে ডাক্তারজী একথার প্রতিপাদন করেছেন। হিন্দুজাতির চূড়ান্ত কল্যাণ এই সংগঠনের মাধ্যমেই হবে। অন্য কোনো কাজ রাষ্ট্রীয় স্বয়সেবক সঙ্ঘ করবে না। ‘সঙ্ঘ ভবিষ্যতে কী করবে?’ এই প্রশ্ন নিরর্থক। সঙ্ঘ এই সংগঠনের কাজ আরও তীব্রগতিতে করে যাবে। এই পথে চলতে চলতে এমন এক সুবর্ণময় দিন নিশ্চিত আসবে, যখন সারা দেশ সঙ্ঘময় হয়ে যাবে।
দত্তোপন্ত ঠেংড়ী বলতেন, সঙ্ঘের ভাবাদর্শ ও কার্যপদ্ধতি ডাক্তারজীর কল্পনার উত্তরোত্তর আবিষ্কার। ১৯৪০ সালের ১৫ জুন যাদবরাও
জোশীকে ডাক্তারজী কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সঙ্ঘের প্রবীণ কার্যকর্তার দেহাবসান হলে তাঁর দাহকার্য কি সামরিক কায়দায় করবে? তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সঙ্ঘ এক বড়ো পরিবার। পরিবারের লোক যেভাবে পরিবারের অভিভাবকের দাহকার্য করে থাকে, সেরকমই সঙ্ঘের অধিকারীরও হওয়া উচিত এবং হামেশা এভাবেই হওয়া উচিত।
ডাক্তারজী স্বয়ংসেবকদের জন্য গণবেশ নিশ্চিত করেছেন। অনুশাসন নির্মাণের জন্য সমতা (প্যারেড), পথসঞ্চলন (রুটমার্চ)-এর মতো কার্যক্রম তৈরি করেছেন। আত্মবিশ্বাস বানানোর জন্য লাঠিখেলা শুরু করেছেন। হিন্দু সমাজকে রক্ষার জন্য উগ্রমস্তিষ্ক যুবকদের দল খাড়া করার চিন্তা ডাক্তারজীর মনের মধ্যে ছিল না। আসেতুহিমাচল বিস্তৃত হিন্দু সমাজ যদি পারিবারিক ভাবনায় একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় তবে কারও পক্ষে আর হিন্দু সমাজের দিকে বাঁকা নজরে তাকানোর সাহস হবে না এবং সমস্ত রকম সামাজিক সমস্যার সমাধান করা যাবে।
সমাজের প্রয়োজনের কথা ভেবে ডাক্তারজী নাগপুরে অনাথ বালকদের জন্য ছাত্রাবাস শুরু করেছেন। তাতে কোনোরকম ভেদভাব তিনি করেননি। গান্ধীজী, শঙ্কর নারায়ণ, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য, লালা লাজপত রায়ের মতো ব্যক্তিত্ব এই ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেছেন (তথ্য : ভারত সরকার দ্বারা প্রকাশিত ‘ডাঃ হেডগেওয়ার’ গ্রন্থ)।
গত একশো বছরে সঙ্ঘ এই পরিবার ভাবনায় সফল হয়েছে। স্বয়ংসেবকদের কোনো রাজ্যই পর মনে হয়নি। বহু স্বয়ংসেবক সমাজের বিশিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে কাজ করছেন। সেখানেও তাঁরা পরিবার ভাবনা নির্মাণ করার কাজ করে চলেছেন। হিন্দু পরিবার বিশ্ব পরিবারের ক্ষুদ্র সংস্করণ। হিন্দু পরিবারে মা-বাবা, ঠাকুরদা-ঠাকুমা, দাদু-দিদিমা, মামা-মামি, পিসি-মাসি ইত্যাদি সম্পর্ক রয়েছে। হিন্দু পরিবারে কাক-পক্ষী, গোরুবাছুর, গাছপালা সবাই সদস্য। সবার পূজা করা হয়। সম্পূর্ণ মানবতার কল্যাণের জন্য প্রার্থনায় বলা হয়-‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়া। সর্বে ভদ্রাণি পশন্তু মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ।।’ তাই বসুধৈব কুটুম্বকমের কল্পনাকে সাকার করার জন্য হিন্দু পরিবারেকেই এগিয়ে আসতে হবে। তারজন্য বিশ্বের ৬০টি দেশে হিন্দু সংগঠনের কাজ চলছে।