হিন্দুদের হিন্দুনামে এক হতে হবে
শিবেন্দ্র ত্রিপাঠী
সেকুলারিজমের বিষবৃক্ষের ফল ফলতে শুরু করেছে। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বহু পরিশ্রমের ফসল হিন্দু বাঙ্গালির শেষ আশ্রয়স্থল পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে কাশ্মীর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো হিন্দুর বধ্যভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বিগত প্রায় এক পক্ষকালের ঘটনাক্রম সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ১৯৪৭ সাল থেকে কংগ্রেস ভারতকে ইসলামের পদতলে উপঢৌকন দেওয়ার জন্য ‘ওয়াকফ’ নামে একটি কালসাপ পুষতে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে তাকে দুধ কলা দিয়ে বড়ো করেছেন ইন্দিরা, নরসিমহা, মনমোহন সিংহরা। তাঁদেরই পালন-পোষণে ওয়াকফ আজ নয় লক্ষ ৪০ হাজার একর জমির মালিক, যা আয়তনে পাকিস্তানের প্রায় সমান। তাদের এমনই দৌরাত্ম্য এই পশ্চিমবঙ্গের রেড রোড, ইডেন গার্ডেন, রাজভবন, ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ১৪ তলার নবান্নটিকেও তারা ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। জল একন মাথার উপর দিয়ে বইছে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশই আজ এদের দৌরাত্ম্যে অস্থির। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ বোর্ডের এই স্বেচ্ছাচার রুখতে লোকসভা ও রাজ্যসভায় অনেক আলোচনা ও বিতর্কের শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে এয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০২৫ সংসদে পাশ করিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এই আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, বলছে ‘এই আইন তারা এরাজ্যে লাগু হতে দেবে না।’ এক মন্ত্রী বলছেন, ‘চাইলে কলকাতাকে লক্ষ লোক দিয়ে স্তব্ধ করে দেবো, আগে গ্রাম বাংলাটাকে একটু শায়েস্তা করে দি’। সেই শায়েস্তা করা শুরু হয়েছে ৭ এপ্রিল থেকে। মুর্শিদাবাদে এক বিরাট অঞ্চল জুড়ে চলছে
জেহাদি আক্রমণ। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে হিন্দুরা আশ্রয় নিচ্ছে পাশের জেলায়, পাশের রাজ্যে।
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘মুসলমারা পালটা আন্দোলনের ডাক দিলে সামলাতে পারবেন তো?’ সত্যি সামলানো যায়নি। বলা ভালো সামলানোর চেষ্টা করেননি। যে মুর্শিদাবাদে মাত্র ৩০ শতাংশ হিন্দুর বাস, যার সিংহভাগই কংগ্রেস-তৃণমূলের সমর্থক, মুখ্যমন্ত্রী কী হালটাই না করে ছাড়লেন। শুভেন্দুবাবু তো সেন্ট্রাল ফোর্স নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন, তাকে টাইট দেওয়ার সাধ্য তাঁর এজন্মে হবে না। কিন্তু শুভেন্দুবাবুকে টাইট দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের দলের হিন্দু সমর্থকদেরও হায়নার মুখে ছুড়ে ফেলে দিলেন। আজ মুর্শিদাবাদের হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে
মুর্শিদাবাদে যারা মেরেছে আর যারা মরছে- সকলেই বাংলাভাষায় কথা বলে। কিন্তু যারা এই বিপদে অসহায় বাঙ্গালিকে ঝাড়খণ্ডে আশ্রয় দিল তারা বাঙ্গালি নয়।
পালাচ্ছেন। তৃণমূলের নেতা বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, সিপিএমের কট্টর সমর্থকরাও মুর্শিদাবাদ ছেড়ে মালদায় ত্রাণের খিচুড়ি খাচ্ছেন। কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতার সফল প্রয়োগ করালেন- ‘দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল অন্যে কবে না কথা/বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে সেটাই স্বাভাবিকতা/গুলির জন্য সমস্ত রাত সমস্ত দিন খোলা/বজ্র কঠিন রাজ্যে এটাই শান্তিশৃঙ্খলা/যে মরে মরুক, অথবা জীবন কেটে যাক শোক করে- আমি আজ জয়ী, সবার জীবন দিয়েছি নরক করে।’
পশ্চিমবঙ্গে ৩৩ শতাংশ মুসলমান। পাশের রাজ্য অসমে ৪০। কেরালায় ৫০। জম্মু-কাশ্মীরের ৬০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু ওয়াকফ বিরোধিতায় সে রাজ্যের মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গের মতো ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করেনি। কারণ ওইসব রাজ্য সরকার দাঙ্গা চায়নি। সেজন্যই সেখানকার হিন্দুকে মরতে হয়নি, ভিন্ন রাজ্যে পালাতেও হয়নি। এখানে শাসক হিংসা চেয়েছে, তাই পুলিশ মার খেয়েছে, শাটারের পেছনে লুকিয়েছে। তাই এই আক্রমণের মাস্টারমাইন্ড কারা তার জন্য বিশেষ গবেষণার দরকার নেই।
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে প্রাণ হারানো দুই সিপিএম সমর্থক হরগোবিন্দ ও পুত্র চন্দন দাসকে হত্যা করার আগে জেহাদিরা একবারও তাদের জিজ্ঞেস করেনি তারা কোন পার্টি করে। তাদের একমাত্র পরিচয় দেখা হয়েছিল তারা হিন্দু কিনা। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি করা সিপিএম দলের সমর্থক বলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তারা পিতা-পুত্র কিন্তু সেকুলার ছিলেন। মাটির মূর্তি তৈরি করে ভাতের লড়াইটাই এতদিন লড়ছিলেন, ধর্মটাই তাদের মরণের কারণ হয়ে দাঁড়াল। এই পিতা-পুত্র গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দুঃসময়ে মার্কসবাদ-লেলিনবাদ-গান্ধীবাদ কোনো কিছুই তাদের জেহাদি আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারেনি। তাদের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য যারা দায়ী সেই জেহাদিদের বিরুদ্ধে তাদের দল সিপিআইএম একটি বাক্যও খরচ করেনি।
এমনকী ব্রিগেডের সমাবেশে হরগোবিন্দদের ছবির পরিবর্তে ব্রিগেডের মিছিলে প্যালেস্টাইনের পতাকা কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়িয়েছেন তাদের সহযোদ্ধারা। স্লোগান তুলেছে ‘মুসলমান বাঁচাও, বিজেপি হটাও।’ কমাস আগে এরা আনিস খানের জন্য ইনসাফ সভা করেছে। কিন্তু হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র চন্দন দাসের জন্য কোনো ইসলাম সভা হবে না, কারণ পিতা-পুত্র জাতিতে হিন্দু।
ক’মাস আগে এরা মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী যিনি ১৯৯৯ সাল থেকে মুসলমান ভোটের দৌলতে বহরমপুর লোকসভায় জিতে আসছিলেন, জীবনসায়াহ্নে এসে তাঁর বোধোদয় হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার রাজনীতি না করে মিলেমিশে ভাবুন। ওরা চাইবে এক্সটেন্ডেড বাংলাদেশ। তারা তাদের ভূগোল বাড়াতে চাইবে। মুর্শিদাবাদ দাবি করবে, মালদা দাবি করবে, দুই দিনাজপুর দাবি করবে। মুর্শিদাবাদের ৭০ শতাংশ মুসলমান। তাই তারা দাবি করতে পারে। এইসব জেলাতে বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াবে। ঠুনকো রাজনীতি করলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। দেশ শেষ হয়ে যাবে।’ আজ এতদিন পরে অধীরবাবুর একথা মনে হলো কেন? বহরমপুরের মুসলমানেরা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের এক জাতভাই ইউসুফ পাঠানকে বেছে নিয়ে যেই অধীরবাবুকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিল অমনি অধীরবাবুর জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল, দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে গেল। তিনি যদি ২০২৪-এ জিতে যেতেন তবে কি তার মুখ থেকে এই কথা শোনা যেত? এই দোগলা হিন্দু নেতাদের জন্যই সাধারণ হিন্দুর আজকে এই দুর্দশা।
কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মৌলানার ভাষণ ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তিনি বলছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমরা ৩১ শতাংশ
যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাতে গিয়ে হিন্দুকে প্রাণ দিতে হয়, ঘরের মাকে ১২-১৪ বছরের বিধর্মী নাবালকের কাছ থেকে ধর্ষণের প্রস্তাব পেতে হয়, কেবলমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধে নিজেকে ধর্মহীন পরিচয় দেওয়া বামপন্থী পিতা-পুত্রকে কচুকাটা হতে হয়, গ্রামের পর গ্রাম, পাড়ার পর পাড়া হিন্দুকে নিজের ঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়, এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভড়ং চুলোয়ে যাক।
মুসলমান। ৩৮৩০০ গ্রাম, ৩৫ হাজার গ্রামে ১ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদ্রাসা, খারিজি, এমএসকে মাদ্রাসা, সিরিয়া মাদ্রাসা, সরকারি মাদ্রাসা, তাবলিগ, ফুরফুরা, দেওবন্দি, বরেলি, বরেলি, হানিফি, শাফি, হামদ আলি, কাদেরিয়া প্রভৃতি। দলের অভাব নেই, মতের অভাব নেই। কিন্তু আজ যদি পশ্চিমবঙ্গের এই তিন কোটি মুসলমান দল ভুলে, রং ভুলে, এক কলেমার পরিচয় দিয়ে, এক রও-এর পরিচয় দিয়ে, এক নবীর পরিচয় দিয়ে, এক কিতাবের পরিচয় দিয়ে, এক ধর্মের পরিচয় দিয়ে, এক দ্বীন-এর পরিচয় দিয়ে, এক জাতির পরিচয় দিয়ে ময়দানে নামি-তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মাটি নয়, সারা দেশ কেঁপে উঠবে’। আচ্ছা, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা কি এই ভাষণ শোনেনি? নিশ্চয়ই
শুনেছেন।
তবে যাদের জন্য মুর্শিদাবাদের হিন্দুদের এই করুণ অবস্থা সেই জেহাদিদের গ্রেপ্তার করছেন না কেন? বরং তার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী জেহাদিদের সেফগার্ড দিতে ইমামদের সভায় ঘোষণা করলেন ‘আমি হিন্দুদের কাছে অনুরোধ রাখবো আপনারা প্লিজ বুঝুন। বিজেপি ভটকাচ্ছে কিন্তু আপনারা ভটকাবেন না। আপনার সম্পত্তি যদি কেড়ে নেওয়া হতো তাহলে আপনারও গায়ে জ্বালা ধরত। ওদের গায়ে জ্বালা ধরেছে, ওরা দুঃখে আছে’। আচ্ছা যুক্তির খাতিরে যদি মেনে নেওয়া যায় ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ প্রপাটি কেড়ে নেওয়া হবে তবে দোষ কার? আইন করলে মোদী সরকার করেছে। আন্দোলন হলে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে, বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত। এতে সাধারণ হিন্দুর অপরাধটা কোথায়? গ্রামের গরিব হিন্দুরা তো তাদের জমি কেড়ে নিতে যাচ্ছে না। কিন্তু এই কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী কাদের সেফগার্ড দিলেন? আরও একটা কথা, আচ্ছা কেউ দুঃখে থাকলে অন্যের বাড়ি ভাঙতে হবে কেন? অন্যের টাকাকড়ি গয়নাগাটি গোরুবাছুর লুঠ করবে কেন? আইনটা ভুল এটা বোঝা গেল, ওরা দুঃখে আছে এটাও না হয় বোঝা গেল। দুঃখে থাকলে আমি নিজের ঘরে অভুক্ত থাকতে পারি, রাগে অভিমানে নিজের ঘরের জিনিস ভেঙে ফেলতে পারি, কিন্তু নিজে দুঃখ পেয়েছি বলে অন্যের বাড়ি ভেঙে ফেলবো, পরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেব, তাদের জীবন জীবিকা ধ্বংস করে দেব, তাদের হত্যা করে ফেলব, অন্যের মা-বোনকে রেপ করতে যাব- এটা কেমন দুঃখ? আর যে হিন্দুর সর্বনাশ হয়েছে তাকেই বুঝতে হবে যে তার সঙ্গে কেন এমন ঘটনা ঘটলো?
আসলে এত বছর ধরে হিন্দু বাঙ্গালির অনেক পাপ সঞ্চয় হয়েছে। সেই পাপের ফল ভোগ করবে না, তা কি হয়? সারদা, নারদা, টেট, এসএসসি- এত দুর্নীতি জানার পরেও এই সরকারকে আমরা জিতিয়েছি। বছরের পর বছর ক্যানিং, নলিয়াখালি-কালিয়াচক-ধুলাগড় দেখেও আমরা এই অপদার্থ দুর্নীতিগ্রস্ত জেহাদি সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে জিতিয়েছি। যেদিন বারাসত থেকে হাসনাবাদ অত্যাচার নেমে এসেছিল হিন্দুর ওপরে, তখন ভেবেছিলেন ওখানে হচ্ছে, আমার এখানে তো কিছু হয়নি। ২০২১-এ বিধানসভার ফল প্রকাশের পর সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে কী অকথ্য নির্যাতন চলেছিল হিন্দু গ্রামগুলিতে। বাড়িঘর জ্বলছিল, ঘরের মেয়েদের নির্যাতন করা হচ্ছিল, হিন্দু দেখে জনে জনে হত্যা করা হচ্ছিল, সেদিন কোথায় ছিলেন হিন্দুরা? যখন সন্দেশখালিতে হিন্দু মা-বোনেদের শাজাহানের ঘরে বাধ্য হয়ে পিঠে বানাতে নিয়ে যেত তখন তার প্রতিবাদ করেছিল হিন্দুরা? না করেনি। বরং ২০২৪-এর ভোটে সেসব ভুলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে হাজার টাকা পেয়েই ভোট দিয়ে দিলেন সেই দলটিকেই। আজ বাঁচতে গেলে হিন্দুকে ভাবতে হবে কাকে নির্বাচিত করবেন? প্রশাসনিক ক্ষমতা কাকে দেবেন? সারা ভারত বিজেপিকে জিতিয়েছে। বিজেপি তাদের জন্য ভাবে। হিন্দুরা এরাজ্যে বিজেপিকে জিতিয়েছেন?
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতারা তাদের সাধ্যমতো পরিশ্রম করেছিলেন, তবুও হিন্দুরা তাদের হতাশ করেছেন। দোষ নিজেদের, যারা আমরা এই জিহাদিদের রক্ষাকর্তা সরকারকে নির্বাচনে ভোট দিয়ে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি। আবার সুযোগ এসেছিল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। সন্দেশখালি প্রকাশ্যে আসার পরেও হিন্দুদের শিক্ষা হয়নি। বরং লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে পরাজয়ের পর কুলাঙ্গার হিন্দুরা রেখা পাত্রকে দু’ হাজার টাকায় বুক করেছিল অনলাইনে, মনে আছে? বছরের পর বছর রামনবমীর শোভাযাত্রায় জেহাদি আক্রমণ হয়েছে, পাথরবাজি হয়েছে, কোথায় ছিল হিন্দুরা? সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা মাদ্রাসা বোর্ডকে দিচ্ছে, সেই টাকায় দিকে দিকে অবৈধ মাদ্রাসা তৈরি হচ্ছে, মসজিদ-মিনার খাড়া হচ্ছে, তারপরেও হিন্দুদের হুঁশ ফেরেনি। হিন্দু পাড়ায় গোমাংসের দোকান হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে জেহাদি আক্রমণ হচ্ছে, সিএএ-এর প্রতিবাদে হিন্দুর বাড়িঘর সরকারি সম্পত্তি জ্বলছে, নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদে হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ হচ্ছে তাতেও হিন্দুরা নিশ্চুপ থেকেছে। দুর্গাপূজার কমিটিগুলি এক লক্ষ টাকা দক্ষিণা পেয়ে ভুলে গেল ফালাকাটা, গার্ডেনরিচ আর শ্যামপুরে মা দুর্গার অপমান। সেই পাপের ফলই ভুগছে আজকের মালদা, মুর্শিদাবাদ।
রাজ্যের পুলিশকর্তারা ঘটনার এক সপ্তাহ পর বলছেন যারা অপরাধ করেছে, মদত দিয়েছে, তাদের পাতাল খুঁড়ে বের করে আনা হবে, কেউ ছাড় পাবে না। পাঁচ দিন ধরে বিনা বাধায় হিন্দু পাড়ায় পাড়ায় তাণ্ডব চলল, পেট্রোল বোমা দিয়ে ঘরে আগুন দিল, তরবারির কোপে পিতা-পুত্র মারা পড়লো, জেহাদিরা হিন্দু ঘরের মেয়ে-বউ রেপ করতে দিলে দাদাদের ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিল, হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে বাঠাকুরদার ভিটেবাড়ি ছেড়ে পাশের জেলা মালদায় আশ্রয় নিল, ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো আর প্রশাসন হিন্দুকে বোঝাচ্ছে যে অপরাধীদের ছাড়া হবে না?
বাঙ্গালি হিন্দুদের আজ বুঝতে হবে মুর্শিদাবাদে যারা মেরেছে আর যারা মরছে-সকলেই বাংলাভাষায় কথা বলে। কিন্তু যারা এই বিপদে অসহায় বাঙ্গালিকে ঝাড়খণ্ডে আশ্রয় দিল তারা বাঙ্গালি নয়। বাঙ্গালি হিন্দুর কাছে আপন কারা? আম্মা, আব্বা, চাচা, নানা, আপা, ফুফা, গোসল, নাস্তা, দাওয়াত বলা, গোমাংস খাওয়া, হিন্দু নির্যাতনকারী তথাকথিত বাঙ্গালি, না বিহার ঝাড়খণ্ডের বিহারি ঝাড়খণ্ডী হিন্দুরা? জাফরাবাদে হরগোবিন্দ ও চন্দন দাসের হত্যাকারীরা কিন্তু সিরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশে থেকে আসেনি। তাদের প্রতিবেশী জিয়াউলই তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে। তাই বাঙ্গালি হিন্দুকে আজ তার প্রতিবেশীকে চিনতে হবে।
কোনো গৃহস্থের বাড়িতে যদি বিষাক্ত সাপ বাসা বেঁধে থাকে তবে গৃহস্থের করণীয় কী? তার কাছে তিনটি অপশন আছে। অপশন ১, ছোবল দেওয়ার আগেই সাপটিকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। অপশন ২, সাপটিকে মেরে ফেলতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে ওর দংশনে গৃহস্থের মৃত্যু অবধারিত। অপশন ৩, প্রাণ বাঁচাতে গৃহস্তকে পরিবার নিয়ে ওই ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়
পালাতে হবে। এছাড়া তার সামনে অন্য কোনো পথ নেই। সাপের গালে চুমু খেয়ে, তাকে প্রতিবেশী ভেবে, ভালোবাসার বিন বাজিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে সে দংশন করবেই। বাঙ্গালি হিন্দু মুর্শিদাবাদে এতদিন যে ভালোবাসার চাষ করেছে তাতে তাকে অপশন-৩ গ্রহণ করতে হয়েছে। যেদিন তারা অপশন-১ বেছে নিতে পারবে সেদিন তাকে আর নিজের ভিটেমাটি থেকে পলায়ন করতে হবে না।
মহাভারতের যুদ্ধ এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যেত যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে অস্ত্র তুলে নিতেন। তিনি তা করেননি। মোহগ্রস্ত অর্জুনকে বুঝিয়েছিলেন এটা যুদ্ধ, ধর্ম যুদ্ধ। নিজের যুদ্ধ নিজেকেই লড়তে হবে। ঘরছাড়া বাঙ্গালিকেও আজ বুঝতে হবে তাদের হয়ে কেউ লড়াই করে দেবে না। লড়াই তাদেরকেই করতে হবে। তাদের পরিবার-পরিজন, স্ত্রী, কন্যাদের সম্মান রক্ষা তাদেরকেই করতে হবে। তাই প্রয়োজনে তাদেরকে অর্জুন হতে হবে। হাতে তুলে নিতে হবে গাণ্ডীব। তাদের উপর নির্ভর করছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। তাই নিজেদের স্বার্থে এক হতে হবে।
যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাতে গিয়ে হিন্দুকে প্রাণ দিতে হয়, ঘরের মাকে ১২-১৪ বছরের বিধর্মী নাবালকের কাছ থেকে ধর্ষণের প্রস্তাব পেতে হয়, কেবলমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধে নিজেকে ধর্মহীন পরিচয় দেওয়া বামপন্থী পিতা-পুত্রকে কচুকাটা হতে হয়, গ্রামের পর গ্রাম, পাড়ার পর পাড়া হিন্দুকে নিজের ঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়, এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভড়ং চুলোয়ে যাক। আসুন, আমরা বাঙ্গালি হিন্দুরা হিন্দু নামে এক হই।