মুর্শিদাবাদ জেলা-জেহাদি প্রসারণবাদের ধারাবাহিক পরীক্ষাগার
ড. বিনয়ভূষণ দাশ
ওয়াকফ সংশোধন আইন, ২০২৫ আইনের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলায় আবার সম্প্রসারণবাদী জেহাদিরা প্রবলভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একদা হিন্দুপ্রধান মুর্শিদাবাদ জেলায় মুর্শিদকুলি খাঁর দেওয়ানি কেন্দ্র ঢাকা থেকে স্থানান্তরের সময় থেকেই হিন্দুরা বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের অত্যাচার ও লুটতরাজের শিকার হয়েছে। মুর্শিদকুলীর অত্যাচারের খঙ্গ নেমে এসেছিল হিন্দু জমিদার চুনাখালির বৃন্দাবন রায়, রাজশাহীর উদয়নারায়ণ রায়, রাজা সীতারাম রায় প্রমুখের উপর। মুর্শিদকুলি খাঁ, সরফরাজ খাঁ, সিরাজদ্দৌউল্লা, মীরজাফর কেউই হিন্দু অত্যাচারে কম যাননি। এঁদেরই ধারাবাহিক ধর্মান্তর ও অত্যাচারের কারণ মুর্শিদাবাদ জেলা আজ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হিসেবে উঠে এসেছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপদার্থ কংগ্রেস এবং পরবর্তীকালে সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত সরকারের চরম হিন্দুবিদ্বেষী বিভিন্ন পদক্ষেপ। দেশভাগ ও স্বাধীনতার সময় থেকেই জেলায় কমিউনিস্ট তথা বামপন্থী নেতৃত্ব মুসলিম লিগ ও মুসলমান তোষণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার প্রাক্কালে কমিউনিস্ট নেতা সুধীন সেন এক প্রকাশ্য সভায় পাকিস্তানের জয়গান গেয়েছিলেন।
সেই ধারাবাহিকতাই সমানে চলছে। ১৯৬৮-৬৯ সালে মুসলমান সন্ত্রাসবাদীরা হরিহরপাড়া থানার স্বরূপপুর গ্রামে ব্যাপক অত্যাচার, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সিপিএম নেতা জোতি বসু। পরবর্তীকালে এই জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়েই ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত কাটরা মসজিদ দখলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ থেকে আগত মুসলমান জেহাদিদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় মুসলমানরা হিন্দুদের উপর চড়াও হয়। তাঁরা হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে হিন্দুদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। যদিও এই সময়ে
হিন্দুরাও জেগে ওঠে এবং জেহাদিদের পালটা আঘাত করতে সক্ষম হয়। কাশিমবাজার সংলগ্ন অঞ্চলে জেহাদিরা হিন্দুদের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় এবং শেষে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এরপর থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা অনেকদিনই মোটামুটি শান্ত ছিল। যদিও ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেহাদিরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। তাঁদের দৌরাত্ম্য এবারে সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা এবার শুধু মুর্শিদাবাদ জেলা নয়; সক্রিয় হয়ে ওঠে মালদহ, দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়া, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর এ ব্যাপারে তাঁরা মমতা ব্যানার্জি মুসলমান সাম্প্রদায়িকতাবাদী সরকারের সম্পূর্ণ প্রশ্রয় পেয়ে যায়। রাজ্যের পুলিশ-প্রসাশন তাঁদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিতে থাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিতে। ফলে যে পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু বাঙ্গালির বসবাসের জন্য ড. শ্যামাপ্রসাদ
আজকের মুর্শিদাবাদ জেলার এই অবস্থা দেশভাগের আগের কলকাতা ও নোয়াখালির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে, ১৯৫০ সালের সময় থেকে পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে ঘটে চলা ক্রমাগত হিন্দু হত্যা এবং তাঁদের ধারাবাহিক বিতাড়ন।
মুখোপাধ্যায়-সহ মেঘনাদ সাহা, রমেশচন্দ্র মজুমদার, অমিয় চক্রবর্তী, শ্রীশচন্দ্র নন্দী, বিমলচন্দ্র সিংহ, শিশিরকুমার মিত্র, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল সেই পশ্চিমবঙ্গেই আবার তাঁদের উদ্বাস্তু হতে হচ্ছে; জেলা থেকে পালিয়ে অন্য জেলায় আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আর যারা হিন্দুদের সঙ্গে থাকতে পারবে না বলে পাকিস্তান চেয়েছিল তারা তাদের সেই তথাকথিত পবিত্র ভূমিতে না গিয়ে খণ্ডিত পশ্চিমবঙ্গকে তাদের জেহাদের মুক্তাঞ্চল বানিয়ে ফেলেছে বর্তমান রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতায়।
আর এই মুসলমান সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের সাম্প্রতিক লক্ষ্যস্থল হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশের পরেও মুর্শিদাবাদ জেলা সশস্ত্র মুসলমান দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। জেলায় বেলডাঙ্গা রেলস্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আগুন লাগানো হয়েছিল ট্রেনে। কয়েকটি স্টেশনে ট্রেন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখনো ট্রেনের আওয়াজে আজান দেওয়াতে অসুবিধা হয় এই অজুহাতে ধূলিয়ান, নিমতিতা, আউরঙ্গাবাদ ইত্যাদি অঞ্চলে স্টেশনে ভাঙচুর করা করা হয়, ট্রেন অবরোধ করা হয়।
সাম্প্রতিক হাঙ্গামা শুরু হয় মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা থানার ঝাওবোনা ও বহরমপুর থানার দেবীদাসপুর গ্রামে। দোলের সময় জেহাদিদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল হয়েছে এই গ্রাম দুটি। মালদহের মোথাবাড়িতে ওয়াকফ আইন বিরোধিতার অজুহাতে মুসলমানদের এই মানসিকতা আবার সামনে আসে। মনে রাখতে হবে, বেশ কয়েকটি ইসলামি দেশে ওয়াকফ আইনই নেই। কিন্তু ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশে ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু স্বার্থবাদী, কায়েমি স্বার্থের তল্পিবাহক কিছু নেতার উসকানিতে সশস্ত্র হাতিয়ার নিয়ে রে রে করে নেমে পড়েছে। অথচ, আইনটি দেশের সংবিধান অনুযায়ী নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্য্যমে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে আইনে পরিণত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী এই আইন দেশের কেন্দ্রীয় এবং সমস্ত রাজ্য সরকার মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষ এই আইনের বিরোধিতায় সশস্ত্র হয়ে পথে নেমেছে; তারা পাশবিক শক্তির প্রদর্শন শুরু করেছে শান্তিপ্রিয় হিন্দু নাগরিকদের উপর।
স্বাভাবিকভাবেই সশস্ত্র এই প্রদর্শনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার যথোপযুক্ত, আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এটাই কাম্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার মূক ও বধিরের ভূমিকায় শুধু নয়, কার্যত এই জেহাদিদের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর জেহাদিরা অবাধে তাঁদের ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনজন হিন্দু- যাঁদের মধ্যে একই পরিবারের পিতা-পুত্র জেহাদিদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। গত ১২ এপ্রিল সমশেরগঞ্জের জাফরাবাদ গ্রামে পিতা-পুত্র, হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র চন্দন দাসকে হত্যা করা হয়। বাড়িতে লুটপাটে বাধা দিতে গিয়ে জেহাদিদের হাতে আক্রান্ত হন তাঁরা এবং তাঁদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যার দায়ে দুই নবাব- কালু ও দিলদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অথচ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম তাঁর জাতভাইদের আড়াল করতে গিয়ে নিহতদের হিন্দু পরিচয় আড়াল করে বলেছেন, এঁরা নাকি দাঙ্গা থামাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু নিহতের স্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, পিতা-পুত্র, হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস বাড়িতেই জেহাদিদের হাতে নিহত হয়েছেন; তাঁরা বাইরে কোনো গণ্ডগোল থামাতে যাননি। আশার কথা, হরগোবিন্দ দাসের পরিবার রাজ্য সরকারের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা মেনে নেননি; তাঁরা রাজ্য সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেছেন।
জানি না, এক তরফা এই হিন্দু নির্যাতনে সিপিএম নেতা- মীনাক্ষী, দিঙ্গীতা, সুজন, প্রতিকুর রহমানরা কোথায়? তাঁদের মুখে সেলোটেপ কে এঁটে দিল? মীনাক্ষী অবশ্য দেখলাম সবকিছু ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পরে সেলিমের দোসর হয়েছিলেন। জানি না, মুর্শিদাবাদে যেসব হিন্দুকে হত্যা করা হলো, তাঁরা জাতের জন্য, নাকি ভাতের জন্য নিহত হলেন।
সেলিম, মীনাক্ষী, প্রতিকুর, দিঙ্গীতা কী বলেন? আর তৃণমূলিদের কথা না বালাই ভালো। কারণ শাসকের ইঙ্গিতেই দাঙ্গা বাধে, দাঙ্গা প্রলম্বিত হয়। আর এক্ষেত্রে আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ, বহিরাগত ইউসুফ পাঠান আশ্চর্যরকমে বেপাত্তা। জেলাবাসী এই দুর্দিনে তাঁর টিকিটি পর্যন্ত দেখতে পাননি। তিনি বরাবরের জন্য উধাও রাজ্য থেকে। শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত।
মুর্শিদাবাদ জেলার উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সুতি, ধুলিয়ান, ঔরঙ্গাবাদ, সমশেরগঞ্জে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার অজুহাতে জেহাদিরা হিন্দুদের উপর সশস্ত্র চড়াও হয়েছে। লুটপাট, রাহাজানি, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ইত্যাদি অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ সেজে পরোক্ষভাবে এই সশস্ত্র জেহাদিদের মদত দিয়ে যাচ্ছে। ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে, দীর্ঘ কয়েকদিন হয়ে গেলেও জেহাদিদের এই সশস্ত্র তাণ্ডব থামছে না। ফলশ্রুতিতে ওইসব অঞ্চলের হিন্দুরা বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মালদহ জেলা বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রায় চারশোটি পরিবার ওই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। আজকের মুর্শিদাবাদ জেলার এই অবস্থা দেশভাগের আগের কলকাতা ও নোয়াখালির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে, ১৯৫০ সালের সময় থেকে পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে ঘটে চলা ক্রমাগত হিন্দু হত্যা এবং তাঁদের ধারাবাহিক বিতাড়ন।
যে কোনো অজুহাতে এই এক তরফা হিন্দু নির্যাতনের পিছনে আছে এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলা সম্পূর্ণ হিন্দুশূন্য করা এবং উপযুক্ত সময়ে জেলাগুলিকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার এক পরিকল্পিত চেষ্টা। সেকথা রাজ্যের কিছু পুলিশ কর্তারাও স্বীকার করে নিয়েছেন। এই হিন্দু নির্যাতনের পিছনে যে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু নেতা-মন্ত্রি জড়িত আছেন তা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খাঁ পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, তৃণমূলের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক আছে যারা এই ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে তাণ্ডব চালাতে পারে। এমন কিছু হুলিগান পার্টিতে ঢুকে যায় যারা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আর এই বিক্ষোভের পিছনে যে পরিকল্পিত উসকানি আছে
তা পরিষ্কার। দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খাঁ চৌধুরীরও এই হিন্দুহত্যা ও বিতাড়নের পিছনে হাত আছে বলে এক সভায় মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে এই পারস্পরিক দোষারোপের পালা চলছে।
India Today পত্রিকার সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় লেখা হয়েছে, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইন-বিরোধী এক সমাবেশে বেশ কিছু উসকানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়। জঙ্গিপুরের পিডবলুডি ময়দানের ওই সমাবেশে বিভিন্ন বক্তা হিন্দু বিরোধী, উসকানিমূলক বক্তব্য রাখে। এই সমাবেশের আয়োজক ছিল ইমাম মোয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন আর তা সমর্থন করে তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর, এসডিপিআই-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। এই হিংসায় এসডিপিআই জড়িত ছিল বলে পুলিশি তদন্তে জানা যাচ্ছে। এই সংস্থা বেশ কিছুদিন থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ওয়াকফের নামে মুসলমান যুবকদের উসকানি দিচ্ছিল। তাঁদের বোঝানো হয়, ওয়াকফের নামে নরেন্দ্র মোদীর সরকার মুসলমানদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নেবে। তাই এই আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করতে হবে। ওই গণ্ডগোলে গুলিবিদ্ধ এক মুসলমান যুবকের আত্মীয়দের মতে, মুর্শিদাবাদে এসডিপিআই উসকানিমূলক প্রচার চালিয়েছে। অথচ, রাজ্যের গোয়েন্দাদপ্তর এসব কিছুই আগে থেকে জানতে পারেনি। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা
যাচ্ছে, উন্মত্ত জেহাদিদের বেশিরভাগই অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ইদের ছুটিতে বাড়িতে এসে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এই একতরফা হিন্দুহত্যা আটকাতে রাজ্য পুলিশ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। হরগোবিন্দ দাসের পরিবার রাজ্য সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণ অস্বীকার করে পুলিশের ব্যর্থতার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে, পুলিশ যদি ঠিক সময়ে পৌঁছত তাহলে হয়তো অমূল্য প্রাণ দুটি বেঁচে যেত। সেখানকার হিন্দুরা ওইসব এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প চাইছেন।
একথা বলা যায়, মুর্শিদাবাদ ও অন্যান্য কয়েকটি জেলায় এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে যদি না হিন্দুরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়, যদি রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয় না হয়। এবং সর্বোপরি ওই জেলাগুলিতে জনবিন্যাস পরিবর্তন না করা যায়। জনবিন্যাস কী করে পরিবর্তন করা যায় সে সম্পর্কে দায়িত্বশীল কোনো সরকারকেই ভাবতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
হিংসার উৎকট উৎসবে ত্রস্ত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা
মণীন্দ্রনাথ সাহা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের ৬৪তম কবিতায় লিখেছেন-
‘হিংসার উৎসবে আজি বাজে অস্ত্রে অস্ত্রে মরণের উন্মাদ রাগিনী ভয়ংকরী। দয়াহীন সভ্যতানাগিনী তুলেছে কুটিল ফণা চক্ষের নিমেষে গুপ্ত বিষদন্ত তার ভরি তীব্র বিষে।’
হিংসায়, হানাহানিতে, রক্তস্নাত, নগ্ন-নির্লজ্জ মিথ্যাচারিতার এমন দিনলিপি, যার পাতায় পাতায় রয়েছে রক্তের ছোপ, বুলেটের দাগ, মাথা থেকে ছিটকে বেরনো ঘিলু আর ধর্ষণের উৎকট উল্লাসের পশ্চিমবঙ্গ। এটাই আমাদের স্বদেশ। এটাই আমাদের শ্মশান। এই মৃত্যুময় অলিগলি, নদীখাত, টিউবওয়েলের জলে রক্তমোছা পিচ, পুকুরের জলে ঢেলে দিচ্ছে বিষ, অগ্নিসংযোগে, প্রহারে, নির্যাতনে, ধর্ষণে, গৃহহারা, সর্বহারা হিন্দু সমাজ আজ দিশেহারা।
একটু পিছন ফিরে দেখে নেওয়া যাক। সরকারি মদতে হিংসার শুরু হয়েছিল সেই ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ থেকে। বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা অঞ্চলের সাঁইবাড়িতে। সেদিন সিপিএমের বীরপুঙ্গবরা দলবদ্ধ হয়ে সাঁইবাড়িতে ঢুকে আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করেছিল মলয় সাঁই, প্রণব সাঁই এবং তাঁদের বন্ধু তথা গৃহশিক্ষক জীতেন রায়কে। নবকুমার সাঁই, তাঁর বৃদ্ধা মা, ছোটো দুই ভাই-উদয় ও বিজয় সাঁই, কংগ্রেস কর্মী অমল যশ, সুশীল পাল, প্রিয়রঞ্জন মল্লিক, মধু মণ্ডল সকলেই গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সিপিএমের আগুনখেকো নেতারা সেদিন পৈশাচিক উল্লাসে মলয় আর প্রণবের রক্ত মা মৃগনয়না দেবীর গায়ে ছিটিয়ে দেওয়ার পর ছেলেদের রক্তে মাখা ভাত জোর করে খাইয়েছিল মাতা মৃগনয়নাদেবীকে। পরবর্তীতে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মহান জ্যোতি বসু বলেছিলেন- ‘সাঁই মেরেছি বেশ করেছি।’ সাঁইবাড়ির পর ১৯৭১-এর আগস্ট মাসে কাশীপুর বরানগরে ১৪ বছরের অষ্টবসু, ১৩ বছরের সমীর বড়াল, ১৪ বছরের মালয়, ১৬ বছরের নমিতা দে, ১৭বছরের পঞ্চানন রায়, ১৬ বছরের শ্যামসুন্দর মাইতির মতো কিশোর-সহ আরও অনেকের জীবনদীপ নিভেছিল।
১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যার ‘ফ্রন্টিয়ার’-এ লেখা হয়েছিল- ‘শুক্র ও শনিবার এই দু’দিনের মধ্যে ১৫০ জনেরও বেশি তরুণকে খুন করা হয়। অন্যরা যাঁরা তরুণ নন, তাঁদেরও মরতে হয়।’
এরপর এল ১৯৭৯ সালের ১৭ মে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুলিশ বাহিনীর বন্দুক থেকে অঝোরে অগ্নিবৃষ্টি ঝরেছিল আর সিপিএমের ক্যাডারদের ড্যাগার ছিন্নভিন্ন করেছিল পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু উদ্বাস্তুদের শরীর এই পশ্চিমবঙ্গের মরিচঝাঁপি দ্বীপে। সেদিন যে কত হিন্দুর মৃতদেহ কুমিরের পেটে গিয়েছিল, আর কত মৃতদেহ অভয়ারণ্যে বাঘেদের খাদ্য হিসেবে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল তার সঠিক হিসেব মেলেনি। কোনো তথ্যে উঠে এসেছে ১২-১৫ হাজার, কোনো তথ্যে ১০ হাজারের বেশি। সরকার বলেছিল মাত্র ২ জন। যাঁরা
অনেক কষ্ট সহ্য করে দেশের মাটিতে এক টুকরো বাসযোগ্য পৃথিবী রচনা করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কেউ আর থাকলেন না। বাঙ্গালি সরকার, বামফ্রন্টের সরকার-তাদের হৃদয়হীনতা ও ক্ষমতাগর্বে সেই দুর্গম দ্বীপভূমি উদ্বাস্তুশূন্য করে ফেলল।
দেশভাগ ছিল অখণ্ড ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পাপ। আর মরিচঝাঁপি পশ্চিমবঙ্গে বামশাসনের আদিম পাপ। শোনা যায়- সেই ফাঁকা মরিচঝাঁপি দ্বীপে এখন নাকি মায়নামার থেকে আগত উচ্চফলনশীল প্রজাতির রোহিঙ্গা চাষ চলছে পুরোদমে রাজ্য সরকারের আর্থিক আনুকূল্যে।
১৯৭৯-এর পর ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল। মহানগরী কলকাতা শহরের কসবার বিজন সেতুর ওপর আক্রমণ হানা হয়েছিল আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীদের ওপর। সেই আক্রমণে কয়েকজন বেঁচে গেলেও বাঁচেননি ১৭ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসীনিরা। প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল রাস্তায় ট্যাক্সি থেকে টেনে নামিয়ে লাঠি, রড দিয়ে পিটিয়ে, ছোরা দিয়ে খুঁচিয়ে, গায়ে অ্যাসিড ছিটিয়ে তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছিল কমিউনিস্ট নামক অসভ্য-বর্বর রাজনীতিকেরা। আক্রান্ত হয়েও প্রাণে বেঁচেছিলেন ১৮ জন। সেদিনের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল, তারা হলেন শচীন সেন (সিপিএমের বিধায়ক), কান্তি গাঙ্গুলি (পরবর্তীকালে সিপিএমের মন্ত্রী), স্বপন (বাবলু) চক্রবর্তী, গুরুপদ বাগচি, চিন্ময় হাজরা প্রভৃতি সিপিএমের বড়ো বা মাঝারি নেতা।
আবার ফিরে এল অভিশপ্ত ১৯৯০-এর ৩০ মে। গোসাবা-রাঙাবেলিয়া থেকে একটা ট্যাক্সি বানতলা-তিলজলা রোড ধরে ছুটে আসছিল কলকাতার দিকে। গাড়িতে তিনজন মহিলা আরোহী- রেণু ঘোষ, অনিতা দেওয়ান ও উমা ঘোষ। রেণু ইউনিসেফের (UNICEF) দিল্লি অফিসের আধিকারিক। বাকি দু’জন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিবার কল্যণ শাখার কর্মী। গাড়ির ড্রাইভার অবনী নাইয়ার।
বানতলা সড়কে দশ-বারোজন যুবক গাড়ি থামিয়ে মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে অনিতা, রেণু, উমাকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার টেনে নিয়ে গেল খোলা মাঠে। সন্ধ্যার ঘণীভূত অন্ধকারে তিনজন নারীকে বিবস্ত্র করে হার্মাদরা পৈশাচিক উল্লাসে ধর্ষণ করেছিল একের পর এক। রাত এগারোটার পর পুলিশ সম্পূর্ণ নিরাবরণ তিনটি নারীদেহ নিয়ে এল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এমার্জেন্সিতে। মহিলা ডাক্তার মৃতা নারীর যোনির দিকে তাকিয়ে ‘ও’! মাগো!’ বলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। দেখা গেল মৃতার যোনিপথে তিন ব্যাটারির একটি ধাতব টর্চ লাইট ঢোকানো রয়েছে। অবনী বাধা দিয়েছিল সেজন্য তার জন্য পুরুষাঙ্গ থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল। ২ জুন ১৯৯০ সালে ঘটনাটি সংবাদপত্রে প্রকাশ হলে তিনজন
মহিলা ও ড্রাইভারের মৃত্যু সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে মহান জ্যোতি বসু বলেছিলেন- ‘এরকম তো কতই হয়।’
এরপর ১৯৯৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ধর্মতলা, সূচপুর, ছোটো আঙারিয়া, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, বাসন্তী, নেতাই প্রভৃতি স্থানে রাজ্যবাসীর ওপর মহান জ্যোতি বসু এবং সাংস্কৃতিক চেতনা সম্পন্ন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারি দমন-পীড়ন অব্যাহত ছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন ঘোষণা করেছিলেন, বদলা নয়, বদল চাই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডিজে নয়, রবীন্দ্র সংগীত বাজবে। সেদিন তাই বেজেছিল। বাঙ্গালির মননে এক নতুন প্রভাত উঁকি দিয়েছিল। সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। ৩৪ বছরের বাম শাসনের নির্মম অত্যাচারের পরিসমাপ্তির পর এক নতুন আলোকবর্তিকায় সকলের চোখে মুখে আনন্দের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকেই আশা করেছিল এবার ঠিক রাজ্যে শান্তি ফিরবে। কিন্তু তারপর যতদিন যাচ্ছে, সবকিছু কেমন যেন পালটে যাচ্ছে। বাঙ্গালির মনে সে আনন্দ আর নেই। কিছুদিনের মধ্যেই সেই সিপিএমের কায়দায় শুরু হলো তৃণমূলের গুন্ডাদের দ্বারা (মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় দুধেল গাই) হিন্দুদের ওপর অত্যাচার ক্যানিঙের নলিয়াখালি- গলাডহড়া দিয়ে। হতে লাগল হিন্দু নারীদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা। পার্কস্ট্রিট, কামদুনি, নৈহাটি, নদীয়া, মালদহ, দুই দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, কুশমণ্ডি, হরিরামপুর, বংশীহারি, কুমারগঞ্জ-সহ রাজ্যের আরও বিভিন্ন জায়গায়। দু’ একটা জায়গা ছাড়া সর্বত্রই দুধেল গাইদের দ্বারা অপকর্ম সংগঠিত হচ্ছে। আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত
অবস্থায় এক ডাক্তারি ছাত্রী নৃশংসভাবে হত্যা হলো। বাঙ্গালি রাতের পর রাত জেগে সারাবিশ্বে আন্দোলন ছড়িয়ে দিল। কিন্তু আজও প্রকৃত দেখীরা শাস্তি পেল না। তারা নাকি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি ভোটের আগে পরে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে হিন্দুদের
ওপর আক্রমণ করে তাদের গৃহহারা, গ্রামছাড়া, রাজ্যছাড়া করা হয়েছে। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে-পরে, ২০৩৪-এর লোকসভা ভোটের আগে-পরে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরে নিয়ম করে কয়েক ‘শ হিন্দুকে হত্যা করেছে শাসকদলের গুন্ডারা। তাছাড়া নিয়ম করে শুরু হয়েছে প্রতিবছর হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধাদান, হুমকি ও ভাঙচুর। গত বছরের দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, কার্তিক পূজা, রাস পূর্ণিমাতে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ চলেছে। আর ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে মালদহের মোথাবাড়িতে এবং তারপর মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ শুরু করে তৃণমূলের দুধেল গাইরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী, বিএসএফ ও পুলিশের ত্রিফলা নজরদারিতে নতুন করে হিংসা না ছড়ালেও এখনো থমথমে সামসেরগঞ্জ, সুতি, ধূলিয়ান, রামনগর প্রভৃতি এলাকা। চারিদেকে শুধুই হাহাকার, মানুষ শূন্য গ্রামের পর গ্রাম। ইতস্তত করে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু গবাদি পশু। আর পশ্চিমবঙ্গের নতুন বছরের প্রথমেই ভিটেমাটিছাড়া পরিবারগুলির দিন কাটছে মালদহের পারলালপুরের অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে। তবুও সবাই চুপ। চুপ রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম, কংগ্রেস এবং সুশীল সমাজ। যারা হাথরাস, মণিপুর নিয়ে কান্নাকাটিতে বুক ভাসিয়ে দিয়েছিল তারা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে আর কতদিন এভাবে চলবে? আর এইসব হিংসা নিয়ে মনে পড়ে রবিঠাকুরের কবিতার কিছু অংশ-
‘রক্তের অক্ষরে
অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস। হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে, হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে, অগাধ সাগর জলে, নির্মল আকাশে, হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে, হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বশে; চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে।’
ওয়াকফ তো বাহানা, আসল উদ্দেশ্য হিন্দুদের বিরুদ্ধে জেহাদ
মন্দার গোস্বামী
চারদিকে জান্তব উল্লাসে মত্ত একদল জেহাদি। গাড়ি থেকে গৈরিক পতাকা খুলে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাই উল্লাসের বহরটা একটু বেশি। একপাশে উর্দিধারী পুলিশ মোবাইল ফোনে ব্যস্ত। অন্যদিকে হিন্দুধর্মের চিহ্নযুক্ত গাড়ির কাচ লাথি মেরে চূর্ণ করে ফেলছে কোনো জেহাদি, মামুদ-ঘোরির যোগ্য বংশধর। মুর্শিদাবাদ জেলার ধূলিয়ান, সুতি, সামসেরগঞ্জ, জলঙ্গি থেকে হাওড়া, সাঁতরাগাছি, কলকাতার পার্ক সার্কাস-সর্বত্র একই চিত্রনাট্য। গরিব মুসলমানদের তো বটেই, অনেকক্ষেত্রে
হিন্দুদেরও জমি দখলকারী ছিল ওয়াকফ বোর্ড। সেই ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদের নামে জেহাদিদের দ্বারা দিকে দিকে আক্রান্ত হিন্দুরা। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর, লুঠ করা সম্পত্তি। প্রাণে মেরে দেওয়াও হচ্ছে। স্বাধীন ভারতে হিন্দুদের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে অন্য জেলায়। বহু মা-বোন ধর্ষিতা। সম্পন্ন হিন্দু রাতারাতি কপর্দকশূন্য। হুবহু দেশভাগের সময়কার দৃশ্য।
কদিন আগেই মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জে পাথর ছুড়ে ভেঙে দেওয়া হলো হিন্দু বাড়ির জানালার কাচ। হেনস্থা করা হলো বাড়ির বাসিন্দাদের। মহিলা, শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। জমায়েতের নামে হিন্দুদের ভীতি প্রদর্শন ও মারোকাটো বক্তব্য। তারপরই আক্রমণ, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস। অ্যাম্বুলেন্স ও শ্মশানযাত্রীদের ও রেহাই নেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষক পুলিশই যেখানে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত, সেখানে সাধারণ হিন্দুদের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বুকে এটাই হলো ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদের নামে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের সামগ্রিক দৃশ্য। কোনো একটি আইনের প্রতিবাদ তো করাই যায় গণতান্ত্রিক পথে, শান্তিপূর্ণভাবে। আইন প্রণয়ন হলো একটি সরকারি প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে সাধারণ হিন্দুর কোনো সম্পর্ক নেই। এই আইন সংশোধনের ফলে গরিব মুসলমানরাই উপকৃত হয়েছে। আগে এটি এমন এক আইন ছিল, যার বলে যেকোনো জমি যখন-তখন দখল করে নেওয়া যেত। সভ্য সমাজে এই নিয়ম চলতে পারে না। সারা বিশ্বে কোথাও নেই। এই আইনের সংশোধনের দাবি মুসলমানদের পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। ভারতের বহু স্থানে মুসলমানদের পক্ষ থেকে এই সংশোধনী আইনকে স্বাগত জানানো হয়েছে। বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া কোথাও নেই। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই প্রতিবাদের মাত্রা হিংস্র থেকে হিংস্রতর। আর এটা পরিষ্কার যে রাজ্য সরকারের উসকানিতেই হিন্দুদের ওপর এই আক্রমণ সংঘটিত হয়ে চলছে। প্রতিবাদের আড়ালে জেহাদি উদ্দেশ্য ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
জেহাদের মূল কথা এটাই যে, বিধর্মী হিন্দুদের এই পৃথিবীতে বাঁচার কোনো অধিকার নেই। গোটা বিশ্ব হবে দার-উল-ইসলাম। এই উদ্দেশ্যেই আফগানিস্তান হিন্দুশূন্য হয়েছে। পাকিস্তান প্রায় হিন্দুশূন্য আর বাংলাদেশে জোর কদমে এই প্রক্রিয়া চলছে। একই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায়। জেহাদি আক্রমণের কারণে সেই এলাকায় হিন্দুদের জীবন জীবিকা, নারীর মানসম্ভ্রম ভীষণভাবে বিঘ্নিত। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, মুসলমান সম্প্রদায়ের অতি নাবালকরাও হিন্দু মেয়েদের শ্লীলতাহানি ও ধ্বংসাত্মক কাজে মত্ত। আসলে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ তো বাহানা মাত্র, এদের মূল উদ্দেশ্য হিন্দুদের বিরদ্ধে জেহাদ।
মুসলমান ভোটব্যাংকের লোভে, রাজনৈতিক উসকানিতে, প্রশাসনিক প্রশ্রয়ে পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে জেহাদের উর্বর মাটিতে পরিণত হয়েছে। বিষাক্ত জেহাদিরা লতায়-পাতায়, ফুলে-ফলে বিকশিত হয়ে হিন্দু জনজীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর স্লিপার সেল এরাজ্যে সর্বত্র ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। দুর্ভাগ্য, বাঙ্গালি হিন্দু সমাজ এখনো কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় আচ্ছন্ন। তারা ‘ভাতা’ পেয়েই খুশি। এই জেহাদিদের আক্রমণ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়। এ বিপদ সারা ভারতের। কাশ্মীরের পহেলগাঁও আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্যানিং, নলিয়াখালি, ধুলাগড়, কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, বেলডাঙ্গা এবং সম্প্রতি ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জে তার ট্রেলার আমরা দেখলাম। পশ্চিমবঙ্গের জেহাদিদের মদতদাতা এই রাজ্য সরকারকে উৎখাত করেত না পারলে, বাঙ্গালি হিন্দুদের কিন্তু নিজভূমেই পরবাসী হতে হবে, একথা মনে রাখতে হবে।
ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনের নামে পশ্চিমবঙ্গে জেহাদি শক্তির উত্থান
ড. তরুণ মজুমদার
ওয়াকফ সম্পত্তির রাজ্যওয়াড়ি তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যায় প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের কাছে রয়েছে ২.১৭ লক্ষ সম্পত্তি এবং শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের হাতে রয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৬টি সম্পত্তি। অদ্ভুত হলো সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি উত্তরপ্রদেশে, অথচ সেখানে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নেই, আর আমার আপনার এই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী থেকে গ্রামগঞ্জ ক্রমাগত উগ্র জেহাদি আন্দোলনের শিকার হয়ে চলেছে। সত্যিই কি ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা চলছে এই রাজ্যে? তাই যদি হয়, তবে মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের মা শীতলার মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো কেন? কেন হিন্দু পিতা-পুত্র হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে গলা কেটে হত্যা করা হলো? কেন বেছে বেছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট লুঠ করা হচ্ছে? কেনই-বা দলে দলে হিন্দু মুর্শিদাবাদের ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ রক্ষার তাগিদে পার্শ্ববর্তী মালদা জেলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে?
এ কোনো বৃহত্তর ষড়যন্ত্র নয় তো? উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গের একেবারে উপরের জেলাগুলি ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত ন্যাশনাল হাইওয়ে ১২’র মাধ্যমে। ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে এই ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে পণ্যবাহী ট্রাকে অগ্নি সংযোগ ও যথেচ্ছ লুঠতরাজ চলছে। অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে। ২০২০ সালে জেএনইউ’র ছাত্র সার্জিল ইমাম আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে শিলিগুড়ি করিডোরকে অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে অসম-সহ উত্তরপূর্ব ভারতকে বাকি ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেছিল। বর্তমানে তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ক্রমাগত উসকানিমূলক মন্তব্য করেই চলেছেন। তিনি বলছেন ‘আগে জেলায় জেলায় টাইট দিই, তারপর কলকাতাকে দেবো।’ রাজ্য সরকার ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকার সড়ক সম্প্রসারণের
জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বছরের পর বছর সময় নষ্ট করে গেছে। উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি ভারতের যোগাযোগের মাধ্যমগুলির উন্নতি প্রকল্পে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের এই অনীহা সংশয় উদ্রেককারী। কেননা এর সঙ্গে দেশের সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িত।
শেষে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের কাজ যখন অনেকাংশে সম্পন্ন হলো, তখন সেই রাস্তাকে অকার্যকরী করে রাখতে শুরু হলো আমডাঙা থেকে মুর্শিদাবাদ-মালদা পর্যন্ত রাস্তা বরাবর জেহাদি তাণ্ডব। বড়ো কোনো জঙ্গি নাশকতার আগে দুষ্কৃতকারীরা যেমন রেইকি করে, মুর্শিদাবাদের এই তাণ্ডব বড়ো কোনো ষড়যন্ত্রকে কার্যকর করার আগের রেইকি হলে, তা গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়। রাজ্য সরকার জমি না দেওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া এখনো অনেক জায়গায় বাকি। পোরাস বর্ডার এবং এ রাজ্যের জেহাদি গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সুদখোর ইউনুস এবং পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্টরা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর এই তাণ্ডবলীলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রেখে অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর হিন্দুরা যেখানে সংখ্যালঘু, সেখানে হিন্দুদের প্রাণ ও সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখতে ভারত সরকারের অবিলম্বে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যে কায়দায় বাংলাদেশে ২০২৪-এর জুলাই মাস থেকে মোল্লাবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই একই কায়দায় মালদা, মুর্শিদাবাদে জেহাদি তাণ্ডব চলছে। বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা থেকে মালদা মুর্শিদাবাদে অনুপ্রবেশকারী মোল্লাবাদী স্লিপার সেলগুলি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র দেশের জন্যই বিপজ্জনক। অনতিবিলম্বে বর্ডার সংলগ্ন জেলাগুলিতে সামরিক বাহিনী নামিয়ে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে দেশ বিরোধী এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রকে সমূলে উৎপাটিত করা প্রয়োজন।