পাকিস্তানের ভরসা আমার দিদি
পাকিস্তানপ্রেমীযু দিদি,
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে, সেটা কিন্তু পাকিস্তান পরিচালিত ‘অপ্রচলিত যুদ্ধে’র নমুনা। জানি আপনি মানবেন না কিন্তু পাকিস্তানের সেই চেনা কৌশলও এবার কিছুটা অচেনা। গত ২২ এপ্রিলের পরে সিপিএমের গণশক্তি এবং আপনার দলের জাগো বাংলা দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। এই দুই মুখপত্রের শিরোনাম দেখলেই বুঝতে পারা যাচ্ছে পাপীস্তানের ছক কী। বানান ভুল নয় দিদি, ইচ্ছা করেই ‘পাপী’ লিখলাম।
দিদি, আপনি ওই ভিডিয়োটা দেখেছেন? পাকিস্তানের এক প্রাক্তন মন্ত্রী সে দেশেরই এক নিউজ চ্যানেল বসে বলছেন, ভারতের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকে রয়েছেন। কারা ‘সহানুভূতিশীল’, সে সব নামও ওই পাক রাজনীতিকের মুখে শোনা গিয়েছে। সবার আগে অরুন্ধতী রায় আর তার পরেই আপনার নাম। এর পরে সিপিএম, কংগ্রেসও আছে। সঙ্গে ইন্ডি জোটের অন্য দলের ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু রাজনীতিকদের মধ্যে একমাত্র আপনার নামই বলেছে। গর্ব হচ্ছিল দিদি। পাকিস্তানের মন্ত্রীও আপনার উপরে ভরসা করে। আমার একটা স্লোগান মনে এসেছে। সাহস করে লিখছি দিদি-‘পাকিস্তান নিজের মমতাকেই চায়’।
পাকিস্তান চায় আপনাদের কাজে লাগিয়ে ভারত সরকারকে দুর্বল করতে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান যেহেতু মনে করে, ভারতে পাকিস্তানের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ লোকজনের সংখ্যা নেহাত কম নয়, সেহেতু পাকিস্তান এখনই
সেই অংশের মধ্যে ভারত সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে একটা সংশয় তৈরি করতে চায়। অনেকে বলছেন, এটা আমাদের লজ্জা। কিন্তু আমার দিদি, গর্বই হয়েছে এটা ভেবে যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়েছেন পাক মন্ত্রী। আসলে আপনার অতীত জানে তো পাকিস্তান। বালাকোট, পুলওয়ামার সময়ে আপনি দেশে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন। এবারেও সন্দেহ তৈরি করতে চেয়েছেন।
তাই আমার মনে হচ্ছে, এবার পাক ছক আলাদা। ভারতকে টুকরো করাই লক্ষ্য। পাকিস্তানের পরমাণু বাতেলায় লজ্জা নেই মনে হচ্ছে। দেখুন, পাক রাষ্ট্রপতির পুত্র তথা পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি থেকে উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক ডার সবাই ভারতকে পরমাণু আক্রমণের হুমকি শোনাচ্ছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা
আমি ভাবতাম আপনার জনপ্রিয়তা শুধু পশ্চিমবঙ্গে। এখন দেখছি আপনার একটা আন্তর্জাতিক পরিচয়ও রয়েছে। সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেন দিদি-‘পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল’।
আসিফ থেকে রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসি সবাই যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। রক্ত-সিন্ধু বইয়ে দেওয়ার কথা বলছেন ওঁরা। ১৩০টি পরমাণু বোমা ভারতের দিকে তাক করে রাখা আছে বলেও মন্তব্য করছেন। কিন্তু দিদি আমার বিশ্বাস, হুমকি, বাতেলা ছাড়া এদের আর কিছু করার নেই। তাই বাতেলায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সে সব তর্জন-গর্জনে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
জুলফিকর আলি ভুট্টো ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভাষণে বলেছিলেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এক হাজার বছর ধরে যুদ্ধ চালাবে।’ কিন্তু বেঁচে থাকতে কোনো যুদ্ধে পাকিস্তানের জয় দেখে যেতে পারেননি। বরং, ১৯৭১ সালে নিজের দেশকে দু’টুকরো হয়ে যেতে দেখেছেন। পরে সেনাপ্রধান জিয়া উল হক পাকিস্তানের মসনদ দখল করে বলেন, ‘উই উইল ব্লিড ইন্ডিয়া উইথ আ থাউজ্যান্ড কাটস্।’ মানে, পাকিস্তান ভারতকে এক হাজার বার ক্ষতবিক্ষত করে।’ সেই থেকেই ভারতকে ‘ক্ষতবিক্ষত’ করার চেষ্টা পাকিস্তানের।
কিন্তু আমি সত্যি ভাবতেই পারছি না দিদি, আপনাকে তো ওরা এত কাছের মনে করে। আমি ভাবতাম আপনার জনপ্রিয়তা শুধু পশ্চিমবঙ্গে। এখন দেখছি আপনার একটা আন্তর্জাতিক পরিচয়ও রয়েছে। সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেন-‘পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল’।
আজ বাঙ্গালির বড়োই গর্বের দিন। একটা সরকারি ছুটি ঘোষণা করে দিন। সঙ্গে বিনা খরচে দীঘায় বেড়ানোর সুযোগ। সবাই ফুর্তি করে পুরীর মন্দিরের মতো দেখতে ওইটাও দেখে আসবে।