‘কাঁচায় না নুইলে বাঁশ’: রাজনৈতিক গোড়াপত্তন থেকেই নিম্নরুচির নেতা চেনা যায়
পাপোশ পুলিশ
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
‘জন্ম যেমন যার। কর্ম তেমন তার।’ অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবিতে কবির লড়াইয়ে এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। বোলপুর বাজারে পুলিশের দালালি করা নেতা যে পুলিশকেই অশ্রাব্য গালাগাল করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। মুর্শিদাবাদে হিন্দু হত্যার ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, রাজ্যের শাসক পুলিশকে পাপোশ বানিয়ে রেখেছে। রাজ্যের সর্বোচ্চ পুলিশকর্তা জামিনে রয়েছেন। একসময় সিবিআই এর তাড়া খেয়ে চোরের মতো পালিয়ে বেড়াতেন। বিদেশি বাম জমানায় তাঁকে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়। তিনি শিক্ষা ব্যবহার করে তিনি সারদা চিটফান্ডের বেআইনি তথ্য হাপিশ করে দেন। আর তাতে নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে যাত্রায় বেঁচে যান।
‘ভাষা সন্ত্রাস’ এই রাজ্যে নতুন নয়। যুব কংগ্রেসি জমানায় তার জন্ম। বিদেশি বামপন্থীদের কোলে মানুষ। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্কুলে তার বিকাশ ঘটে। রাজ্যে কোনোদিন বিজেপি শাসন প্রতিষ্ঠা হলে এই কুরুচি ও অসভ্যতা অবশ্যই মুছবে। ১৯৬৬-র পর থেকে এই রাজ্যে বিদেশি বামেদের অসভ্য হুল্লোড় শুরু হয়। ভারতের ন’টি রাজ্যে অ-কংগ্রেসি সরকার ক্ষমতায় আসে। এ রাজ্যের সভ্য রাজনীতির আঙিনায় জন্ম নেয় মানুষকে ঘেরাও আর ভাষা সন্ত্রাসের নোংরামি। রাজনীতিবিদ অতুল্য ঘোষকে ‘কানা অতুল্য’ এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে ‘কাঁচকলা মন্ত্রী’ বলে ডাকা শুরু হয়। তবে ২০০৬-০৭ সালে বামনেতা বিনয় কোঙার সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলন ঘিরে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য করে সব বাঁধ ভেঙে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নোংরা কটূক্তি করেন সিপিএম নেতা অনিল বসু। লজ্জায় পড়ে বিদেশি দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। বামনেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত- পুলিশের বন্দুকের গুলিতে ‘জন্মনিরোধক’ পরানো আছে কিনা তাই নিয়ে একসময় মন্তব্য করেন। ক্ষমতায় এসে মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় চাবকে পুলিশের পিঠের ছাল তুলতে চেয়েছিলেন। অনুব্রত মণ্ডল তাকেই একটু খারাপভাবে অনুসরণ করেছেন।
রাজনীতি থেকে রাজধর্ম অনেকদিন আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। একসময় ভদ্রলোক আর কমিউনিস্টদের আলাদা করে দেওয়া হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে এ রাজ্যের চরম সর্বনাশ করে যাওয়া এক পশ্চাৎপদ বাম মন্ত্রী নিজেকে ভদ্রলোক নয়, কমিউনিস্ট বলে দাবি করেছিলেন। ‘ছদ্ম বুদ্ধিজীবী’ ওই নেতা এবং অন্য এক সুবিধাবাদী চীনপন্থী নাট্যকার মিলে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মঞ্চে নোংরামি ও ভাষা সন্ত্রাস ঢুকিয়েছে। ঘৃণ্য নাট্যকারটি চীনকে তার বাবা আর মা বলত। পরে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারি এড়াতে পুলিশের কাছে মুচলেখা দেয়। যুব কংগ্রেস নেতা বিজয় সিংহ নাহার তাঁর মিরর স্ট্রিটের বাড়িতে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘যেদিন রাস্তার গুন্ডা, মস্তান আর সমাজবিরোধীদের পাশে বসিয়ে আমরা সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করি, সেদিন থেকেই রাজনীতি সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায়। যাদের পুলিশের গুলি খেয়ে মরার কথা, তারা সকলে চা পান করে আমাদের বাড়ির সদস্য হয়ে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে তাই নখ-দাঁত বের করে ফেলেছেন। তাতে যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’কে পক্ষান্তরে খাটো করার চেষ্টা তিনি করেছেন তা বোঝেননি।
‘
যায়। কথায় বলে ‘কাঁচায় না নুইলে বাঁশ। পাকলে করে ট্যাশ ট্যাশ’। ছোটোবেলায় সঠিক শিক্ষা না পেলে বড়ো হয়ে সে অশিক্ষিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যুব কংগ্রেস নেতাদের ঘরে মানুষ হন, তাদের সেই কুশিক্ষাই ছিল। টেবিলে ছুরি গেঁথে পরীক্ষায় পাশ করা ছিল তাদের রীতি বা পদ্ধতি। তাদেরই একজন মাথায় পক্ষাঘাতে জীবনের শেষ ক’টা বছর বোবা হয়ে মারা যান। অন্যজন পায়ে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ঠাঁই পান। শাসক হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুব কংগ্রেসের কুরুচিকর সংস্কৃতি ভুলতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে তাই নখ-দাঁত বের করে ফেলেছেন। তাতে যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’কে পক্ষান্তরে খাটো করার চেষ্টা তিনি করেছেন তা বোঝেননি। অথচ এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক কালে বামেদের বহুরকমের ব্যক্তিগত ভাষা সন্ত্রাসের শিকার ছিলেন। কুরুচিকর রাজনৈতিক কৌশল যে ব্যবহার করতে নেই সেটা হয়তো কেউ তাঁকে শেখাননি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় মনে করতেন জনআন্দোলন করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনতার ভাষা বোঝেন। সক্রিয় ও দলীয় রাজনীতিক হিসেবে প্রণববাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুচির অধঃপতন ও নিম্নমুখিতা দেখে যেতে পারেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করতেন। পশ্চিমবঙ্গের একটা বড়ো অংশের শিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘কৌতুকচরিত্র’ হিসেবে দেখেন। তার ‘মিম’ উপভোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে কোনো গুরুত্ব দেন না। ভোট দিতেও যান না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লজ্জার। তাই বলি ‘কাঁচায় না নুইলে বাঁশ। পাকলে করে ট্যাঁশ ট্যাশ (ঠাস ঠাস)।’