দিদিকে ক্ষমা করবেন যশোদাবেন
সিঁদুরবিদ্বেষীষু দিদি,
ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর পছন্দ হয়নি পাকিস্তানের। ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর পছন্দ হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আচ্ছা দিদি, সোজা কথাটা সোজা করে বলে দিলাম বলে নিশ্চয়ই আপনি রাগ করবেন না। রেগে গেলেও ক্ষমা করে দেবেন। কারণ, আমিও আপনার হয়ে শ্রীমতী যশোদাবেন মোদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
দেখুন, আমি এখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী হিসেবে পরিচয়টা দিতেই পারতাম। কিন্তু দিইনি। কারণ, এই পরিচয়টা যশোদাবেন অন্তরে বহন করলেও ব্যবহার করেন না। কলকাতা বিমানবন্দরে একবার আপনার সঙ্গে দেখা হলে ওঁকে আপনি তৎক্ষণাৎ শাড়ি কিনে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগে জানতেই পারেননি আপনার রাজ্যে, আপনার শহরে পূজা দিতে এসেছেন। আসলে স্বামীর পরিচয় তিনি ভাঙান না। কেন জানেন? তিনি একজন ব্যক্তিত্বময়ী নারী। যা ইদানীংকালে বেশ দুর্লভ।
যশোদাবেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। পিত্রালয়ে থাকেন। না, স্বামী বিশ্বখ্যাত নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বা এই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল পরিবারের সদস্যদের মতো সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পাননি। কখনো যশোদাবেন স্বামীর পরিচয় খাটিয়ে কিছু করেছেন বা করতে চেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। ধর্মপত্নী হিসেবে স্বামীর মঙ্গলকামনায় পুজা দিতে কলকাততেও এসেছিলেন চুপচাপ। তখনই আপনার সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা হয়। যশোদাবেনের ঠাটবাটও নেই। বিজেপিকে হয়তো ভোট দেন, তবে দলের কেউ নন। তাঁকে সিঁদুর পরানোর জন্য আপনি কেন যে এত দরদ দেখালেন কে জানে? যশোদাবেন নিশ্চয়ই
গোপনে আপনার কাছে কান্নাকাটি করেননি। খেয়াল করবেন গুজরাটের রীতি মেনে ওঁর গলায় সব সময়েই মঙ্গলসূত্র দেখা যায়।
এটা সকলের জানা যে, মোদী বহুকাল আগে সংসার ত্যাগ করে দেশের কাজের জন্য ঘরছাড়া হন। যশোদাবেন নিজের বাবার বাড়ি ফিরে আসেন। সাধারণ দাম্পত্য বলতে যা বোঝায় সেই সম্পর্ক তাঁদের ছিল না। যশোদাবেন মোদীর বাবা-মায়ের মতোই বুঝেছিলেন সংসারে বেঁধে রাখার জন্য নরেন্দ্রর জন্ম হয়নি। যশোদাবেন কোনোদিন নিজের স্বামীর নামে নিন্দা বা কোনো অভিযোগ করেননি। বৈবাহিক জীবন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যাবতীয় যশ থেকে দূরত্ব রেখেছেন যশোদাবেন।
জানেন দিদি, আমি এটা বিশ্বাস করি যে, নরেন্দ্র মোদী আজকে যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন সেটা সম্ভব হতো না যদি যশোদাবেনের মতো ধর্মপত্নী না পেতেন। চাহিদাহীন স্ত্রী। আজীবন দূরে থেকে স্বামীর বৃহত্তম সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি এতটাই ব্যক্তিত্বময়ী যে তাঁর কখনোও মোদীর সাহায্যের দরকারও হয়নি। আমি মনে করি, নরেন্দ্র মোদী হয়ে উঠতে গেলে সবার জীবনে যশোদাবেনের মতো একজন একনিষ্ঠ অথচ নির্লোভ নীরব জীবনসঙ্গী প্রয়োজন।
আসলে মোদীর পরিবারের বাকিদেরও
তো দেখেছেন যশোদাবেন। তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে টানা চারবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই গুজরাটেই মোদীর পরিবার থাকে। কিন্তু তাঁরা কে, কোথায় কেউ জানে না। আর ঠিক উলটোটা কলকাতায়। দিদি মুখ্যমন্ত্রী হতেই পরিবারের সবাই আলোয় আলোকিত। দিদি, আপনার এক ভাইপোকে সবাই চেনেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পিসি মুখ্যমন্ত্রী হতে না হতেই ব্যবসায়ী ভাইপো রাজনীতিতে। তার জন্য নতুন সংগঠন তৃণমূল যুবা তৈরি হয়। নিশ্চিত
আসন ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রবীণ সাংসদ সোমেন মিত্রকে সরিয়ে প্রার্থী। তার পরে দলটা রাজ্যের হলেও ভাইপো দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বাকি ভাইপো, ভাইঝিদের মধ্যে একজন চিকিৎসক। আর বাকিরা পিসি ও বড়দা অভিষেকের সঙ্গে রাজনীতিতেই রয়েছেন।
ভাইপোর মা ও বাবা কুখ্যাত লিপস
অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর। দলের বা
সরকারের কোনো পদে না থাকলেও লন্ডন
সফরে মমতার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন অভিষেক জননী লতা। আবার বাবা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের রঙের দোকান থেকে তো রাজ্যের সব নীল-সাদা রং কেনা হয়। সরাসরি দলের পদ না দিয়েও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আরও দুই ভাইকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন আপনি। একজন কার্তিক, অন্যজন গণেশ। এই কার্তিক-গণেশ জুটির হাতেই আপনি তুলে দেন দলের ‘জয় হিন্দ’ বাহিনীর ভার। বছরে একদিন ২৩ জানুয়ারি যে সংগঠনের নাম শোনা যায়। কার্তিকের ভালো নাম সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। সমাজসেবী কাজরীর আবার নাকি প্রায় চারকোটি টাকার সম্পত্তি। আপনার ‘ছোটোভাই’ হলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বা বাবুন। যাঁর সঙ্গে মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলেন আপনি, লোকসভা নির্বাচন হাওড়া সদর আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে বাবুন আপনার মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়েছিলেন।
রাগের চোটে ত্যাজ্য ভাই করে দেওয়ার পরেও আবার আদর করে ভাইফোঁটাও অবশ্য দিয়েছেন। আপনার মুখে দিদি মোদী পরিবারের কাউকে নিয়ে কথা বলা মানায় না। সেই পরিবারের একজনও রাজনীতির ছায়া মাড়ান না। সকলেই সাধারণ জীবনযাপন করেন।