রাষ্ট্রচেতনার সার্বিক জাগরণই ঘটাবে ধর্মের বিজয় ও অধর্মের পরাজয়
ধর্মসংস্থাপনার্থায়
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
তিনটি ধারার সমন্বয়েই তৈরি হয় যে
কোনো জাতি। জীবন, বোধ আর সংস্কৃতির
ধারা। হিন্দুজাতি সেভাবেই তৈরি হয়েছে।
তা মিলে গিয়েছে হিন্দু ঐক্য আর জাগরণের
কর্মধারায়। মোট ১৫টি ভাব সমন্বয়ের ভিতর
দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সঙ্ঘের প্রার্থনা মন্ত্র। সেটাই
সঙ্ঘকাজের দিক নির্দেশ। সঙ্ঘের বর্তমান
প্রার্থনার গদ্যরূপ লেখেন নানাসাহেব
টালাটুলে। পরে নরহরি নারায়ণ ভিড়ে তা
ছন্দোবদ্ধ সংস্কৃতে পদ্যরূপে অনুবাদ করেন।
১৯৪০ সাল থেকেই সেই মন্ত্র সঙ্ঘের শাখায়
করা হয়। সঙ্ঘ কী আর কেন তা বুঝতে মন্ত্রটি
সব কিছুর সঙ্গমস্থল। এই রাজ্যে আট
দশকেরও (৮৬) বেশি সময় ধরে সঙ্ঘকাজ
চলছে। ১৯৩৯ সালের বর্ষপ্রতিপদে
মেছুয়াবাজার সংলগ্ন সরকার লেনের একটি
বাড়ির ছাদে শুরু হয়েছিল সঙ্ঘের প্রথম
শাখা। শাখা হলো সঙ্ঘের কর্ম আর মর্মস্থান।
আজও তা অটল আর অমলিন।
১৯২৫ সালে নাগপুরে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার
চোদ্দ বছর পর এই রাজ্যে শুরু হয় সঙ্ঘের
কাজ। যাঁরা ব্রতী ছিলেন তাঁরা সকলে প্রয়াত।
রেখে গিয়েছেন তাঁদের কর্মের স্মৃতি আর
অভাবনীয় এক অনুপ্রেরণার ভাণ্ডার। তাঁদের
রেখে যাওয়া সাংস্কৃতিক আর দার্শনিক
ভাবনার নবীকরণ হয়েছে। তাকে ভিত্তি
করেই রাজ্যের তিন প্রান্ত জুড়ে চলছে
আনুমানিক ২৭০০ শাখার দৈনিক কাজ।
প্রবীণ আর একনিষ্ঠ স্বয়ংসেবক ড. বিজয়
আঢ্য সঙ্ঘের সেই ঐতিহাসিক বর্ণময় গতিকে
তুলে ধরেছেন ‘বাংলায় সঙ্ঘকাজের
ইতিহাস’-শীর্ষক এক চমকপ্রদ সংকলনে। এই
আকরটি রাজ্যের সঙ্ঘ ইতিহাসে দৈনন্দিন
ঘাত-প্রতিঘাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাষ্য। হিন্দু
ঐক্যের ভিতর দিয়ে সনাতন হিন্দুধর্মের
আদর্শের ভাবনা আর বার্তাকেই বয়ে নিয়ে
চলেছেন বর্তমান সরসঙ্ঘচালক ডাঃ মোহনরাও ভাগবত। সঙ্ঘ বিরোধীরা
যথারীতি তার অপব্যাখ্যা করেছে। তারা নরচন্দ্রমা শ্রীরাম আর লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণেরও অপব্যাখ্যা করেন।
মূর্খদের দায়িত্ববোধ থাকে না।
উপনিষদের বাণী হলো বিশ্বমানব অমৃতের
পুত্র। সেই বাণীকে সামনে রেখেই চলে
সঙ্ঘের কাজ। প্রশ্ন উঠতেই পারে গোটা
রাজ্যকে শাসক যখন দুর্নীতির চাদরে মুড়ে
ফেলেছে আর হিন্দু জাতি প্রতিদিন তার হাতে
লাঞ্ছিত হচ্ছে তখন কী হবে সঙ্ঘের
কর্তব্যকর্ম? কীভাবে বা তা সম্পাদিত হবে?
প্রতিটি হিন্দুর দুটি ধর্ম- জাতি ধর্ম আর কুল
ধর্ম। স্বয়ংসেবকরা নিষ্ঠাভরে তাই পালন
করেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে
(জ্ঞানযোগ) শ্রীভগবান এই দুই ধর্ম পালনের
নির্দেশ দিয়েছেন- সাধুদের রক্ষা করা আর
দুষ্টদের বিনাশ করে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।
তাই গীতার বাণী অনুসরণ করে বলতেই হবে
যে রাজ্যের অবক্ষয়ের জন্য যারা দায়ী তাদের
সমূলে বিনাশ করে ধর্মপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ভারতমাতাই সঙ্ঘের
আরাধ্যা, তাই কেউ যদি
তাঁর রক্তপান করতে
সচেষ্ট হয় তাকে বিনাশ
করতেই হবে।
হিন্দুভাবেই সকলকে
বাঁচতে আর বাঁচাতে
হবে।
এটাই এ রাজ্যের সকল হিন্দুর প্রধানতম কর্তব্যকর্ম আর কুলধর্ম প্রার্থনায় বলা হয়েছে ধর্ম পালনের উদ্দেশ্যে বীরভাব
প্রয়োজন। আর তার জন্য প্রয়োজন অধর্ম
দমনের শক্তি- পরং সাধনং নাম বীরব্রতম।
বীর হচ্ছেন তিনি যিনি স্বধর্মের সঙ্গে তাঁর
চৈতন্যের মিলন ঘটাতে পারেন—
সমুৎকর্ষনিঃশ্রেয়সস্যৈকমুগ্রম্। তাই এই
মুহূর্তে সঙ্ঘের আশু কর্তব্য হলো হিন্দুদের
সেই বীরভাবকে সুসংবদ্ধভাবে জাগ্রত করে
তোলা। স্বয়ংসেবক আর সঙ্ঘ অনুসরণকারী
নেতৃত্বকে সবরকমের হিন্দু বিরোধিতার
বিরুদ্ধে সমাজ জাগরণে ব্রতী ও উদ্বুদ্ধ হয়ে
উঠতে হবে। বিজেত্রী চ নঃ সংহতা
কার্যশক্তির্। ধর্ম সংরক্ষণের জন্য যত শক্তি
প্রয়োজন তাই-ই সংগঠিত করতে হবে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সেই সংগ্রাম
চালাতে হবে। সঙ্ঘের প্রার্থনায় সেই নির্দেশ
করা হয়েছে।
বলা হয়েছে হিন্দু জাতি এক বিরাট রাষ্ট্র-পুরুষের অঙ্গ। তাই সকলকে ‘হিন্দুরাষ্ট্রাঙ্গভূতা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক অবিভাজ্য হিন্দুরাষ্ট্রের অঙ্গ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। পনেরোটি ভাবের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাব হলো ধোয়নিষ্ঠা। সেটাই প্রাণকেন্দ্র। তা যান্ত্রিক বাক্য নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেই শক্তিকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। কোনো পশুশক্তি নয়, মূল্যবোধের ক্রোড় থেকেই তা তৈরি হবে। তবেই সকল হিন্দুজাতি হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্র-পুরুষের অঙ্গ। যেহেতু ভারতমাতাই সঙ্ঘের আরাধ্যা, তাই কেউ যদি তাঁর রক্তপান করতে সচেষ্ট হয় তাকে বিনাশ করতেই হবে। হিন্দুভাবেই সকলকে বাঁচতে আর বাঁচাতে হবে।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)