বহিরাগত জঙ্গি নিয়ে খেলার মাশুল গুনতেই হবে ‘পুলিশমন্ত্রী’ মমতাকে
শাক দিয়ে মাছ
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে তা ভালো কেউ জানেন না। ১৪ বছর ধরে তাঁর দল ও প্রশাসন বহু কুকীর্তির কারিগর। সেই সব কেলেঙ্কারি ঢাকতে গিয়ে তিনি প্রতিবার ফেঁসেছেন। এটা দুর্ভাগ্যের যে, রাজ্যের প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোটার মমতার সমর্থক এবং বাকি ৫৪ শতাংশ মমতাকে সমর্থন না করলেও তাঁরা একজোট নন। অধিকাংশ ভোটার মমতার সমর্থক না হলেও বিরোধী ভোট বিভাজনের অঙ্কে ২০২১ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে লাভবান হন মমতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট বিজেপির পক্ষে একত্রিত না হওয়ার কারণে নির্বাচনে জয়ী হয় তৃণমূল, মান্যতা পেয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় কুকীর্তি। একটি শিশুও জানে মুসলমান প্রধান মুর্শিদাবাদে কারা হিন্দুদের আক্রমণ করছে এবং পুলিশ কেন তাদের আটকায়নি। মমতা মুসলমান ভোটের জোরে আর হিন্দু ভোটের ভাগাভাগিতে জেতেন। মুসলমান ভোটের অধিকাংশ এবং হিন্দু ভোটের কিয়দংশ একজোট হয়ে মমতার কুকীর্তিকে মান্যতা দেয়। মুসলমানদের থেকে সংখ্যায় অনেক বেশি হয়েও হিন্দুরা একজোট হয়ে বিজেপিকে ভোট দেন না। ফলে বার
বার মমতার কুকীর্তি চাপা পড়ে যায়।
মুর্শিদাবাদে হিন্দুহত্যার ঘটনা চাপা দিতে বহিরাগত জঙ্গি তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে সামাজিক সংগঠনকেও জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে নানা মিথ্যে অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ডুবন্ত মানুষ যেমন খড় আর কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে, মমতাও তাই করছেন। মমতার নৌকো ডুবেও ডোবে না।
রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি যা খুশি বলতে ও করতে পারেন। তার দল ও সরকারের সব অন্যায় ঢাকতে মমতা চিরকাল পারদর্শী, বিশেষত তিনি যদি নিজেও তাতে যুক্ত থাকেন। বিদেশি বাম জমানায় কংগ্রেস ভেঙে দল গড়ার সময় বহুবার তিনি গল্পের গোরু গাছে তুলেছেন। বিদেশি বামেদের কোনোদিন সরাতে পারবেন এমন বিশ্বাস মমতার ছিল বলে মনে হয় না। কয়েকটি নির্বাচনের ফল তার ইঙ্গিত দিয়েছিল। মমতা যেমন ভাবতে পারছিলেন না তিনি বামেদের সরিয়ে কোনোদিন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বসবেন, বিদেশি বামেরাও ভাবেনি তারা মমতার কাছে হেরে যাবে। বিদেশি বামেরা রাজ্য কংগ্রেসকে পকেটে পুরে ফেলেছিল। বলা হতো জ্যোতি বসু দু’টো দল চালান রাজ্য কংগ্রেস আর সিপিএম। ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জ্যোতি বসুর তৈরি কংগ্রেস-সিপিএমের জাঁতাকলে মানাতে না পেরে ২০১১-তে কাটা পড়েন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তাতে মমতার কোনো কৃতিত্ব ছিল না।
অনেকেই মানবেন না যে, ২০১১ সালে কেবল মমতার জোরে তৃণমূল জেতেনি। সোজাসাপটা বলি যে, ইদানীং রাজনীতি থেকে বসে যাওয়া মুকুল রায় আর বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতযশে তৃণমূল জিতেছিল। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ন’টি জেলা শুভেন্দুবাবু একা সামলাতেন। ঠিক একইরকমভাবে ১২১টির মধ্যে ১১৫টি পৌরসভার বোর্ড এবং সিপিএমের পুলিশকে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভেঙেছিলেন মুকুল রায় ও শুভেন্দুবাবু। তাই এখন মমতার প্রকৃত ভয় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। সেই সময় রাজ্যের ৫৭ হাজার বুথেকর্মী দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তৃণমূলের।
তাদের হয়ে কাজ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার অধীনস্থ বিক্ষুব্ধ পুলিশ। তারাই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিদেশি বাম দুষ্কৃতী, হার্মাদও বুথ লুটেরাদের রিগিং ও জাল ভোট আটকে দেয়।
মমতা তা জানেন বলেই পুলিশকে কোনোভাবে হাতছাড়া করেন না। জামিনে থাকা অফিসারকে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে রাখেন। তার জন্য যদি মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীর আসন থেকে নেমে ‘পুলিশকর্মী’ সাজতে হয়, তাও তিনি মেনে নেবেন। মমতা মুসলমান ভোটকে দাবার বোড়ে মনে করেন। পাশাপাশি পুলিশের হয়ে সাফাই দিতে ‘পুলিশকর্মী’ সাজতে মমতা রাজি। তার মতে বাইরে থেকে জঙ্গি এসে মুর্শিদাবাদে হিন্দু হত্যা ও আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। ‘বাইরে থেকে’ অর্থ কী? বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, আফগানিস্তান, নাকি অন্য কোনো সার্কভুক্ত দেশ থেকে?
সত্যিই হাস্যকর লাগছে। নজর ঘোরাতে মমতা সম্প্রীতি ও মুসলমান তোষণের ভাষা একসঙ্গে বলেন। মমতার কাছে বহিরাগত জঙ্গি গণ্ডগোল বাধিয়ে পালিয়ে গিয়েছে মানেই স্থানীয় দুধেল গাইয়েরা, অর্থাৎ
মুর্শিদাবাদের আসল অপরাধীরা কোনোদিনই ধরা পড়বে না। রাজ্য প্রশাসনের উসকানি আর প্রত্যক্ষ মদতেই ওয়াকফ আইনকে সামনে রেখে যারা হিন্দু হত্যা করেছে, তাদের তিনজন ধরা পড়লেও, কোন জেহাদিদের উসকানিতে হিন্দুদের বাড়ি ও সম্পত্তি আক্রান্ত হলো তা হয়তো কোনোদিন জানা যাবে না। ‘পুলিশমন্ত্রী’ মমতা তা জানতে দেবেন না। তবে এভাবে আর কতদিন? ২০২৬-এর ভোটে সে সত্য প্রকাশিত হবে। সেটাই এখন দেখার।