হিন্দুর পলায়ন
যেখানে যেখানে হিন্দুর সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে সেখান হইতে হিন্দুকে পলায়ন করিতে হইয়াছে, ইহা একটি ইতিহাসসিদ্ধ সত্য। পশ্চিম পাকিস্তান হইতে হিন্দুকে পলায়ন করিতে হইয়াছে, পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ হইতে পলায়ন করিতে হইয়াছে। সেই পলায়ন অদ্যাবধি অব্যাহত রহিয়াছে। স্বাধীনোত্তর ভারতে কাশ্মীর হইতে হিন্দুদের পলায়ন করিতে হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মের কারণেই হিন্দুকে পলায়ন করিতে হইতেছে। তাহা সত্ত্বেও এই দেশের সেকু-মাকুরা একই বৃন্তে দুটি কুসুমের গান শোনাইয়াছে। ধর্মের কারণেই ভারত তথা বঙ্গের বিভাজন ঘটিয়াছে, তবু তাহারা সম্প্রীতির সংগীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করিয়া বাঙ্গালি হিন্দুকে তাহাতে ভুলাইয়া রাখিয়াছে। বাঙ্গালি হিন্দুর ভালো-মন্দ, আপন-পর বোধ, শত্রু-মিত্র ভেদ করিবার বিচারবুদ্ধি সবই ভুলাইয়া দেওয়া হইয়াছে। মেরুদণ্ড নামক কিছু একটি হিন্দুর আছে, তাহাও তাহারা ভুলিয়া গিয়াছে। দীর্ঘ চৌত্রিশ বৎসর বাম শাসনে বাঙ্গালি হিন্দুকে তাহাদের ধর্ম ও পরিচয় দুইটিই ভুলাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ভাতের জন্যই লড়াইয়ের কথা শুনিতে শুনিতে ধর্মের জন্য লড়াই করিবার মানসিকতা ও উদ্যম দুটিই হিন্দু ভুলিয়াছে। এই ধর্মহীন ও পরিচয়হীন বাঙ্গালি হিন্দুকে লইয়া রাজ্যের বর্তমান শাসকদল পুতুলনাচের খেলা খেলিতেছে। কত অত্যাচার, কত অনাচার, ধর্মের উপর আঘাত, কত মৃত্যু, কত মাতা-ভগ্নীর সম্ভ্রমহানি- তাহাতেও বাঙ্গালি হিন্দুর ভ্রূক্ষেপ নাই। ক্যানিং, নলিয়াখলি, ধুলাগড়, সন্দেশখালি, কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, শীতলকুচি- কিছুই তাহারা মনে রাখে নাই। বাঙ্গালি হিন্দু অনুধাবন করিতেই পারে নাই যে, বর্তমান শাসকদলের নিকট হিন্দুর কোনো মূল্য নাই। যত মূল্য সমস্তই তাহাদের ‘দুধেল গাই’দের প্রতি। এই ‘দুধেল গাই’য়েরা হিন্দুদের জীবনজীবিকার ক্ষতি, মানসম্মানে আঘাত এবং নারীর সম্ভ্রমহানি করিলেও রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। কেননা, রাজ্যের শাসককে ক্ষমতার অলিন্দে টিকিয়া থাকিতে হইবে যে! এই দুধেল গাইয়েরাই যে বর্তমান শাসকদলের জীবনীশক্তি। ইহারা সেই জেহাদি যাহারা ধর্মের নামে দেশমাতৃকার বিভাজন ঘটাইয়াছে। যাহারা পাকিস্তান, পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশ হইতে হিন্দুহত্যা ও বিতাড়ন অব্যাহত রাখিয়াছে। চৌত্রিশ বৎসরের বাম শাসন এবং বর্তমানে তৃণমূল রাজ্য সরকারের লালন পালনে ইহারা বলীয়ান হইয়াছে। কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-তৃণমূল দল মতাদর্শগত দিক দিয়া পৃথক হইলেও হিন্দুধর্মের উপর আঘাত, হিন্দু মাতা-ভগ্নীর সম্ভ্রমহানি, হিন্দুহত্যা অথবা বিতাড়ন ঘটিলে ইহারা মুখে ‘রা’টি পর্যন্ত কাড়িতে পারে না। কেননা, ভোট বড়ো বালাই। জেহাদিরাই ইহাদের প্রধান শক্তি। কিন্তু জেহাদিদের নিকট কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-তৃণমূল বলিয়া কিছুই নাই। তাহাদের লক্ষ্য শুধুই হিন্দু। তাহাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত করা। সম্প্রতি তাহারা মুর্শিদাবাদে পূর্ণমাত্রায় তাহার মহড়া দিয়াছে। তিনদিন ধরিয়া জেহাদিরা সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান প্রভৃতি এলাকায় নির্বিরোধে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করিয়াছে, অগ্নিসংযোগ করিয়াছে, লুণ্ঠন করিয়াছে, মন্দির চূর্ণ করিয়াছে, মাতা-ভগ্নীর সম্মনহানি করিয়াছে, এমনকী হত্যা পর্যন্ত করিয়াছে। রাজ্য সরকারের পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। প্রাণভয়ে হিন্দুরা পার্শ্ববর্তী জেলায় আশ্রয় লইতে বাধ্য হইয়াছে। জেহাদি আক্রমণে শেষপর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ হইতেও হিন্দুদিগকে পলায়ন করিতে হইল।
কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-তৃণমূলের হিন্দু নেতাদের দুর্ভাগ্য যে তাহারা জেহাদিদের খেলাটি ধরিতে পারিতেছেন না। কেহ কেহ হয়তো পারিতেছেন। যেমন, কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর বিলম্বে হইলেও বোধোদয় ঘটিয়াছে। তিনি অতীব সত্য কথা বলিয়াছেন, জেহাদিদের যে বাড়বাড়ন্ত, এক্ষণে সাবধান না হইলে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটির অস্তিত্বই থাকিবে না। ইহা পরিষ্কার যে, মুর্শিদাবাদে হিন্দুদিগের উপর যে আক্রমণ নামিয়া আসিয়াছে তাহা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উসকানিতেই এবং রাজ্য সরকারের মদতেই। কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকদের বুঝিতে হইবে, কমিউনিস্ট বলিয়া তাহারা ছাড় পাইবেন না জেহাদিদের হাত হইতে। তাহারা ধনে-প্রাণে হত হইলেও পার্টি নেতৃত্ব জেহাদিদের পক্ষই অবলম্বন করিবে। জেহাদিদের সহিত সম্পর্ক তাহাদের ডিএনএ-তেই রহিয়াছে। সময় আসিয়াছে, রাজনীতি নির্বিশেষ সকল হিন্দুকে হিন্দু নামেই পরিচয় দিতে এবং সংগঠিত হইতে হইবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেহাদি শক্তির মদতদাতা কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-তৃণমূলের এই অশুভ জোটকে উৎখাত করিতেই হইবে। ইহা ব্যতীত বাঙ্গালি হিন্দুর রক্ষার আর কোনো পথ নাই।

















