• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home পরম্পরা

5th May পরম্পরা

in পরম্পরা
5th May পরম্পরা

Issue 77-35-05-05-2025

রবীন্দ্রনাথ ও স্বদেশবোধ এক বহুমাত্রিক চেতনা সংকলন
শব্দে, নিবন্ধে অনেক বিষয়কে পূর্ণ রূপ দেওয়া বেশ কঠিন হয়। যেমন রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর স্বদেশ চেতনা। এতটাই বহুমাত্রিক এই চেতনার প্রকাশ যে তাকে বোঝা, অনুভব করা, আত্মস্থ করা সহজ কথা নয়। কমপক্ষে এক যুগ প্রয়োজন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের তার অতলে যেতে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনার বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে জাতীয়তাবোধ, রাষ্ট্রচিন্তা, স্বদেশ জাগরণী মন্ত্র। তিনি নিন্দা করছেন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের ধনতান্ত্রিক আগ্রাসনের। সমন্বয়বাদী ধারণায় বিশ্বাসী রবীন্দ্রনাথ পূর্ব-পশ্চিমের মিলন চেয়েছিলেন বটে, তাই ইসলামিক বর্বরতা তারপর ইংরেজ শাসনে ভারত যখন সামাজিক ভাবে জর্জরিত, তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চিন্তাস্তর অতিক্রম করে রবি ঠাকুর বলতে পেরেছেন ‘ইউরোপের প্রদীপের মুখে শিখা জ্বলিতেছে। সেই শিখা হইতে আমাদের প্রদীপ জ্বালাইয়া লইয়া আমাদিগকে কালের পথে আর একবার যাত্রা করিয়া বাহির হইতে হইবে।’
নৈবেদ্য কবিতার সঙ্গে যখন পরিচিত হয়েছি, তখনই রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ চেতনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। যেখানে ভক্তিতত্ত্ব ও তপোবন চেতনা এবং তারই পাশে শাসক বিরোধী অন্যায় বিরোধী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। স্বদেশী সমাজ (১৯০৪) প্রবন্ধে রবি ঠাকুরের স্বাদেশিকতার সুচিন্তিত রূপ প্রতীয়মান। ঠিক তার পরেই ‘অবস্থা ও ব্যবস্থা’ (১৯০৫) রচিত হলো। ১৯০৮ সালে পাবনা সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণে যে রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন রেখেছেন তা স্বদেশী সমাজ রাষ্ট্রবোধের নিখাদ দলিল। ‘গ্রাম পড়ে আছে মধ্যযুগে আর শহর আধুনিক যুগে… বলতে গিয়েই তিনি অর্থনৈতিক দিক থেকে সাবধান করে পল্লী সমাজের রূপ দেখান। জীবন জীবিকায় সমবায় নীতি, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা- তবেই তৈরি হবে আধুনিক পল্লীসমাজ। বঙ্গভঙ্গের সময় যখন রাজনৈতিক সুবিধাবাদ অনেকটাই শহরমুখী। তখন রবি ঠাকুর পথ দেখিয়েছেন কেমন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম গড়া যায়।
তাঁর সেই ক্ষুদ্র ঋণ ও গ্রাম উন্নয়ন নীতির প্রয়োগ পদ্ধতি এতটাই বিজ্ঞানসম্মত, বলিষ্ঠ, আধুনিক যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহু অনুন্নত আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশ তা মডেল হিসেবে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবোধের এটাই ম্যাজিক যা কেবলমাত্র আমাদের জন্য সত্য নয়, তা বিশ্ব মানবতার জন্য সত্য ও সুন্দর। কালক্ষণে ১৯৩০-৩১ ছিল স্বাধীনতার অবিস্মরণীয় সময়। বিপ্লবী সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবী বনাম ইংরেজের অসম লড়াই, প্রীতিলতার আত্মত্যাগ, লাহোরে বিপ্লবী ভগত সিংহ ও সহকর্মীদের ফাঁসি, ১৯২৯-এ যতীন দাসের টানা ৬৩ দিন অনশন- রবীন্দ্রনাথের কলমে আগুন তখন ‘সর্ব খর্বতারে দহে তব দ্রোহ দাহ- হে ভৈরব শক্তি দাও…।’ তিনি আবারও লিখছেন, ‘মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ।’ এর ঠিক পর ১৯৩২ সাল, হিজলি ও বক্সা কারাগৃহ থেকে বিপ্লবীরা ২৫শে বৈশাখ রবিঠাকুরকে জন্মদিনের অভিনন্দন জানান, কবিও আপ্লুত। উত্তর দেন বীর বিপ্লবীদের। সেলুলার জেলে অনশনরত রাজবন্দিদের মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদী। তিনি সরকারের কাছে বন্দি ফেরাতে স্মারকলিপি দিলেন। ১৯৩৭ সালে বন্দি মুক্তির দাবিতে অসুস্থ রবীন্দ্রনাথের টাউন হলের প্রতিবাদী ভাষণ আজকেও স্মরণযোগ্য।
রবীন্দ্রনাথ যে কী প্রচণ্ড শাসকবিরোধী তা সেদিন বোঝা গেল তাঁর কিছু কথায়, ‘ভারতের শাসন কর্তৃপক্ষ ফ্যাসিস্ট আক্রমণের হাত হইতে রক্ষা পায় নাই। আমার দেশের নামে এসবের প্রতিবাদ। করিতেছি।’ ওই সভায় আন্দামান রাজনৈতিক বন্দি সহায়ক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন রবিঠাকুর। উৎকণ্ঠায় তিনি বার্তা পাঠান আন্দামানে বন্দি বিপ্লবীদের উদ্দেশে। প্রসঙ্গত, এই সময়েই তিনি তাঁর রচিত ‘প্রচলিত দণ্ডবিধি’-তে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘দণ্ড দানবের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য ডাক পাঠানো’ কিংবা ঘোষণার সুরে বলা ‘দামামা ওই বাজে/ দিন বদলের পালা এল গোড়োযুগের মাঝে’-দেশকে, জাতিকে বাঁচার, আরও একবার ক্লান্ত না হয়ে ওঠার অনুঘটক প্রদান করেছে। কালান্তরের প্রবন্ধগুলি যেন হীরা মণি মাণিক্য। যেসব গদ্যে কোনো আপোশবাদিতা নেই।
স্বদেশ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সুভাষ প্রীতি চোখে পড়ার মতো। তাসের দেশ নাটকটি যখন উৎসর্গ করছেন সুভাষচন্দ্র বসুকে তখন লিখলেন, ‘স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পুণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ করে।’ শিলাইদহে পদ্মাতীরে বসে তিনি যখন লিখছেন, ‘শতাব্দীর সূর্য আজি রক্ত মেঘ মাঝে/অস্ত গেল’- সে যে তীব্র সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। বক্সার যুদ্ধ কবির বিচারে ইংরেজ নিষ্ঠুরতা। তাঁর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বুলেট-কলম তীব্র শ্লেষে লিখল, ‘ক্ষুধিত ইম্পিরিয়ালিজম স্বার্থজাল বিস্তার করাকেই মহত্ত্ব বলিয়া বিবেচনা করিতেছে, ইম্পিরিয়ালতন্ত্র নিরীহ তিব্বতে লড়াই করিতে যাইবেন, আমাদের অধিকার তাহাদের খরচ জোগানো, সোমালিল্যান্ডে বিপ্লব নিবারণ করিবেন, আমাদের অধিকার সস্তায় মজুর জোগান দেওয়া’ (সফলতার সদুপায় ১৯০৪)। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশবোধ শুধু বঙ্গ, বিহার বা সমগ্র ভারতের জন্য নয়। যে বোধে তিনি বিশ্ব মানবদরদি। ভারতীয় দর্শনের যা ভিত, ভিত্তি, শিকড়- কবি যেন তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন অকৃত্রিমভাবে। স্বাধীনতার অর্থ নতুন করে শেখালেন রবিঠাকুর। স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করতে নিজ সত্তার ধারণের মানসিকতা গঠন জরুরি। তাই শিক্ষা, সংস্কৃতি সবের মধ্য দিয়েই তিনি জাতিকে ঘুম থেকে তুলতে চেয়েছেন-
‘চলো যাই, চলো, যাই চলো যাই-চলো পদে পদে সত্যের ছন্দে-চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে।’ স্বদেশী আন্দোলনের কাল। ১৯২০।
গান্ধীদর্শন থেকে সরে রবীন্দ্রনাথ ভিন্ন দর্শন গঠন করলেন। তিনি আত্মশক্তি গঠনের দিকে জোর দিতে উৎসাহিত করছেন। রবীন্দ্র মনীষায় তাই ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আদর্শ। শিবাজী জীবনদর্শন পাঠেই শোষণ মুক্তি সম্ভব। রাষ্ট্রবোধে ছত্রপতি শিবাজীই রোল মডেল। স্বাধীনতা সংগ্রামকালে রবিঠাকুর বীরত্বের জয়গানে ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা মহীরুহ হিসেবে যখন শিবাজীর দর্শনে ভারতবোধকে জাগ্রত করেন তখন তাঁর স্বদেশপ্রেম ইতিহাসবোধে রাষ্ট্রচেতনার আদর্শ স্পষ্ট হয়। রবীন্দ্রনাথের স্বদেশবোধ মানে কেবলমাত্রই ‘বাঙ্গলার মাটি বাঙ্গলার জল’ বা এমন গান, কবিতা রচনা নয়। তা তো সাহিত্যফল মাত্র। আমাদের দেখতে হবে তাঁর গভীর রাষ্ট্রবোধের চিন্তন কতদিকে চালিত হতো। দেশজ বৈশিষ্ট্যকে তিনি বারবার অনুভব করতে বলতেন। তাই তিনি বলেন, ‘যে প্রত্যেক লোকের মধ্যে সমস্ত দেশকে দেখিতে পায় না, সে মুখে যাহাই বলুক দেশকে যথার্থ ভাবে দেখে না।’ স্বদেশ চিন্তার মানবিক দিকের পাশাপাশি কবি স্বরাজ চিন্তার রাজনৈতিক দিকেও দৃষ্টিপাত করেছেন। বলেছেন, ‘বিদেশি রাজা চলিয়া গেলেই যে আমাদের স্বদেশ হইয়া উঠিবে তাহা নহে। দেশকে আপন চেষ্টায় দেশ করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয়।’
এ এক অতি উচ্চ দর্শন যেখানে চিন্তার সূচনাবিন্দু দেশকে জানার ভিতর দিয়ে আত্মোপলব্ধি এবং সেই স্বদেশ স্বরাজ চিন্তার মূল উপাদান মনুষ্যত্বকে বন্ধনে আনা। তাই স্বদেশবোধে ভাববাদী ও বস্তুবাদী চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটালেন রবীন্দ্রনাথ। ত্যাগের দারিদ্র্য তিনি চেয়েছেন, অভাবের দারিদ্রদ্র্য নয়। জাতীয় সম্মানবোধ রবীন্দ্রনাথ নতুন স্বাদে শেখালেন- ‘আমাদের দেশে সকলের চেয়ে বেশি দরকার হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলিয়া দেওয়া নয়, মনে ভরসা দেওয়া।’ সোশ্যাল মবিলিটি বোধহয় স্বদেশীকালে রবিঠাকুরই সবচেয়ে গভীর ভাবে ভেবেছেন। জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের কথা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে তিনিই ভাবলেন- ‘আমাদের দেশকে সম্পূর্ণভাবে কেউ কেড়ে নিতে পারে না, এবং সেই দেশকে বাইরে থেকে দয়া করে কেউ আমাদের হাতে তুলে দেবে এমন শক্তি কারও নেই।
…. বিদেশকে যতক্ষণ আমরা কিছু দিতে পারি না, বিদেশ হইতে ততক্ষণ আমরা কিছু লইতেও পারি না; লইলেও তাহার সঙ্গে আত্মসম্মান থাকে না বলিয়াই তাহা তেমন করিয়া আপনার হয় না, সংকোচে সে অধিকার চিরদিন অসম্পূর্ণ ও অসঙ্গত হইয়া থাকে।’ বিকাশ কী? ঐক্যবোধ। তাইতো তাঁকে বলতে শুনি, ‘আমার দুর্ভাগা দেশে ভেদ জন্মাইয়া দেওয়া কিছুই শক্ত নহে, মিলন গড়িয়া তোলাই কঠিন’, বিকাশের অর্থই ঐক্যের মধ্যে পার্থক্যের বিকাশ।’ এই মৌল আবেদনকে আজকেও, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও সমগ্র বিশ্ব প্রণতি জানাবে। ভারতকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজদ্বার পর্যন্ত যদি পরতে পরতে প্রতি আণুবীক্ষণিক স্তরে কেউ পর্যবেক্ষণ করেন, সবচেয়ে আধুনিক দৃষ্টিতে যদি কেউ ভাবেন, তবে তা নিশ্চিত রবীন্দ্রনাথ। তিনি নিজেই এক আস্ত, স্বতন্ত্র, স্বতঃস্ফূর্ত স্বদেশবোধ যা ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্টি হলেও তার মূল্যায়ন সম্পূর্ণ রূপে আজকেও আমরা করতে এ এক অতি উচ্চ দর্শন যেখানে চিন্তার পারিনি।


হিন্দু সঙ্ঘশক্তির এক আশ্চর্য রূপকার
আদি শঙ্করাচার্য
ড. সর্বাণী চক্রবর্তী
সংস্কৃত লোকোক্তিতে বলা হয়েছে- ‘সঙ্ঘেশক্তিঃ কলৌ যুগে’ অর্থাৎ কলিতে সঙ্ঘশক্তিই উত্তরণের উপায়। এই আপ্তবাক্যটির যথার্থতা ও গভীরতা আদি শঙ্করাচার্য হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন।
জৈনমতের ইতিহাসে আছে যে- প্রাচীন সনাতন ধর্মের বহু আবর্তন-বিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি বেদমার্গ বহির্ভূত মতের আবির্ভাব হয়েছিল। জৈনরা সে যুগে নিগ্রন্থ অর্থাৎ গ্রন্থি বা বন্ধনহীন শ্রমণ নামে পরিচিত ছিলেন। ৫৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাবীর আবির্ভূত হন। ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আবির্ভূত হন তথাগত। বুদ্ধদেব প্রচারিত মত উপনিষদের সারতত্ত্ব অবলম্বনে গ্রন্থিত হয়। ঠিক সেরূপ জৈনমতও বেদান্ত হতে সৃষ্ট। সেই সময়ে বৌদ্ধ ও জৈনমত ছাড়াও ভারতে আরও একটি মতবাদের সৃষ্টি হয়েছিল যার নাম ‘আজীবিক মত।’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোশাল। বৌদ্ধ ও জৈনমতের মধ্যে একটাই পার্থক্য যা হলো জৈনরা শেষ পর্যন্ত আদি শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদের কাছাকাছি পৌঁছেছেন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সময়ে তান্ত্রিকতার প্রভাবে দেখা দিয়েছিল নানা বিশৃঙ্খলা। এর ফল যে ভালো হয়নি তা ইতিহাসই বলে। তাই দেখা যায় আদি শঙ্করাচার্য বৌদ্ধদের সঙ্ঘারামগুলির অবনমনের কথা জেনে তিনি দৃঢ়হস্তে সঙ্ঘশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বেচ্ছায় স্বমহিমায় নিজ জীবনীশক্তিতে যা হবে ভরপুর।
তাঁরই সৃষ্ট দশনামী সন্ন্যাসী সম্প্রদায় ধর্মের পুণ্যসলিলে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অক্ষুণ্ণ রাখার বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা। পরবর্তীকালে এই দশনামী সম্প্রদায় সনাতন হিন্দুধর্মের মধ্যগাঙে বান আনে। তিনি ভারত ভ্রমণ করেছেন ও হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখা যে বেদরূপ মহীরুহেরই অংশ তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
এক সময়ে তিনি তাঁর প্রিয় প্রথম সন্ন্যাসী শিষ্য পদ্মপাদকে বলেছিলেন- কোনো বিদ্যা বা সাধনা কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত না হলে তা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। তিনি তাই বেদান্ত শাস্ত্রকে বিশ্বে স্থায়ী আসন দেওয়ার জন্য সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করলেন। ভারতের চারপ্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন। যেমন- উত্তরে জ্যোর্তিমঠ, দক্ষিণে শৃঙ্গেরি মঠ, পুবে গোবর্ধন মঠ এবং পশ্চিমে সারদামঠ। তিনি এও নির্বাচন করে যান কে কোন মঠের প্রধান হবেন। তোটক, সুরেশ্বর, পদ্মপাদ ও হস্তামালক হবেন চতুর্মঠের চার প্রধান মঠাধীশ। আর বাকি শিষ্যরা হবেন তাদেরই সহকারী। এইভাবে প্রথম ধাপে আচার্যদেব ভারতভূমির দিকে চার ধর্মপ্রচারে ব্রতী হন। চারটি মঠের কথা যে উপরে বলা হলো তা সহজভাবে বললে হয়- বদরিকাশ্রম, রামেশ্বরধাম, পুরী বা পুরুষোত্তম ধাম ও দ্বারকা। দশনামী সম্প্রদায় এই শিবাবতারেরই সৃষ্টি। যেমন- গিরি, পর্বত, সাগর, পুরী, ভারতী, সরস্বতী, বন, অরণ্য, তীর্থ ও আশ্রম। এই দশটি সম্প্রদায় চারটি মঠের অধীনে থাকবে এবং তাদের নিয়ম ও নির্দেশানুসারে ধর্মানুষ্ঠান করবে। ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ছিলেন তিনি। তাই দেখা যায় মঠ পরিচালনার জন্য তাঁর প্রবর্তিত অনুশাসনই সর্বত্র চালিত হয়। এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য এই চারটি মঠের অধ্যক্ষদের এখনো ‘শঙ্করাচার্য’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই শঙ্করাচার্যের আসনে অভিষিক্ত তিনিই হবেন যিনি পবিত্র, জিতেন্দ্রিয়, বেদ, বেদান্তশাস্ত্রে পারঙ্গম, সর্বশাস্ত্রবিদ, যোগারূঢ় সন্ন্যাসী। স্বামী শিবানন্দ একসময়ে সঙ্ঘের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন- ‘প্রীতি, উদারতা, পবিত্রতা ও স্বার্থহীনতা হচ্ছে সঙ্ঘ সৌধের ভিত্তি প্রস্তর। এদের কোনো একটির কমতি পড়লেই সঙ্ঘ হবে দুর্বল।’
এক আচার্যের অবদানে তাঁর স্থানে উক্ত লক্ষণযুক্ত সন্ন্যাসীকেই নির্বাচন করতে হবে। তাঁর দায়িত্ব মানুষ বিরুদ্ধ ধর্ম আচরণ করছে কিনা দেখার জন্য মঠের আচার্যরা নিজস্ব এলাকাভুক্ত প্রান্তে সবসময় ভ্রমণরত থাকবেন। মনে রাখতে হবে, তেমন স্থায়ীভাবে মঠে বাস করার কোনো রীতি ছিল না।
মাত্র ৩২ বছর সময়কালে তিনি যা করেছিলেন তা বর্তমানের কোনো পণ্ডিত বা গবেষক বিস্ময়বোধ করেন। সনাতন হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবন শুধু নয়, তাকে নবজীবনদান করেছেন। এছাড়া বেদান্তের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারদান এবং হিন্দুশাস্ত্রকে তিনি শ্রেষ্ঠরূপে প্রতিপন্ন করেছিলেন। যে পঞ্চমহাযজ্ঞ বিস্মৃত হয়ে ছিল তাকে তিনি নতুন করে প্রবর্তন করলেন।
মেধা বা জ্ঞানের দ্বারা যে চতুর্মঠ রক্ষা করা যাবে না তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি যেমন একটি সুনির্দিষ্ট রাজপথে সব কিছুকে পরিচালিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তেমনি তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এক অখণ্ড ভারতবর্ষে একটি কল্যাণকারী স্বর্ণ প্রতিমা গড়তে চেয়েছিলেন তা কালের গহ্বরে কোথায় যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। সেই সময়ে বৌদ্ধ তান্ত্রিকতার প্রভাবে দেশ যেমন অরাজকতায় ভরে গিয়েছিল তা তিনি সুকৌশলে রক্ষা করেছিলেন। আসলে বৌদ্ধমতের উত্থান-পতনের ইতিহাস সম্পর্কে একটা পূর্ণ ধারণা তাঁর মধ্যে ছিল। তাই তিনি মানব হয়েও অতি মানব। লোকবাসী হয়েও লোকোত্তর। যে পরিচয় তিনি দিয়েছেন ‘বিবেকচূড়ামণি’তে- ‘অহেয় মনুপাদেয়ং মনোবাচামগোচরম্ অপ্রমেয় মনাদ্যন্তং ব্রহ্ম পূর্ণমহং মহঃ’ (বি. চু. পৃ. ২৮০)। এর অর্থ হলো- ‘অত্যাজ্য, অনুপাদেয়, বাক্যমনাতীত, অপ্রমেয়, অনাদি, অনন্ত তেজঃ স্বরূপ পূর্ণ ব্রহ্মই আমি। আবার ‘স্তবকুসুমাঞ্জলি’র নির্বাণষকমে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর এক স্বরূপ। সেখানে বৈদান্তিক বলছেন-
‘ন মে দ্বেষরাগৌ ন মে লোভ মোহৌ
ন মে বৈ মদো নৈব মাৎসর্যভাবঃ।
ন ধর্মোন চার্থো ন কামো ন মোক্ষঃ
চিদানন্দরূপঃ শিবোহহম্ শিবোহহম্।’
(অর্থ: আমার অনুরাগ ও বিরাগ নাই, আমার লোভ ও মোহ নাই, আমার অহংকার ও মাৎসর্য নাই, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ নাই; আমি চিদানন্দরূপ শিব, আমি শিব)।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর রচনার এক স্থানে শঙ্করাচার্য সম্বন্ধে এক চমৎকার উক্তি করেছেন- ‘তিনিই (ভগবান) আবার আবির্ভূত হলেন। এবার তাঁর আবির্ভাব হলো দাক্ষিণাত্যে। সেই লোকত্তর প্রতিভার অধিকারী শঙ্করাচার্যের, সেই ব্রাহ্মণ যুবকের, যাঁর সম্বন্ধে বলা হয় যে ষোলো বছরের মধ্যেই তিনি তাঁর সমস্ত গ্রন্থের রচনা শেষ করেছিলেন। এই ষোড়শবর্ষীয় বালকের রচনা, এই বালক নিজেও আধুনিক সভ্যতার চোখে পরম বিস্ময়।’
আদি শঙ্করাচার্যের জীবনের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বৈদিক ধর্মের পুনরুত্থান এবং প্রচার প্রসার। একাজ যে কত দুঃসাধ্য ছিল তা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়। তাঁর জীবনে পাণ্ডিত্যের সঙ্গে কবিত্বের অনুপম সম্মিলনকে দৈবী কৃপা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তাঁর রচিত কবিতা সংস্কৃত সাহিত্যে এক মনোরম বস্তু। পৃথিবীতে কে এমন আছেন ‘ভজ গোবিন্দম্’ স্তোত্র শুনে যার মনময়ূর ভাবরসে পূর্ণ না হয়? তিনি ছিলেন সাধন-সাম্রাজ্যের সম্রাট। ভগবতী ‘ত্রিপুরা’র অনন্য উপাসক ছিলেন তিনি। মঠসমূহে শ্রীবিদ্যানুকূল দেবী পূজার যে প্রবর্তন করেন সেই পূজার্চনার পরম্পরা আজও অক্ষুণ্ণভাবে চলে আসছে।
শঙ্করাচার্য প্রমাণ করে গেছেন-
‘কৃতে বিশ্বগুরুব্রহ্মা ত্রেতায়াং ঋষি সওমঃ।
দ্বাপরে ব্যাস এব স্যাৎ কলাবত্র ভবামাহম্।।’
অর্থাৎ হলো সত্যযুগে ব্রহ্মা বিশ্বগুরু, ত্রেতাযুগে মহর্ষি বশিষ্ঠ, দ্বাপরে ব্যাস এবং কলিতে আমি বিশ্বগুরু।’
সমস্ত পৃথিবীতে অদ্বৈত-বেদান্তের যে অনির্বাণ শিখা তিনি প্রজ্বলিত করে গেছেন শত শত বছর যাবৎ তা আজও অম্লান হয়ে রয়েছে এবং প্রলয়কাল অবধি থাকবে।
‘শ্রুতি স্মৃতি পুরাণানামালয়ং করুণাকরম্।
নমামি ভগবৎপাদং শঙ্করং লোকশঙ্কারম্।।’

READ ALSO

29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
29th September পরম্পরা
পরম্পরা

29th September পরম্পরা

October 7, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 23, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025
15th September পরম্পরা
পরম্পরা

15th September পরম্পরা

September 22, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

11th August সম্পাদকীয়

11th August সম্পাদকীয়

August 12, 2025
04th August বিশেষ নিবন্ধ

04th August বিশেষ নিবন্ধ

August 11, 2025
7th April অতিথি কলম

7th April অতিথি কলম

April 29, 2025
5th May সম্পাদকীয়

5th May সম্পাদকীয়

May 7, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?