রক্তাক্ত ভূস্বর্গ
ঋষি কশ্যপের সাধনভূমি কাশ্মীর। আদি শঙ্করাচার্যের পদধূলিধন্য। এশিয়া মহাদেশের স্বর্গভূমি। দানবের আক্রমণে সেই ভূস্বর্গ আজ রক্তাক্ত। বহু শতাব্দী ধরেই রক্তাক্ত। অথচ এই কাশ্মীর ছিল সমৃদ্ধিশালী প্রদেশ। মহারাজা মুক্তপীড় ললিতাদিত্য এবং তাঁহার বংশধরদের হস্তেই এই সমৃদ্ধির সূচনা। ১৩৩৯ সালে এই স্বর্গভূমি দানবদের হস্তগত হয়। বৈদেশিক আক্রমণকারী শাহ মীর কাশ্মীর দখল করিলে হিন্দুদিগের ভাগ্যবিপর্যয় শুরু হয়। দলে দলে পির-দরবেশের আগমন ঘটে। হিন্দুদিগকে ধর্মান্তরিত করিয়া জনসংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত করা হয়। প্রায় পাঁচশত বৎসর পর মহারাজা রণজিৎ সিংহ বিধর্মী শাসনের অবসান ঘটাইলে উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য কাশ্মীরের, ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখযুদ্ধে শিখেরা পরাজিত হইলে পুনরায় হিন্দুদিগের ভাগ্যবিপর্যয় শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজিত হইয়া স্বাধীনতা লাভ করিলে জওহরলাল নেহরুর হঠকারিতায় কাশ্মীর দেশীয় রাজ্য হিসাবেই রহিয়া যায়। কিন্তু অচিরেই পাকিস্তানের লোলুপ দৃষ্টিতে কাশ্মীর রক্তাক্ত হয়। অবশেষে কাশ্মীরের মহারাজা কাশ্মীরের ভারতভুক্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করিলেও প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অদূরদর্শিতায় কাশ্মীরের একাংশ পাকিস্তান দখল করিয়া রাখে। অদ্যাবধি তাহা তাহাদের দখলেই রহিয়াছে। কাশ্মীরে রক্তক্ষরণও অব্যাহত রহিয়াছে। সেখান হইতেই পাকিস্তান অনবরত ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালাইয়া যাইতেছে। ভারতের সহিত পাকিস্তান একাধিকবার সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হইয়াছে। প্রতিবারই তাহারা ভারতের হস্তে নাকাল হইয়াছে। তাহা সত্ত্বেও তাহারা ছায়াযুদ্ধের অভিলাষা পরিত্যাগ করে নাই। আসলে, পাকিস্তানের জন্মই হইয়াছে ভারত তথা হিন্দু বিরোধিতার জন্য। দুর্ভাগ্যের যে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত হইবার পরও যাহারা ভারতেই রহিয়া গিয়াছেন তাহাদের অধিকাংশ কিন্তু ভারতকে মাতৃভূমি মনে না করিয়া দার-উল-হারব মনে করিয়াছে। তাহাদের অভিলাষা ভারতভূমিকে দার-উল-ইসলামে পরিণত করা। তাহার জন্য কাশ্মীর হইতে শুরু করিয়া ভারতের সর্বত্র হিন্দুদিগের বিরুদ্ধে তাহারা জেহাদ চালাইয়া যাইতেছে। আরও দুর্ভাগ্যের যে, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জেহাদিরা যেমন ভারতকে রক্তাক্ত করিতেছে, তেমনই ভারতে বসবাসকারী জেহাদিরাও ভারতকে রক্তাক্ত করিয়া চলিয়াছে। পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকালে ভারত জেহাদিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হইয়াছিল। বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য সরকারের মদতেই কাশ্মীর উপত্যকাকে হিন্দুশূন্য করা হইয়াছে। তৎকালীন মেরুদণ্ডহীন কেন্দ্রীয় সরকার তখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনোরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করিবার সাহস পর্যন্ত দেখাইতে পারে নাই। নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করিয়াছে। তাহারা কাশ্মীর হইতে ৩৭০ ধারা বাতিল করিয়া সন্ত্রাসবাদের মূলে আঘাত করিয়াছে। জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করিবার ফলে কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন করিয়া পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করিবার পরই পুনরায় সেখানে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হইয়াছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে হত্যা করিয়াছে ইসলামি জঙ্গিরা।
পহেলগাঁওয়ে শুধুমাত্র হিন্দু পর্যটকদেরই হত্যা করিয়াছে জঙ্গিরা। হিন্দু পরিচয় নিশ্চিত হইয়াই তাহারা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করিয়াছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী জেহাদিরা শুধুমাত্র হিন্দুদিগকেই হত্যা করিয়াছে। ইহা ইতিহাসসিদ্ধ সত্য। তথাপি এই দেশের সেকু-মাকু ও লিবারালরা প্রচার করিয়াছে যে, সন্ত্রাসবাদীদের নাকি কোনো ধর্ম হয় না। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় জেহাদিরা শুধুমাত্র হিন্দুদিগের উপরই আক্রমণ চালাইয়াছে। মা-বোনেদের সম্ভ্রমহানি করিয়াছে, এমনকী হত্যা পর্যন্ত করিয়াছে। কোনো রাজনৈতিক দল বিচার করে নাই জেহাদিরা। কাশ্মীরে শুধুমাত্র হিন্দু পর্যটকদের উপর আক্রমণ ও হত্যার বিরদ্ধে সমগ্র ভারত তথা বিশ্ব প্রতিবাদে মুখর হইয়াছে। তথাপি এই দেশের সেকু-মাকুরা একই গান গাহিয়া চলিয়াছে- সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম হয় না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হইল, ভারতের অভ্যন্তরেই পাকিস্তানপ্রেমীরা স্বচ্ছন্দে বসিয়া রহিয়াছেন। এই সত্যটি পাকিস্তানেরই সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করিয়াছে। তাহারা বলিয়াছে, ‘ভারতের মমতা ব্যানার্জি, কংগ্রেস, সিপিএম, অন্যান্য বামপন্থী দল প্রভৃতি ভারত সরকারের সহিত নাই, তাহারা পাকিস্তানের সহিত রহিয়াছে।’ কাশ্মীরে জঙ্গি আক্রমণের প্রতিবাদে সমগ্র ভারত ক্ষোভে ফুঁসিতেছে। কিন্তু এই পাকিস্তানপ্রেমীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভকোথায়? ইহাদের দেশ হইতে নির্মূল করিতে না পারিলে ভারতে জঙ্গি ও জেহাদি আক্রমণের অবসান ঘটিবে না। ইহারাই যে জঙ্গি ও জেহাদিদের আসল মদতদাতা তাহা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে।