দিদির সাম্রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছুটি-ময়
ছুটিদাত্রীযু দিদি,
আপনার যাঁরা বদনাম করেন তাঁরাও কিন্তু এই একটি ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারেন না। ছুটি দেওয়ার বিষয়ে আপনি বামফ্রন্টের মতো কৃপণ নন। সেই সময়ে রাজ্যে সারা বছরে মেরেকেটে ৩০টা ছুটি পাওয়া যেত। এখন সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজে এমনিতেই বেশি ছুটি হয়। কারণ, অন্য কোনো অফিসে তো গরমের ছুটি পড়ে না। কিন্তু স্কুলে পড়ে। আর সেটাও আলাদা করে প্রতি বছরই আপনি বাড়িয়ে দেন। ছেলে-মেয়েদের যে কী আনন্দ দিদি, তা আর বলার নয়। তবে সেটা মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারে। যদিও তারা বেশিরভাগই বেসরকারি স্কুলে পড়ে। গরিব ঘরের ছেলে- মেয়েরা কত কষ্টই পায়। আপনার রাজ্যে বাবাদের রোজগার কম বা নেই। মায়েদের হাতে মাসে হাজার টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ফলে স্কুলে গেলেই তো দুপুরের খাবারটা নিশ্চিত। মিড ডে মিল তাদের কাছে বড়ো ভরসা। কিন্তু ছুটি মানে দুপুরের খাবারেও ছুটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজ্যের সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলিতে গরমের ছুটির অবস্থা এমনই। এই বছর ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ছুটি। যদিও সরকারি স্কুলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ছুটি পড়ার কথা ছিল ১২ মে। স্কুল খোলার কথা ছিল ২৩ মে। সেই সময়সীমা তো শুধুই কাগজে লেখা। ছুটি শেষ হবে যবে আপনি এই সাম্রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করবেন। এটাই তো এ রাজ্যে নিয়ম। বছর বছর সেটাই তো হয়ে আসছে।
গত ৩ এপ্রিল আপনি ঘোষণা
করেছিলেন- তীব্র গরমের জন্য ৩০ এপ্রিল থেকে স্কুলে গরমের ছুটি শুরু হবে। শেষ কবে? শিক্ষা দপ্তর ‘আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি’ দেখে ঠিক করবে। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত সে বিষয়ে তারা নির্দেশিকা জারি করেনি। নিয়মের এগারো-বারো দিনের ছুটি শেষ পর্যন্ত এক মাসের বেশি সময় ধরেই চলবে বলেই মনে হয়।
অনেকে বলেন, এমন ইচ্ছা-ছুটি কোনো সভ্য দেশের শিক্ষা-চিত্র হতে পারে না। এটা কিন্তু অনেকে বলেন। আমি মোটেও বলি না। মনে করলেও বলি না, কারণ এটা আপনার সিদ্ধান্ত যা কখনো ভুল হতে পারে না।
তবে বলা হয় যে, শিক্ষাবর্ষের
উষ্ণায়নের কারণে দিন দিন গ্রীষ্ম প্রখরতর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পুরনো সময়সূচি আঁকড়ে থাকলে চলবে না। গ্রীষ্মের ছুটি যদি একান্তই দীর্ঘায়িত করতে হয়, তবে পুজোর ছুটি-সহ অন্য অনাবশ্যক ছুটি কমিয়ে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।
হিসেবে ছুটির ক্যালেন্ডারটিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই হিসেবে পরীক্ষাসূচি ঠিক হয়। তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ করতে হয়। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই তার পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু পরিবর্তনটাই নিয়ম হয়ে গেলে যে মুশকিল। শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, এগিয়ে-আনা ছুটিতে পাঠ্যক্রম শেষ করা দুরূহ। লক্ষণীয়, এই বছর এখনো গরম অসহনীয় হয়ে ওঠেনি। ফলে, আরও কিছুদিন অনায়াসে স্কুল খোলা রাখা যেত। কিন্তু এপ্রিলের গোড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী ছুটি ঘোষণা করে দেওয়ায় সে কাজ করা যায়নি। গ্রীষ্ম অসহনীয় হয়ে উঠলেও কি বিকল্প উপায় ছিল না? কিছুদিন ছুটি দিয়ে ফের স্কুল খোলা যেত, স্কুলের সময় এগিয়ে আনা যেত। অথচ, কিছুই ভাবা হলো না। আবার উত্তরবঙ্গে গরম কিছুটা দেরিতে বাড়ে। ফলে ছুটিটা জেলা অনুযায়ী ভাবা যেতেই পারে।
উষ্ণায়নের কারণে দিন দিন গ্রীষ্ম প্রখরতর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পুরনো সময়সূচি আঁকড়ে থাকলে চলবে না। গ্রীষ্মের ছুটি যদি একান্তই দীর্ঘায়িত করতে হয়, তবে পুজোর ছুটি-সহ অন্য অনাবশ্যক ছুটি কমিয়ে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।
দিদি, সাহস করে অন্য একটি কথা বলি। স্কুল ছুটি মানে গরিব ঘরের ছেলেরা উপার্জনের কাজে হাত লাগায়, মেয়েরা গৃহস্থালির কাজে। ফলে বাড়িতে লেখাপড়া মোটেও হয় না। সেই সঙ্গে এক বেলা ভরপেট গরম খাবারের আশ্বাসটুকুও নেই। ফলে এতটা ছুটিবিলাসী না হয়ে কিছু কি করা যায় না? ও দিদি, করা কি যায় না?