জেহাদি আক্রমণের কবলে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ
ড. বিনয়ভূষণ দাশ
অবশেষে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ১৭ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত তথ্য অনুসন্ধান সমিতি (সিট) রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে হিন্দুদের ওপর সংঘটিত আক্রমণ নিয়ে তাদের রিপোর্ট হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জমা দিয়েছে। আর তাতেই হিন্দু হত্যাকারী, লুঠতরাজে অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক, পঞ্চায়েত সদস্য ইত্যাদি পদাধিকারীদের নাম।
আজকের পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসুর যথার্থ শিষ্যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বাঁড়ুজ্যের রাজনৈতিক স্বার্থেই এই রাজ্যে হিন্দু হত্যা, নির্যাতন হয়; তাঁরই ইঙ্গিতে এই হিন্দু নির্যাতন প্রলম্বিত হয়। প্রদত্ত রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে সংঘটিত হিন্দুবিরোধী ঘটনাগুলির সময় জেলার পুলিশ সম্পূর্ণ ‘নিষ্ক্রিয় ও অনুপস্থিত ছিল।’ শুধু তাই নয়, ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মেহবুব আলম হিন্দুদের উপর এই আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় কাউন্সিলার মেহবুব আলম হামলাকারী ওই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসেছিল এবং দুষ্কৃতীদের মদত দিয়েছিল।
সিটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল ধুলিয়ানে সংঘটিত হিন্দুবিরোধী হিংস্র ঘটনাগুলির সময়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং তাঁদের অনুপস্থিতির কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই আক্রমণ শুরু হয়েছিল ৮ এপ্রিল। এই বিশেষ বেঞ্চের নির্দেশে ১২ এপ্রিল সিএপিএফ মোতায়েন করা হয়। ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদ ও ঘোষপাড়া, সুতি ইত্যাদি স্থানের হিন্দুবিরোধী ঘটনাগুলির পেছনে সক্রিয় ছিল মূলত স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীরা। এঁদের প্রায় সবারই বাড়ি পার্শ্ববর্তী সামশেরগঞ্জ, হিজলতলা, শিউলিতলা ও দিগরি গ্রামে। এঁরা সকলেই মুখ ঢেকে এসেছিল।
অথচ রাজ্যের শাসকদল মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে
দেবার জন্য কখনো এই আক্রমণের পেছনে বহিরাগত বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাতে খুঁজেছে, কখনো-বা পার্শ্ববর্তী বিহার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য থেকে আগত দুষ্কৃতীদের দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু সিটের সাম্প্রতিক তদন্ত রিপোর্টে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কাল্পনিক দাবি মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। তাঁদের প্রতিবেদনে তাঁরা রাজ্য সরকারের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও উল্লেখ করেছেন। তাঁরা আরও উল্লেখ করেছে, সিএপিএফ আরও আগে মোতায়েন করা হলে অবস্থার এতটা অবনতি হতে পারতো না।
প্রাপ্ত সূত্র অনুযায়ী, ওই রিপোর্টে তৃণমূল
কংগ্রেস নেতা তথা ধূলিয়ান পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেহবুব আলম হিন্দুদের উপর এই আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিল। এই মেহবুব আলম ১১ এপ্রিল ২০২৫ অন্যান্য দুর্বৃত্তদের সঙ্গে এসেছিল। সিটের রিপোর্টে এই মেহবুব আলমকেই মূল চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইদিন স্থানীয় বিধায়কও উপস্থিত ছিল। সে প্রাথমিক ভাঙচুর দেখে চলে যায়। কিন্তু এই তাণ্ডব ও হিংসা পরবর্তী কয়েকদিনও অব্যাহত ছিল। স্থানীয় পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ও ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ছিল। সিটের সদস্যদলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার (আইন) যোগিন্দর সিংহ, পশ্চিমবঙ্গের আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব সত্য অর্ণব ঘোষাল এবং পশ্চিমবঙ্গ বিচারবিভাগীয় পরিষেবার রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তী। এই কমিটিকে জেহাদি হিংসার ফলে বাস্তুচ্যুতদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও মূল্যায়ন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, স্থানীয় এমএলএ আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে যে বাড়িগুলি তখনও ধ্বংস হয়নি সেগুলিও দুষ্কৃতীদের দেখিয়ে দিচ্ছিল এবং সেই অবশিষ্ট বাড়িগুলি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
মুর্শিদাবাদ জেলার হিন্দুদের বাঁচাতে হলে পুলিশকে দল নিরপেক্ষ ক্ষমতা দিতে হবে, জেলার জনবিন্যাস দ্রুত পালটাতে হবে এবং সর্বোপরি জেলার হিন্দুদের আরও সঙ্ঘবদ্ধ ও সাহসী হতে হবে।
এছাড়া ধুলিয়ানের একটি শপিংমলেও লুটপাট করা হয়েছিল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বেতবোনা গ্রামের ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। এছাড়া নগদ, অলংকার, আসবাবপত্র ইত্যাদি লুণ্ঠন করা হয়েছিল যার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বার বার ফোন করা সত্ত্বেও রাজ্য পুলিশ কোনো গুরুত্ব দেয়নি, ফোন ধরেনি। অথচ ঘটনাস্থল থেকে থানা মাত্র ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত। বেতবোনা গ্রামের প্রায় চারশোটি পরিবারকে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পারলালপুর হাইস্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের যথাযথ ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে সকলকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র চন্দন দাসের হত্যার উল্লেখ করে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই জেহাদিরা তাঁদের বাড়ির মূল দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। তাঁরা তাদের প্রতিবেশী ছিল।
সরকার এই জেহাদিদের আড়াল করতে সচেষ্ট ছিল সেকথাও প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় নাগরিকরা এবং বিজেপি স্বাভাবিকভাবেই এই স্পর্শকাতর অঞ্চলে স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। এই রিপোর্ট তৃণমূল কংগ্রেস দলের ‘হিন্দু-বিরোধী নৃশংসতাও’ সামনে নিয়ে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার এমএলএ হুমায়ুন কবিরের মতোই হিন্দু-বিরোধী এই তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, তৃণমূল দল-সহ দেশের যে বিরোধী ইন্ডি-জোট সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রচণ্ড বিরোধী তাঁরাই আবার মুর্শিদাবাদে হিন্দু-বিরোধী সন্ত্রাসে মুখে কলুপ এঁটে বসে আছে। এক অদ্ভুত বৈপরীত্ব এদের কথায় ও কাজে। আর একটি বিষয় পরিষ্কার, পহেলগাঁও ও মুর্শিদাবাদ উভয় ক্ষেত্রেই জেহাদিরা পরিকল্পিতভাবে বেছে বেছে হিন্দুদের ‘টার্গেট’ করেছে যেমন তাঁরা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এ যাবৎ করে এসেছে।
স্বাধীনতার আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে মুর্শিদাবাদ জেলাটিকে মুসলমান প্রধান জেলায় পরিণত করার লক্ষ্যে মুসলমান দুর্বৃত্তরা হিন্দু-বিরোধী ‘প্রোগ্রাম’ করে আসছে। ১৮৯১ সালের সেন্সাসের পরে থেকেই ধারাবাহিকভাবে এটা চলে আসছে। এর পেছনে আছে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কারণ। ভারতে মুসলমান আক্রমণকারীরা ছিল মূলত সৈনিক। তাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন হতো খুবই কম। তাই তারা খাদ্যের প্রয়োজনে এবং জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে ভারতে এসে সৈনিকবৃত্তি অবলম্বন করে। ভারতে এসে তাদের রাজত্ব কায়েম করার পর ভারতের একটি বড়ো অংশের মানুষকে তারা বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করে। কিন্তু ভারতে মুসলমান প্রাধান্য স্তিমিত হয়ে ইংরেজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের সৈনিকবৃত্তি চলে যায়, পড়াশোনার প্রতি তীব্র অনীহার কারণে তারা কৃষির উপর নির্ভর করতে শুরু করে। এছাড়া হিন্দুসমাজের যারা ধর্মান্তরিত হয় তারাও ছিল মূলত কৃষিজীবী। কিন্তু তাদের হাতে জমির মালিকানা ছিল না, তা ছিল হিন্দুদের হাতে। ফলে শুরু হয় জমি দখলের লড়াই। কিন্তু স্বাধীনতার পরে তাদের সেই লড়াই কঠিন হয়ে পড়ে। মুর্শিদাবাদ জেলার জমির কর্তৃত্ব মূলত হিন্দুদের হাতেই ছিল পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতোই।
কিন্তু বামফ্রন্টের রাজত্বে শুরু হয় ‘অপারেশন বর্গা’। জ্যোতি বসু, হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় চৌধুরী, সূর্যকান্ত মিশ্র ইত্যাদি সিপিএম নেতাদের কল্যাণে ‘অপারেশন বর্গা’র ফলে অন্যান্য জেলার মতোই মুর্শিদাবাদ জেলায়ও হিন্দুদের জমি হস্তান্তরিত হয়ে যায় মুসলমানদের হাতে। কিন্তু মুসলমানদের জমির ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না। বরং জমির জন্য ক্ষুধা তাদের আরও বেড়ে যায়। তারা স্থির করে, জেলার অবশিষ্ট হিন্দুদের জমি কেড়ে নিতে হবে যে কোনো উপায়েই। ফলে জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় তাঁদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ। অত্যাচার শুরু হয় হিন্দুদের উপর। জমির ফসল চুরি করে কেটে নেওয়া, জমিতে ফসল নষ্ট করে দেওয়া, পুকুরে বিষ দেওয়া ইত্যাদি শুরু হয় পরিকল্পিতভাবে। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে শুরু হয় হিন্দু ঘরের যুবতী মেয়েদের উপর অত্যাচার ও লাভ জেহাদ যাতে গ্রামের হিন্দুরা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। আর এই প্রক্রিয়া কয়েকগুণ বেড়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে। ফলশ্রুতিতে মুর্শিদাবাদ জেলার বহু হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম আজ হিন্দুশূন্য। জেলার বাগড়ি অঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রাম এইভাবে হিন্দুশূন্য হয়েছে। এমন উদাহরণও আছে যেখানে মুসলমানদের হাত থেকে জমি রক্ষা করতে বাগড়ি অঞ্চলের কিছু জমিদার পরিবার একসময় সিপিএমের নেতা হয়ে
যান। তাঁরা একটা সময় অবধি জমিজিরেত রক্ষা করতে পারলেও শেষ অবধি জেহাদি অত্যাচারে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে বাধ্য হন; যদিও বামপন্থী মানসিকতার কারণে তাঁরা আসল সত্যকে প্রকাশ করতে ভয় পান। গ্রামের মুখোপাধ্যায়, সরকার ইত্যাদি পরিবারগুলি এখন বহরমপুরে এসে নিজেদের কোনোক্রমে রক্ষা করছেন।
সাম্প্রতিক গণ্ডগোলের কেন্দ্র উঠে এসেছে জেলার রাঢ় অঞ্চলে। সাম্প্রতিক এই জেহাদি আক্রমণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সামশেরগঞ্জ ব্লক। এই ব্লকের জনবিন্যাস তুলে ধরা বিশেষ প্রয়োজন। এই ব্লকে ২০১১-র
জনগণনা অনুযায়ী মুসলমান জনসংখ্যা শতকরা ৮৩.৪৮ শতাংশ এবং হিন্দু জনসংখ্যা মাত্র ১৬.৩৮ শতাংশ। অবশ্য মুর্শিদাবাদ জেলায় মাত্র একটি ব্লক, বড়ঞা এখনো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ; ওই ব্লকে হিন্দু জনসংখ্যা শতকরা ৫৬.৭৬ শতাংশ এবং মুসলমান জনসংখ্যা ৪৩.০৬ শতাংশ। বহরমপুর-সহ বাকি সব ব্লকই মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ জেলায় মুসলমান জনসংখ্যা ৬৬.২৭ শতাংশ এবং হিন্দু জনসংখ্যা ৩৩.২১ শতাংশ; যদিও বিগত এক দশকের বেশি সময়ে জেলার মুসলমান জনসংখ্যা ৭০ শতাংশ পার করে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় উঠে এসেছে এই সামশেরগঞ্জ ও ধূলিয়ানে। এর বিশেষ কারণ হলো, মুসলমান সমাজের অত্যধিক জমিতৃষ্ণার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিন্দুদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির দখল নেওয়া। বাগড়ি অঞ্চলে তেমন ব্যবসা না থাকলেও রাঢ়ের এই অঞ্চলে হিন্দুদের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা আছে। ধুলিয়ান-ঔরঙ্গাবাদে বিড়ি ব্যবসায় খুব রমরমা। এগুলি বেশিরভাগই হিন্দুদের দখলে ছিল। এছাড়া সাগরদিঘিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় সেখানেও অনেক ব্যবসা গড়ে উঠেছে। ফলে এই অঞ্চলের ব্যবসাপত্তরের দখল নেওয়ার উদগ্র বাসনায় মুসলমান ব্যবসায় গোষ্ঠী তাদের স্বাভাবিক হিন্দু-বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু উচ্ছেদ করাতে সচেষ্ট হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যেই ধূলিয়ান- ঔরঙ্গাবাদের বিড়ি ব্যবসায়ের বেশিরভাগটাই দখল নিয়ে নিয়েছে।
অথচ এই বিড়ি ব্যবসায়ের প্রায় সবটাই হিন্দুদের দখলে ছিল একসময়। মৃণালিনী বিড়ি ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি ছিল মূল বিড়ি ব্যবসায়ী। কিন্তু গত বেশ কিছু বছর হলো পতাকা বিড়ি এদের স্থান দখল করে নিয়েছে। আর হ্যাঁ, এই পতাকা বিড়ি ব্যবসায়ের রমরমার অন্যতম কারণ হলো প্রাক্তন সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অকৃপণ বদান্যতা। উমরপুরে এই পতাকা গোষ্ঠীকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অল্প দামে জমি পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন শিল্পোন্নয়নের অছিলায়। পতাকা গ্রুপ অন্যান্য ব্যবসাতেও নেমে পড়েছে। তিনি এদের শিল্পপতির স্তরে উন্নীত করে দিয়েছেন বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। এঁদের অনেকেই সীমান্তে পাচারকারী থেকে একেবারে শিল্পপতির স্তরে উন্নীত হয়েছে। উত্তর মুর্শিদাবাদের বেশিরভাগ তৃণমূল এমএলএ বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
সাম্প্রতিক ঘটনায় এই গোষ্ঠীরও পরোক্ষ হাত রয়েছে। বাগড়ি অঞ্চলের মতোই একই লক্ষ্যে, একই পদ্ধতিতে তারা জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলে। আর এই ব্যাপারে তারা ‘দোসর’ হিসেবে পেয়েছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাদের জেলার নেতাদের। ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির আগেই হুমকি দিয়েছে, মুর্শিদাবাদের ৩০ শতাংশ হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেবে। আর এখন ওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমিরুল ইসলাম, মেহবুব আলমরা! হ্যাঁ, আর একটা কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এই হুমায়ুন কবির কিন্তু মুর্শিদাবাদের তথাকথিত ‘ডন’ অধীর চৌধুরীর হাতে গড়া, তাঁর একসময়ের অনুগত শিষ্য।
সুতরাং এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদ জেলার হিন্দুদের বাঁচাতে হলে পুলিশকে দল নিরপেক্ষ ক্ষমতা দিতে হবে, জেলার জনবিন্যাস দ্রুত পালটাতে হবে এবং সর্বোপরি জেলার হিন্দুদের আরও সঙ্ঘবদ্ধ ও সাহসী হতে হবে। আর এজন্য চাই রাজ্যে দ্রুত রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন |