• About
  • Contact Us
Sunday, October 19, 2025
Swastika
No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • সঙ্ঘবার্তা
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • ই -পত্রিকা
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home প্রচ্ছদ নিবন্ধ

16th June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
16th June প্রচ্ছদ নিবন্ধ

Issue 77-41-16-06-2025

শুধু বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি নয়, আজ বিশ্ববন্ধু ভারত
অরিন্দম ভট্টাচার্য্য
ভারতবর্ষের চাণক্য বিশ্ববাসীকে শিখিয়েছিলেন অর্থনীতি, কূটনীতি ও প্রশাসনিক নীতি। শোনা যায় ৭০০-৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষ দিত বিশ্বের ৪৮ শতাংশ জিডিপি। তখন ছিল জ্ঞান, মেধা, শিল্প-বাণিজ্য ভরা এক সুজলা সুফলা দেবভূমি ভারত। লুঠেরা মরুদৈত্য থেকে পর্তুগিজ, চীন, ব্রিটিশ, কেজিবি, কমিউনিস্টদের অত্যাচার, ধর্মান্তরের বীভৎস ইতিহাসে ধ্বংস হয় সেই ভারত। হাজার বছর পরাধীন থাকে ভারত। তারপর শুরু হয় আবার উত্তরণ। ভারত আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হচ্ছে এটা বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো:
(১) ভারতে ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে গত ১০ বছরে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘও এই বিষয়টি স্বীকার করেছে। (২) এক দশক আগেও ১৯৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা আমদানি করত ভারত। তা আজ ২৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারত আজ ইজরায়েল, আর্মেনিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন্স, গ্রিসকে অস্ত্র বিক্রি করছে। ভারতের প্রায় ২০০টি সংস্থা ও ৩৫০ টি প্রতিরক্ষা স্টার্ট আপ কোম্পানি ড্রোন, এআই, হাইপারসনিক ফুয়েল ইত্যাদি বিক্রি করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিদেশি মুদ্রা বাণিজ্যে চীন-রাশিয়া-আমেরিকা-ইউরোপ-ইজরায়েলের সঙ্গে পাল্লা দেবে ভারত। (৩) শ্রীরামজন্মভূমি মন্দির, চন্দ্রযান, কোভ্যাকসিন-সহ ব্রহ্মোস, অগ্নি, কালী, দুর্গা-২ ইত্যাদি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বানাচ্ছে আজকের ভারত। (৪) ভারতের যুদ্ধবিমানগুলি ১০ মিনিটে করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডি, নূর খান, কিরানা ঘুরে আসছে। (৫) আমেরিকা, চীনের তোয়াক্কা না করে এস-৪০০ কিনছে। ভারতে অ্যাপেল-এর ফ্যাক্টরি হচ্ছে। (৬) ডলারকে গুরুত্বহীন করে ভারতীয় ‘রুপে’ ব্যবসা করছে। মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়নি। (৭) বিদেশি মুদ্রা ও সোনার রিজার্ভ রেকর্ড গড়েছে। (৮) বিলগ্নীকরণের ফলে সরকারি ব্যাংক, এলআইসি, বিএসএনএল পেয়েছে নতুন অভিমুখ। এগুলি বর্তমানে ‘লাভজনক সংস্থা’য় পরিণত হয়েছে। এই আর্থিক সংস্থাগুলি এখন আর সরকারি ভরতুকির মুখাপেক্ষী নয়। (৯) ভারতে জি-২০ সামিট আয়োজন, জি-৭ গোষ্ঠীর সম্মেলনে ভারতের আমন্ত্রণ- বিশ্বে যেন সৃষ্টি করেছে এক ‘ডাবল ইঞ্জিন’। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের অসংখ্য কূটনৈতিক সাফল্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিদেশে ভারতীয় বসবাসকারীদের অবদানও প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে। (১০) ‘রুটি-কাপড়া-মকান’, ‘বেচে দিল সব’, ‘মালিয়া- নীরব-চোকসি’ ইত্যাদি আওয়াজ যারা তোলেন বা গাল পাড়েন, দারিদ্র্যসীমা থেকে গরিব মানুষের উত্তরণ, জিডিপি বৃদ্ধি, ঋণখেলাপি পলাতকদের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ইত্যাদি বিষয়ে তারা নীরব থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৭টি ইসলামি দেশের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ওআইসি সম্মেলনে তুরস্ক, আজারবাইজান ছাড়া কোনো ইসলামি দেশ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নিন্দা প্রস্তাবে সায় দেয়নি।
দেশকে পরিচ্ছন্ন, নির্মল করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’। নোটবাতিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে জালনোট। জিএসটি-র মাধ্যমে অনেকটাই বন্ধ হয়েছে কর ফাঁকি। বন্ধ হয়েছে কাঁচা বিল ও পাকা বিল। সরকারি কোষাগার হয়েছে পূর্ণ। বন্দেভারত থেকে ২১৩টি অসামরিক বিমানবন্দর, হাইওয়ে, চেনাব ব্রিজ, অটল টানেল থেকে মুম্বই ট্রান্স-হারবার লিংক- দেশজুড়ে চলছে পরিকাঠামো ও পরিবহণ উন্নয়ন।
ইউপিআই-এর মাধ্যমে বৃদ্ধি পেয়েছে ডিজিটাল লেন-দেন। কালোটাকা, ঘুষ ইত্যাদি অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। অর্থনীতি স্বচ্ছ, শক্ত হয়েছে। সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্প। প্রান্তিক চাষিরা কৃষক সম্মান নিধি পাচ্ছেন, গরিব-গৃহহীন মানুষ পাচ্ছেন আবাস, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ বিমা যোজনার সুবিধা পাচ্ছেন অগণিত ভারতবাসী। কোভিডের সময় ভয়ংকর আর্থিক মন্দা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেও গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের কোণে কোণে পাঠানো হয়েছে খাদ্য। গরিব মানুষদের জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য পাঠানো হয়। বামপন্থী অর্থনীতিবিদরা সব নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার পরিণাম হতো ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি।
ভারতে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ বানিয়ে চমকে দিয়েছে ‘আত্মনির্ভ ভারত’। দেশকে রক্ষা শুধু অস্ত্র নয় বিজ্ঞানও করে। বিশ্বে ৭১টি দেশকে, বিশেষ করে আফ্রিকার গরিব দেশগুলোকে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে বাঁচিয়েছে ভারত। অগ্রগতির সোপানে আসীন এই ভারত শুধু বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি নয়, এ হলো ‘বিশ্ববন্ধু ভারত’। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ অনুসরণে অগ্রসর শ্রেষ্ঠ ভারত, নতুন ভারত, বিকশিত ভারত।


জাপানকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় চারে ঠাঁই করে নিল ভারত
আইএমএফের অনুমান, ভারত ২০২৮ সালের শেষে জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ওই বছর ভারতের জিডিপি ছুঁতে পারে ৫৫৮৪.৪৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জার্মানির ৫২৫১.৯২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি হবে।
প্রণবজ্যোতি ভট্টাচার্য
পরিচালকের আসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর নেতৃত্বেই দেশের উন্নয়নের পারদ চড়ছে তরতরিয়ে। মাত্র ১১ বছরের শাসনকালে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় এবং কীভাবে তাঁর পূর্বসূরীদের অনেকের দূরদর্শিতার অভাবে দেশ ছিল পিছিয়ে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে নিয়েছে দেশ। এর আগে ভারত ব্রিটেনকে টপকে যায়। এবার জাপানকে। ওই তালিকায় প্রথম স্থান দখল করতে ভারতকে আরও তিনটি দেশকে টপকে যেতে হবে। এই দেশগুলি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানি। বিশেষজ্ঞদের মতে দু’এক বছরের মধ্যেই জার্মানিকেও ছাড়িয়ে যাবে ভারত।
নরেন্দ্র মোদীর সময়কালে যে দেশের উত্থান হচ্ছে দ্রুতগতিতে তা বোঝা যায় পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলেই। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন মোদী। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রধান তিনি। দেশের রাশ যখন তাঁর হাতে যায়, তখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় ভারত ছিল দশম স্থানে। মোদীর শাসনের অল্পকাল পরেই ভারতের ঠাঁই হয় তালিকার পঞ্চম স্থানে। দীর্ঘদিন যে জায়গাটা ধরে রেখেছিল ব্রিটেন। ব্রিটেনকে পিছনে ঠেলে পঞ্চম স্থানে চলে আসে ভারত। সম্প্রতি টপকাল জাপানকেও। অর্থাৎ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় জাপানের স্থান হলো পাঁচে এবং ভারত অধিকার করল চতুর্থ স্থানটি।
জানা গিয়েছে, ভারতের মোট জিডিপি ছুঁয়ে ফেলেছে চার লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতের এহেন সাফল্যের কথা ঘোষণা করেছেন নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম। নীতি আয়োগের দশম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকের পরেই সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রহ্মণ্যম আইএমএফের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারত এখন চার লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির দেশ। আজ ভারত জাপানের চেয়েও এগিয়ে।’
২০২৪ সালে ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি জাপানের চেয়ে ১১.৮ বিলিয়ন ডলারে পিছিয়ে ছিল। চলতি অর্থবর্ষে জাপানকে টপকে গেল ভারত।
ভারতের এই উন্নতির খবর ঘোষণার দিন সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘শুধুমাত্র আমেরিকা, চীন ও জার্মানিই আমাদের আগে রয়েছে। যা পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা যদি তা মেনে চলি, তবে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমরা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হব।’ আইএমএফের অনুমান, এপ্রিলের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট অনুসারে ভারতের জিডিপি ২০২৬ সালে ৬.২ শতাংশ এবং ২০২৭সালে ৬.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকেরও আশা, ২০২৬ সালে ভারতের অর্থনীতি ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ভারতীয় অর্থনীতির প্রতি আশা রেখে সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘আপনারা অন্য দেশগুলির মতো এতটা ক্ষতিগ্রস্ত নন। ভারতের দক্ষ ও সস্তা শ্রমের সহজলভ্যতা দেশের পক্ষে সুবিধাজনক। দেশ এখন পরিচালিত হচ্ছে তরুণ কর্মীদের দ্বারা। যদি কেউ উল্লেখযোগ্যভাবে আগ্রহী হন, তাহলে ভারতই একমাত্র জায়গা যেখানে আপনি বৃহৎ পরিসরে সস্তায় শ্রমশক্তি পেতে পারেন। এটাই অনিবার্য ঘটনা।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডারের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকার- ৩০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। এর পরে রয়েছে চীন। তাদের অর্থনীতি ১৯.২৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলো জার্মানি। তাদের অর্থনীতি ৪.৭৮ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারতের অর্থনীতি-৪.১৯ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ব্রিটেন। তাদের অর্থনীতি ৩.৮৪ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার। তার পরেই রয়েছে ফ্রান্স। তাদের অর্থনীতি ৩.২১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে আইএমএফ এবং বেশ কয়েকটি বিশ্বস্তরীয় সংস্থা ভারতীয় অর্থনীতির শক্তি স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতেও ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার অগ্রগণ্য থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে কেয়ারএজ রেটিং সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছে, চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হবে। যার কারণে চলতি অর্থবর্ষের মোট বৃদ্ধির হার হবে ৬.৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কৃষি, হোটেল ও পরিবহণের পাশাপাশি উৎপাদন খাতে শক্তিশালী ভূমিকা ত্বরান্বিত করেছে ভারতের বৃদ্ধিকে।
ভারত যে জাপানকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থানে চলে আসবে, তা আগেই জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডার। তারা জানিয়েছিল, ২০২৫ সালেই ভারত জাপানকে ছাড়িয়ে পরিণত হবে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে। তাদের পূর্বাভাস, ২০২৭ বা ২০২৮ সালের মধ্যে জার্মানিকেও ছাপিয়ে গিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে ভারত।
আইএমএফ ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে স্থিতিশীল আর্ধিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পূর্বাভাস দিয়েছে। ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যক্তিগত খরচ বৃদ্ধির দ্বারা আইএমএফ প্রকাশিত তথ্যটি সমর্থিত হয়। আইএমএফের মতে, ২০২৫ সালে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ এবং তার পরের বছর হবে ৬.৩ শতাংশ। আইএমএফ ভারতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে এবং পূর্বাভাস দেয়। এই পূর্বাভাসগুলি সাধারণত ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। আইএমএফের পূর্বাভাস, ভারতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং দেশটি বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির তালিকায় নিজেদের স্থান আরও উন্নত করবে। ভারতে ব্যক্তিগত খরচ, সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ ও রপ্তানির মতো বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকগুলি অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য যে, আইএমএফের পূর্বাভাসগুলি ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথ ও উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
কেবল আইএমএফ-ই নয়, বিশ্বব্যাংকও ভারতের অর্থনীতিকে দ্রুত বর্ধনশীল বলে মনে করে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ৬.৬ শতাংশ। ২০২৬-২৭অর্থবর্ষে এটা হবে যথাক্রমে ৬.৭ ও ৬.৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খুবই আশাবাদী। তারা বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদৃষ্টি এবং ক্ষুরধার বুদ্ধির জেরেই তরতরিয়ে উঠছে ভারতের উন্নয়নের পারদ। তাই ভারত যে অচিরেই আমেরিকা ও চীনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। বিনিয়োগকারীদের ভারতে লগ্নি করতে উৎসাহিত করে।
ভারত বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল দেশ। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অর্থনীতির তুলনায় বেশি। বিশ্বব্যাংকের মতে, ভারতের অর্থনীতিতে শক্তিশালী পরিষেবা ক্ষেত্র, ব্যক্তিগত খরচ এবং বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা রয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেয বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মানবসম্পদে বিনিয়োগ-শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, বিশেষত প্রান্তিক মানুষের। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা-পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নীতি গ্রহণ করা। সৃষ্টিকর্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করা। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক ভারতের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। তারা মনে করে, ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ সালে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির হারও হবে যথেষ্ট শ্লথ। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার অনুমান, এই দু’বছর সারা বিশ্বের সূচক থাকবে ৩.৩ শতাংশ। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ের গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘এ বছর বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাস পেয়ে নেমে আসবে ৪.২ শতাংশে। ২০২৬ সালে এটি আরও কমে দাঁড়াবে ৩.৫ শতাংশে।’
আইএমএফের অনুমান, ভারত ২০২৮ সালের শেষে জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ওই বছর ভারতের জিডিপি ছুঁতে পারে ৫৫৮৪.৪৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জার্মানির ৫২৫১.৯২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি হবে। আইএমএফের পূর্বাভাস, তার আগেই অর্থাৎ ২০২৭ সালেই ভারত হবে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির দেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দূরদৃষ্টি এবং ক্ষুরধার বুদ্ধির জেরেই তরতরিয়ে উঠছে ভারতের উন্নয়নের পারদ। তাই ভারত যে অচিরেই আমেরিকা ও চীনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য।


বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হলো ভারত
ড. রামানুজ গোস্বামী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুযোগ্য নেতৃত্বে ভারত আজ জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী সমস্ত ভারতবাসীর কাছেই আজ বাস্তবিকই এক অত্যন্ত গর্বের দিন। সম্প্রতি নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম এই সংবাদ জনসমক্ষে ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য যে, ভারত আজ চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক সুবিশাল অর্থনীতি, যা দ্রুত গতিতে ছুটছে সামনের দিকে। ভারতের সামনে রয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকা, চীন ও জার্মানি। এখানেই শেষ নয়; আইএমএফের নানা তথ্য উদ্ধৃত করে, সুব্রহ্মণ্যম আরও জানিয়েছেন যে, ভারত যেভাবে উন্নতি করছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে ভারত এতটাই উন্নত ও সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে যে, আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ভারত জার্মানিকেও অতিক্রম করবে এবং হয়ে উঠবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতির মোট পরিমাণ হলো ৪.১৮৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানে একটা কথা অতি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। তা হলো, ভারতীয় অর্থনীতি এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে আগামী ২/৩ বছরেও ভারত বিশ্বে এই স্থান দখলে রাখতে সমর্থ হবে। বিশেষজ্ঞমহল আশা করছে যে, সেখানে সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে মাত্র ২.৭ শতাংশ, সেখানে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার হতে চলেছে ৬.৭শতাংশ। তাই একথা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং তার সঠিক রূপায়ণের কারণে ভারত আজ বিশ্ব অর্থনীতির এক অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক দেশ। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতের লক্ষ্য আজ শুধুমাত্র জার্মানি নয়, তার লক্ষ্য ভারতীয় উপমহাদেশের আরেকটি দেশ অর্থাৎ চীন। একথা সত্য যে, চীনের অর্থনীতি মোট পরিমাণের দিক থেকে বিচার করলে, ভারতের বর্তমান অর্থনীতির তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বড়ো। কিন্তু লক্ষণীয় যে, চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ভারতের তুলনায় অনেক কম।
আগামী অর্থবর্ষে চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার হতে চলেছে মাত্র ৪ শতাংশ যা ভারতের থেকে অনেকটাই কম। আমেরিকার অবস্থা তো আগামীদিনে যথেষ্টই খারাপ হতে চলেছে। আমেরিকার ক্ষেত্রে এটা বলাই যেতে পারে যে, এই দেশটি এতদিন উচ্চতম শিখরে আরোহণ ও অবস্থান করলেও, ধীরে ধীরে তার অবনমনের পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। নানা আভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত আমেরিকা আজ অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, ঋণের ভার, দেশের মধ্যে চাহিদার ঘাটতিজনিত মন্দার আভাস, বৈদেশিক বাণিজ্য শুল্কের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে যথেষ্টই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে আমেরিকা সবরকম প্রচেষ্টাই করে চলেছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারত-পাকিস্তান সমস্যার দ্রুত ও চিরস্থায়ী সমাধানে আমেরিকা মোটেই আগ্রহী নয়। কারণ এই সমস্যাকে জিইয়ে রাখলে ভারতকে মাঝে মাঝেই বিব্রত হতে হবে, যার প্রভাব পড়বার সম্ভাবনা থাকে ভারতীয় অর্থনীতিতে। পাশাপাশি, শত্রুর শত্রু হলো মিত্র, এই ধারণাকে বজায় রেখে চলেছে চীন আর তাই চীন সব রকম ভাবেই পাকিস্তানকে সহায়তা করে চলেছে। বাংলাদেশও ঠিক এই কারণেই চীনের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছে। কিন্তু এতসব শত্রু দ্বারা নানাভাবে আক্রান্ত হয়েও ভারত তার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, কারণ এটাই নতুন ভারত, সশক্ত ভারত। ভারতীয় অর্থনীতি এত সুদৃঢ় ও শক্তিশালী কেন বা কীভাবে হলো, এবারে তা উল্লেখ করা যেতে পারে। কয়েক বছর আগে ভয়াবহ অতিমারী যা সারা পৃথিবীকে বিধ্বস্ত করেছিল, তা ভারতেও থাবা বসিয়েছিল। কিন্তু এক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত যেভাবে তার মোকাবিলা করেছিল, তা উন্নত বিশ্বকেও যারপরনাই বিস্মিত করেছিল। ভারত তৈরি করেছিল ‘কোভ্যাক্সিন’ যা একেবারেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এই ভ্যাক্সিন শুধুমাত্র যে দেশবাসীকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল, তা নয়, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিতরণ করা হয়। বর্তমানকালে ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্রের কথা তো আমরা সবাই জানি, একেবারেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক ভয়ংকর সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর শতাধিক দেশ ভারতের কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করতে চেয়েছে এবং চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। এগুলো বলবার কারণ এটাই যে,ভারত আজ সর্ববিষয়েই স্বনির্ভর এবং আমদানির পরিবর্তে দেশ আজ রপ্তানির দিকে বেশি করে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১৪ সালে ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে ১১তম স্থানে ছিল আর আজ ২০২৫ সালে ভারতের স্থান চতুর্থ।
পাশাপাশি বলা দরকার যে, এই সময়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি হয়েছে এবং মাথা পিছু আয়ও বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে ভারতবাসীর মাথাপিছু আয় প্রায় ২৯০০ মার্কিন ডলার। এটা বোঝা দরকার যে, ভারতের জনসংখ্যা ১৫০ কোটিরও বেশি। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ যাদের জনসংখ্যা হয়তো-বা ভারতের একটা রাজ্যের সমান বা তার থেকেও কম, তাদের সঙ্গে ভারতের তুলনা করা একেবারেই অবান্তর। ভারত যে অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই ১০৫ শতাংশ উন্নতি করতে সমর্থ হয়েছে, তার জন্য প্রধান কারণগুলি হলো-
১। জিএসটি সংস্কার ও সরলীকৃত কর ব্যবস্থা।
২। আত্মনির্ভর ভারত ও মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্প।
৩। দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া।
৪। মোদীজীর নেতৃত্বে দেশীয় পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে দেশের জনসাধারণকে উৎসাহিত করা অর্থাৎ ভোকাল ফর লোকাল প্রকল্প।
৫। উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানাভাবে উৎপাদকদের উৎসাহভাতা তথা ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করা।
৬। ক্রমাগত উন্নয়নশীল পরিষেবা ক্ষেত্র ভারতকে দ্রুত অগ্রগতিতে সাহায্য করেছে।
৭। অসাধারণ সুদৃঢ় শিল্পক্ষেত্র গড়ে উঠেছে এবং সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সবরকম পরিকাঠামোর উন্নয়নে ভারত সরকারের বিপুল বিনিয়োগের কারণে আজ দেশ-বিদেশের অগণিত শিল্পপতি ভারতে বিনিয়োগ করতে ও ব্যবসা করতে আগ্রহী। ফলে কর্মসংস্থানে জোয়ার এসেছে। দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৮। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের সময়কালে দেশে সৃষ্টি হয়েছে এক উন্নত ও সুনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশ, যা অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রের মানোন্নয়নে খুবই সহায়ক হয়েছে।
বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য দেশের এই অগ্রগতিতে মোটেও খুশি নয়। এটাই স্বাভাবিক, কারণ এদের কাছে দেশ নয়, প্রাধান্য পায় দল, পরিবার ও ব্যক্তিস্বার্থ। কিন্তু এরা ভুলে গিয়েছে যে, এই কেন্দ্রীয় সরকার সকলের সঙ্গে থেকে, সকলের বিশ্বাস অর্জন করতে জানে আর তাই গড়ে উঠছে বিকশিত ভারত। ভারত আজ বিশ্বগুরু এবং মাত্র কয়েক দশক পরেই এই বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির নাম হতে চলেছে ভারত।


বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি আজ ভারত
কর্নেল (ড.) কুণাল ভট্টাচার্য (অব.)
‘২০২৫ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্টে’ আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডার) ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২৫ সালে ভারতের নমিনাল জিডিপি (অর্থাৎ বাজারমূল্যে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবার মোট মূল্যমান) দাঁড়াবে ৪.১৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার (ট্রিলিয়ন অর্থ- লক্ষ কোটি)। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৫ সালের শেষে জাপানের ৪.১৮৬ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে ভারত। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’ বা নীতি আয়োগের বর্তমান সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন
‘সামগ্রিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ভারতের পক্ষে অনুকূল রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত। ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বৃহৎ অর্থনীতি আজকের ভারত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যা পরিকল্পনা করেছি এবং যা ভাবনাচিন্তা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী সব ঠিক ঠাক চললে আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হব।’
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি কিছু মুষ্টিমেয় শক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। এই শক্তিগুলির প্রভাব আজ বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই শক্তিগুলির দ্বারা বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলেছে। এই শক্তিগুলি হলো মূলত কিছু হাতে গোনা বৃহৎ অর্থনীতি তথা দেশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থব্যবস্থা পরিচালনা এবং আর্থিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই শীর্ষ অর্থনীতিগুলির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বজুড়ে উন্নয়নের দিকনির্দেশনার ফঃ৫ বিষয়টিও নির্ধারণ করে থাকে এই বৃহৎ আর্থিক শক্তিগুলি। আইএমএফ প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন বা ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে যে, ২০২৫ সালে বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতিতে বিবর্তন ও বৃদ্ধির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, এই বৃহৎ অর্থনীতিগুলি তাদের জিডিপি ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উৎপাদন বা গ্লোবাল ইকোনমিক আউটপুট-এর বেশির ভাগটাই তাদের অবদান।
বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে প্রথম স্থান হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তারপরেই রয়েছে চীন। যদিও বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ কমছে। এই পরিস্থিতিতে জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছে ভারত। ভারতের এই আর্থিক বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। সময়ের সঙ্গে, দ্বিগুণ বা তিনগুণ- কোনো একটি নির্দিষ্ট হারে কোনো কিছু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে তাকে বলা হয়-‘এক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ’। বিগত এক দশক ধরে ভারতীয় অর্থনীতি অর্জন করে চলেছে এই এক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ। নির্দিষ্ট হারে, একনাগাড়ে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব হয়েছে ক্রমবর্ধমান। বৃহৎ অর্থনীতির ক্ষেত্রে র‍্যাঙ্কিং (অর্থাৎ পদ বা স্থানাধিকার)-এর বিষয়টি বিভিন্ন দেশের নমিনাল জিডিপি-র দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে বাজার বিনিময় হার বা বাজারমূল্য (মার্কেট এক্সচেঞ্জ রেটস্)-এর ভিত্তিতে বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। সেই মোট মূল্যমান পরিমাপ করা হয় মার্কিন ডলারে। আইএমএফ প্রকাশিত, বিভিন্ন দেশের নমিনাল জিডিপি-র তথ্য আধারিত এই রিপোর্টগুলি আন্তর্জাতিক স্তরের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির একটি বাস্তবসম্মত বিবরণ তুলে ধরে। এই রিপোর্টগুলির মাধ্যমে এই দেশগুলির অর্থনৈতিক শক্তির একটি তুলনামূলক বর্ণনাও পাওয়া যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি-র পরিমাণ হলো ৩০.৫০৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ জিডিপি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মার্কিনি আধিপত্যের তিনটি মূল ভিত্তি বিদ্যমান। কনজিউমার বা উপভোক্তাদের বিপুল ব্যয়, উদ্ভাবনী শক্তি এবং নানাপ্রকারের শিল্পক্ষেত্র সমন্বিত মার্কিন অর্থনীতি হলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি। আমেরিকার মাথাপিছু জিডিপি হলো ৮৯,১০৫ ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিমাণ মাথাপিছু জিডিপি উন্নত জীবনযাত্রার সূচক। উন্নত দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিংশ শতাব্দী থেকে এখনও পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মার্কিন অর্থনীতি। চীন ধীরে ধীরে উঠে এলেও প্রযুক্তি, অর্থ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু যোজন এগিয়ে রয়েছে।
চীন:
২০২৫ সালে চীন হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। চীনের জিডিপি হলো ১৯.২৩১ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনীতির নানা মাপদণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পিছিয়ে থাকলেও বিশাল শিল্পক্ষেত্র এবং বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার কারণে দেশটির আর্থিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে চীন। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি হলো ১৩, ৬৫৭ ডলার। পরিকাঠামো, উৎপাদন ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অনবরত বিনিয়োগ চীনকে একটি বড়ো মাপের অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে। আর্থিক ক্ষেত্রে এই উন্নতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হয়তো ছাড়িয়ে যেতে পারে চীন।
জার্মানি:
বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হলো জার্মানি। এই দেশটির জিডিপি হলো ৪.৭৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির অর্থনৈতিক ভিত্তি হলো ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। দেশটির অর্থনীতি রপ্তানি-নির্ভর। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য দেশ হিসেবে এই গোষ্ঠীতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে জার্মানি। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৫৫,৯১১ ডলার। এই পরিমাণ মাথাপিছু জিডিপি দেশটির বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা এবং নাগরিকদের উচ্চমানের জীবনযাত্রার নির্দেশক। উদ্ভাবনী শক্তি ও সুষম উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বদানই হলো জার্মানির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অবস্থানের মূল সোপান।
ভারত:
এই বছর জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত। বর্তমানে ৪.১৮৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে ভারতের জিডিপি। মাথাপিছু জিডিপি-র পরিমাণ ২,৯৩৪ ডলার। বিরাট জনসংখ্যার দেশ হওয়ার পাশাপাশি ভারতে দ্রুতগতিতে সংঘটিত হচ্ছে আর্থিক বৃদ্ধি। ‘সার্ভিস সেক্টর’ বা পরিষেবা ক্ষেত্রটি বর্তমানে ভারতে ক্রমবর্ধমান। পরিষেবা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণের সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প এবং বিপুল আভ্যন্তরীণ চাহিদা হলো ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। ভারতে মাথাপিছু জিডিপি তুলনামূলকভাবে কম হলেও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত হলো একটি প্রবল সম্ভাবনাময় অর্থনীতি। আগামীদিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা হতে চলেছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
জাপান:
৪.১৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি-সহ ভারতের ঠিক পরেই পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে জাপান। দেশটিতে মাথাপিছু জিডিপি-র পরিমাণ ৩৩,৯৫৫ ডলার। মাথাপিছু জিডিপি-র এই উদাহরণটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজের সূচক। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জাপানের আর্থিক বৃদ্ধি ধীরগতিতে হলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, উৎপাদন শিল্প ও অর্থায়নে (ফিনান্স) অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে চলেছে জাপান। জাপানের জনসংখ্যার গড় বয়স হলো ৪৯.১ বছর। এই বয়স্ক জনসংখ্যার মতো চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হলেও উদ্ভাবনী শক্তি এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ ও উপস্থিতির কারণে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক স্তরে পঞ্চম স্থান ধরে রেখেছে জাপান।
আইএমএফ প্রকাশিত প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধি হতে চলেছে ২.৮ শতাংশ, যা আগের অনুমানের থেকে ০.৫ শতাংশ কম। ২০২৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধি ৩ শতাংশ হতে পারে বলে আইএমএফ-এর অনুমান।
নীতি আয়োগ:
২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় নীতি আয়োগ। ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের স্থানটি নেয় এই সরকারি সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় স্তরে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হয়ে ওঠে নীতি আয়োগ। দেশজুড়ে ‘কো-অপারেটিভফেডারেলিজম’ বা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রণয়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে নীতি আয়োগ। নিম্নস্তরে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ের উপর কাজ শুরু করে উপরের স্তরে, বৃহদাকারে তা নিয়ে যাওয়ার নীতি বা ‘বটম-আপ অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করে সংস্থাটি। নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি সুষম উন্নয়ন এবং সেই উন্নয়নযজ্ঞে সকলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিতেও জোর দেয় নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগের নিয়মানুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন এই সংস্থার চেয়ারপার্সন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভাইস-চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হয়ে থাকেন। সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে নীতি আয়োগে। সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও সব ক’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপ-রাজ্যপাল হলেন নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য। ‘২০৪৭ সালে বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত রাজ্য’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। তাদের দীর্ঘমেয়াদী নীতি সংবলিত এই অ্যাপ্রোচ পেপারে জানানো হয়েছে যে, একদা বিশ্বের পাঁচটি ভঙ্গুর বা বিমারু অর্থনীতির মধ্যে ভারত অন্যতম হলেও গত এক দশকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে স্থানাধিকার করেছে ভারত। ২০২৪-২৫-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, যেসব দেশে মাথাপিছু আয় ১৪,০০৫ ডলারের বেশি, সেই দেশগুলিকে উচ্চ-আয়ের দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে বিশ্বব্যাংক। উচ্চ-আয়সম্পন্ন দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় রয়েছে ভারতের এবং সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান ভারত। অ্যাপ্রোচ পেপারে বলা হয়েছে যে, ২০৪৭ সালে ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত। এই অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণাপত্রটিতে জানানো হয়েছে যে, একটি উন্নত দেশের সমস্ত বৈশিষ্ট্য থাকবে ২০৪৭ সালের বিকশিত ভারতের। দেশের মাথাপিছুর আয় হবে অধুনা বিশ্বের উচ্চ-আয়ের দেশগুলির সঙ্গে তুলনীয়। এই লক্ষ্যে ৬টি প্রধান ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে দেশজুড়ে জারি থাকবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা সংস্কার। ৬টি ভিত্তিকে কেন্দ্র করে ২৬টি বিষয় আবর্তিত হবে। মূল ভিত্তিসমূহকে ঘিরে থাকবে বিষয়গুলি।
৬টি প্রধান ভিত্তি হলো:
(১) ম্যাক্রো-ইকোনমিক (সামষ্টিক-অর্থনৈতিক) লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যপূরণের জন্য আর্থিক নীতি।
(২) সামাজিক ক্ষমতায়নের ফলে অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক সমাজ।
(৩) একটি সমৃদ্ধ ও সুষম অর্থনীতি।
(৪) তথ্য-প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বিশ্বজনীন নেতৃত্ব।
(৫) বিশ্ববন্ধু: ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’-এর নীতি অনুসরণে ‘বিশ্ব একটি পরিবার’-এই ধারণার প্রতিষ্ঠা
(৫) সুশাসন, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রদান- উন্নত দেশ নির্মাণের লক্ষ্যে এই তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব।
তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর বর্তমান ভারত:
প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ একটি মাইলফলক অতিক্রমে সক্ষম হয়েছে ভারত। একটি ‘অল্টারনেটিভম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ বা বিকল্প উৎপাদন আগামী দু’বছরে ভারত হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে বার্ষিক আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬ শতাংশেরও বেশি। এই সুষম আর্থিক প্রগতির ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বেড়ে হবে ৫.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার। জার্মানিকে ছাড়িয়ে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ” কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বর্তমান ভারত। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেন যে, আমেরিকার বিক্রি হওয়া আইফোনগুলি ভারতের মতো কোনো দেশে নয়, আমেরিকাতেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ শুল্কনীতির বিস্তারিত বিবরণ এখনও অস্পষ্ট। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলেও প্রতিযোগিতামূলক ভাবে, অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ে নানা পণ্য উৎপাদনের ভিত্তিভূমি প্রদান অব্যাহত রাখবে ভারত।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘অ্যাসেট মানিটাইজেশন’ বা বিভিন্ন সম্পদ নগদীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে চলেছে ভারত সরকার। এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা বর্তমানে সরকার ও নীতি আয়োগের বিবেচনাধীন। দ্বিতীয় দফায় ‘সম্পদ নগদীকরণ কর্মসূচি’ ঘোষণার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে কেন্দ্র। এই বছরের আগস্ট মাসে এই কাজটি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি’র শিরোপা লাভের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মাইলফলকটি অতিক্রমের সময়টিও রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন বা বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নিজের ভূমিকা আরও মজবুত করতে বর্তমানে তৎপর হয়েছে ভারত। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বার্তা প্রচারের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ টানতে ঝাঁপিয়েছে বর্তমান ভারত।
২০২৫ সালে জার্মানির আর্থিক বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। ২০২৬ সালে জার্মানির আর্থিক বৃদ্ধি ০.৯ শতাংশে দাঁড়াবে বলেও আইএমএফ-এর পূর্বাভাস। চলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে ধারণা পোষণ করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি-র পরিমাণ এই বছর ৩০.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের জিডিপি প্রায় ১৯.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
একটানা কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি (ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকোনমি)-র স্থানটি অধিকার করে রয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা অনুযায়ী, আগামী দু’বছরে ভারত হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে বার্ষিক আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬ শতাংশেরও বেশি। এই সুষম আর্থিক প্রগতির ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বেড়ে হবে ৫.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার। জার্মানিকে ছাড়িয়ে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।


নতুন মাইলফলক অতিক্রম করল ভারতীয় অর্থনীতি
অর্ণব কুমার দে
স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ের অর্থনীতি
: যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে গেলে তার জিডিপি-র উপর চোখ রাখতে হয়। জিডিপি হলো গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট, অর্থাৎ দেশে কত পণ্য ও পরিষেবা উৎপন্ন হচ্ছে তার অর্থমূল্যের মোট যোগফল। যত রকম কৃষিজ পণ্য, খাদ্যদ্রব্য, ভারী শিল্প, কুটিরশিল্প, হস্তশিল্পের দ্বারা প্রস্তুত সামগ্রী (Industrial Product) ইত্যাদি বস্তু ও দেশে উৎপাদিত পরিষেবার সম্মিলিত অর্থমূল্যকে জিডিপি বলা হয়।
আমদানির পরিমাণ রপ্তানির থেকে বেশি হলে অর্থ বিদেশের হাতে চলে যায় আর বিপরীতে দেশের লাভ। স্বাধীনতার সময়কাল থেকে ভারতকে বহু সামগ্রী আমদানি করতে হতো, তার ফলে দেশের অর্থ বিদেশিদের হাতে চলে যেত। স্বাধীন হবার ১৫ বছর পরেও ভারত মূলত চা, চাল, মশলা, তুলো, পাট বা খনিজ পদার্থ রপ্তানি করতো। বিভিন্ন দেশ এইসব দ্রব্য বাজারজাত করে, তার একাংশ ভারতে অনেক বেশি দামে বিক্রি করত। ভারতে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ না হওয়ার দরুন অনেকগুলি দেশ ভারত থেকে সস্তায় কাঁচামাল কিনে, তা ব্যবহার করে নানা পণ্য উৎপাদন করে ভারতে রপ্তানি করত। সত্তরের দশকে এসে পেট্রোলের চাহিদা বাড়তে থাকলো। বিপুল পরিমাণে খনিজ তেল আমদানি করতে শুরু করল ভারত। তাতে ভারতের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়তে লাগলো।
বিংশ শতাব্দীর শেষে ভারতীয় অর্থনীতি:
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং চিরাচরিত প্রথায় অর্থনীতির সঙ্গে চরম দুর্নীতির কবলে পড়ে ভারতীয় অর্থনীতি প্রায় নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থায় পৌঁছে যায়। ১৯৯০-এ ভারতের ‘বাজেট ডেফিসিট’ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের ভারত আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে এবং চতুর্থ স্থান থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আয়ের থেকে ব্যয় তিন শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। ভারতীয় অর্থনীতিকে স্বাধীনতার পর থেকেই পূর্ণ রূপে ক্যাপিটালিস্ট বা সোশ্যালিস্ট অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা হতো না। মিক্সড ইকোনমি’ বা মিশ্র অর্থনীতির দেশ ভারত এক মধ্যপন্থা অবলম্বন করতো। কিন্তু ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ভোট-রাজনীতির কারণে সরকারি চাকরিতে মাত্রাতিরিক্ত নিয়োগ (Redundant Labour), বিভিন্ন পদে অযোগ্য ব্যক্তিদের বহাল করা এবং প্রশাসনের শীর্ষস্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের থাকার কারণে ভারতের অর্থনীতির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে।
ভারতে সরকারে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে পড়ে ১৯৮৯ সালে। যে জোট সরকারটি ক্ষমতায় আসে তারাও ভারতীয় অর্থনীতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় সরকারে আঞ্চলিক দল ও বামপন্থীদের প্রভাব থাকায় সরকারি কোষাগারে লক্ষ্মীদেবীর কৃপাদৃষ্টি না থাকাটাই স্বাভাবিক। এই দু’রকম রাজনৈতিক দলের ভাবধারায় শিল্প ও বাণিজ্য কখনোই স্থান পায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমানে শিল্প ও বাণিজ্য ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অসম্ভব। তিন বছরের জোট সরকারের পতন হলে ১৯৯২-তে কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় আসে। সে সময় নরসিংহ রাও, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং ড. মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ভারতে শুরু হয় আর্থিক সংস্কার। গ্যাট চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। দেশের বায়ুহীন অর্থনীতিতে অক্সিজেনের জোগান দেন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। এরপর প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারতে সরকারি সংস্থা বিলগ্নীকরণ শুরু হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তে থাকে বেসরকারি বিনিয়োগ। বিরোধীরা উচ্চকণ্ঠে এই প্রথার বিরোধিতা করে, কিন্তু সে সময় সাবেকি অর্থনীতির থেকে সরে আসা ভারতের পক্ষে কতটা লাভজনক তা বুঝতে সক্ষম হয়নি ভারতবাসী। দেশজুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এনডিএ সরকার ২০০৪-এ জনমত ধরে রাখতে অক্ষম হলেও ‘সোনালি চতুর্ভুজ’ প্রকল্পের দ্বারা ভবিষ্যৎ ভারতের যে রাস্তা অটলজী দেখিয়েছিলেন, তা আজ দুই দশক বাদে ভারতবাসী অনুধাবন করছে।
২০০৪ পরবর্তী সময়
ভারত বিশ্বের যত বড়ো অর্থনীতিই হোক না কেন বামপন্থীদের তা সহ্য হয় না। ৬৩ জন সাংসদ নিয়ে তারা ড. মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করলেন। ভারতের উন্নতির যে মূলসুরটি অটলজী বেঁধে দিয়েছিলেন তার ফলে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি শুরু হয়েছিল। তাকে বাড়িয়ে তোলার কাজ না করলেও অস্বীকার করতে পারেনি ইউপিএ সরকার। দেশজুড়ে টেলিফোন লাইনও ছড়িয়ে পড়ে অটলজীর সময়েই। বিদেশনীতিতে অটলজীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের সাফল্যের কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসাবাণিজ্যের পথটিও সুগম হয়। কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তাই তদানীন্তন সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করতেই, নানা অজুহাত খুঁজে অকর্মণ্য বামপন্থীরা সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় সরকারের অস্থিরতার কারণে ভারতের আর্থিক ব্যবস্থা ধাক্কা খায়। ভারতে ২জি ও কয়লা কেলেঙ্কারির মতো বেশ কিছু দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়। চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ড. সিংহের সরকার এবং ২০১৪ সালে এই সরকারের পতন হয়।
২০১৪-র পরের ভারত:
এই সময় থেকে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বেশ কিছু ফাঁকফোকর বন্ধ করে দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু অর্থব্যবস্থার ভেতর জমে থাকা ময়লা যেন পরিষ্কার হতেই চায় না। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ‘ডিমানিটাইজেশন’ করে দেশের শত্রুদের উপর বজ্রাঘাত হানলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জালনোটের ব্যবসা, কর ফাঁকি দেওয়ার চক্রের উপর কঠোর আঘাত করলেন। ২০১৭ সালে নিয়ে এলেন জিএসটি। এর ফলে বহু জায়গা থেকে কর ফাঁকি দেওয়ার যে সুবিধা ছিল তা বন্ধ হয়ে গেল। ছোটো ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়ে বড়ো ব্যবসায়ীদের থেকে জিএসটি আদায়ের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে থাকলো। বিগত দশকে প্রচুর অনাদায়ী ঋণের ফলে ব্যাংকগুলির কাছে ছিল সেই ঋণের বিনিময়ে বন্ধক থাকা বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পত্তি। সমস্যা হলো ব্যাংকের অধিগৃহীত ফ্ল্যাট বা জমিগুলি ছিল বাজারমূল্য থেকে বেশি দামের। ২০১৯ সালে ব্যাংক মার্জার এবং এনপিএ-র পরিবর্তে অধিগ্রহণ করা সম্পত্তিগুলি নিলাম করিয়ে ব্যাংকগুলিকে অনেকটা চাঙ্গা করে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে নানা সদর্থক পদক্ষেপ। দেশীয় বড়ো বিনিয়োগকারীদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট বা পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগে উৎসাহদান এবং ছোটো ব্যবসায়ীদের মুদ্রা লোন বা বিশ্বকর্মা যোজনার মাধ্যমে ভারতে ব্যবসায়িক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে চলেছে, ভারতীয় অর্থনীতি হয়ে উঠছে মজবুত। ভারতমালা প্রকল্পের ফলে বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্যের উন্নতি ঘটেছে। রেল পরিষেবার উন্নতি ঘটেছে। রেলের অযাচিত খরচ হ্রাস সম্ভব হয়েছে। ভারত অর্থনৈতিক স্তরে আর একটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হলো বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ভারতের ও তাদের মুদ্রাতে আমদানি-রপ্তানির চুক্তি করেছে ভারত। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের ব্যবহার করলে লাভবান হতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের রুপে কার্ড ও ভিম ইউপিআই অ্যাপও ডলার নির্ভরতা হাসে সহায়ক হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদী হামলা:
২০১৯ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে আধাসেনা কনভয়ের উপর সংঘটিত হয় এক সন্ত্রাসবাদী হামলা। এরপর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বায়ুসেনা অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ৩০০ জনের মতো সন্ত্রাসবাদীকে খতম করে এই কাপুরুষোচিত হামলার বদলা নেয়।
ভারত ইজরায়েলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলে ‘ব্রহ্মোস’ নামক এক মারণবাণ। একইসঙ্গে গড়ে তোলে ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। মারণাস্ত্রের ক্ষমতা পরিমাপ করা যায়; জানা যায় তা কত দূর অবধি সঠিক নিশানায় আঘাত করতে পেরেছে বা তার ধ্বংসের ক্ষমতা কতটা। কিন্তু যুদ্ধ না হলে ‘ডিফেন্স সিস্টেম’ পরীক্ষা করা কঠিন হয়। যুদ্ধে ব্যবহৃত হলে তা হয়ে ওঠে ‘ওয়ার টেস্টেড’। বর্তমানে প্রতিরক্ষা রপ্তানির জন্যে তৈরি হচ্ছে ভারতের ‘ব্রহ্মোস’। যুদ্ধের আবহাওয়া সৃষ্টির আগেই রাশিয়াতে তেলের খনিতে প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বয়কট করে। ভারত রাশিয়া থেকে তেল (ক্রুড অয়েল) কিনে, পরিশোধন করে তা ইউরোপের বাজারে বিক্রি শুরু করে।
এ নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বিদেশমন্ত্রী সোজা জবাব দেন ভারত পরিশোধিত তেল বিক্রি করছে। এটা ভারতীয় প্রোডাক্ট। ভারত কার কাছ থেকে কিনছে সেটা কারুর দেখার বিষয় নয়। মিডল-ইস্ট বা মধ্যপ্রাচ্যের ক্রুড অয়েল এবং রাশিয়ার ক্রুড অয়েল আলাদা। ভারত দুই ধরনের তেল পরিশোধনে সক্ষম। এই কারণে সৌদি আরবের তেল প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যারামকো ভারতের তৈল শোধনাগার শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয়েছে।
ভারত রাশিয়াকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অর্ডার দেওয়ায় মার্কিন প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশ্বের অস্ত্রের বাজারে রাশিয়া মার্কিনিদের টক্কর দিলে তাদের বাজার নষ্ট হবে, তাই মার্কিনিরা ভারতের বিরুদ্ধে না গেলেও সহজভাবে বিষয়টি গ্রহণ করেনি। মার্কিনিরা এর আগে ভারতকে যুদ্ধবিমান বিক্রির চেষ্টা করছিল। ভারতের বর্তমান সরকার সেনাকে পেছনে রেখে অস্ত্র চুক্তি করার বিপক্ষে, সেই কারণে মার্কিনি বিমান বাতিল হয়ে ফ্রান্সের ‘রাফাল’ অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই অবস্থায় ভারতকে অস্থির করার লক্ষ্যে পহেলগাঁওয়ে চালানো হয় সন্ত্রাসবাদী হামলা। মার্কিনিরা বিশ্বের অস্ত্রের বাজারে বড়ো মাপের মুনাফা করতে পারছে না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকে অশান্ত করে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সক্রিয় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের আর্থিক উন্নতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল গাত্রদাহ। তাই মার্কিন মদতে ভারতকে পশ্চিম সীমান্তে ব্যস্ত রাখার জন্যে সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা পহেলগাঁওয়ে হামলার ছক কষে পাকিস্তান।
ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তর ও সেনাবাহিনী পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের যোগ্য জবাব দেয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক ভারতীয় সামরিক অভিযানে ভারতের ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও ইসরোর দক্ষতা দেখে চমকে ওঠে বিশ্ব। এর ফলে পশ্চিমি শক্তির চাল বিশেষ কার্যকরী হয় না। এর ফলে ভারতের অর্থনৈতিক বাজারে মন্দার বদলে খুলে যায় এক অন্য দিগন্ত। ভারতের ‘আকাশ’ এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের চাহিদা বিশ্ববাজারে আলোড়ন ফেলে দেয়। ভারত যে তিন দিনে যুদ্ধ শেষ করবে একথা বিশ্বের অনেক দেশ ভাবতেও পারেনি। সেই যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই ভারত ফ্রি-ট্রেড এগ্রিমেন্ট করে ইউ কে-র সঙ্গে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ হবে ৬০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিগুণ। এছাড়াও ভারতের ইসরো অনেক দেশের স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েও বিশ্বের বাজারে একটি বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। এই সবকিছুর সমন্বয়ে আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে ভারত, এবং চতুর্থ স্থান থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছে। ভারতের এই জয়যাত্রা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, একজন ভারতীয় হিসেবে ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা করা উচিত সকলের।

READ ALSO

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
ShareTweetShare

Related Posts

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025
15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

15th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

September 23, 2025

POPULAR NEWS

4th September 2023 Rajjopat

4th September 2023 Rajjopat

September 21, 2023
৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

৩৫০ বছর পর দেশে ফিরছে শিবাজীর বাঘনখ

October 2, 2023
কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

কেশব ভবনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী হানা

October 4, 2023
4th September Angana

4th September Angana

September 21, 2023
2nd October 2023 Parampara

2nd October 2023 Parampara

October 1, 2023

EDITOR'S PICK

15th September উত্তর সম্পাদকীয়

15th September উত্তর সম্পাদকীয়

September 16, 2025
7th April বিশেষ নিবন্ধ

7th April বিশেষ নিবন্ধ

April 29, 2025
08th September পরম্পরা

08th September পরম্পরা

September 13, 2025
29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ

October 8, 2025

About

Follow us

Categories

  • Uncategorized
  • অতিথি কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • পরম্পরা
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • বিশেষ নিবন্ধ
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • রাজ্যপাট
  • সঙ্ঘবার্তা
  • সম্পাদকীয়
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি

Recent Posts

  • 29th September প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা
  • 29th September পরম্পরা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • সম্পাদকীয়
  • রাজ্যপাট
  • সুন্দর মৌলিকের চিঠি
  • অতিথি কলম
  • বিশ্বামিত্রের কলম
  • উত্তর সম্পাদকীয়
  • প্রচ্ছদ নিবন্ধ
  • পরম্পরা
  • ই -পত্রিকা

© 2023 Swastika. All rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?