মহেশতলার ঘটনা জেহাদি সন্ত্রাসের স্ফুলিঙ্গ মাত্র
আনন্দ মোহন দাস
গত ১১ মে কলকাতা শহরের কাছাকাছি মহেশতলায় জেহাদিদের দ্বারা হিন্দুদের তুলসীমঞ্চ ভাঙার ঘটনা, হিন্দুর সম্পত্তি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ১৯৪৬ সালের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিঙের বেদনাদায়ক স্মৃতিকে উসকে দেয়।
তুলসীগাছরূপী দেবীকে হিন্দুরা পূজা করেন, তুলসীতলায় সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বালিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করেন। এটি হলো হিন্দু সংস্কৃতি ও পরম্পরার অঙ্গ। তুলসী ছাড়া নারায়ণ সেবা হয় না। প্রায় সব পূজাই তুলসী ছাড়া অসম্পূর্ণ, সেজন্য তুলসীগাছ হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও শ্রদ্ধার বস্তু। হিন্দুরা দেবীরূপে তুলসীকে পূজা করে এবং সম্মান করে। সেই তুলসীমঞ্চ ভাঙার বর্বরোচিত ঘটনা হিন্দুরা কখনো মেনে নিতে পারেন না।
হিন্দুদের কাছে ধর্মরক্ষার লড়াই। ধর্মো রক্ষতিরক্ষিতঃ। তুলসীমঞ্চে আঘাত মানে হিন্দু অস্মিতায় আঘাত, হিন্দু ধর্মাচরণে আঘাত। কলকাতার পার্শ্ববর্তী মহেশতলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিকভাবে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তের একটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র।
আকস্মিক ঘটনায় স্থানীয় হিন্দুরা অসুরক্ষিত অনুভব করছেন এবং আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। জেহাদি শক্তি দ্বারা ধর্মীয় আচার আচরণে বাধা সৃষ্টিতে স্থানীয় হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাহলে কি বাংলাদেশের পথে পশ্চিমবঙ্গ হাঁটছে?
মহেশতলায় পুলিশ অসহায়ভাবে মার খেয়েছেন এবং প্রায় ১৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। সুতরাং নিরস্ত্র শান্তিপ্রিয় হিন্দুসমাজ জেহাদি গোষ্ঠীর কাছে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানবিকতা ও র্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী সেকু-মাকুরা এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ না করে চুপ করে রয়েছেন। যাঁরা একই বৃন্তে দুটি কুসুমের ওকালতি করেন, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিও এই ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। ভোট বড়ো বালাই। সাম্প্রতিক কালে কলকাতার পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার, তিলজলা, খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে যেভাবে জেহাদি শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতায় এনআইএ-র জালে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য ধরা পড়েছে, তা দেশের পক্ষে অত্যন্ত চিন্তাজনক। বিশেষ করে রাজধানী কলকাতা এখন নিরাপদ কিনা বলা খুব মুশকিল। নাক উঁচু বাঙ্গালি এখন ভাতাসর্বস্ব হয়ে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে উদাসীন। দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ এখন জেহাদি ও জঙ্গি কার্যকলাপের নিরাপদ স্থল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সম্প্রতি অন্য রাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগ পাওয়া গেছে। জঙ্গিরা রাজ্যকে গোপন করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে বলে কেন্দ্রীয় জেন্সিগুলি মনে করছে।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এখন জেহাদিদের হাতে চলে গেছে। মুর্শিদাবাদ, মালদার মোথাবাড়ি, কলকাতার মহেশতলার ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। জেহাদিদের আক্রমণে পুলিশ কর্মীরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মহেশতলার ডিসিপি (পোর্ট) হরিকৃষ্ণ পাল-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী জেহাদিদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন এবং আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এমনকী এখানে একসময় পুলিশকে মার খেয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হতে হয়েছে। পুলিশের মনোবল এখন তলানিতে ঠেকেছে। কারণ চাকরি বাঁচাতে শাসক দলের পদলেহনে অধিকাংশ পুলিশ ব্যস্ত থাকেন। তারা শাসকদলের চাপে বেআইনি কাজের সঙ্গেও আপোশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিরোধী দলের রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করে শাসকের কৃপাধন্য থাকার চেষ্টা করছেন।
পুলিশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ায় দক্ষ পুলিশ অফিসাররা প্রশাসনিক কাজে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। শাসক দলের নেতারা থানার আইসি-র স্ত্রী ও মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দিলেও কোনো শাস্তি হয় না। শাসক দলের চাপে পুলিশ আজ অসহায় হয়ে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তাই দুধেল গাইয়েরা আইন শৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে উদ্দেশ্যসাধ্যনে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত করে চলেছে। এরাই মালদায় পুলিশের উপর গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনি। হিন্দুর সম্পত্তি ধ্বংস করে ভিটেমাটি ছাড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে। ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে মুর্শিদাবাদে পরিকল্পিত আক্রমণ করে হিন্দুবাড়ি চিহ্নিত করে সন্ত্রাস এবং হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের হত্যা গ্রামগুলিকে হিন্দুশূন্য করার বড়ো চক্রান্ত।
পশ্চিমবঙ্গে তোষামোদি ও ভোটব্যাংকের রাজনীতির কুফল সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। যার ফলে শাসকদল দেখেও না দেখার ভান করছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, মহেশতলা-সহ বিভিন্ন স্থানে বেছে বেছে হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও আক্রমণ নেমে এসেছে, তাতে হিন্দুরা আতঙ্কিত। রাজ্যে বিগত কয়েকটি ঘটনার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী হিন্দু সংস্কৃতি, পরম্পরা, নারী সম্মান এবং মঠ-মন্দির-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর আঘাত হানছে। হিন্দুদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। হিন্দুদের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে। বরং হিন্দুসমাজ এইসব ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে উলটে তাদের জুটছে লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তারি ও কেস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দুদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ গ্রহণ করাও হয় না।
এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করে এলাকাকে অশান্ত করে তুলেছে। শেখ শাজাহানের মতো বহু নেতাই আজ প্রশাসন ও পুলিশকে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের দাপট বজায় রেখে অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এরা আইন আদালতকেও বুড়ো আঙুল দেখানোর সাহস রাখে। রাজ্যে প্রায়ই কোথাও না কোথাও বোমা, গুলি, বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও বোমা বিস্ফোরণে লোক মারা যাচ্ছে। দুধেল গাইয়েরা লাগামছাড়া প্রশাসনের সুযোগে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আমাদের সামনে খাগড়াগড়
বিস্ফোরণের জ্বলন্ত উদাহরণ রয়েছে।
রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমান এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে এবং এরাও আইন শৃঙ্খলার অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গে আধার, প্যান, পাসপোর্ট ও রেশন কার্ড তৈরি করে ভোটার তালিকায় নাম তুলে নাগরিকত্বের সমস্ত সুবিধা ভোগ করছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক ও চিন্তাজনক। জেহাদিদের বাড়বাড়ন্ত আমরা সিএএ, এনআরসি, ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনেও লক্ষ্য করেছি। এর জন্য শাসক দলের মন্ত্রী নেতাদের একাংশ বিশেষভাবে দায়ী।
সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, শাসক দলের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদিকুল্লা চৌধুরী জামায়াতে ইসলামির সভায় বলেছেন, কয়েক ঘণ্টায় কলকাতাকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন। শাসক দলের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ইসলামের অনুগামী ছাড়া সবাই পাপী। সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ইসলামে নিয়ে আসতে হবে। আগামীদিনে ইসলামই পথ দেখাবে এবং উর্দুই বাংলার মূল ভাষা হবে। এই মন্ত্রীই একবার পাকিস্তানের এক সাংবাদিককে খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলকে দেখিয়ে মিনি পাকিস্তান বলে দাবি করেছিলেন। মন্ত্রী এই ধরনের বিদ্বেষমূলক প্রচারে লিপ্ত থাকলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়াও শাসক দলের মুর্শিদাবাদের এমএলএ হুমায়ুন কবির আমরা ৭০ আর ওরা ৩০ শতাংশ উদাহরণ দিয়ে হিন্দুদের ভাগীরথীর জলে কেটে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় লাভ জেহাদ ও ল্যান্ড জেহাদ বেড়েছে। তাই এই সমস্ত নেতা মন্ত্রীদের ছোটো বড়ো চেলারা উৎসাহ সহকারে বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আগামী দিনে ভয়াবহ পরিণতির দিকে রাজ্য এগিয়ে চলেছে। সরকার অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামীতে অবাঞ্ছিত ঘটনা বৃদ্ধি পাবে।
তাই হিন্দুসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেহাদিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নাহলে পশ্চিমবঙ্গ আরেকটি বাংলাদেশ রূপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। তবে আতঙ্কিত হওয়া সমাধানের পথ নয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি অনন্য প্রচেষ্টায় পূর্ব পাকিস্তানের কবল থেকে পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করেছিলেন, তার সমাপ্তি কোনোমতেই হতে দেওয়া যাবে না। এই মুহূর্তে সেই সাহসী মহান উদ্ধারকর্তা গোপাল মুখোপাধ্যায়ের কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠাই স্বাভাবিক। পশ্চিবঙ্গে হিন্দু অস্তিত্ব বজায় রাখতে সেই মহাপুরুষদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে।