১৬ কামদুনি থেকে কসবা তৃণমূলের কসাইখানায় আর কতদিন কোরবানি?
কসাইবঙ্গ
নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করেছেন যে রেউড়ি রাজনীতি করে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যায়। ২০১৬, ২০২১ ও ২০২৪-এর ভোটে তার বিরুদ্ধে কোনো ক্ষমতাবিরোধী তত্ত্ব (অ্যান্টি ইনকামবেনসি ফ্যাক্টর) কাজ করেনি। মমতাকে অনুসরণ করে অন্যান্য রাজ্যের রাজনৈতিক দল লাভবান হয়েছে। রেউড়ির সঙ্গে যে চুরি আর ধর্ষণও চালানো যায় সেটা তারা জানে না। খেতে দিলেই যে প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না, বিদেশি বামেরা তার উলটোটা রাজ্যের মানুষকে বুঝিয়েছিল। তাই ভূমি সংস্কার করে সেই ভূমিতেই তারা লুটপাট চালাত। বিরোধিতা করলে আজকের অভয়া আর কসবা কলেজের নিরীহ ছাত্রী বা অভিজিৎ সরকারের দশা করে ছাড়ত। বিরোধীদের বাড়িতে ‘লাল ঘোড়া’ (আগুন) ছুটিয়ে দিত। মধ্যযুগ হলে কসবার তিনটি মাতৃগর্ভের লজ্জাকে জীবন্ত দগ্ধ করা হতো। আধুনিক যুগের শাস্তি ওদের জন্য নয়। লোহা দিয়েই লোহা কাটতে হয়। কঠোরতম শাস্তির দাবি কেবল সুবিধাবাদের ভাষা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার দু’বছর পর থেকে বিদেশি বামেদের গলায় শোনা যায়, ‘এখানে থাকা যায় না।’
সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে মমতার নাম জড়ায়। সারদা কর্তার চিঠিতে তা ছিল। তৃণমূল ঠিক করে চুরির পাশাপাশি তারা সমানভাবে দানখয়রাতি চালাবে। এই কায়দায় মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবে। রেউড়ি পেয়ে মমতার বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলবে না। ২০১১ সালের যে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হন, সেই নির্বাচনে বিজেপি ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখন তারা পায় ৪০ শতাংশ ভোট। ২০১৩-তে যারা রাজ্য ছাড়তে চাইত, সেই বামেরাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আঁকড়ে ধরেছে। তারাই তাকে বারবার জেতাচ্ছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিয়ম করে তারা ‘নো ভোেট টু বিজেপি’ স্লোগান তুলে তৃণমূল-বিরোধী ভোেট বিভাজনে সাহায্য করছে। এটা বামপন্থীদের স্বাভাবিক বৈপরীত্য। দশ মুখে বামেরা একশো কথা বলে। একইসঙ্গে ‘হ্যাঁ’ আবার ‘না’ বলতে পারে। দু’মুখের ফাঁক দিয়েই কংগ্রেস ৩০, বাম ৩৪। আর এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ বছর শাসন করছেন। এটা বেদনার যে পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজনীতি সচেতন রাজ্য হলেও তিন দশকের আগে এই রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটে না।
২০২৬-এর রাজ্য ভোেট বলে দেবে এই রাজ্যের রাজনৈতিক ভাবনার কতটা পরিবর্তন হয়েছে। কিছু লোক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গর্ব করে, আবার তাঁর পরিবার নিয়ে কেচ্ছার চলচ্চিত্র বানায়। বঙ্গের মনীষীদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে। আগামী ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে, কলকাতার চায়ের দোকানের আলোচনায় সে বিপরীতমুখিতা সহজেই ধরা পড়ে। সেখানে করোনা ভাইরাস আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমান সুরে আলোচিত হয়। জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমাল ফার্ম’-এ পশু আর মানুষ একে অপরকে সমান চোখে দেখত। কসবার ঘটনার পর অনেকে এই রাজ্যের নাম রেখেছেন কসাইবঙ্গ। কিছু খারাপ বোঝাতে ‘কসাই’ শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন ‘দস্যু’ বা ‘ডাকাত’। ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস কংগ্রেসকে হারিয়েছিল। ২০১১-তে সিপিএম
সিপিএমকে। বিশ্লেষকরা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সেভাবে হারানো সম্ভব। তাতে মমতাকেই মমতার শত্রু হতে হবে। পনেরো বছরে এই রাজ্যে শাসক দলের একটাই মুখ।
কংগ্রেস আর বাম জমানায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (মানুদা) আর জ্যোতি বসুর সঙ্গে অনেক মুখ ছিল। তাই ২০০০ সালে রাজনৈতিকভাবে অপরিণত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে (৫৭) মুখ্যমন্ত্রী করা হয় আর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়রা বাতিল হয়ে যান। জ্যোতিবাবুকে তার দল জোর করে সরিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী হেরে গেলে মানুবাবুও হারিয়ে যান। মানুদা হারেন ইন্দিরার সঙ্গে, আর বুদ্ধদেব হারেন অপশাসন, জনবিরোধী নীতি এবং নিজের পার্টির বিরোধিতায়। এরা সকলেই দলের ঘরের লোক ছিলেন। দলের মধ্যে মমতার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যদিও এ বিষয় তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে অনেক গল্প রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেবল একটাই সমস্যা- শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। তৃণমূলের কুচো থেকে বুড়ো সকলের কেবল ‘শুভেন্দু’ নামে অ্যালার্জি। শুভেন্দুই তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল-বিরোধী বিজেপির প্রধান মুখ। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসন উলটে দিতে পারেন। একবার তাকে হারিয়ে দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে হারের পর পুরো তৃণমূল শুভেন্দু সিনড্রোমে (অসুখে) আক্রান্ত। পনেরো বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তনের ডাকের আড়ালে যে কসাইবঙ্গ বানানোর পরিকল্পনা ছিল তা এখন বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে কসাইখানা বানানোর চেষ্টা শুভেন্দুবাবু এবং তাঁর দলকেই ব্যর্থ করতে হবে। তাঁরা ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষকে কসাইয়ের হাতেই জবাই হতে হবে সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য হয়তো এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষমান।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)