হিন্দুশূন্য বাংলাদেশ অচিরেই সোশ্যাল ক্যাপিটাল শূন্য দেশে পরিণত হবে
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী
বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অহমদ ছফা অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে তিন দশক আগেই বলেছিলেন, ‘যে দেশে গুণীজনের কদর নেই সে দেশে গুণীজন জন্মায় না।’ তার এই কথা আজকে শুধু বাস্তবেই নয় বরং আরও একটু বেড়ে গিয়ে ‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’ (সামাজিক মানব সম্পদ পুঁজি) শূন্য দেশে পরিণত হয়েছে। কাজটা সুকৌশলে মনোযোগ সহকারে সম্পাদনা করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী ভারতের মুসলমান তোষণকারী নেতা
জওহরলাল নেহরু। দেশ বিভাগের সময়ে নেহরুর কাজে ও মনে সমন্বয় ছিল না। তিনি দেশভাগ করেছেন ঠিকই। দেশভাগের মূল উদ্যেশ্য কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে হিন্দুদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখনো এই জঘন্য প্রতারণার প্রায়শ্চিত্ত করে চলেছেন হিন্দুরা। গত একশো বছরে হিন্দুদের উপর অকারণে বারবার নৃশংস অত্যাচার করার ফলে পূর্বপাকিস্তান হতে হিন্দুরা নিঃস্ব হয়ে শুধু প্রাণ ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য চোদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ফেলে দেশান্তর হতে বাধ্য হয়েছেন। হিন্দুদের মনে আজকে বিশাল ক্ষোভ জমেছে। এই ক্ষোভ নিরাময়ের চিন্তা স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলই প্রয়োজন মনে করেনি। তারা বরাবরই হিন্দুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এমনকী ফতোয়া জারি করে হিন্দুদের উপর সবসময় অন্যায়ভাবে অত্যাচার সংঘটিত করেছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে যারাই ক্ষমতায় এসেছে সকলেই হিন্দুদের টার্গেট করে দস্যুর মতো অত্যাচার করেছে।
বাংলাদেশ হতে যে সকল মেধাবী গুণীজন দেশ ছেড়ে ভারতে কিংবা ভিন্ন ভিন্ন দেশে গেছেন তাঁদের অনেকেই আজকে নিজ নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁরা দেশ পরিচালনায়, নীতি নির্ধারণে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আবিষ্কারক, কবি সাহিত্যিক-সহ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সম্মানের সঙ্গে সেই সেই দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাঁরা যদি ওই ভূখণ্ডে থাকতে পারতেন তা হলে বাংলাদেশ আজকে পৃথিবীতে একটি কীর্তিমান দেশে পরিণত হতে পারতো। নেহাত মজহবি গোঁড়ামির কারণেই আজকে দেশটি শুধু মেধা শূন্যই নয়, সোশ্যাল ক্যাপিটাল শূন্য হয়ে পড়েছে। আজকে দেশটি অস্তিত্বহীনতার সংকটে ভুগছে। দেশটিতে আজ নর পশুতে পরিপূর্ণ। বিশ্বে তাদের পরিচয় উগ্রবাদী তৈরির কারখানার দেশ হিসেবে। ওখানে মেধা সংকটের কারণে সৃষ্টি হয়েছে পশুপ্রবৃত্তি। মাথায় ফেজ টুপি লাগিয়ে গণভবনের হাঁস, মুরগি, ছাগল, এমনকী শৌচাগারের প্যান সগৌরবে কাঁধে করে তুলে নিয়ে তারা ধন্য হয়েছে। তথাকথিত মেধাবীরা মহিলা প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বাস উঁচিয়ে সুখে আত্মহারা হয়ে গান গেয়ে নেচেছে। জাতীয় সংসদের এমপিদের চেয়ারে বসে টেবিলে পা উঠিয়ে বিড়ি ফুঁকেছে। এইরূপ কাজ অবনমিত রুচি ও মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের নয় কি? ওদের কি মানুষ বলা যেতে পারে? ওদের বিশেষ জীব হিসেবে বললেও সেই জীবদেরই অপমান করা হয়ে যাবে। যে দেশের মওলানারা মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকার করে, অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে রাত্রিযাপন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তারাই এখন সেখানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসীন হয়েছেন। এক সময়ে যে সকল মুসলমান মোল্লা-মৌলবি সুদ হারাম বলে গলা ফাটিয়েছেন, ড. ইউনুসকে সুদখোর বলে গালি দিয়েছিলেন, তারাই এখন ইউনুসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রশংসা এই জন্যই করছে তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসী দেশ তৈরিতে তারা এখন তৎপর হয়ে উঠেছে। তারাই হিন্দুদের মন্দির গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, বিগ্রহ ভেঙে দিচ্ছে, মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে। দেশ মেধাশূন্য হওয়ার কারণে ভিন দেশ থেকে মেধার আমদানি না করে অবৈধভাবে অস্ত্র আমদানি করে। মেধা চর্চা না করে তারা মেধাবীদের হত্যা ও গুম করে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জুতাপেটা, কান ধরে উঠ-বোস করানো এবং শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে উল্লাস প্রকাশ করা দেশটিতে কোনো ব্যাপার নয়। যারা মেধাবী গড়ার কারিগর তাদের এহেন অবনমন বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে।
হিন্দু শিক্ষক, হিন্দু কর্মচারীদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশটিকে হিন্দুশূন্য করাই এখন তাদের একমাত্র কাজ। কথায় কথায় ভারতের বিরোধিতা করে, অকৃতজ্ঞের মতো লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে মিথ্যাচার করে চলেছে। নিজ দেশের স্থপতিকে অপমানিত করে শত্রু দেশের স্থপতিকে কুর্নিশ করছে। এক সমুদ্র রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত পতাকাকে এখন পায়ের নীচে ফেলে দিয়ে নমাজ আদায় করছে, আল্লাকে ডাকছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, তাদের আল্লা কি এই অপকর্মের হোতাদের জন্য বেহস্তে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করে রেখেছেন? কতটুকু নীচ ও পাষণ্ড হলে অন্য দেশের পতাকাকে মাটিতে ফেলে তার উপর দিয়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে ছাত্ররা। তাদের এই আচরণ বিশেষ প্রাণীদের মধ্যেও অনুপস্থিত। এদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা তো নয়ই বরং বিশাল বীরত্বের জন্য পুরস্কৃত করা হচ্ছে। যে যত ভারতবিরোধী সে তত বড়ো মাপের নেতা। ১৯৬৯ সালে ও একই কায়দায় মেধাবীদের হত্যা করে দেশটিকে পাকিস্তানি বর্বরেরা মেধাশূন্য করে তুলেছিল। পুনরায় ৫৩ বছর পর আবার একই কায়দায় পুরনো শত্রুদের দিয়ে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। মেধাটা তাদের মানায় না, তাদের কাছে অসহনীয়। শুধু ভারত বিরোধিতা, হিন্দু বিরোধিতা আর ফতোয়া দানই তাদের একমাত্র কাজ। মিথ্যাচার, দ্বিচারিতা, সুবিধাবাদ, জেহাদ তাদের রক্তে।
ইদানীং আবার সংবিধান ও দেশের নাম পালটানোর কথা শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে জাতীয় সংগীতও। জাতীয় সংগীত হিন্দুর লেখা, তাই সেটা রাখা যাবে না। হিন্দুর হাতে খাবে না। হিন্দুর সেলুনে চুল কাটাবে না। হিন্দুর দোকানে কেনাকাটা করবে না। হিন্দুতে তাদের বড়ো অ্যালার্জি। তাদের আল্লা নিষেধ করে গেছেন। কিন্তু অসুখ হলে আবার ভারতে এসে চিকিৎসা করানো যাবে। আল্লা এই ব্যাপারে আইন শিথিল করে রেখেছেন। কতো বড়ো নিকৃষ্ট মানসিকতার হলে এইরকম ধারণা পোষণ করা যেতে পারে? সম্প্রতি নরসিংদীতে মৃত এক হিন্দু শিক্ষকের জানাজা দেওয়া হয়েছে। এতে কীসের ইঙ্গিত বহন করে?
তবে কি হিন্দুরা চেয়ে চেয়ে দেখবে? না, তা আর হবে না। এবার হিন্দুরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। চলমান নৈরাজ্য এবং সকল প্রকার হিন্দু নিগ্রহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হিন্দুরা মরণপণ প্রতিজ্ঞা করেছে। তারা আর দেশ ত্যাগ করবে না, বরং সমানে সমানে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে। জেহাদি মুসলমানরা এবার হিন্দুদের শক্তি দেখতে পেয়েছে। হিন্দুদের কারাগারে ভরে দেওয়া হচ্ছে। দেশের ভালোর পক্ষে যাঁরা বলছেন, তাদের জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিন্দু সন্ন্যাসী প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কোনো কারণ ছাড়াই জেলে ভরে রেখেছে। তাতে কী? জেহাদিরা জানে যে, কংসের কারাগারেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছে। হাজার হাজার চিন্ময়প্রভু এখন বাংলাদেশ কাঁপিয়ে যাচ্ছে। জানান দিয়ে চলেছে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের দিন শেষ হয়ে গেছে। চিন্ময়প্রভু বলেছেন, ‘আমরা ওলন্দাজ নই, আমরা মুঘল নই, আমরা ফরাসি নই, আমরা ব্রিটিশ নই, আমরা উড়ে আসিনি। আমরা প্রহ্লাদ মহারাজের পৌত্র, বলি মহারাজের প্রপৌত্র বঙ্গের বংশধর। মহারাজ বঙ্গের নাম অনুসারে যে বঙ্গভূমি আমরা তার একমাত্র উত্তরাধিকারী। আমাদের এখানে অধিকার রয়েছে। এই অধিকার থেকে আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। কেউ চেষ্টা করলে আমরা তা মেনে নেবো না।’ সুতরাং হিন্দুদের নিজ ভূমি রক্ষায় হিন্দুরা এবার সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। হিন্দুদের এই অভূতপূর্ব প্রতিরোধ তাদের লক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেবেই। অন্যায়, অসত্যের পরাজয় এখন সময়ের অপেক্ষায়। জেহাদি মুসলমানদের পতন নিশ্চিত তা সূর্য উঠার মতো সবাই দেখতে পাবে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা রুখে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে উঠছে। ভারত সরকারও সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। দমনপীড়ন যতই করুক না কেন এবার হিন্দুরা মাথা নোয়াবে না। তবে সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক বঞ্চনার অবসানের প্রয়াসও চলমান রয়েছে। গুণীজন শূন্যতায় ভুগছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাটিতে জন্মাচ্ছে না গুণীজন। টান পড়েছে সোশ্যাল ক্যাপিটালের। হিন্দু বিতাড়নের পরিকল্পনা যতই করুক না কেন, সেটা ভেস্তে যেতে বাধ্য। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মানব সম্পদের সংকট ও বাংলাদেশকে দেউলিয়া ও ব্যর্থ দেশে পরিণত করবে।
ইসকনের মতো একটি আন্তর্জাাতিক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার কথা বলে জেহাদিদের আশকারা দেওয়ার মাধ্যমে উপদেষ্টারাও যে হিন্দু বিরোধী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ যেন ঠিক আগুনে হাওয়া দেওয়ার মতো। তাদের জানা উচিত, আগুনে হাওয়া দিলে কী হতে পারে। হিন্দু-সহ সকল নৃগোষ্ঠীর বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এবং তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে জেহাদিদের শেষ ঘণ্টা বেজে যাবে তা একেবারে নিশ্চিত।