সাধু সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত
অবসান হোক রাক্ষসরাজের
সুপ্রতিম চক্রবর্তী
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সমাজের অভিভাবক ঋষি, মুনি ও সাধুসন্তরা। যেমন একজন অভিভাবক তার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য দিনরাত এক করে কষ্ট করেন, তেমনই প্রাচীনকাল থেকেই সাধুসন্তরা ব্যক্তিগত সর্বস্ব ত্যাগ করে সকলের কল্যাণের জন্য কঠিন তপস্যা ও যজ্ঞের ব্রত নিয়ে নিজেদের সমগ্র জীবন কাটিয়ে দেন। কেন করেন তাঁরা এই তপস্যা? এতো ত্যাগই-বা কেন করেন? আমরা তো সামান্য প্রিয় মিষ্টি খাওয়ার লোভও ছাড়তে পারি না অথচ তাঁরা নিজের সর্বস্ব ভোগ ছেড়ে দিয়ে ত্যাগের পথ গ্রহণ করেন- ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিথা’। তাঁরা এই ত্যাগ করেন কি শুধু আত্মোন্নতির জন্য! না, ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’ অর্থাৎ নিজের মোক্ষলাভের জন্যই শুধু এই ত্যাগ ও তপস্যা তাঁরা করেন না, সমগ্র জগতের হিতকামনাও এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে আছে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই ঋষি-মুনিরা ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ সংকল্প নিয়ে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের কামনায় কঠিন তপস্যার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন করেন।
রামায়ণ কালেও আমরা দেখেছি ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র সিদ্ধাশ্রমে যখন যজ্ঞের ব্রত নিলেন তখন মারীচ ও সুবাহু নামক রাক্ষস এবং তাদের অনুচররা তাঁর যজ্ঞমণ্ডপে দূষিত বস্তু ফেলে যজ্ঞ ধ্বংস করে দিত। তেমনই বর্তমানে যেসমস্ত সাধুসন্ত নিজের সংসার আদি ত্যাগ করে সমাজের কল্যাণের জন্য কর্মযজ্ঞ করে চলেছেন; বর্তমান যুগের রাজনীতির রাক্ষসেরা তাঁদের পবিত্র কর্মযজ্ঞকে দূষিত করার অভিসন্ধি নিয়ে নানারকমের দুর্বুদ্ধির প্রয়োগ করছে। কিন্তু তারা এটা বার বার ভুলে যাচ্ছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করে গেছেন, ‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।’ অর্থাৎ, যখন যখন ধর্মে গ্লানি আসে তখন তখনই অধর্মকে নাশ করার জন্য আমি অবতার গ্রহণ করি। তারপর বলছেন, ‘পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।’ অর্থাৎ, সাধুব্যক্তিদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতীদের বিনাশ এবং ধর্মরাজ্য স্থাপন করার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হই।
পাপীদের পাপের ঘড়া যখন হয় পূর্ণ, ধর্ম যখন হয় গ্লানিতে আচ্ছন্ন, তখন ভগবান অবতার রূপে সমাজের মাঝে প্রকট হয়ে নিজের ভক্তদের মাধ্যমে পুনরায় ধর্মসংস্থাপন করেন। যুগে যুগে, কল্পে কল্পে তাই ঘটে চলেছে। কলিযুগের প্রভাবে অনেক নিত্যনতুন ধর্মবিরোধী প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে যেমন সেকুলার, মার্কসবাদী ইত্যাদি। এরা অনবরত হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে চলেছে। ভারতের সাধুসন্তদের তারা অপমান করছে, মনীষীদের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে নানা অপপ্রচার। কেউ কেউ শিক্ষকরূপে ছাত্রদের ধর্মবিরোধী শিক্ষা দেয়, আবার কেউ চলচ্চিত্রনির্মাতা হয়ে সিনেমার মাধ্যমে নিরন্তর হিন্দুধর্মকে অসম্মান করে চলেছে। এমনকী বিশ্ববিখ্যাত অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালকরাও নিজেদের সিনেমায় সাধুদের ভণ্ড, লোভী ও চরিত্রহীনরূপে পরিবেশন করেন। সিনেমার মাধ্যমেই শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের মনে সাধুসন্তবিরোধী ও হিন্দুত্ববিরোধী এক বিষাক্ত ভাবধারার বীজবপন করা হচ্ছে।
তাদের তো কখনো অন্যান্য উপাসনা পদ্ধতির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে বা সিনেমা তৈরি করতে দেখা যায় না। তাহলে কেন হিন্দুধর্মের প্রতি এরা নিরন্তর আঘাত হেনে চলেছে, কেনই-বা প্রতিনিয়ত সাধুসন্তদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছে? এর কারণ যদি খতিয়ে দেখা যায় তাহলে জানা যাবে এরা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য এরা সবাই একজোট। শ্রীরামচরিতমানসে
গোস্বামী তুলসীদাস লিখেছেন, ‘সন্ত অবজ্ঞা করু ফল ইইসা, জরৈ নগর অনাথ কর জেসা।’ অর্থাৎ সাধুসন্তের অপমান করা হলে সেই রাজ্যের কখনো কল্যাণ হয় না বরং ক্ষতি হয়। যেমন চাণক্যকে অপমান করার জন্য ধননন্দের গর্ব ধুলোয় মিশে গেছিল; তার রাজ্য সে হারিয়েছিল। ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ অবতারে ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে অসুর, রাক্ষস এবং মনুষ্যরূপী অধার্মিক, পাপীদের সংহার করে ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করেছেন। পরম করুণাময় ভগবানের কাছে এটাই প্রার্থনা যে পশ্চিমবঙ্গেও খুব শীঘ্রই যেন রাক্ষসদের বিনাশ হয়ে ধর্মরাজ্য তথা রামরাজ্য স্থাপিত হয়। সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর উদ্ধারণের পর শ্রীভগবান যেন কলি উদ্ধারণে অবতীর্ণ হন। তাঁর পুনরাবির্ভাবের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসী