রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণের অজুহাতে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখা সংখ্যালঘু তোষণের নির্লজ্জ প্রয়াস
আনন্দ মোহন দাস
রাজ্য সরকারের সার্বিকব্যর্থতারমধ্যেশিক্ষাক্ষেত্রে চরম দুরবস্থা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে আজ অনিশ্চিয়তার মুখে ঠেলেদিয়েছে।শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পের বারোটা বাজিয়ে ভাতা সর্বস্ব রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গকে সর্বনাশের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতেদিয়ে বাঙ্গালির ভবিষ্যৎ অন্ধকার করা হয়েছে। রাজ্যে শাসকদলের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টিকরে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনগুলিকে কলুষিত করা হয়েছে। রাজ্যেরসরকার ভোট ও ভাতা কেন্দ্রিক হয়ে সমাজের মূল স্তম্ভগুলিকে ভাঙার খেলায় মেতে উঠেছে। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশ সাধন করে থাকে। কিন্তু সেই শিক্ষাকে ব্রাত্য করে জনগণকে অন্ধকারে রাখাই সমীচীন বলে শাসকদল শ্রেয় মনে করছে।তাই পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্র এতো অবহেলিত। কারণ শাসক জানে, মেরুদণ্ডহীন মানুষ তৈরি করার জন্যশিক্ষার দরকার হয় না।তাইশিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই মূলমন্ত্র।
বিগত দুই দশকে কেবলমাত্র রাজনীতির কারণে, শিক্ষাক্ষেত্রে সারা দেশে পশ্চিমবঙ্গ আজ পিছনের সারিতে চলে গেছে। অথচ পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার ও ওড়িশা শিক্ষাক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে। যে শিক্ষার মাধ্যমে জাতির মেরুদণ্ড নির্মাণ হয়, রাজ্যের শাসক দলের প্রচেষ্টায় তারই অন্তর্জলিযাত্রা শুরু হয়েছে। শাসকের মদতে শিক্ষকের মতোমহৎ পেশা আজ দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত হয়েছে। শিক্ষার জায়গায় দুর্নীতির ফলে শিক্ষা
ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টেরনির্দেশে দুর্নীতির দায়ে রাজ্যের স্কুলগুলির ২৬ হাজার শিক্ষক অশিক্ষক কর্মীর চাকরি চলে গেছে। শাসকদল টাকার বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষকদের বাঁচাতে যোগ্য শিক্ষকদের বলি চড়িয়েছে। তাই সবকিছু এলোমেলো করার জন্য এসএসসি ও রাজ্য সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেনিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না রেখে পরীক্ষার ওএমআর শিট ও তার মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করেনি। তার ফলশ্রুতিতে সর্বোচ্চ আদালত যোগ্য অযোগ্যের বেড়াজালে দুর্নীতির কারণেসম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে।
রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন কোনো যুক্তিসঙ্গতকারণ উপস্থাপনের অভাবে রাজ্যের দায়ের করা রিভিউ পিটিশনও সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করেছে। কারণ শাসকদল নিজেদের তাগিদে অযোগ্য শিক্ষকদের কোনোভাবেই পৃথক করার সদিচ্ছা দেখায়নি। কারণ তারা অযোগ্য শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে তিনবছর জেল খাটছেন। তদানীন্তন শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জেলের ভাত খাচ্ছেন। তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তার বান্ধবীর ঘর থেকে তদন্তকারী সংস্থাগুলি কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। এছাড়াও এইসব নেতা-মন্ত্রী ও আধিকারিকরাবিভিন্ন স্থানেদুর্নীতির অর্থে সম্পত্তি ক্রয় করে নিজেদের বেআইনি সম্পদ বাড়িয়েছেন। দলীয় নেতা-নেত্রীরা শিক্ষাকে পণ্যহিসেবে বিক্রি করে দলীয় ও ব্যক্তিগত তহবিল বাড়িয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ তারা অন্ধকার
করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির দ্বারা সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দুর্নীতিতে প্রথমস্থান অধিকার করেছে।
গত এপ্রিল মাসে শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এই রায় তিনি মানেন না এবং সরকার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। কারও চাকরি যাবে না বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এমনকী চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তিনি প্ল্যান এবিসি ইত্যাদির কথাউল্লেখ করেছিলেন। কেবলমাত্র শাসকদলের আর্থিক দুর্নীতিরকারণে মেধাবী যোগ্য শিক্ষকরা আজ
পথে বসেছেন। তাদের পরিবার পরিজন আজ অসহায়ভাবে দিনযাপন করছেন। শাসকদলের বেআইনি কর্মকাণ্ডে সমাজের চোখে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ধূলিসাৎ হয়েছে এবং তাদের কীর্তিকলাপ শিক্ষককুলকে সন্দেহের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এহেন অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে তাদের সংসার জীবনে হতাশা নেমে এসেছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে মেদিনীপুরের ডেবরার তপশিলি উপজাতির এক শিক্ষকও রয়েছেন।
এছাড়া শিক্ষকের অভাবে রাজ্যের স্কুলগুলিও ধুঁকছে। বহু শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগনাকরে স্কুল কলেজেরশিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের ৮২০০ স্কুল ছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আজকাল সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ার জন্য বেশিরভাগ অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রাইভেট স্কুলে পড়াতেবাধ্য হয়েছেন। গরিব ছাত্র-ছাত্রীরা টাকার অভাবে উপায় না দেখে সরকারি স্কুলে পড়তে বাধ্য হয়েছে।
রাজ্য সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্র সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অলিখিতভাবে শাসকদলের ছাত্র ইউনিয়ন ও পরিচালন সমিতির মাধ্যমে দলীয় ক্ষমতা কায়েম করা হয়েছে। বিরোধী পরিসর না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথেচ্ছাচার চলেছে।শাসকদলের ছত্রছায়ায় কসবা আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনা ও আরজি কর মেডিকেল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ার সম্ভ্রমহানি শেবে নৃশংস হত্যা, সারা দেশে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার হারিয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃঢ়চেতা উপাচার্য শাস্তা দেতৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠা দিবসে পরীক্ষা স্থগিত করতে নাচাওয়ায়, তাকে প্রত্যক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দলীয় সমাবেশের জন্য পরীক্ষা পিছাতে যথার্থভাবেই রাজি হননি। কিন্তু তাঁকে
নানাভাবে হয়রানি করার প্রচেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ শাসককুল শিক্ষাকে শিকেয় তুলে দিয়ে শিক্ষাকর্তাদের দলদাস হিসেবেকাজ করার অপসংস্কৃতিচালু করেছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পার্টির আখড়া বানিয়ে শিক্ষার সর্বনাশ করেছে।
রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলির কঙ্কালসার চিত্রও ফুটে উঠেছে। কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে এবং এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা
পড়াশোনা করতে পারছে না। কোথাও আবার বিদ্যালয়গুলির ভগ্ন দশা। কোথাও সিলিং থেকে চাঙ্গড় খসে ছাত্ররা আহত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল বিল্ডিং না থাকায় গাছতলায়ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রী এগুলির প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিয়ে মেলা, খেলা ও উৎসবে টাকা বিলিয়ে রাজ্যের কোষাগার শূন্য করে চলেছেন। এটাই প্রমাণ করে যে শিক্ষাক্ষেত্রের সংস্কার ও শিক্ষার প্রসার মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের মুসলমান
তোষণের ফলে নতুন ওবিসি সংরক্ষণের অজুহাতে রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তিবন্ধ রাখাহয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। তারা মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ছে এবং রাজ্যের শাসকদল রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থকরতে ছাত্র-ছাত্রীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সারা দেশে অন্যান্য রাজ্যে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে ডিগ্রি কোর্সেভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের ছাত্ররা শুরুতেই পিছিয়ে পড়ল। এই রাজ্যে ভর্তি পিছিয়ে যাওয়ার ফলে শিক্ষকরা সিলেবাস শেষ করার সময়
পাবেন না।সময়মতো পরীক্ষা নিতে পারবেন না। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিগদ ২৫ বছরে রাজ্যের ভর্তি নিয়ে এই ধরনের অচলাবস্থা কখনো দেখা যায়নি।
উল্লেখযোগ্যভাবে এবার রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের কলেজ পোর্টালে ডিগ্রি কোর্সের জন্য ৯ লক্ষ ৫০ হাজার আসন থাকলেও মাত্র ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার জন ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে অস্বাভাবিক বিলম্ব ও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থার হাল দেখে বেশিরভাগ পড়ুয়া ইতিমধ্যে প্রাইভেটকলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে সরকারি কলেজগুলির আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই ভাবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা বানচাল করে ঘুরপথে বেরসকারি কলেজগুলিকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সপরীক্ষা হয় এ বছর গত ২৭ এপ্রিল। অস্বাভাবিক দেরি করে তার ফল প্রকাশ হয় গত ২২ আগস্ট। তারপর তাদের কাউন্সেলিং বাকি রয়েছে। কেবলমাত্র শাসকের রাজনীতির কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে, পড়ুয়াদের পড়াশোনা বিলম্বিত করার ব্যবস্থা হয়েছে।
ইতিমধ্যে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরও মেডিক্যাল ও ডেন্টালের কাউন্সেলিং হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে।অথচ কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াশেষ নাহলে ভর্তিহওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে ১১ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকাউন্সেলিঙের অভাবে মেডিক্যাল পড়াশোনায় অনিশ্চিয়তার সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে সারা দেশে নিট পরীক্ষা দেওয়া
ডাক্তারি ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।সুতরাং শাসকের ভোটব্যাংকের রাজনীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাবে এবং সঙ্গে অভিভাবকদের সুশ্চিন্তা বাড়বে। যারা বাঙ্গালিকে বঞ্চনার অভিযোগ করে থাকে, তারাই আজ ন্যায্য অধিকার থেকে বাঙ্গালি ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চনা করছে।
প্রকৃতপক্ষেশাসকদল মুসলমানদের ৯৮ শতাংশ মানুষকে ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার স্বার্থেসমস্ত ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন বন্ধ রেখেছে। কারণ ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মুসলমানদের ভোট চাই। তাই ভোটব্যাংকের রাজনীতির কারণে ১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণের বাহানায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা চলছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশ মতো ২০১০ সালের আগের ওবিসি সংরক্ষণের নিয়ম অনুসারে ভর্তিকরার সুযোগ থাকলেও রাজ্য সরকার তাকে মান্যতা দিয়ে ভর্তি করতে রাজি নয়। সেজন্য বিষয়টি দীর্ঘায়িত করে নতুন ওবিসি সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার অভিপ্রায়ে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। ২০১০ সালের আগে রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণের হার ছিল ৭ শতাংশ। ২০১০-এ রাজ্য সরকার এটি বৃদ্ধি করে ১৭ শতাংশ করেছে।রাজ্য সরকার ‘এ’ও ‘বি’ক্যাটেগরিতে ওবিসি তালিকাকে বিভক্ত করেছে। এই তালিকায় ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৭৯টি মুসলমান সম্প্রদায় ও ‘বি’ক্যাটাগরিতে ৬১টি হিন্দু ওবিসি রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত ৩৭টি নতুন সম্প্রদায়কে ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে নতুন তালিকায় ৩৫টি মুসলমান সম্প্রদায়ের এবং মাত্র ২টি হিন্দুদের থেকে ওবিসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই ভাবে ঘুরপথে বেশি পরিমাণে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের ওবিসি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। যদিও ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ সরাসরি সংবিধানের পরিপন্থী।রাজ্য সরকার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়ে ‘অনপ্রসর’ হিসেবে দেখিয়ে মুসলমানদের ওবিসি সংরক্ষণ দিয়েছেন।
যদিও কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশমতো ভর্তির ক্ষেত্রে পুরানো ৭ শতাংশ ওবিসি কোটায় ভর্তি করা যেত। কিন্তু রাজ্য সরকার নতুনভাবে ১৭ শতাংশ ওবিসি কোটায় ভর্তির জন্য রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। কিন্তু এই অজুহাতে ভর্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ ছাড়া কিছু নয়। এইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাজ্য সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে কুঠারাঘাত করেছেন। লক্ষ
লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে না পেরে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ইতিমধ্যে অনেকে পুনে, ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অন্যান্য রাজ্যে ভর্তি হয়ে ইতিমধ্যে পঠনপাঠন শুরু হয়ে গেছে কিন্তু এক্ষেত্রে ‘এগিয়ে বাংলা’ কার্যত পিছিয়ে
গেছে। বলা বাহুল্য, আর্থিক ভাবে দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীরা অসহায়ভাবে রাজ্যের কলেজে ভর্তির জন্য দিন গুনছে। এই বিষয়ে অবিলম্বে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত
অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগীরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদে শামিল না হলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে শিক্ষায় আরও পিছিয়ে পড়বে।