ক্লাসে মাস্টার মিসিং
ফ্যাসাদেযু দিদি,
শিক্ষার অধিকার আইনটা মনে আছে দিদি? মনে নেই? এই রে! ২০০৯ সালের আইন তো! দাঁড়ান, মনে করিয়ে দিচ্ছি। ওই আইন অনুযায়ী স্কুলে প্রতি ৬০জন পড়ুয়ার জন্য কমপক্ষে দু’জন শিক্ষক রাখতেই হবে। মনে পড়েছে নিশ্চয়। কিন্তু দিদি, আপনার সরকারের একটা রিপোর্ট পেলাম। তাতে তো দেখলাম এই রাজ্যে দু’হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুলে একজনের বেশি শিক্ষক নেই। কী হবে দিদি! সামনেই তো আবার প্রাথমিকে দুর্নীতির রায় শোনাবে
আদালত। তাতে ৩২ হাজারের চাকরি যেতে পারে। তখন কী হবে গো দিদি! আমার তো ভেবেই ভয় করছে। সবাই আপনাকে দোষ দেবে। কিন্তু আমি তো জানি, আপনি ভেবে-চিন্তে মিথ্যে কথা বলেন না। ওটা মুখ খুললেই বের হয়ে যায়।
এটা যে আপনার একটা অসুখ সেটা তো কেউ আর বুঝবে না। এই তো সেদিন আপনি বললেন, গত ১৪ বছরে আপনি রাজ্যে দু’কোটি চাকরি দিয়েছেন। আমি তো অবাক! কারণ, আপনি নিজেও জানেন সংখ্যাটা দু’লক্ষ হওয়াই মুশকিল। এই রাজ্যে চাকরি করার বয়স হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা সাত কোটির মতো। এর মধ্যে আবার দু’কোটি বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। তাঁদের বাদ দিলে হাতে রইল পাঁচ। সেই পাঁচের মধ্যে একশো দিনের জব কার্ড
রয়েছে আড়াই কোটি। পড়ে রইল আড়াই। তাদের যদি দু’কোটি চাকরি পেয়ে যায় তাবে তো রাজ্যে এমন কোনো পরিবারই নেই, যেখানে কেউ চাকরি করে না। এর পরেও রাজ্যের বাইরে পশ্চিবঙ্গের ৫০ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। পশ্চিমবঙ্গ তো স্বর্গে চেয়েও মহান কোনো জায়গা থাকলে সেটা। কিন্তু সেটা তো নয়। অথচ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনি যেকথা বলেছেন, সেটা তো ফেলেও দেওয়া যায় না। কী যে করি! তাই তো আপনাকে চিঠি লিখছি।
দিদি, খুব বিপদে পড়েছি আমি। আপনিই বলে দিন কার কথা ধরব। আপনার কথা নাকি আপনার সরকারের রিপোর্ট? এই রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় বলে শুনেছি। এমন অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘ সময় ধরেই। এবার বিকাশ ভবনেরই একটি পরিসংখ্যান থেকেও প্রাথমিক স্কুলগুলির বেহাল দশা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিকাশ ভবন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, একজনও শিক্ষক নেই অথবা একজনমাত্র শিক্ষক রয়েছেন এমন প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা রাজ্যে ২২১৫টি। বিকাশ ভবন প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে, এই স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন একই জেলার ভেতরে শিক্ষকদের বদলি করে প্রাথমিক স্কুলের হাল ফেরাতে হবে।
আপনার কথা আর বাস্তব পরিস্থিতি যে কতটা আলাদা, তা ওই পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যাচ্ছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা পুরুলিয়ায়। সেখানে ৩০৬৭ স্কুলের মধ্যে শিক্ষক নেই বা একজন শিক্ষক আছেন এমন স্কুলের সংখ্যা ৩৭২টি। বাঁকুড়া জেলায় ৩৫৬৮টি স্কুলের মধ্যে এমন স্কুলের সংখ্যা ৩৭১টি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৪৮৭টি প্রাথমিক স্কুলের ২২৭টি স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা এক বা শূন্য। কলকাতার ১১৩৮টি স্কুলের মধ্যে এমন স্কুলের সংখ্যা ১৮টি। সব মিলিয়ে জেলায় ৪৯৩৬৮টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে এরকম স্কুল রয়েছে ২২১৫টি।
অনেকেই মনে করছেন, প্রাথমিকে টেটের মাধ্যমে নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিকের টেট হয়ে ফলবেরিয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তারপর থেকে ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন টেট পাশ চাকরিপ্রর্থীরা। ২০২৩ সালে আবার টেট হয়েছে। তার ফল এখনো বের হয়নি। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে আর টেট হয়নি।
নিয়োগ তো হয়ইনি, আবার যেটুকু শিক্ষক বদলি হয়েছে, সেখানেও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। কী করি বলুন তো দিদি! বড়োই আতান্তরে পড়েছি। চিঠির জবাব চাই না। আপনি খালি অবসর সময়ে যেভাবে হোক বিষয়টি রাজ্যবাসীকে জানিয়ে দেবেন। আপনার একান্ত অনুগত ভাইটি সব শোনে। ঠিক শুনে নেব। তারপরেও যদি মনে প্রশ্ন থাকে তবে কিন্তু আপনাকে আবার চিঠি লিখে বিরক্ত করব।